কেওক্রাডং এর চুড়া থেকে মাইথাইজমা , মেঘ চুম্বন করছে পাহাড় চুড়া কে ।
একবছর ধরে বাংলাদেশের উচু চুড়াগুলো বেয়ে উঠা আর মেপে দেখার কাজ করতে করতে একসময় বুঝলাম শারীরিক - মানষিক সব ভাবেই একেবারে ক্লান্ত হয়ে গেছি। মনে মনে ১০ -১২ টা পিক সামিট + রিডিং নেবার ইচ্ছা থাকলেও সেটাকে ৭ এ থামিয়ে দিলাম । আর ৭ টি চুড়ার সবগুলো মাপতে গিয়ে শেষটা ছিল এই মাইথাইজমা । ৬ষ্ঠ চুড়া । মজার ব্যাপার অন্যান্য চুড়ার তুলনায় এটার পথ ঘাট বেরও হয়েছিল অনেক দেরীতে । শীর্ষ সাতটি চুড়ার সবকয়টিতে আমার আগে আর কোন ট্রেকার যায় নি, তাই একটা কথিত 'রেকর্ডের' হাত ছানিও ছিল মনে মনে । তবে যেটা সবচেয়ে বেশী চাইছিলাম মিশনটা শেষ করতে । আমি আসলেই ক্লান্ত ও বিদ্ধস্ত ছিলাম । টাকা- পয়সাও ধার দেনা হয়েছে অনেক টা । সবমিলিয়ে আমি একটু সস্তি চাইছিলাম, একটু বিশ্রাম চাইছিলাম । ঘরে বসে নিশ্চিন্তে ঘুমাতে চাইছিলাম।
আমি এতটাই মরিয়া হয়েগিয়েছিলাম যে মনে মনে ঠিক করে ফেলেছিলাম এইবার যদি মাইথাইজমা সামিট না হয়, তবে ৬ষ্ঠ চুড়াকে বাদদিয়েই প্রথম পাচটা চুড়ার সামিট রিডিং দিয়ে একটা ঘোষণা দিয়ে দিব, " কেওক্রাডং বাংলাদেশের সবচেয়ে উচু চুড়া না, তাজিংডং ও না" । যদিও এটা নিয়ে অনেক আগেই বেশ কিছু পোষ্ট দিয়েছিলাম, কিন্তু এবারের ঘোষণাটা হত " আমি নিজে মেপে দেখেছি পাচটা চুড়া " - এরকম প্রত্যক্ষ
সাক্ষ্য নির্ভর । যাই হোক ভাগ্য সুপ্রসন্ন ছিল বলতে হবে, মনে মনে যা চাইছিলাম , সাতটি চুড়া মেপে তবেই ঘোষণা দিব সেটারই সুযোগ হল ।
কেওক্রাডং - তাজিংডং ট্রেইল থেকে তোলা : দূরে দুই মাথা ওয়ালা পাহাড়টা দুমলং ( বাংলাদেশে তৃতীয় ), আর তার ডানে দেখা যাচ্ছে ৬ষ্ঠ চুড়া মাইথাইজমা ।
নভেম্বরে দুমলং ( পাশের পাহাড়টা, বাংলাদেশর তৃতীয় ) সামিটের সময়-ই ইচ্ছা ছিল একবারে দুইটা পাহাড়-ই সামিট করব । কিন্তু এবার ( ২০১৪ তে) বর্ষার অনেক পরেও যথেষ্ট বৃষ্টি হয়েছে বান্দরবন এলাকায় । শীতকালে জংগল শুকিয়ে ঝোপ ঝাড় একদম কমে যায় - সেটা হওয়ার কোন নাম নিশাণাও ছিল না নভেম্বরে । বর্ষ শেষ হয়েছে আদৌ মনে হচ্ছিল না দুমলং চড়ার সময় । মাইথাইজমার গা বেয়েছিল ঘন ছনের জংগল । গাইড মালিরাম - বাহাদুর কারবারী কেউই সাহষ দিলানা । বলে দিল ঝানুয়ারীটে আসতে জনংল কমে যাবে ।
পুকুর পাড়া পাস থেকে তোলা সকালের ছবি, মেঘের উপর মাইথাইজমা ( উচুটা ) একটু বামে তিসা/তুইসা ক্লমা।
ট্রেকিং রুট : রুমাবাজার থেকে বগালেক বা বগা মুখ হয়ে যেতে হবে পুকুর পাড়া ।সেখানে অনিন্দ সুন্দর রাইখান লেকের দুই ধারে দুইটা গ্রাম, পুকুর পাড়া আর পাংজং পাড়া । যেকোন একটায় থাকলেই হবে ।সেখান থেকে সোজা পুবে রাইখাং নদী পার হয়ে মাইথাই এর রাস্তা ।
এই লেকের পাশ দিয়েই যেতে হয় মাই থাই জমা । লেকের এক পাশে পুকুর পাড়া আর্মি ক্যাম্প :
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ বিকাল ৫:৫৯