আমার কাছে চাকরি করার একমাত্র অসুবিধার হচ্ছে, সূর্যের সাথে নিজের দূরত্ব বাড়িয়ে নিতে হয়। এই যেমন ল্যাপটপের চৌদ্দ ইঞ্চির একটা স্ক্রিনে তাকিয়ে দিন কাটিয়ে দিচ্ছি। অফিস থেকে বেরিয়ে দেখি রাস্তায় নিয়নবাতি জলে উঠেছে! সূর্যের এই ব্যাপারটা ছাড়া, চাকরি আমার ভালো লাগে। তবে এশার ভালো লাগেনা। এশা অফিসের ব্যস্ত দিনে ফোন করে বলে উঠবে,
- এ্যই তুমি কই?
- এই সময় আমি অফিসেই তো থাকি!
- বারান্দায় যাও, লম্বা সময় কথা বলবো!
- আরে না, কেন?
- এমনি, আমার ইচ্ছা!
- বের হয়ে কল দিবো, এখন রাখি?
- উহু রাখা যাবে না, আমার যতক্ষণ ইচ্ছা কথা বলবা!
শুনে আমি হাসি! বলি, ‘তুমি কি কখনো বড় হবা না?’ এশা এই প্রশ্নটা এড়িয়ে অন্য আলাপে জুড়ে দেয়। আমি ফোন রাখার তাড়া দিলে বলে, ‘আমি যদি প্রত্যেক মাসের শেষে তোমাকে বেতনের সমপরিমাণ টাকা দিই, আমার সাথে দৈনিক আট ঘন্টা কথা বলবা?’
আমি কিছু কারণ দেখিয়ে ফোন রেখে কাজে ঢুকে পড়ি। এক্সেলে এন্ট্রি করতে করতে এশাকে আমার মনে থাকে না। সন্ধ্যায় ক্লান্ত শরির টেনে বাসে ঝুলে পড়ি। এশা কল দেয়,
- তোমার না বের হয়ে কল দেয়ার কথা?
- মনে ছিলো না!
- এখন কই?
- বাসাই যাই।
- আমার কথা তোমার মনে পড়ে না?
- পড়ে তো!
- পড়ে না, আমি জানি!
বলে এশা অভিমান করে। অভিমান ভাঙ্গাই, কখনোবা ভাঙ্গাই না। এশার অভিমান জমে জমে ভালোবাসা হয়ে যায়। প্রেমিকারা অভিমান করতে ভালোবাসে। অভিমানী এশা আবার নিজেই ফোন করে বলে উঠবে, এ্যইই আমি রাগ করছি, তুমি কল ব্যাক করো নাই কেন?
‘এই’ আর ‘এ্যইই’ আর মধ্যে বোধহয় একটা সূক্ষ্ম পার্থক্য আছে। আদুরে গলায় লম্বা করে টেনে এ্যই ডাক শুনলে মনে হয়, এই ব্যস্ততম দিনটা তো মানুষটাকে নিজের করে পাবার জন্যেই! সূর্যের সাথে হোকনা আড়ি, মাসের শেষে তো প্রিয়মুখ, প্রিয় হাসি!
অভিমান | জাহিদ রাজ রনি
প্রথম প্রকাশ: ০৭ অক্টোবর ২০১৭, ছুটির দিনে, প্রথম আলো।
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই অক্টোবর, ২০১৭ রাত ১০:৩২