বরিশাল কিংবা স্বরুপকাঠির ব্যাকওয়াটার নিয়ে বিস্তর লেখালেখি হয়েছে, দৈনিক পত্রিকা গুলো কাভার করেছে, টিভি চ্যানেলগুলোও বাদ যায়নি। বছরদু’য়েক ধরে হঠাৎ করেই জনপ্রিয় ট্যুরিষ্ট ডেষ্টিনেশন হয়ে উঠেছে বরিশাল-স্বরুপকাঠির আটঘর, কুড়িয়ানা, ভিমরুলি বাজার অঞ্চলটি। ছোট ছোট অজস্র খালের দু’ধারে সারি সারি পেয়ারা বাগান এর মুল আকর্ষন। বর্ষা মৌসুমে সারি সারি পেয়ারা গাছ যখন হলদে সবুজ ডাসা পেয়ারায় ভরে যায় অসাধারন সে দৃশ্য। এছাড়া আমড়া বাগান, নারকেল কুঞ্জ, সারি সারি সুপারি গাছ, জানা অজানা ফলজ ও বনজ বৃক্ষে নয়ন প্রীতিকর সবুজের এক মিলনমেলা হয়ে উঠেছে সমগ্র এলাকা। বরিশাল-স্বরুপকাঠির প্রত্যন্ত আটঘর, কুড়িয়ানা ভিমরুলি বাজারকে ট্যুরিষ্ট ডেষ্টিনেশন হিসেবে লাইমলাইটে নিয়ে আসার কৃতিত্ব অনেকটাই ফেসবুক ভিত্তিক ভ্রমন গ্রুপ বেড়াই বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা মাহমুদ ভাইয়ের প্রাপ্য। এ বছর বর্ষার প্রায় শেষ দিকে বেড়াই বাংলাদেশের সাথে আমিও ঘুরে আসলাম স্বরুপকাঠির এই পেয়ারার রাজ্য থেকে। দেশে এবং দেশের বাইরে আমার ঘোরাঘোরি নেহাত কম হয়নি কিন্তু নির্দ্বিধায় বলতে পারি এমন সবুজের রাজ্য আমি খুব বেশি দেখিনি।
ঢাকা থেকে রাতে বরিশালের যে কোন লঞ্চে উঠে সকালে বরিশাল। সেখান থেকে মাহিন্দ্রা (এক ধরনের টেম্পো) নিয়ে বানাড়ীপাড়া চলে যাবেন, সময় লাগবে প্রায় এক ঘন্টা। বানাড়িপাড়া থেকে ইঞ্জিন নৌকা নিয়ে প্রায় আধাঘন্টা নাগাদ সন্ধ্যা নদী ভ্রমন করে ঢুকে পড়বেন ব্যাকওয়াটারের রাজ্যে। প্রথমে যাবেন ভিমরুলি বাজার, বাংলাদেশের সম্ভবত একমাত্র ভাসমান ফলের বাজার। মুলত পেয়ারার বাজার, সাথে আছে আমড়া, চালতা, বিলাতি গাব, কলা, সুপারি আর নানা ধরনের আনাজপাতির পসরা। সেখানে ঘন্টাখানেক বিচরন করুন, জলের উপর থেকে পেয়ারা কিনুন জলের দামে, শত শত পেয়ারা ভর্তি নৌকার আনাগোনা দেখে মুগ্ধ হবেন নিশ্চিত বলা যায়। দুপুর গড়িয়ে আসলে চলে যান আটঘর বাজার। সেখানে বৌদির দোকানে ঘরোয়া পরিবেশে দুপুরের খাবার সেরে নিবেন। ধোয়া উঠা গরম ভাতের সাথে সরিষা দিয়ে সেদ্ধ করা কাঁচা পেপের ভর্তা অবশই চেখে দেখবেন। রেসিপি জেনে আসতে ভুলবেননা যেন। সাথে আমড়ার ডাল অমৃত মনে হবে। দুপুরে খাবারের পর খালের ধারে কোন গাছের ছায়ার নৌকা থামিয়ে কিছুক্ষন লেটানো যেতে পারে। তারপর কুড়িয়ানা বাজার ঘুরে আসুন, সেখানে নৌকার বাজার বসে। নৌকার বাজার মানে নৌকার উপর বাজার নয়, নতুন নৌকা কেনা বেচার বাজার। খালের পাড়ে সারি সারি নতুন নৌকা সাজানো। আর কি দেখবেন? দেখবেন খালের দু’ধারে অজস্র সবুজের সমারোহ, ডাসা ডাসা পেয়ারায় নুয়ে পড়া সারি সারি পেয়ারা গাছ, আমড়ার বাগান, সহজ সরল নদীমাতৃক গ্রামীন জীবন। ফিরে আসার সময় বিখ্যাত গুঠিয়া মসজিদ দেখে আসতে ভুলবেননা যেন।
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা জুন, ২০১৬ রাত ১:০৫