লাল রক্তের বোঝাপড়া না করেই
আমার পূর্বপুরুষেরা ঘুমিয়ে পড়েছিলো সেইবার--
৭১' এর সেই রক্ত-ভেজা সমর প্রান্তরে, এই বাংলার তরু-ছায়ায়,
লাল রক্তের বোঝাপোড়া না করেই
আমরা তাদের সন্তানেরা ঘরে ফিরে এসেছিলাম সেইবার--
বিজয়ের উল্লাসে, উচ্ছ্বাসের অবিনাশী ছন্দ-বীণায়,
লাল রক্তের বোঝাপোড়া না করেই
আমরা তোদের টুটি ছেড়ে দিয়েছিলাম সেইবার--
অসীম করুনার ছলে, মানবতার অনন্ত মায়াছয়ায়,
শ্বাপদ তোদের উড়িয়ে দিয়েছিলাম চৈতণ্যের নীলাভ আকাশে,
ভেবেছিলাম মানবতার বোধোদয়ে তুষার শুভ্র মনোষ্কামনা নিয়ে
তোরা ফিরে আসবি আবার এই বাংলার প্রান্তরে,
শ্বাপদের বেশে নয়, অনন্ত শ্বাশ্বত মণুষ্যত্বের চেতনায়।
হায় তোরা ঠিকই ফিরে এসেছিস আবার এই বাংলার প্রান্তরে,
কিন্তু কই? তোদের কণ্ঠে তো এখনো প্রতিধ্বনিত হতে শুনি না
খেটে খাওয়া কোন সাধারণ মানুষের বুলি,
বরং তোদের কণ্ঠে এখনো প্রতিনিয়তই বেজে ওঠে আড়ালে
পূর্বেকার সেই সে পাশবিক চিৎকারের প্রতিধ্বনি,
মন বলে তোরা আবারো সেই শকুনের বেশেই
ফিরে এসেছিস এই বাংলার প্রান্তরে,
মানুষের আকৃতিতে চতুষ্পদ হায়নার হিংস্র মনোবৃত্তির আনাগোনা
এখনও তবু রয়ে গেছে তোদের অন্তরে,
কারণ এখনো তোদের সমস্ত শরীর জুড়ে
অধম শ্বাপদের ভোদকা শারীরিক গন্ধ লেপটে আছে,
কুৎসিত শকুনের মতো তোদের দুর্গন্ধময় মুখগহবর থেকে এখনো অঝোরে
হিংস্রতার লোলুপ, পৈশাচিক লালা গড়িয়ে পড়ে,
এখনো দেখি তোদের সমস্ত দৃষ্টি জুড়ে ঘুরে ফিরে খেলা করে
ধূর্ত শৃগালের হিংস্র কুট-ছায়া,
তবে শোন আমরাও বুঝে গেছি, তোরা মানুষের অধম কেবলই কীট,
দৃষ্টির অগোচরে মাটির বুক ফুড়ে চোরা পথে উঠে আসা
তোরা কেবলই রক্তোচোষা শুয়োপোকা।
তবে শোন, আমরাও বলে রাখি,
লাল রক্তের বোঝাপোড়া হবে এবারই, এই বাংলার প্রান্তরেই,
আমরা মরচে ধরা বন্দুকের বেয়োনেটে আবার শাণ দিয়েছি,
আমরা ঘুণে ধরে যাওয়া কোদালের হাতলে এবার প্রতিজ্ঞার মুষ্টি বসিয়েছি,
ক্রমাগতই খিঁচে উঠতে থাকা আমাদের চোয়ালের অস্থি থেকে অস্থিতে
বড় সযত্নেই আমারা মিশিয়ে নিয়েছি এবার ধ্বংসাত্মক প্রতিশোধের লালা,
তোদের রক্তেই উসুল হবে জানিস এবার মোদের তিন পুরুষের জ্বালা,
কণ্ঠে শুনিস রবে মোদের এবার কেবল শ্বাপদ তাড়ানোর গান,
আয় হায়নার দল প্রস্তূত থাক্,
লাল রক্তের বোঝাপড়া হবে এবারই, এই বাংলার মাটিতেই,
আকাশে বাতাসে বইবে দেখিস, বইবে কেবল বাংলা মায়ের টান।