আগের পর্বে এভারেষ্ট কেলেংকারীর ধারাবাহিক ইতিহাস: ১ম পর্ব , লিখেছিলাম। লেখাটি ছিল মুসা ইব্রাহীমের, সেখানে উনি উল্লেখ করেছিলেন যে পর্বত আরোহনের মিথ্যা সার্টিফিকেট তারও আছে, মুহিতেরও আছে!!
আজ এমন একজনের সার্টিফিকেটের ঘটনা লিখব, যিনি সত্যই আমার কাছে অনেক শ্রদ্ধার পাত্র, তিনিই বাংলাদেশের প্রথম পর্বতারোহী যিনি NMA ( Nepal Mountaineering association) তালিকাভুক্ত কোন পর্বত আরোহনের গৌরব অর্জন করেন। ট্রেকিং, এডভেন্চার আর মাউন্টেনিয়ারিং জগত সম্পর্কে আমি জানা শুনা হয়, বলতে গেলে ওনাকে দিয়েই।উনি হচ্ছেন সাগর ভাই। খুলনা ভার্সিটি আর্কিটেকচারের প্রথম ব্যাচের । যতদুর মনে পরে উনি আর আরিফ ভাই, ভার্সিটিতে পরার সময়ই ৯৬-৯৭ এর দিকে নেপালের অন্নপূর্ণা রিজিয়নে ট্রেকিং করেন! পাহাড়কে ভালবাসতেন তিনি, এখনও বাসেন।ক্যারিয়ার, বিয়ে-শাদী আর সংসারের আগ্রহ কখনই দেখিনি ওনার কাছে পাহাড় এডভেন্চার অথবা ট্রেকিং থেকে বেশী হয়েছে!
যাই হোক আজকের মিডিয়া মুখী কর্পোরেট মাউন্টেনিয়ারদের মত নয়, চাকুরীর পয়সা বাচিয়ে, প্রায় ২১০০০ ফুট সিংগু চুলি টার্গেট করেন। এর আগে নেপালের কুমবু রিজিওনে এভারেষ্ট বেস ক্যাম্প - গোকিও - চোলা পাস একলা ট্রেক করা সাগর ভাই প্রথম NMA পিক অভিজানে বের হন, এবারও একাই! এডভেন্চার পরিমন্ডলে ওনার নাম হয়ে যায় "সলু" । সলো ( একলা ) চলেও লক্ষে যিনি স্হির থাকেন।
কাটমুন্ডুতে অফিসিয়াল ফর্মালিটিস সেরে, ক্লইম্বিং শেরপা নিয়ে পোখরা, সেখান থেকে অন্নপূর্না সার্কিট। ৮০০০ মিটার অন্নপুর্ণার একদম লাগালাগি সিংগু চুলি। আর তার কাছেই থর্পু চুলি ১৮০০০ + ফুট। এটাও NMA পিক। বেস ক্যাম্পে প্রবল তুষার পাতের জন্য অভিযান বিঘ্ন হল, অপেক্ষার পালা। তারপর আব হাওয়া কিছু ভাল হলে গ্লেসিয়ার নেগোশিয়েট করে সিংগু-থর্পু কানেকটিং রীজের পাদদেশে। সেখন থেকে খাড়া ৬০/৭০ ডিগ্রী স্লোপ, উঠতে হবে রীজের মাথায়। বিপজ্জনক এই পথে রোপ ফিক্স করা হল। আইস এক্স - ক্র্যাম্পন ব্যবহার করে রীজ টপ! এখান থেকে ডানে থর্প চুলি আর বামে সিংগু।
কিন্তু এই দীর্ঘ কষ্টকর পথের ধকল সয়ে, এত ছোট টিম আর অল্প রশদ নিয়ে সিংগু আসলেই একটা প্রায় অসম্ভব ব্যাপার। পর্বত বিজয়ের নেশায় মরিয়া সাগর ভাই সিদ্ধান্ত নেন অপেক্ষাকৃত সহজ ও কাছের থর্পু চুলি। একসময় জয় করাগত হয়। কিন্ত কাগজ-পত্রে তার ছিল অন্ন পাহাড়ের পারমিট। তাই অফিসিয়ালি তিনি স্বীকৃতি পান নি থর্প চুলির।
একই সাথে পর্বত জয় আর নৈতিক পরাজয়ের ইতিহাস রচিত হল। এই লাইনটি লিখতে সবচেয় কষ্ট অনুভুত হচ্ছে আমার, আর যার পরিমান আমি বোঝাতে পারব না কখনই। সাগর ভাই থেকে কখনই এমন কিছু আমি পাইনি যাতে করে তার নৈটিকতা প্রশ্নবিদ্ধ হতে পারে। তাকে চিনি ২০ বছর ধরে! আর তিনি দেশে ফিরেও, কখনও এবিষয়ে কোন মিথ্যাচারে জড়ান নি। সবসময় স্পষ্ট আর স্বচ্ছ অবস্হান ধরে রেখেছিলেন তিনি।
সেই সাথে অনেক চতুর তথাকথিত পর্বতপ্রেমীরা জেনে যায় ঠিক পাহাড়ে না উঠেও বা ঠিক মত না উঠেও সার্টিফিকেট পাওয়া যেতে পারে!
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে আগস্ট, ২০১২ রাত ১১:২৩