বিয়ের স্টেজে বউ বসা। বউয়ের সবই ঠিক আছে, কেবল চোখে মোটা গ্লাসের চশমা। চশমার দিকে তাকালে মনে হয় পঞ্চাশ ওয়াটের একজোড়া বাল্ব! লাল শাড়ী, হাতে মেহেদী পুরোপুরি বউ সাজে একটা বউ চশমা পরে আছে, বিষয়টা নিয়ে প্রথম আপত্তি তোলে ফটোগ্রাফারা। তারা হাতাশা প্রকাশ করে বলে, চশমার কাঁচে ফ্লাশ রিফ্লেক্ট করার ফলে ছবি কিছুই হচ্ছে না! বউটা মাথা নিচু করে!
হলজুড়ে নানান জায়গায় গোল হয়ে বসা ছেলে পক্ষের আত্মীয়রাও বলতে লাগলো, বউ কি কানা নাকি? শাঁকচুন্নি চেহারার এক বৃদ্ধা তাচ্ছিল্যের ভঙ্গিতে বললো, আমার তো এই বয়সেও চশমা লাগেনা! মেয়েটার চোখের দুর্বলতাকে অনেকেই আদিখ্যেতা ভেবে বসলো। গ্রাম দিককার কিছু আত্মীয়রা দাবি করলো, বউ যে অতি উচ্চ শিক্ষিতা এটা সবাইকে বোঝানোর জন্যেই চশমা পরে ঢং করছেন!
জামাইটা বউকে আড়ালে ডেকে কিছু বললো। আমি বোরহানির গ্লাসে চুমুক দিতে দিতে দেখলাম। হয়তোবা বললো, ‘চশমাটা খুলে রাখো না!’ বউটা মুখ শুকনা করে আবদারের দৃষ্টিতে কিছু বললো। হয়তো বললো, ‘আমি কি আমার বিয়ে দেখবো না?’
জামাইটা কিছু বললো না, ভাবলো একটু। তারপর তার প্রায় অন্ধ বউয়ের কাঁধে হাত রেখে ছবি তুললো তারা। তাদের বিয়ের এলবামে সব ছবি যত্নে সাজানো। এর মধ্যে একটা ছবি ড্রইং রুমে বড় করে টাঙ্গানো হয়েছে। ছবিতে বউ জামাই উভয়ের চোখে ভারী গ্লাসের চশমা। মনে হচ্ছে, দুই জোড়া চোখ থেকে চারশ ওয়াটের আলো বের হচ্ছে!
জাহিদ রাজ রনি
প্রথম প্রকাশ: দৈনিক গণমানুষের আওয়াজ
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে জুলাই, ২০১৭ রাত ১১:৩২