অনেক যখন ছোট ছিলাম, ক্লাস থ্রি বা ফোরে পড়ি, এক বন্ধু আমার সাথে রীতিমত বেঈমানী করেছিল। সে একবার পিটুনির হাত থেকে বাঁচার তাগিদে তার মায়ের কাছে আমাদের সব অভিযানের উপাখ্যান ফাঁস করে দিয়েছিল। অভিযান কিছুই না—প্রতিবেশীদের গাছ থেকে পেয়ারা কিম্বা বড়ই চুরি, ছোট বোনদের খেলার হাড়ি পাতিল ভেঙে রাখা, খুচরো পয়সা চুরি করে লাল-কমলা রঙ দেয়া চালতার আচার খাওয়া, বাড়ির কাজ না করলে স্কুলে বাথরুমে গিয়ে সেই ক্লাস পার করে দেয়া, কারো স্কুলের সাদা শার্টে কালি লাগিয়ে দেয়া দুর্ঘটনার ছলে, অথবা কারো স্কুলড্রেসের পিছনের বেল্টে সন্তর্পণে লম্বা লেজ লাগান যাতে লেখা “আমি গাধা, আমাকে দেখিবা মাত্র হাসুন” ইত্যাদি ইত্যাদি! তার মা আমার মাকে জানানোর ফলশ্রুতিতে উত্তম মধ্যম জুটেছিল বেশ, তাতে আমার ক্ষোভ ছিল না—কিন্তু স্কুলের পরে গৃহবন্দী থাকার যে কালাকানুন জারি হয়েছিল, তাতে আমার কোমল মুক্তিপ্রিয় স্বাধীন মনটি ভেঙ্গে চুর চুর হয়ে গিয়েছিল।
বহু-বহু দিন পর সেই বন্ধুর সাথে দেখা। অদ্ভুত ব্যাপার, সে এখনো মনে রেখেছে সেই ঘটনা! কিন্তু ব্যাপারটিকে অদ্ভুত বলছি, তার মনের গহীনে লুকানো স্মৃতিকোঁঠায়, বাল্য সেই স্মৃতি হীরকের মত জ্বলজ্বল করছে বলে নয়; আমাকে মার খেতে হয়েছিল, অনেক হেনস্তা হতে হয়েছিল সেই কথা ভেবে এখনো তার বিমল আনন্দের প্রকাশ দেখে! আমি প্রথমে হাসছিলাম তার সাথে, কিন্তু কিছুক্ষন পর বুঝতে পারলাম, এ তার রসিকতা নয়, বরং ছদ্মবেশী জিঘাংসার প্রকাশ। খুব হতবাক হয়ে গেলাম। অতীতে ফিরে যেতে পারলে এই ছড়াটা তাকে লিখে দিতাম। সে তো সম্ভব নয়! আরো অবাক কান্ড কি জানেন, এমন শ্বাপদ বন্ধু বড়বেলাতেও কম নেই আশে পাশে---সুযোগ পেলেই আক্রমন করবে, ছোবল দিবে—লুকিয়ে আছে ছায়ার মত খুবই কাছে--
ছড়িয়ে রাঙা ফুলেল হাসি, বলে ও নিত্য আসি
গুণমুগ্ধ ভক্ত আমি, কত-ই তোমায় ভালবাসি।
মনে মনে মুচকি হেসে, কাজ ফুরালে দিনের শেষে
কৃতঘ্নতার ধ্বজা তুমি উড়িয়ে দেবে বিনা ক্লেশে
শাঠ্য, মিথ্যার বেসাতি সব বুঝে গেছি আজ আমি
মিত্র নও শত্রুও নও, হিংস্র শ্বাপদ এই তুমি
তোমার মত বন্ধুরূপী শ্বাপদ আর আপদ বালাই
শতহস্ত দূরে থাকি, দেখামাত্র ছুটে পালাই