“সামু ব্লগে অবশ্যই আপনাকে লিখিতে হইবে”, কতিপয় বন্ধুর সবিনয় অনুরোধ। আমিও লিখিতে সম্মত হইলাম। তবে লিখিতে বসিয়া বোধ হইতেছে, আমি সম্মত হই নাই বরং অনুরোধে ঢেঁকি গিলিতেছি। ঢেঁকি; বাংলা ব্যাকরণে দেশি শব্দের একটি উৎকৃষ্ট উদাহরণ। আমার বয়সী আর দশজনের কথা বলিতে পারি নে, কিন্ত ঐ বস্তুটির সহিত শিশুপার্কেই আমার প্রথম সাক্ষাৎ হইয়াছিল। তাহার অনেক পরে মাতুলালয়ে বস্তুটি প্রথম প্রত্যক্ষ করি। যদিও ততদিনে একটি বিশেষ বাগধারা “আমড়া কাঠের ঢেঁকি”-এর সহিত পরিচয় হইয়া গিয়াছে। কিন্তু ঐ সময় বোধগম্য হইত না উক্ত বাগধারার অর্থ অকর্মণ্য কেন? ইহার কিছুদিন পর বিজ্ঞান বিষয়ক একটি পুস্তকে জানিতে পারিলাম “ঢেঁকি-ছাটা চাল”-এ নাকি অধিক খাদ্যগুণ থাকে। সেইক্ষণ হইতে আমার আফসোস, হায়! কেন যে বর্তমানে সকল ধান কলে ভাঙ্গা হয়! তখনও মুনাফা, অল্প সময়ে অধিক উৎপাদন ব্যাপারগুলো পুরোপুরি বুঝিয়া উঠিতে পারি নাই। তাহার পর যেইদিন শাহবাগ “জাতীয় জাদুঘরে” অনেক বিলুপ্তপ্রায় বস্তুর সহিত ঢেঁকিরও দর্শনলাভ করিলাম সেইদিনটি আমার মানস পটে এখনও উজ্জ্বল হইয়া রহিয়াছে। এইবার আমার হতবাক হইবার পালা। ঢেঁকির চেহারাও এতো সুন্দর করা সম্ভব। তৎকালের কারিগরগণ কতই না মননশীল ছিলেন। এইরূপ সুন্দর ঢেঁকি নিশ্চয় স্বর্গে যাইবার যোগ্য। এই স্থলে আসিয়া পুনরায় গোল বাধিল। “ঢেঁকি স্বর্গে যাইয়াও ধান ভানে” প্রবাদটির সহিত কমবেশি সকলেই পরিচিত। কিন্তু আমার প্রায়শঃ জানিতে ইচ্ছে করে, কোন কৌতূহলী ব্যক্তি স্বর্গে যাইয়া দেখিয়াছেন ঐ স্থলে ঢেঁকি ধান ভানিতেছে? আবার তিনি শুধু তাহাতেই ক্ষান্ত হন নাই বরং মর্ত্যলোকে ফিরিয়া আমাদের মূল্যবান তথ্যটি জানাইয়া কৃতার্থ করিয়াছেন। হায়! তাহাকে যদি দেখিতে পারিতাম।। বাঙ্গালীর কৌতূহলের কোন ইতিবৃত্য নাই।
আমি একটি পুরুষ হইয়া যতই ঢেঁকি কথন বর্ণনা করিনা কেন, ঢেঁকি কিন্তু সর্বদাই নারীসঙ্গ পাইবার জন্য লালায়িত। ব্যাপারটি পল্লীকবি জসীম উদদীনের দৃষ্টিতে আরও উত্তমরূপে ধরা পড়িয়াছে। যেই ক্ষণে কোন রমণী তাহার আলতা মাখানো রাঙ্গা পদ দ্বারা ঢেঁকিকে স্পর্শ করিত তৎক্ষণাৎ ঢেঁকি আনন্দে আত্মহারা হইয়া আকাশ পানে উঠিয়া পড়িত। আর যেমত রমণী স্পর্শ (পদ) সরাইয়া লইত অমনি স্পর্শ হারাইবার শোকে তাহার মস্তক ভূমিতে আছড়াইয়া পড়িত। শ্রদ্ধেয় জসীম উদদীনের পূর্বেও তো অনেকেই ঢেঁকিতে ধান ভানা দেখিয়াছেন কতজন এতো মোহনীয় রূপে ইহার বর্ণনা দিতে পারিয়াছে? লেখার এই স্থলে আসিয়া বোধ হইতেছে আমি অনুরোধে নয় উপরোধে ঢেঁকি গিলিয়াছি। অনুরোধে আর উপরোধে যেভাবেই ঢেঁকি গলধঃকরন করুন না কেন, কোনটাই সুখকর নহে, তাহা ভুক্তভোগী মাত্রই বুঝিতে পারিবেন।
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে জানুয়ারি, ২০১৩ সকাল ১০:৩৪