কবি বলেছেন- "কেমনে বুঝাবো মনেরও কথা?"
ঘটনা সত্য। কীভাবে মনের মানুষটাকে নিজের মনের কথা জানানো যায়- এটা নিয়ে অনেকেই দ্বিধায় পড়ে যান। অনেকে অনেকভাবেই প্রেমের প্রস্তাব দিয়ে থাকেন। সেই উপায়গুলো বেশ পুরোনো হয়ে গেছে। সময়ের প্রয়োজনে চাই নতুন কিছু। তাই প্রপোজ করার পলিটিকাল কায়দা নিয়ে এসেছেন আলিম আল রাজি।
সরকার দলীয় কায়দা
এক দিস্তা কাগজে নিজের প্রতিশ্রুতির কথা লিখুন। প্রেম হয়ে গেলে প্রেমের জোয়ারে ভাসিয়ে নিয়ে যাবেন, অতীতের সব ব্যাথা ভুলিয়ে দেবেন, মেয়ের চাইনিজ নিশ্চিত করবেন ইত্যাদি লিখে মেয়ের কাছে জমা দিন।
এতো প্রতিশ্রুতি দেখে মেয়ে রাজি হবে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু রাজি হওয়ার পরে সব ভুলে যান। এতো সহয নাকি? যা বলেছেন কিছুই করতে হবে না।
বিরোধীদলিয় কায়দা
ব্যানার ফেস্টুন প্ল্যা-কার্ড বানিয়ে ফেলুন কিছু। ওগুলোতে লিখুন জ্বালাময়ী সব ডায়লগ। উদাহারণ "ওমুক... আমাকে ভালোবাসতে হবে" "আমাকে না ভালো না বাসলে পরে, জ্বলবে আগুন ঘরে ঘরে", "পদ্মা মেঘনা যমুনা, হবে প্রেমের কারখানা"। এগুলো নিয়ে "অবস্থান কর্মসূচি" নিন মেয়ের বাড়ির সামনে।
তারপর আল্টিমেটাম দিন ২৪ ঘন্টার মধ্যে প্রেম হস্তান্তর করতে হবে।
তত্ত্বাবধায়ক সরকার কায়দা
মাঝখানে কাউকে ঠিক করুন। বন্ধু টাইপ কেউ হলে ভালো হয়। মেয়ের সাথে তার ভালো সম্পর্ক ভালো থাকতে হবে।
সে আপনার হয়ে মেয়েকে আপনার প্রেমের কথা জানাবে। তাকে হালকা শপথ করিয়ে নিলে উত্তম। বলে দিন সব ঠিক ঠাক করে নির্দিষ্ট মেয়াদের মধ্যে আবার সাংবিধানিক উপায়ে আপনার কাছে প্রেমিকা হস্তান্তর করতে হবে। এর মাঝে সম্পুর্ন নিরপেক্ষতা বজায় রাখতে হবে।
সেনা শাষন কায়দা
বন্ধুকে বলুন যে আপনি নির্দিষ্ট মেয়াদের মাঝেই তার কাছে প্রেমিকা হস্তান্তর করবেন। কিন্তু প্রেমিকা হস্তান্তরের দায়ীত্ব পেয়ে ১৮০ ডিগ্রী বেঁকে যান। অনির্দৃষ্ট কালের জন্য ঐ মেয়েকে নিজের প্রেমিকা বানিয়ে ফেলুন।
বন্ধু যদি উলটা পালটা করে তাহলে তাকে ডান্ডা মেরে ঠান্ডা করে দিন। তাকে কড়া ভাষায় বলে দিন - "ফরমুলা অনুযায়ী ইউ আর মাইনাস"।
তৃতীয় শক্তি কায়দা
আপনার বন্ধুর প্রেম চলছে এক মেয়ের সাথে। আপনি হঠাৎ মাথা গজিয়ে উঠুন। ফেসবুকে স্ট্যাটাস বা নোট লিখে মাঠ গরম করার চেষ্টা করুন। "রাজনৈতিক চেতনা"র মতো নিজের "প্রেমের চেতনা" প্রকাশ করুন। এক পর্যায়ে প্রপোজ করে ফেলুন ঐ মেয়েকে।
তবে সমস্যা হলো তৃতীয় শক্তি উপায়ে বেশি পাত্তা পাওয়া যায়না। অবশ্য মেয়ে একটু "ইয়ে" টাইপ হলে ভিন্ন কথা।
জোটবদ্ধ কায়দা
চার পাচ জন মিলে দল পাকান। দলের নাম দিয়ে দিন কিছু একটা। "চার দলীয় প্রেমিক জোট" কিংবা "মহা প্রেমিক জোট" হলে ভালো হয়। এগুলোতে আলাদা জোশ আসে।
যাই হোক, সবাই মিলে মেয়ের কাছে যান। জ্বালাময়ী ভঙ্গীতে প্রেমের প্রস্তাব করুন। প্রত্যাখ্যাত হলে সুইসাইড করবেন, নিজের হাত কাটবেন বলে দিন।
অবশ্য পরে প্রত্যাখাত হলে কিছুই করার দরকার নেই। আপনি বোকা নাকি যে যা বলছেন তাই করবেন!
সংলাপ কায়দা
অনেক কাঠ খড় পুড়িয়ে মেয়ের সাথে এক রুদ্ধদার মুক্তপ্রান বৈঠকে বসুন। দুজনের মাঝখানে রাখুন দুটো চায়ের কাপ। এতে করে আলাদা একটা ভাব আসবে। চায়ে চুমুক দেবার ফাকে এক পর্যায়ে বলে ফেলুন নিজের মনের কথা। ভালোভাবে খেয়াল করুন মেয়ের প্রতিক্রিয়া।
মেয়ে অনেক কিছুই করতে পারে। এমনকি আপনাকে থাপ্পড়ও মারতে পারে। ব্যাপার না। থাপ্পড় মারলে মারুক। আপনি সংলাপ শেষে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে দিন, "সংলাপ মারাত্মক ফলপ্রসু হয়েছে"।
বামপন্থি কায়দা
মেয়ের সাথে দেখা করুন। মুখে পর্যাপ্ত পরিমান গাম্ভীর্য আনুন। চোখে মোটা ফ্রেমের চশমা থাকলে ভালো হয়। মেয়েকে বুঝান যে আপনি সমাজ বদলে দিতে চান। সমাজ থেকে উধাও করে দিতে চান সব হিংসা বিদ্ধেষ আর বৈষম্য। এ আপনার আমরণ যুদ্ধ। এই যুদ্ধে জয়ী হতে হলে মেয়ের সাথে আপনার প্রেম হওয়া দরকার। অতঃপর পকেট থেকে গোলাপ বের করে বাম হাত দিয়ে মেয়েটিকে গোলাপটি দিয়ে দিন।
ছোট দল কায়দা
দূর থেকে মেয়েকে দুরবীন দিয়ে দেখুন। নিজের মনে বিরহের আগুনে পুড়তে থাকুন।
মাঝে মাঝে সিদ্ধান্ত নিন, অনেক দেখা হয়েছে এবার প্রপোজ করবোই করবো। তারপর একটা নির্দৃষ্ট দিনে মেয়ের বাড়িতে গিয়ে প্রপোজ করার সিদ্ধান্ত নিন। কিন্তু যেদিন যাওয়ার কথা সেদিন মারাত্মক নার্ভাস হয়ে যান। যাওয়ার পরিকল্পনা বাতিল করুন। এভাবে প্রতি পাঁচ বছর পর পর প্রপোজ করার প্ল্যান করুন। শেষ মুহূর্তে ভয় পেয়ে চলে আসুন।
ইসলামী দল কায়দা
ইসলামে প্রেম হারাম এ বিষয়ে হালকা পড়াশোনা করুন। আশের পাশের মানুষকে বয়ান দিন। তারপর রাস্তায় বের হয়ে যান। নুরানী চেহারার কোন মেয়েকে পছন্দ করুন। তারপর কাশেম বিন আবু বক্কর স্টাইলে মেয়েকে প্রপোজ করুন। মেয়ে রাজি হলে বিসমিল্লাহ বলে মেয়েকে কিস করুন। রাজি না হলে "নাউজুবিল্লাহ! বেশরম মেয়েছেলে" বলে চলে আসুন।
এবং...
আজ রাত বারোটার পর খেয়ে নিবেন।
** এক কপি রাখলাম পার্সোনাল ব্লগে।