অফিস তো আর ছুটি থাকে না। কাজেই, নিজের ইচ্ছের বিরুদ্ধেও যেতে হল।
আমার ইউনিভার্সিটিতে ক্লাস নেয়ার জন্য নতুন একটা বিল্ডিং করা হয়েছে। কিন্তু মুশকিল হল- সেখানে wifi network নেই। কাজেই, খেলার স্কোর দেখারও কোন উপায় নেই। প্রথম দু-ঘন্টার ক্লাস নিয়ে পড়িমরি করে গাড়ি নিয়ে চলে এলাম আমার অফিস বিল্ডিঙে। গাড়ি থেকে নামতে নামতেই স্কোর দেখলাম।
ওহ মাই গড !
ইংল্যান্ডের ৬ উইকেট নাই !
ক্যামনে কি !
শেষ বার দেখে আসছি ইংল্যান্ডের মাত্র একটা উইকেট গেছে। তাও আবার রান আউট। সেখান থেকে ৬ উইকেট।
তাড়াতাড়ি কম্পিউটার চালু করে লাইভ stream দেখার চেষ্টা করলাম। নাহহ............ অফিস নেটে কিছু restriction দিয়ে দেয়াতে Live Stream দেখা যায় না। আগেও জানতাম।
যাই হোক, লাইভ স্কোরে দেখার জন্য চলে গেলাম espncric-এ চলে গেলাম। আর মোবাইল application এ কিছু ছোট ছোট ভিডিও ক্লিপ দেখছিলাম।
বিকেলের দিকে বলে আমি ছাড়া অফিসে কেউই ছিল না। খুব টেনশন নিয়ে পুরো খেলাটা ফলো করছিলাম। রুবেল কে বল দেয়ার আগ মুহূর্ত পর্যন্ত হতাশাই কাজ করছিল। রুবেলের হাতে বল, আর মুহূর্তেই জিতে গেল বাংলাদেশ।
ওহ মাই গড। ...ওহ মাই গড। ওহ মাই গড। ওহ মাই গড।
বাংলাদেশ জিতে গেছে। কোন ভাবেই বিশ্বাস হচ্ছে না। আমার চোখ দিয়ে অনবরত পানি পরছে। ফুপিয়ে ফুপিয়ে কাঁদছি। কোন ভাবেই নিজেকে দমাতে পারছি না। এত কান্না কোথায় থেকে আসে! কেন আসে ! আমি কাঁদতেই আছি। কাঁদতেই আছি।
হঠাৎ একটা স্টুডেন্ট এসে পরল। বিব্রতকর অবস্থা। তাড়াতাড়ি টিস্যু দিয়ে চোখ মুছে ফেলার চেষ্টা করতে থাকলাম। এই মাথায় সাদা টারবান পড়া সৌদি স্টুডেন্টকে কিভাবে বোঝাবো- কেন কাঁদছি!
তাকে কোন রকম বিদায় দিয়ে অফিস রুমের দরজাটা ভেতর থেকে লাগিয়ে দিলাম। অনেকক্ষণ হুহু করে কাঁদলাম। এই ছোট্ট গরীব দেশটার জন্য মায়ায় মনটা ভরে উঠতে থাকল।
কে কিভাবে ভাবে জানিনা। এই দেশটার জন্য আমার খুব কষ্ট হয়। সারাক্ষন বুকের মাঝে চাঁপা কষ্ট নিয়ে ঘুরি। এই সুদূর প্রবাসে এসেও যখন দেখি বাংলাদেশীরাই সবচেয়ে নিম্ন স্তরের কাজ গুলো করে, কষ্ট করে, নির্যাতিত হয়, অবহেলিত হয়...... দুঃখের সীমা থাকে না। এমন কি ভারতীয়, পাকিস্তানীরাও বাংলাদেশকে প্রতিনিয়ত undermine করে। উপহাস করে। এমনকি উরদু-হিন্দি ভাষাও যেন বাংলা ভাষা থেকে বেশি মর্যাদার। এত সব উপহাসের মাঝে দাড়িয়ে এই একটা জয় আমার কাছে অনেক বড় মনে হয়। চোখের জল মুছতে মুছতে নেটে খুজি কোন বিদেশী পত্রিকায় বাংলাদেশ সম্পর্কে positive কি বলছে।
কেমন স্বপ্নের মত লাগছে। মাথার ভেতর হালকা হালকা। মনে হচ্ছে সমস্ত শক্তি দিয়ে চিৎকার করে বলি- আমরা জিতেছি। দেখ! আমরাই জিতেছি! আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালবাসি। খুব ভালোবাসি। খুব বেশি ভালোবাসি।