সারাদিনের ক্লান্তিতে বাস থেকে নামতেই মনে পড়লো, বিকাশে লোকটাকে টাকা দেয়া হয় নি। সাড়ে দশটা বাজে, দোকান প্রায় সব বন্ধ বন্ধ। এর মধ্যে চিপায় একটা দোকানে ঢুকে গেলো সাজিদ -
- ভাই, বিকাশে ১১৩০ টাকা পাঠানো যাবে?
দিনশেষে হিসাবের টাকার বান্ডিল হাতে নিয়ে দোকানির বিরক্তিসুরের উত্তর, 'যাবে, নাম্বার দ্যান।'
নাম্বার বলার এক ফাঁকে সাজিদ টাকাটা দিয়ে দিলো দোকানীকে। নাম্বার দেয়ার পর টাকা গেলো না -
- লিমিট মনে অয় শ্যাষ, অন্য নাম্বার দ্যান।
এখন সাজিদ হলো বিরক্ত, চোখ মুখ কুঁচকে মোবাইলে ডায়াল লিস্ট থেকে ফোন দিলো, 'হ্যালো ভাই, আপনার নাম্বারের বিকাশ লিমিটতো শেষ।'
ওপাশ থেকে জানানো হলো আরও তিনটা নাম্বার মেসেজ করা হচ্ছে, তবু যেন টাকাটা আজকেই দেয়া হয়। সাজিদ একটু নরম হলো, মধ্যবিত্ত মন সমস্যাটা বুঝতে পেরেই হয়তো।
মেসেজ এলে আবারও দোকানীকে নাম্বার দেয়া হলে একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি। টাকা যায় না। ব্যস্ত দোকানী পাল্টা বিরক্তি নিয়ে উত্তর দেয়, 'একটা নাম্বারের পেছনে ১০ মিনিট লাগাইতেছি। কোটি টাকার ব্যবসা বিকাশে?' বলার ধরণে সাজিদের মেজাজ হলো আরও খারাপ, 'টাকাটা ফেরত দেন, আমি অন্য দোকানে যাবো।'
টাকা হাতে নিয়ে বেরিয়ে এসে বড় একটা শ্বাস নেয় সাজিদ। চিপার দোকানটায় দম বন্ধ হয়ে আসছিলো তাঁর। কিছুদূর হেঁটে ফুটপাথের সাথেই লাগোয়া অন্য দোকানে দাঁড়ায় সাজিদ। এরমাঝে সে ফোন করে জেনে নিয়েছে রকেটেও টাকা পাঠানো যাবে। টাকা পাঠিয়ে সাজিদ হাতে থাকা টাকাটা দোকানীকে দিতে গেলে জবাব আসে, 'এখানেতো ভাই ১০৩০ টাকা!' সাজিদ বলে, 'সেকি! আপনাকে আমি দুটো ৫শ টাকার নোট, একটা ১শ টাকার নোট আর তিনটা ১০ টাকার নোট দিলাম।' দোকানীর ভাষ্য, 'ভাই, এই যে আপনার সামনেইতো টাকাটা গুণলাম!'
সাজিদের খেয়াল হলো সে এর আগে টাকা ফেরত নেবার সময় টাকাটা গোণেনি।' দোকানিকে চট জলদি বুঝিয়ে সাজিদ দ্রুত হেঁটে আগের দোকানে এলো।
- ভাই, আপনি আমাকে টাকা ফেরত দেয়ার সময় ১শ টাকার নোট দেননি।
- নোট দেইনি মানে, আমনে যেমনে টাকা দিছেন অমনেই ফেরত দিসি।
- না ভাই, আপনি টাকাটা ড্রয়ারে ঢোকালেন, ৩টা নাম্বারে টাকা ঢোকেনি, এরপর আপনি ড্রয়ার থেকে খুলে টাকা মুঠো করে আমাকে দিলেন। আমি আপনার সাথে কথা বলতে বলতে টাকা হাতে নিয়ে বের হয়ে চলে গেলাম।
- এই ব্যাডা আমনে খুব জ্বালাইতাছেন। আইসাই ৩/৪ টা নাম্বার দিলেন একটাতেও ট্যাকা ঢুকে না। আমনে শিক্ষিত মানুষ, ট্যাকা না গুইণাই চইলা গ্যালেন? ব্যবসা কি আমরা করি না?
এমনিতেই মেজাজ খারাপ ছিলো, সাজিদের এ অপমান আর সহ্য হলো না। পকেট থেকে মানিব্যাগটা বের করে চড়া গলায় উত্তর -
- মানুষের ভুল হইতেই পারে। পকেটে প্রতিদিন ১০/১২ হাজার টাকা নিয়া ঘুরি, ১ শ টাকার জন্য আপনার খোঁচা হজম করমু ক্যান? ১শ টাকা আপনেরে দান করলাম যান, খান গিয়া।
আশেপাশের দোকানে হালকা শোরগোল উঠে গেলো। সাজিদ বেরিয়ে যাচ্ছিলো, দোকানদাররা থামাতে গেলো। পাল্টা সুরে সাজিদের উত্তর, 'আমিতো এখন টাকা নেবোইনা, উনি ১শ টাকার জন্য যাতা বললো, আপনারা পথ ছাড়েন।'
সাজিদ এসে দাঁড়ালো যে দোকানটায় টাকা পাঠানো হলো। পকেট থেকে আরও ১শ টাকা বের করে দোকানীকে মিটিয়ে আবার হাঁটার পথ ধরলো। ১ শ টাকা হারিয়ে আগের দোকানীকে মনে মনে গাইল দিতে থাকলেও বেশ ভালো লাগছে এখন। সম্পদ বলতে তাঁর আছেই ভাব। তাও সবসময় ভাবটা দেখানো যায় না। ভাগ্যিস আজকেই বেতনটা পাওয়ায় জোরেশোরে ভাব দেখিয়ে দিলো। নইলে অন্যদিনতো সাজিদের মানিব্যাগ খুঁজে একটা আধুলিও পাওয়া যাবে না!