somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কালের ডাইরী থেকে : বাংলাদেশের ৪র্থ সর্বোচ্চ চুড়া কংদুক বা যোগী পাহাড় আরোহণের ইতিহাস ।

২৮ শে মার্চ, ২০১৫ সকাল ১০:৩৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


কংদুক বা যোগী পাহাড় সামিটের উদ্দেশ্যে : লোহ ঝিরি ধরে ট্রেকিং, দলিয়ান পাড়ার পথে ।

যোগী পাহাড় আর মদক রেঞ্জের আশে-পাশের চুড়াগুলোতে আমার চোখ আটকে যায় প্রথমবার বাংলাদেশের সর্বোচ্চ চুড়া 'মদক তং' বা 'সাকা হাফং' সামিট করার পরপর-ই। সাকা সামিটে করে দক্ষিণে যাবার সময় খাড়া দেওয়ালের মত চুড়া থেকে কোন ভাবেই চোখ সরাতে পারছিলাম না । সাজাই পাড়া থেকে রেমাক্রি যাবার পথে বেশ কয়বার স্হহানীয় গ্রামবাসীদের কাছে এই চুড়াগুলো সম্পর্কে জানতে চাই। চুড়াগুলো নিয়ে বিভিন্ন মিথও শুনতে পাই সে সময় । লোকেরা বলছিল ঐ পাহাড় উঠলে মানুষ বাচে না। ঢাকা থেকে এসে একটা দল উঠেছিল কিন্তু তারা বাচেনি, যাবার পথে এক্সিডেন্টে মারা যায় । যোগী পাহাড়ে প্রথম যারা অভিযান করেছিল ফিরতি পথে তাদের এক্সিডেন্ট হয় সেটা সত্য, অভিযাত্রী দলের দুই জন সদস্য ডা: মুগ্ধ আর সুজন মৃত্যু বরণ করে সেটাও সত্য - তবে দলের বাকী সদস্য মাইনুল আর সালেহিন মর্মান্তিক ভাবে আহত হয়ে বেচে যায় সেটাও সত্য ! আর যা থেকে এটাও প্রমাণ হয় একশভাগ মৃত্যু নিশ্চিত - এমন কোন কথা প্রমাণিত নয় ।

যাই হোক পাহাড় চড়ার মরণ নেশা মাথায় চেপে বসলে বাচাতেই হবে এজাতীয় ফন্দি- ফিকির খুব একটা জায়গা পায় না । আর২০১৪র এপ্রিলে জও-ত্লং সামিটের পর মদক রেঞ্জের একমাত্র আকর্ষণ বা মোহাবিষ্টতার অনুঘটক হয়ে দাড়ায় এই যোগী পাহাড় । যোগী নামটা ত্রিপুরা গোষ্ঠীর দেওয়া, যার অর্থ বাতাস। যোগী পাহাড়কে ত্রিপুরারা বলে যোগী হাফং বা বাতাসের পাহাড় । স্হনীয় মারমা ও বোমদের দেওয়া নামও নাম আছে । একটা নাম হচ্ছে কংদুক । সম্ভবত নামটা মারমাদের দেওয়া । বোমরা ওদের ভাষায় এটাকে ডাকে নেড়া পাহাড় । আমাদের অভিযাণের সময় আমারা বেশ কিছু গাছ-পালা পেলেও আগে এই পাহাড়ের চুড়াটি ছিল একদম নেড়া । ত্রিপুরাদের 'বাতাস' আর বোমদের 'নেড়া' এই দুই নাম থেকে যেটা বুঝা যায় তীব্র বাতাস আর পাথুরে ভুমির কারণে এখানে গাছ-পালা কিছু হত না ।



প্রথম অভিযাত্রী দলের প্রয়াত সদস্য মুগ্ধর স্বপ্ন ছিল নাইখ্যামুখ থেকে শুরু করে নাইখ্যাঝিরির শেষ পর্যন্ত এক্সপ্লোর করার । যার গন্তব্য শেষপর্যন্ত কংদুক বা যোগী পাহাড়ে - ঝিরির উৎসমুখে । আর পাহাড়ী ঝিরির স্হানে স্হানে অনেক গভীর 'খুম' বা গভীর জায়গা থাকে যেগুলো পার হওয়া ভেলা ছাড়া সম্ভব নয় । আর এই ভেলা তৈরীর জন্য পাহাড় বেয়ে প্রয়োজণীয় গাছ/বাশ কাটাও একটা সময় সাপেক্ষ ও খুবই কষ্টকর একটা কাজ। তাই মুগ্ধদের অভিযানে প্রচুর শ্রম আর সময় চলে যায় মুল ঝিরির রাস্তা ধরে পথ চলতেই। পরিকল্পনা মাফিক ঝিরি পথ শেষ করে কংদুকের শেষ মাথায় তারা যখন পৌছে তখন স্হানীয়রা পাহাড়ে উঠার বিষয়ে কেউই কোন স হযোগিতা করতে সম্মত হয়নি । দলের সদস্য মাইনুল বলেছিল যে সেখানেও এরকম জনশ্রতি ছিল যে এি পাহাড়ে উঠলে মানুষ মারা যায়, ফিয়ে আসে না ।


বাংলাদেশের অভিযানের ইতিহাসের সবচেয়ে অনবদ্য এই অভিযাত্রায় দলের সদস্যরা কোন প্রকার স্হানীয়দের সাহায্য সহযোগিতা না নিয়ে সব রকম বাধা-বিঘ্ন আর উপেক্ষা করে , নিজেরাই এগিয়ে যায় সামিটের পথে । চুড়ায় পৌছতে পৌছতে সন্ধা নেমে আসে । পর্বতের শীর্ষেই রাত কাটিয়ে দেয় এই অদম্য অভিযাত্রী দল। একটা কঠিন অজানা এবং ভয়াবহ রকমরে খাড়া পথে ধরে নেমে আসে দলের সদস্যরা। পরের ইতিহাসটা খুবই করুণ আর মর্মস্পর্শী । ভয়াবহ দূর্গটনায় মারা যায় মুগ্ধ আর সুজন। আহত হয়ে দিনের পর দিন হাসপাতালের বিছানায় কাটিয়েছিল মাইনুল আর সালেহীন। আর যোগীতে কোন দলের অভিযানও বন্ধ ছিল প্রায় আড়াই বছর ।

কংদুক বা যোগী পাহাড়ের কিছু কিছু জায়গা একেবারেই খাড়া আর সেখানে কোন গাছপালাও হয়না । আর এই নেড়া যায়গাটা কতটা খাড়া তা গুগুল আর্থ দেখে বুঝাও যায় না । আর এখানেই ভুল বুঝে সহজতর একটা চুড়া মনে করে ২০১৪র অক্টোবরে আমি আর সাদেক হোসেন রওনা দেই সামিটের উদ্দেশ্যে । সাদেক হোসেন সনি আমাদের দেশের একজন শক্তিশালী ও সম্ভবনাময় পর্বতারোহী । ভারতের হিমালয়ান মাউন্টেনিয়ারিং এসোসিয়েশনের বেসিক ও এডভান্স কোর্স ছাড়াও এভারেষ্টের কাছে কালাপাথার এলাকায় ১৮০০০ ফুট পর্যন্ত ট্রেকিংএর অভিজ্ঞতার অধিকারী সনি ।



যোগীর খাড়া দেয়ালের পাশ বেয়ে উপরে উঠছে নওশাদ( ছবিতে লাল দাগ দিয়ে চিন্হিত করা )

(চলবে)


সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে মার্চ, ২০১৫ বিকাল ৪:১১
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভারত থেকে শেখ হাসিনার প্রথম বিবৃতি, যা বললেন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:৩২



জেলহত্যা দিবস উপলক্ষে বিবৃতি দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শনিবার (২ নভেম্বর) বিকালে দলটির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এটি পোস্ট করা হয়। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার... ...বাকিটুকু পড়ুন

এখানে সেরা ইগো কার?

লিখেছেন শূন্য সারমর্ম, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৩:২৪






ব্লগারদের মাঝে কাদের ইগো জনিত সমস্যা আছে? ইগোককে আঘাত লাগলে কেউ কেউ আদিম রোমান শিল্ড ব্যবহার করে,নাহয় পুতিনের মত প্রটেকটেড বুলেটপ্রুফ গাড়ি ব্যবহার করে।ইগো আপনাকে কোথায় নিয়ে গিয়েছে, টের পেয়েছেন... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবং আপনারা যারা কবিতা শুনতে জানেন না।

লিখেছেন চারাগাছ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:২৮

‘August is the cruelest month’ বিশ্বখ্যাত কবি টিএস এলিয়টের কালজয়ী কাব্যগ্রন্থ ‘The Westland’-র এ অমোঘ বাণী যে বাংলাদেশের পরিপ্রেক্ষিতে এমন করে এক অনিবার্য নিয়তির মতো সত্য হয়ে উঠবে, তা বাঙালি... ...বাকিটুকু পড়ুন

=বেলা যে যায় চলে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:৪৯



রেকর্ডহীন জীবন, হতে পারলো না ক্যাসেট বক্স
কত গান কত গল্প অবহেলায় গেলো ক্ষয়ে,
বন্ধ করলেই চোখ, দেখতে পাই কত সহস্র সুখ নক্ষত্র
কত মোহ নিহারীকা ঘুরে বেড়ায় চোখের পাতায়।

সব কী... ...বাকিটুকু পড়ুন

মার্কিন নির্বাচনে এবার থাকছে বাংলা ব্যালট পেপার

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৫:২৪


আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বাংলার উজ্জ্বল উপস্থিতি। একমাত্র এশীয় ভাষা হিসাবে ব্যালট পেপারে স্থান করে নিল বাংলা।সংবাদ সংস্থা পিটিআই-এর খবর অনুযায়ী, নিউ ইয়র্ক প্রদেশের ব্যালট পেপারে অন্য ভাষার সঙ্গে রয়েছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×