এ বছর মে মাসে একটা কনফারেন্সে আমার কানাডা যাওয়ার সুযোগ হয়েছিল। আমার ভাই ও তার পরিবার (শুধু ওর স্ত্রীকে বুঝাচ্ছি না! ঃ)) মার্কিন মূলুকে পড়াশোনা করে। ওদের গল্প করেছি আপনাদের। ওদের মেয়ের প্রথম জন্মদিনে আমি একটা পোস্ট দিয়েছিলাম বছর খানেক আগে। কনফারেন্স শেষে ওদের ওখানে গেলাম আমার আম্মিকে দেখতে। তখনই ওদের সাথে বেড়াতে গেছিলাম ইলিনয়ের (বারাক ওবামার স্টেট) শ্ব’অনী জাতীয়পার্কে (Swanee) অবস্থিত দেবতাদের বাগানে (Garden of Gods)। প্রায় ৩০০০ একর জুড়ে এই প্রাকৃতিক অভয়ারন্য আমাকে বিস্মিত করেছিল বলাই বাহুল্য।
অনেক ভোরে উঠে আমাদের যাত্রা শুরু। আমার বছর দুয়েকের ভাইঝিও সানগ্লাস আর হাইকিং-শু পরে একদম প্রস্তুত। প্রেইরীর মাঝে বিস্তীর্ণ প্রান্তর ও তার নয়নাভিরাম দৃশ্য দেখতে দেখতে আর “গ্রামছাড়া ওই রাঙা মাটির পথ” গাইতে গাইতে বেলা ১১টায় পৌছে গেলাম গন্তব্যে। বিশ্বাস করুন এই গানটাই প্রায় ৪ ঘন্টা আমরা গেয়েছি কারণ আমাদের গুড়িয়ার এটা প্রিয় গান, সে এটা ছাড়া আর কিছু শুনবেই না, গাইবেও না!
পৌছানোমাত্র ঘন সবুজের মাঝে দৃঢ়, গর্বিত এই শীলার বাগান আমাদের স্বাগত জানাল। দিনটাও ছিল আশ্চর্য সুন্দর; মেঘলা মেঘলা, ফুরফুরে দক্ষিনা বাতাসে মাতাল মাতাল। পাহাড় বাইতে একটুও কষ্ট হয়নি তাই।
প্রায় ৩০০ মিলিয়ন বছর আগে বিভিন্ন প্রাকৃতিক বিপর্যের মাধ্যমে স্যান্ড স্টোনের এই সমাহার তৈরী হয়, প্রায় সমতল ইলিনয়ের বুকে। কালের বিবর্তনে প্রাকৃতিক ভাঙাগড়ার খেলায় পাহাড়গুলো ক্ষয়ে বিভিন্ন আকৃতি নিয়েছে। কোন চূড়া দেখতে একদম টেবিল, কোনটা ঊটের দেহ, শাপের ফণা, আবার কোনটা জিউসের কারুকার্যখচিত লাঠি!
আপনাদের কাছে স্বীকার করতে লজ্জা নেই, ভেতো আর ভিতু বাঙালি নাম সার্থক করে কয়েকটি চূড়ায় উঠতে পারিনি! গুড়িয়ার অজুহাত দেব না, তিনি মহা উৎসাহে “গুড়িয়া একা করবে একা করবে” বলে অনেকটা পথ হেঁটেছেন পাহাড়ি উঁচুনিচু পথে। সুড়কি দিয়ে যে সুবিধাজনক ট্রেইল তৈরী আছে, তা দিয়ে হাঁটার ঘোর বিরোধী ছিলেন তিনি। হাইকিং করবে বাপু, তাতে ফাঁকি কেন—এটাই বোধহয় তার মনে ছিল!
প্রকৃতিকে একটুকুও বিরক্ত না করে, মনুষ্যহস্ত দ্বারা পরিবর্তনরহিত কিন্তু সব আধুনিক উপযোগ ও সুবিধাসহ জাতীয় উদ্যানগুলো আসলেই দেখবার মত। আমার তো দারুন লেগেছে। দেখুন ছবিতে ছবিতে দেবতাদের বাগানে ঘুরে বেড়াতে আপনাদেরও ভাললাগে কিনা! শীলাস্তুপের বিশালত্ব, বাগানের বিস্তীর্নতা ছবিতে দেখানো সম্ভব নয়। তবুও আশাকরি ভাল লাগবে দেবতাদের প্লেগ্রাউন্ড।
ওহ, পরিশেষে আপনাদের জানিয়ে দেই ফেরার পথে আমরা “গ্রামছাড়া” থেকে রেহাই পেয়েছিলাম, যদিও ৪ ঘন্টা ধরে “ফুলে ফুলে ঢলে ঢলে বহে কিবা মৃদু বায়” গাইতে গাইতে ফিরেছি বাড়ি।