– শার্ট কি বানাতে দিয়েছেন?
– না চাপানোর জন্য আনলাম। অনেকদিন আগের শার্ট।
– অহ আচ্ছা!
– এটা আসলে একজনের স্মৃতি, যে শার্টটা দিয়েছে সে এখন পৃথিবীতে নাই।
– নাই মানে? মারা গেছে?
– হ্যা!
– অহহ স্যরি।
…আমি ধরেই নিয়েছিলাম এটা হয়তো তার প্রেমিকা শ্রেণীর কারো দেওয়া শার্ট, যে যেকোন ভাবে মারা গিয়েছে। ছেলেটা একটু চুপ থেকে নিজেই আবার বলা শুরু করলো,
– এটা আমার আম্মার দেওয়া শার্ট!
– কিভাবে মারা গেছেন?
– অসুস্থ্য হয়ে।
– ওহ, দুঃখজনক!
– হাসপাতালে তিনদিন ছিলো আম্মা। সুস্থ্য হওয়ার পর বাড়িতে নিয়ে যাওয়ার সময় এম্ভুলেন্সে কথা বলতে বলতে আম্মা মারা যায়। আমি আর আপনি যেরকম কথা বলতেছি, এরকম। আমার আম্মা চল্লিশ বছর বেঁচে ছিলো।
আমি কিছু বলার আগেই ভেতর থেকে ডাক আসলো, আমার শার্টের কাজ হয়ে গেছে। আমি বড় বাঁচা বেঁচে গেলাম, কারন মা হারানো শোকগ্রস্ত একজন সন্তানকে সান্তনা দেওয়ার ভাষা আমার জানা নেই। আমি বের হয়ে যাওয়ার সময় বললাম, ‘ভাই মন খারাপ কইরেন না। আম্মার দেওয়া শার্ট যত্নে রাইখেন।’
তারপর, দরজির দোকান থেকে সদ্য বানানো আমার শার্টটা হালকা করে বুকে চেপে ধরে বাসার পথে পা বাড়ালাম! ছেলেটাকে বলা হয়নি, আমার মা বেঁচে আছেন। এই যে শার্টটা আমি বানাতে আসলাম, এটার কাপড়টা আমার মায়ের কাছ থেকে পাওয়া জন্মদিনের উপহার! দর্জির দোকানের টুলে বসে অপেক্ষা করতে করতে, আমার এই শার্টটার মূল্য অনেকটা বেড়ে গেছে!
মায়ের দেয়া শার্ট | জাহিদ রাজ রনি
পরিমার্জিত আকারে প্রথম প্রকাশ: ২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৭, ছুটির দিনে, প্রথম আলো।
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই অক্টোবর, ২০১৭ রাত ১০:৩৬