বাসের এক আসনে তিনজন বসা যায় না। আমার সহযাত্রী মধ্যবয়সী নারী তাঁর দুই মেয়েকে নিয়ে বসেছেন। বড় মেয়ে মায়ের পায়ের সামনে দাঁড়ানো। বয়স পাঁচ কি ছয় হবে। ছোটটা মায়ের কোলেই ঘুমাচ্ছে। আমি ভদ্রতার খাতিরেই বললাম, ‘ওকে আমার কোলে দিন’। ভদ্রমহিলা প্রথমে নরম গলায় আপত্তি করলেও শেষে ঘুমন্ত বাচ্চাটাকে আমার কোলে দিলেন।
বাচ্চাদের একটা ব্যাপার হলো, তাদের হাতের তালুতে আঙুল দিলে তারা নরম তুলতুলে হাতে আঙুল শক্ত করে চেপে ধরে। আমি তার হাতের তালুতে আঙুল দিলাম। সে ঘুমের মধ্যে আমার আঙুল চেপে ধরল নরম হাতে। ভদ্রমহিলা বাচ্চাটাকে ডেকে ঘুম থেকে তোলার চেষ্টা করছেন কিছুক্ষণ পরপর। সে উঠছে না দেখে ভদ্রমহিলা বললেন, ‘এই যে আমরা বাবার কাছে চলে আসছি। বাবাকে দেখবা না মা?’
আমি অবাক হয়ে দেখলাম, দু-তিন বছরের মেয়েটা আমার কোলে নড়েচড়ে বসে চোখ খুলল! একবার মায়ের দিকে তাকাল, একবার আমার দিকে। আমি বললাম, ‘ওর বাবা কোথায়?’ ভদ্রমহিলা মাথা নিচু করে বললেন, ‘জেলে। আমরা ওর বাবাকে দেখতে যাচ্ছি!’
আমি আর কিছু বললাম না। বাসের জানালা গলে বৃষ্টির ছাট আসছে গাজীপুরের রাস্তায়। ঘুম ঘুম চোখে বাচ্চাটা হাত বাড়িয়ে ধরার চেষ্টা করছে ভেজা জানালা। বাবা তার সন্তানের এই বেড়ে ওঠা দেখছে না, সন্তান তার বাবাকে দেখছে না। পৃথিবীতে কতগুলো মানুষ কত অদ্ভুত উপায়ে কষ্টে আছে! জগৎময় এত সুখ থাকতে, মানুষ কোন সুখের জন্য অপরাধ করে!
জাহিদ রাজ রনি
প্রথম প্রকাশ: ১২ আগস্ট ২০১৭, ছুটির দিনে, প্রথম আলো
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই আগস্ট, ২০১৭ দুপুর ১:৫৩