(দ্বিতীয় পর্ব)
ক্যাম্পাসে পৌছতে ঘন্টা দেড়েক সময় লাগলো। সাধারনত ৪৫ মিনিটের পথ কিন্তু এত সকালেও রাস্তায় বেশ ট্রাফিক। আমার গন্তব্য সেন্ট্রাল লন্ডনের রিজেন্ট পার্ক এলাকা। শার্লক হোমসের বাসস্থান ২২১/বি বেকার ষ্ট্রিটের একদম পাশেই। এলাকাটি বেশ খোলামেলা, সুন্দর। অপেক্ষাকৃত চওড়া রাস্তাঘাট, গাছপালা আছে অনেক (পাতা নেই যদিও), বিখ্যাত রিজেন্ট পার্ক পাশেই আর হাটা দুরত্বে ঐতিহ্যবাহী লর্ডস আর মাদাম তুসো যাদুঘর। লাগেজ টানতে টানতে রিসেপশনে গিয়ে সম্ভবত পুর্ব ইউরোপীয় তরুনীকে আমার প্যারেন্ট কোম্পানীর পরিচয় দিয়ে বললাম আমার জন্য এক্সিকিউটিভ ডরমিটরিতে একখানি রুম বুক করে রাখার কথা। সে সহাস্যে জানালো আমাকে তারা গতকাল থেকেই আশা করছে। যা হোক রুমের চাবি আই ডি কার্ড, ক্যাম্পাসের বিভিন্ন বিল্ডিংয়ে এন্ট্রান্সের জন্য ম্যাগনেটিক কার্ড আর প্রোগ্রাম আউটলাইন নিয়ে জলদি রুমে গিয়ে উঠলাম। বেশ ঠান্ডা পড়েছে সাথে হাওয়া বইছে ঝাপটা দিয়ে। হাত মুখ ধুয়ে যতটা সম্ভব ঘুম তাড়িয়ে দ্রুত ক্লাসের দিকে রওনা দিলাম। রিসিপশন থেকে আগেই জেনে নিয়েছি কোন বিল্ডিয়ের কোন রুমে ক্লাস হচ্ছে। অর্ধেক পথ যেতেই প্রোগ্রাম ম্যানেজার লিউকের সাথে দেখা। বাকি পথ সে সঙ্গ দিল। ক্লাস শুরু হয়েছে প্রায় দু’ঘন্টা। একটি মডিউলের মাঝখানে ঢুকলাম। বিভিন্ন দেশের অংশগ্রহনকারীরা ছয়টি গ্রুপে ভাগ হয়ে বসেছে। আমি আমার নির্ধারিত সিটে বসে পড়লাম। আমি ছাড়াও গ্রুপে আছে নরওয়ের দু’জন, সার্বিয়ার একজন এবং থাইল্যান্ডের একজন। ক্লাস চলবে সেই সন্ধ্যা ছ’টা পর্যন্ত। বুঝলাম আজকে পুরোটা দিন ঘুমের সাথে যুদ্ধ করতে করতে ক্লাস করতে হবে। সারাটা দিন সমস্ত ইচ্ছাশক্তি এক করে চোখের পাতা দু’টো খুলে রাখলাম।
লন্ডন বিজনেস স্কুল ক্যাম্পাস (ক্লাস শেষে সন্ধায়)
সন্ধায় যখন সেদিনের মত ক্লাস শেষ হলো আমি ততক্ষনে বিধ্বস্ত। রুমে গিয়ে ঘুমাবো সে উপায় নেই। কিছুক্ষন পরেই বের হতে হবে সবার সাথে অফিসিয়াল ডিনারে, ওয়েষ্টমিনিষ্টার এলাকায় টেমস্ নদীর পাশে এক হোটেলে টিম ডিনার হবে। রুমে কিছুক্ষন বিশ্রাম নিয়ে পুরো দল বাসে করে রওনা হলাম। আধো ঘুম আর আধো জাগরনে রাতের লন্ডন দেখতে দেখতে আধাঘন্টার মধ্যে পৌছে গেলাম। রেষ্টুরেন্টটি আসলে একটি পুরোপুরি হ্যাংআউট প্লেস। নানা দেশের নানা বয়সের মানুষ কিচির মিচির করছে। আমাদের জন্য জায়গা রিজার্ভ করা আছে জানালার ধারে। পুরোটাই কাঁচের দেয়াল। সামনে টেমস্ নদী বয়ে যাচ্ছে, আমাদের দেশের গোমতী কিংবা তিতাস নদীর মত চওড়া এবং শান্ত কিন্তু পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন পরিবেশ আর রঙবেরঙের লাইটিংয়ের কারনে বেশ নান্দনিক লাগছে। নদীর ধার ঘেষে সুন্দর হাটার রাস্তা, রংবেরংয়ের দোকানপাট, রেষ্টুরেন্ট। একটু হাটলেই ব্রিজ, আসলে দু’টি, একটি দিয়ে মটর গাড়ি আর আরেকটি দিয়ে ট্রেন যাচ্ছে। সুউচ্চ নাগরদোলা লন্ডন আই কাছেই। পেটভর্তি ট্যুরিষ্ট নিয়ে বিশাল চাকা ধীরে ধীরে ঘুরছে আর ক্ষনে ক্ষনে রঙ বদলাচ্ছে। স্যুট টাই পরা ধোপদুরস্ত বাটলার অর্ডার নিয়ে গেল প্রত্যেকের কাছ থেকে। এদের স্পেশালিটি ফিশ। আমার জীবন মৎসবিহীন। তাই পাস্তা অর্ডার করলাম। অ্যাপিটাইজার দিয়ে গেল। সবার কাছ থেকে ওয়াইন অর্ডার নিয়ে গেল। আমরা দিলাম না। তার বদলে ট্রপিক্যাল জ্যুস অর্ডার করলাম।
উল্টো দিকে বসা বাকপটু মালোয়েশিয়ান কলিগ বেশ জমিয়ে ফেলেছে বুলগেরিয়ার দুই তরুনীর সাথে। তরুনীদ্বয় মুগ্ধ তার ভাঁড়ামিতে। টেবিলের শেষ মাথায় বসা ইন্ডিয়ান তরুনী ও বেশ আমোদ পাচ্ছে বোঝা যাচ্ছে। পাশে বসা মায়ানমার থেকে আসা তরুন কিঞ্চিত নিরব। সম্ভবত সীমিত ইংরেজী জ্ঞানের জন্য মিশতে সংকোচ বোধ করছে। সবার সাথে টুকটাক কথা হল। কিঞ্চিত ঢাকাইয়া পোংটামিও করলাম কয়েকজনের সাথে। বন আপেতিত বলে কেতাদুরস্ত ওয়েটার খাবার সার্ভ করলো। মুখে দিয়েই ইয়াক থু। দেশে হলে ওয়েটারের মুখে ছুড়ে মারতাম রাগে। আমি বাম হাতে রান্না করলেও এর চেয়ে ভালো রান্না করতে পারতাম। দু এক চামচ খেয়ে অ্যাপিটাইজারের দিকে নজর দিলাম। বাটলার বোধহয় খেয়াল করেছে ব্যাপারটা। কিছুক্ষন পর আমার কাছে এসে এক হাত পিছনে দিয়ে অভিজাত ভঙ্গিতে ঝুকে জানালো তারা চমৎকার ভেজি বার্গার তৈরী করে যা আমার ভালো লাগবে বলে তার ধারনা। টাকা তো আর আমার দিতে হচ্ছেনা, দিলাম অর্ডার। সেই বার্গার মুখে দিয়ে আবারো ওয়াক থু। পেটিস টা ফেলে দিয়ে বান আর ফ্রেঞ্চ ফ্রাই গুলা (বিলাতিরা বলে চিপস্) খেয়ে নিলাম। এই রেষ্টুরেন্ট আমার জন্য নয়। তার চেয়ে ভালো টেমস নদীর পাড়ে গিয়ে হাটাহাটি করি।
রেষ্টুরেন্ট থেকে বের হয়ে টেমসের ধার ঘেষে হাটতে লাগলাম। বাঁধানো পাড় ঘেষে সুন্দর আলোকিত ওয়াকওয়ে। বাতাস বেশ ঠান্ডা হলেও ভালো লাগছে। মিনিট দশেক হেটে আবার রেষ্টুরেন্টে গিয়ে দেখি ওয়াইন পর্ব চলছে। মাগনা পেলে আলকাতরা খাওয়ার ব্যাপারটা শুধু বাঙ্গালীর জন্য সত্য নয়। বিনা পয়সার ওয়াইন সবাই দেদারসে গিলছে। কয়েকজন পাইক্কা কলিগও আছে এই দলে। ডিনার শেষ করে ফেরার পথে বাসে এক পশলা ঘুম দিয়ে নিলাম। কিন্তু রুমে গিয়ে যেই বিছানায় শোয়া ঘুম উধাও। লন্ডন সময় ১১টা। শরীরের ঘড়ির কাছে বাংলাদেশ সময় ভোর পাঁচটা। প্রায় এক ঘন্টা কসরত করে বারোটার দিকে মনে হয় ঘুমিয়ে পড়লাম। উঠতে হবে সেই ভোর ছ’টায়। পরবর্তী তিনদিন ট্রেনিংয়ে তেমন কোন উল্লেখযোগ্য কিছু ছিলোনা শুধু ভোরে ঘুম থেকে উঠে ক্লাসে যাওয়া, বিকেল পর্যন্ত ক্লাস, গ্রুপ ডিসকাশন আর গ্রুপ এক্টিভিটিজ এই সব। রাতে আশে পাশে হাটাহাটি তারপর ডর্মে ফিরে ঘুম। ট্রেনিংয়ের শেষ দিন বিখ্যাত কয়েকজন ডাটা সায়েন্টিষ্টদের চমৎকার সেশন হলো। বিকেলে র্যা প আপ, ফটোসেশন, বিদায় সম্ভাষনের মাধ্যমে ট্রেনিংয়ের পরিসমাপ্তি। ইউরোপীয় কলিগরা সেদিন রাতেই ফ্লাই করবে নিজ দেশে। আমরা এশিয়ানরা কালকে থেকে যাওয়া শুরু করবো। আমি আর আমার আরেক বাংলাদেশী কলিগ থাকবো আরো পাঁচদিন। অফিস থেকে ছুটি নিয়েছি দু’জনেই ঘুরাঘুরি করার জন্য।
ওয়েষ্টমিনিষ্টার- টেমস্ নদীর পাড়ে
পরদিন ইউনিভার্সিটি ডর্ম ছেড়ে দিতে হবে, তাই প্রথম কাজ একটা হোটেল খুজে বের করা। নেটে অনেকক্ষন ঘাটাঘাটি করে হাইড পার্ক এলাকাটি পছন্দ হল। অভিজাত এলাকা বলে বেশ এক্সপেনসিভ। কিন্তু ঘুরোঘুরি করার জন্য এই এলাকায় থাকা সুবিধাজনক হবে। একটি হোটেল মনে ধরল। ট্রিপ অ্যাডভাইজার রেকমেন্ডেড। অনলাইনে বুকিং না দিয়ে ঠিক করলাম গিয়ে দেখে আসি। গুগল ম্যাপের সাহায্য নিয়ে হাটা শুরু করলাম। প্রায় পঞ্চাশ মিনিট হেটে হোটেলটি খুজে বের করলাম। জায়গাটি চমৎকার। রাস্তার ধার ঘেষে এক সারিতে কয়েকটি হোটেল। হাইড পার্ক বেশ পর্যটক বান্ধব এলাকা। হোটেল থেকে দু’তিন মিনিট হাটলেই বেইসওয়াটার আন্ডারগ্রাউন্ড ষ্টেশন। পাঁচমিনিট হাটলে কুইন্সওয়ে ষ্টেশন। রাস্তার দু’ধারে ইন্ডিয়ান আর পারসিয়ান হোটেলের ছড়াছড়ি। ভালোই হলো, হালাল ফুড খেতে হলে খোজাখুজি করতে হবেনা। ম্যাগডোনাল্ডস ও আছে হাতের নাগালে, ষ্টারবাকস্ ও। এছাড়া আছে অনেক স্যুভেনির শপ আর লন্ডনের চালু ডিপার্টমেন্টাল ষ্টোর টেসকো আর ওয়েট্রজ।
হোটেলের সামনের রাস্তা (বা পাশেই হোটেল)
হোটেল
রিশিপসনে গিয়ে বললাম রুম নিতে চাই। ষ্ট্যান্ডার্ড রুমে টুইন বেড সব সোল্ড তাই বাধ্য হয়ে বেশি দামে ক্লাব রুম নিতে হল। দাম পরল আশি পাউন্ড করে। অনেক, দু’জন আধাআধি করে দেব। রিসিপশনিষ্ট ভারতীয় তরুনী। কোন রকম ক্যাশ পেমেন্ট ছাড়াই বুকিং কনফার্ম করে রাখলো, শুধু ক্রেডিট কার্ডের ডিটেইলস নিয়ে রাখলো। কথায় কথায় জানালো দক্ষিন ভারতের বাসিন্দা। মাস চারেক হলো লন্ডন এসেছে বিয়ে করে হাসব্যান্ডের সাথে। হাসব্যান্ড আগে থেকেই এখানে থাকে। ট্রেনিং শেষ, হোটেল বুকিং ও ডান। তাই ফুরফুরে মনে হোটেল থেকে বেরিয়ে এলাকাটি একটু রেকি করে নিলাম। তারপর ষ্টারবাকস্ থেকে মাঝারি সাইজের লাটে কফি নিয়ে চুমুক দিতে দিতে ফিরতি পথে হাটা শুরু করলাম। ফিরতি পথে বিখ্যাত বেকার ষ্ট্রিটে শার্লক হোমস সাহেবের বাসার সামনে দিয়ে হেটে গেলাম। এখানে ঢু মারার প্ল্যান আছে আরেকদিন। বেকার ষ্ট্রিটে একটি পাকিস্তানি হোটেল আছে মুমতাজ। অবশ্য ঢোকার আগে জানতামনা যে এটি পাকিস্তানি, জানলে ঢুকতামনা। ভিতরে বাঙ্গালী ওয়েটার। সাজানো গোছানো হোটেল। বাসমতী চালের গরম গরম ভাতের সাথে চিকেন কড়াই দিয়ে খেলাম। ভাতের পরিমান অল্প। সব মিলিয়ে নয় পাউন্ড খসলো। বেশ দাম বলতে হবে।
খেয়ে দেয়ে ডর্মে পৌছে পরদিনের প্ল্যান নিয়ে বসলাম। সকালের প্রথম কাজ চেক আউট সেরে নেয়া। দশটার পর চেকআউট করলে সেদিনের ভাড়া গুনতে হবে। তারপর লন্ডন পাস কালেক্ট করতে হবে সাথে ওয়েষ্টার কার্ড সহ। দাম পড়বে একশত চুয়ান্ন পাউন্ড। লন্ডন পাস একটি প্রায়োরিটি সাইট সিয়িং পাস যা দিয়ে সেন্ট্রাল লন্ডনের প্রায় ষাটটির বেশী দর্শনীয় স্থানে বিনা পয়সায় প্রায়োরিটি এন্ট্রি করা সাথে ছয়দিনে চল্লিশ পাউন্ড টপআপ সহ ওয়েষ্টার কার্ড (একধরনের ম্যাগনেটিক কার্ড) যা দিয়ে এই কদিন ট্রেন এবং বাস জার্নি হয়ে যাবে। ছয়দিনে এই পাস যতগুলো জায়গায় ফ্রি এন্ট্রি দিচ্ছে তার মোট পাউন্ড ভ্যালু দাঁড়ায় প্রায় সাড়ে পাঁচশত পাউন্ডের মত। সবগুলো দর্শনীয় স্থান অবশ্য কাভার করা সম্ভব হবেনা ছ’দিনে কিন্তু দশ বারোটা দেখতে পারলেই পয়সা উশুল। অনলাইনে কার্ড কিনে ফেললাম তৎক্ষণাৎ। সকালে কালেক্ট করতে হবে। পরদিন রিজেন্ট পার্ক এলাকার দর্শনীয় স্থান সমুহ কাভার করার প্ল্যান। তালিকায় আছে লর্ডস ক্রিকেট গ্রাউন্ড, রিজেন্ট পার্ক, ২২১/বি বেকার ষ্ট্রিট শার্লক হোমস্ মিউজিয়াম, মাদাম তুসো মিউজিয়াম। সকাল সকাল বের হতে হবে তার দেরি না করে ঘুম।
সকালে ঘুম থেকে উঠে ব্যাগ গুছিয়ে রিসিপশনে গিয়ে ক্রেডিট কার্ডে বিল চুকিয়ে চেকআউট করলাম। মালপত্র সব বিশ্ববিদ্যালয়ের জিম্মায় রেখে গেলাম। ঘুরোঘুরি শেষ করে হাইডপার্ক যাবার সময় কালেক্ট করে নিব। হেল্প ডেস্কের পুর্ব ইউরোপিয়ান তরুনী বেশ হেল্পফুল। তাকে ধন্যবাদ দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের এখানে ওখানে কিছু ফটুক তুলে বেকার ষ্ট্রিটের দিকে হাটা ধরলাম। সবচে কাছের আন্ডারগ্রাউন্ড ষ্টেশন সেখানেই। গতকাল রাতে অনলাইনে কেনা লন্ডন পাস এবং ওয়েষ্টার কার্ড সংগ্রহ করতে হবে প্রথমে, ট্রাফলগার স্কোয়ারের কাছে অফিস থেকে। বেকার ষ্ট্রিট থেকে আন্ডারগ্রাউন্ডে গেলাম চেরিং ক্রস ষ্টেশন। সেখানে থেকে নেমে মিনিট পাঁচেক হেটে ট্রাফলগার স্কোয়ারের দিকে লন্ডন গ্যালারীর ধার ঘেষে লন্ডন পাস রিডেম্পশন অফিস। সেখান থেকে পাস কালেক্ট করলাম। যাবার পথে অবশ্য লন্ডন গ্যালারীর সামনের বিশাল চত্বরে চমৎকার ভাস্কর্যগুলি দেখে নিতে এবং ছবি তুলতে ভুললামনা। শত শত ট্যুরিষ্ট বসে আছে শান বাঁধানো চত্বরে গ্যালারী খোলার অপেক্ষায়। নাক বোঁচা ট্যুরিষ্ট অনেক, আর চিঙ্গুবিঙ্গুদের মাঝে জাপানী ট্যুরিষ্ট চেনা যায় ছবি তোলার বাতিক দেখে। প্রায় প্রত্যেক জাপানী ট্যুরিষ্টেরর গলায় দামী ক্যামেরা, ক্যানন অথবা নাইকন। আর সারাক্ষন টপাটপ ছবি তুলছে। খালাম্মা ধরনের এক মহিলা লন্ডন পাস, ওয়েষ্টার কার্ড আর বুকলেট হাতে দিয়ে ভালো করে বুঝিয়ে দিল কিভাবে ব্যাবহার করতে হবে। ধন্যবাদ দিয়ে বেরিয়ে ফিরতে পথ ধরলাম।
লন্ডন বিজনেস স্কুল- চেক আউটের পর তোলা
চেরিং ক্রস ষ্টেশন
লন্ডন গ্যালারী চত্বর
লন্ডন গ্যালারি
গ্যালারি চত্বরে সিংহ মুর্তি
লন্ডন গ্যালারি স্তম্ভ
গ্যালারি চত্বরে সিংহ মুর্তি
ন্যাশনাল পোর্ট্রেট গ্যালারী
লন্ডন পাস অফিসের দিকে হাটা
ফিরতি পথে আবার বেকার ষ্ট্রীট ষ্টেশন। সেখান থেকে লর্ডস গ্রাউন্ড দশমিনিটের হাটা পথ। দ্রুত পা চালালাম। বারোটায় একটা গাইডেড ট্যুর শুরু হয়। সেটি ধরতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয় ক্রস করে রিজেন্ট পার্কের ধার ঘেষে জোর হাটা দিলাম। পার্কের এক কোনায় রাস্তার অপর ধারে জাতীয় মসজিদ। সেটি অতিক্রম করে দু’টি মোড় ঘুরেই লর্ডস গ্রাউন্ডের সীমানা। বারোটা প্রায় বেজে গেছে। প্রায় দৌড়ে গিয়ে কাউন্টারে লন্ডন পাস দেখালাম। মহিলা কার্ড চেক করে বা দিকে গেট দেখিয়ে বলল চলে যেতে। লর্ডসে ঢুকে আমি আর আমার সঙ্গী দু’জনেই যাকে বলে বেশ ইমোশনাল হয়ে পড়লাম। দু’জনেই ক্রিকেটের পাঁড় ভক্ত, দু’জনেই কর্পোরেট লেভেলে প্রতিযোগিতামুলক ক্রিকেট খেলি। ক্রিকেটের মক্কা লর্ডসে দাঁড়িয়ে সেরকম একটা অনুভুতি হলো। একজন দেখিয়ে দিল কোথায় যেতে হবে। প্রথমে গেলাম লর্ডস মিউজিয়ামে। মোটাসোটা এক ভদ্রলোক ধারা বর্ননা দিচ্ছেন, তাকে ঘিরে দাঁড়িয়ে ট্যুরিষ্টরা। বেশিরভাগই ভারতীয়, কিছু অষ্ট্রেলিয়ান আর কিউই আছে। বাংলাদেশী মনে হয় আমরা দু’জনই। গাইড ভদ্রলোক চোখ মুদে রসালো ইংরেজীতে লর্ডস এবং অ্যাশেজের হিষ্ট্রি বর্ননা করছেন। খুব সুক্ষভাবে অষ্ট্রেলিয়ানদের কটাক্ষ করতেও ছাড়ছেন না। ধারাবর্ননা শেষে আমাদের নিয়ে গেলেন লর্ডসের প্যাভিলিয়নে। তার আগে অবশ্য মিউজিয়ামের স্যুভেনিরগুলো দেখে নিলাম। মুল অ্যাসেজ ট্রফিটি দেখলাম। খুব ছোট, প্রায় ছ’সাত ইঞ্চি লম্বা, বেশ পুরোনো ট্রফি, মাঝখানে সেই ভস্ম। প্যাভিলিয়নে গিয়ে একে একে দেখলাম আর্ট গ্যালারী, লংরুম, হোম এবং এওয়ে ড্রেসিংরুম, প্রেস কনফারেন্স রুম। লংরুমে এমসিসির মেম্বাররা বসে খেলা দেখেন। নিচতলায় মাঠ ঘেষে এই লং রুম। খেলোয়াড়রা যার যার ড্রেসিংরুম থেকে এই লংরুমের মধ্য দিয়ে বসে থাকা এমসিসি মেম্বারদের মাঝখান দিয়ে হেটে মাঠে প্রবেশ করে। চারপাশের সব কিছুতেই ঐতিহ্যের ছোঁয়া। লর্ডস বেশ ছোট গ্রাউন্ড। আমি নিশ্চিত এই মাঠে আমিও অনায়াসে ছয় হাকাতে পারবো। মাঠ আমার কাছে এতটাই ছোট মনে হয়েছে। লর্ডসের ড্রেসিংরুমে যেসব খেলোয়াড়রা সেঞ্চুরি কিংবা পাঁচ উইকেট নিয়েছেন ব্যাটসম্যান ও বোলারদের আলাদা আলাদা বোর্ডে সবার নাম আছে। আমাদের দেশের তামিম এবং শাহাদাতের নাম দেখে বেশ গর্ব হলো যদিও শাহাদাতের সাম্প্রতিক কর্মকান্ড গর্ব করার মত নয়। প্যাভিলিয়ন পর্ব শেষ করে তারপর গেলাম গ্যালারীতে। সেখানে আরো কিছু গল্প শুনে, লর্ডসের প্র্যাকটিস গ্রাউন্ড এবং স্যুভেনির শপ ঘুরে সবমিলিয়ে ঘন্টাখানেক পর বের হলাম।
লর্ডসের পথে হাটা-
জাতীয় মসজিদ (রিজেন্ট পার্কের পাশে)
জাতীয় মসজিদ
মুল অ্যাসেজ ট্রফি
মুল অ্যাসেজ ট্রফি
লর্ডস অনার্স বোর্ডে তামিম ইকবালের নাম
লর্ডস অনার্স বোর্ডে বোলারদের তালিকায় শাহাদাতের নাম
লর্ডস গ্রাউন্ড- ইংল্যান্ডের ড্রেসিং রুম থেকে যেমন দেখা যায়
লর্ডস গ্রাউন্ড- লং রুম থেকে তোলা
লর্ডস গ্যালারি
লর্ডস গ্যালারি
লর্ডস প্যাভিলিয়ন
গাইডের ধারা বর্ননা
লর্ডস
লর্ডস পার্কে ডব্লিউ জি গ্রেস এর মুর্তি
লর্ডস মিউজিয়াম
বের হয়ে দেখি হাসান ভাই অপেক্ষা করছেন লর্ডসের গেটের বাইরে। উনি আমাদের প্রাক্তন কলিগ এবং বন্ধু। দেশে থাকতে একসঙ্গে ক্রিকেট খেলেছি অনেক। এখন লন্ডনে সেটল্ড। আমরা ফোন করে বলে দিয়েছিলাম লর্ডসে যাচ্ছি। তিনজন মিলে কিছু ছবি তুললাম। আমার সঙ্গী জোহরের নামাজ পড়তে সেন্ট্রাল মসজিদে ঢুকলো। আমি আর হাসান ভাই ঢুকলাম রিজেন্ট পার্কে। পার্কের গাছ সব ন্যাড়া। বসন্তে আবার সবুজে ভরে উঠবে। খুব বেশী মানুষ নেই পার্কে। মাঝখানে লম্বাটে লেকে অনেক পাখি। হাস জাতীয় পাখিই বেশী। কবুতর ও আছে অনেক। বাচ্চারা খেলছে, স্কুটি চালাচ্ছে, বড়রা কানে ইয়ারফোন গুজে দৌড়াচ্ছে। কেউ সাইকেল চালাচ্ছে কিংবা কবুতরকে দানা খাওয়াচ্ছে। কিছুক্ষন এদিক ওদিক ঘুরাঘুরির পর আমাদের সঙ্গী নামাজ শেষ করে যোগ দিল। তিনজন পার্কের ভিতর দিয়ে হেটে বেকার ষ্ট্রিটের দিকে রওনা দিলাম। গন্তব্য আমার অনেক প্রতীক্ষিত ২২১/বি বেকার ষ্ট্রিট শার্লক হোমস মিউজিয়াম। গত কয়েকদিনে এ জায়গা দিয়ে অনেকবার হেটে গেছি কিন্তু মিউজিয়ামের ভিতর ঢোকা হয়নি। শার্লক হোমস মিউজিয়াম লন্ডন পাস দিয়ে কাভার হয়না, আলাদা টিকেট কিনতে হলো। জনপ্রতি পনর পাউন্ড করে নিল। হাসান ভাই টাকা দিলেন। অনেক ট্যুরিষ্ট। বেশিরভাগই নাকবোচা চাইনিজ বা জাপানিজ। আমি ছোটবেলা থেকেই শার্লক হোমসের বিরাট ভক্ত। তাকে নিয়ে লেখা সব গল্প, উপন্যাস আমার পড়া। অনেকদিন থেকেই স্বপ্ন ছিল এ জায়গাটি দেখার। ছোট্ট তিনতলা বাড়িটি এমনভাবে সাজানো দেখে মনে হয় সেখানে শার্লক হোমস সত্যি সত্যি বাস করতো। ষ্টাডি রুম, বেড রুম, লিভিংরুম সব কিছু ওই সময়কার ভিক্টোরিয়ান ডিজাইনে সাজানো। শার্লক হোমসের বেশ কয়েকজন বিখ্যাত ভিলেনের লাইফ সাইজ মুর্তিও আছে যার মধ্যে অন্যতম প্রফেসর মরিয়ার্টি আর বাস্কারভিলের সেই হাউন্ডের মাথা। শার্লক হোমসের ষ্টাডি রুমে আরাম কেদারায় বসে দু’প্রান্তে কার্নিস দেয়া তার টুপি পরে পাইপ মুখে নিয়ে ছবি তুললাম। প্রায় এক ঘন্টা পর সেখান থেকে বের হলাম।
রিজেন্ট পার্ক লেক
রিজেন্ট পার্ক
২২১/বি বেকার স্ট্রিট
শার্লকের খাট
শার্লক হোমসের লিভিং রুমের জানালা দিয়ে দেখা লন্ডন
শার্লকের ডাইনিং
প্রফেসর মরিয়ার্টি (শার্লক হোমসের সেরা ভিলেন)
শার্লকের ষ্টাডি রুম
হাউন্ড অব বাস্কারভিল
বিকেল গড়িয়ে গেছে। মাদাম তুসো দেখার সময় নেই আজ আর। সেখান থেকে হেটে গেলাম ইউনিভার্সিটি। কুপন জমা দিয়ে লাগেজ কালেক্ট করলাম। বের হয়ে একটি কালো ক্যাব দাঁড় করালাম। ক্যাবগুলো একটু অদ্ভুত। পেছনে মুখোমুখি বসা যায়। অনেক জায়গা। দুটি ঢাউস স্যুটকেস, তিনটি হ্যাভারসেক ঢুকিয়েও আমরা তিনজন আরামসে বসলাম। অলিগলির ভিতর দিয়ে পনর মিনিটের মধ্যে হাইড পার্ক এলাকায় আমাদের হোটেলে চলে আসলাম। ভাড়া উঠলো সাত পাউন্ডের মত। ভাড়া চুকিয়ে চেক ইন করলাম। রিশিপসন কাউন্টারে একটি কাঁচের পাত্রে ফ্রি ডার্ক চকলেট বার রাখা আছ। এক মুঠো নিয়ে নিলাম। তারপর চাবি নিয়ে রুমে প্রবেশ করলাম। দোতালায়। বেয়ারা লাগেজ নিয়ে আসলো। ইউরোপীয় ষ্ট্যান্ডার্ডে রুমখানা বেশ বড়। দুটো আরামদায়ক বিছানা। মাইক্রোওয়েভ ওভেন আছে। কফি বানানোর এন্তেজাম সাথে ফ্রি কফি স্যাশে এবং কুকিজ। অনেকগুলো টিভি চ্যানেল। হাইস্পিড ওয়াইফাই। বাথরুমে টয়লেট্রিজ ভর্তি। ট্রিপ অ্যাডভাইজরের রেকমেন্ডেশন তাহলে ঠিকই আছে। ইতিমধ্যে সন্ধে হয়ে এসেছে। রুমে কিছুক্ষন বিশ্রাম আর আড্ডা হলো। পায়ের উপর দিয়ে অনেক ধকল গেছে আজ। ঠান্ডাও পড়েছে বেশ। ভারি জ্যাকেটখানা চাপিয়ে সাতটার দিকে তিনজন বের হলাম আবার। গন্তব্য শপিং এরিয়া। অক্সফোর্ড সার্কাস ষ্ট্রিট। জমজমাট এলাকা। শনিবার ছুটির দিন। পুরো এলাকা নানা দেশের পর্যটকে গমগম করছে। দু’পাশের ভিক্টোরিয়ান ধাঁচের বিল্ডিংয়ে সব ব্র্যান্ডেড আউটলেট। রাস্তার ধারে সাউন্ড সিষ্টেম সাজিয়ে এক হরবোলা নানা ধরনের শব্দ করছে। ট্যুরিষ্টরা চারপাশ ঘিরে উপভোগ করছে। নিচে একটি কাপড় বিছানো। ভালো লাগলে কেউ কেউ টাকা বা কয়েন দিচ্ছে। অনেকে ভিডিও করছে। আমি স্পোর্টসের দোকান খুঁজতে লাগলাম। ভালো একটি ক্রিকেট ব্যাট কেনার প্ল্যান আছে। আর কিছুদুর হাটার পর দেখলাম এক ষ্ট্রিট ব্যান্ড হেভিমেটাল পরিবেশন করছে। বাজানোর কোয়ালিটি বেশ ভালো। অনেক মানুষ ভিড় করে গান শুনছে।
অক্সফোর্ড সার্কাস ষ্ট্রিট
চায়না টাউন
রিপ্লিজ বিলিভ ইট অর নট বিল্ডিং
উল্টো দিকেই পেয়ে গেলাম ইংল্যান্ডের সবচেয়ে বড় স্পোর্টস রিটেইল চেইন স্পোর্টস ডাইরেক্ট ডট কম এর আউটলেট। তিনতলা দোকান। জুতোর উপর বেশ ভালো ডিসকাউন্ট চলছে। এক সেলস্ম্যানকে জিজ্ঞসা করলাম ক্রিকেটের জিনিসপাতি কোথায়, বলল তিনতলায়। সেখানে গিয়ে দেখলাম গোটা বিশেক ব্যাট সাজানো, বল, প্যাড, গ্লোভস, হেলমেট সহ ক্রিকেটের আনুসাঙ্গিক জিনিসপত্রও আছে। ব্যাটগুলো ট্রাই করে দেখলাম। পছন্দ হলোনা। সাইক্লিং সেকশনে গেলাম। কিছু সাইক্লিং গিয়ার্স কিনলাম। ভালোই সস্তা পড়লো বাংলাদেশের তুলনায়। যদিও লন্ডনে সবকিছুই বেশী দাম। চকলেট আর স্নিকার্স ছাড়া আর কিছু আমার কাছে সস্তা মনে হয়নি। বাঙ্গালী পাড়ায় এক বাটি ডালের দামও চার পাউন্ড। যাই হোক এই আউটলেটে ক্রিকেট ছাড়া বাকি সব স্পোর্টস ইভেন্টেরই ভালো কালেকশন আছে যা আসলে ইংল্যান্ডে ক্রিকেটের পড়তি জনপ্রিয়তাকেই ইন্ডিকেট করে। সেখান থেকে বের হয়ে হেটে হেটে গেলাম রিজেন্ট ষ্ট্রিটে। সেখানে ‘রিপ্লি’জ বিলিভ ইট অর নট’ মিউজিয়াম। কিছুক্ষন ঢু মারলাম। তারপর গেলাম লিষ্টার স্কয়ার হয়ে চায়না টাউন। পৃথিবীর সব চায়না টাউনের গন্ধ মনে হয় এক রকম। তবে লন্ডনের চায়না টাউন অনেক পরিষ্কার মনে হয়েছে, কিন্তু ছোট। চায়না টাউনের রাস্তায় হাটছিলাম এমন সময় ইস্কন মন্দিরের হরে কৃষ্ণ ভক্তরা গেরুয়া কাপড় পড়ে ঢোল আর ঝুনঝুনি বাজিয়ে নাচতে নাচতে আমাদের অতিক্রম করে চলে গেল। অধিকাংশই সাদা চামড়া। এক সুন্দরী গেরুয়া কাপড় পড়া কৃষ্ণ ভক্ত আমার হাতে ক্যান্ডি ধরিয়ে দিলো। অস্থির পশ্চিমা সমাজে ইয়োগা আর মিষ্টিসিজমের নামে ভালোই ধান্ধা করছে এরা। অনেক সাদা চামড়াকে দলে ভিড়িয়েছে দেখা যাচ্ছে।
রিপ্লিজ বিলিভ ইট অর নট
কৃষ্ণ ভক্তের দল (চায়না টাউন)
ইতিমধ্যে রাতের খাবারের সময় হয়ে গেল। রাত ও হয়েছে অনেক। হাসান ভাই লন্ডনের বাইরে থাকেন। ওনাকেও বাসায় যেতে হবে। হাসান ভাইয়ের প্ল্যান আমাদের কাবাব খাওয়াবেন। সুতরাং যেতে হবে বাঙ্গালী এলাকা হোয়াইট চ্যাপেল, সেখানে তৈয়ব নামের একটি কাবাবের দোকানে যাওয়ার প্ল্যান। দু’বার ট্রেন বদল করে আধাঘন্টার মধ্যে পৌছে গেলাম হোয়াইট চ্যাপেল। আন্ডার গ্রাউন্ড থেকে বের হতেই বোঝা গেল বাঙ্গালী এলাকা। ঘিঞ্জি দোকানপাটে বাংলা আর ইংরেজীতে নাম লেখা। রাস্তাগুলো অপেক্ষাকৃত ময়লা। মুহুর্তে মনে হল ঢাকায় চলে এসেছি। বিজাতীয় আনন্দও লাগলো এইএ ভেবে যে উন্নত দেশে ও আমাদের দেশের মত ময়লা শ্রীহীন জায়গা আছে। গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি শুরু হলে আমরা জোর কদমে হাটা দিলাম। তৈয়বে গিয়ে দেখি অনেক ভিড়। ভিতরে তিল ধারনের জায়গা নেই। জায়গা না পেয়ে মানুষ বাইরে রাস্তায় দাঁড়িয়ে আছে। খুব জনপ্রিয় বোঝা গেল। খদ্দের বেশীর ভাগই সাদা চামড়া। মসলাদার খাবারে ভালোই মজেছে এরা। ভিতরে ঢুকে জিজ্ঞেস করে আসলাম কখন টেবিল খালি পাওয়া যাবে। জানালো আধাঘন্টা। এতক্ষন অপেক্ষা করার ধৈর্য এবং সময় কোনটাই নেই। তাই ষ্টেশনের দিকে হাটা দিলাম, কাছাকাছি আরেকটা বাংলা রেষ্টুরেন্ট দেখেছি। ভালোই মনে হয়েছে। সেখানে ঢুকলাম। ভাত, পরটা, ঝাল চিকেন, মাছ ভাজা, গরু, খাসি আর ডাল অর্ডার করলাম। রান্না বেশ ভালো, হাপুস হুপুস করে খেলাম। সব শেষে চা। বিল আসলো মোট চুয়াল্লিশ পাউন্ড। হোটেলের মানের তুলনায় নেহায়েত কম না, ঢাকায় হলে এই খাবারের দাম বড়জোর এক হাজার টাকা হত। হাসান ভাইকে হোয়াইট চ্যাপেল ষ্টেশনে বিদায় দিয়ে আমরা বেইসওয়াটার ষ্টেশনের ট্রেন ধরলাম। সরাসরি কোন ট্রেন নেই, মাঝখানে বদল করতে হবে। সারাদিন দৌড়ের ওপর একটা দিন গেল। হোটেলে ফিরে বিছানায় শুয়ে হাইস্পিড ওয়াইফাইয়ে ফেসবুকিং আর পরদিনের ঘোরাঘুরির প্ল্যান দাঁড় করিয়ে ঘুম।
(এই ট্যুরের সব ছবি মোবাইল ফোনে তোলা, তাড়াহুড়ার কারনে ক্যামেরা নিতে ভুলে গিয়েছিলাম)
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ রাত ১২:০৩