রাত্রির দ্বি-প্রহরে প্রাকৃতিক নিস্তব্ধতায়
ল্যাম্পপোস্টের আলো মাড়িয়ে মাড়িয়ে ফুটপাথ
ধরে শুন্য চোখে আজকাল হেটে চলে যাই কখনো কখনো
উদ্ভ্রান্ত পথিকের মতো,
মাঝে মাঝে কান পেতে শুনি
রাতের শীতল বাতাসের অব্যক্ত প্রতিধ্বনি--
স্মৃতির জানালায় থুতনি ঝুলিয়ে দিয়ে সেই প্রতিধ্বনির মাঝেও
আমি তাই ক্রমাগতই হাতড়ে খুঁজে ফিরি ফেলে আসা সেই সুর,
নেশাখোর মাতালের ঝিমুনির অদৃশ্য সংগীত অথবা নিশাচর কুকুরের
চির দুঃখী আর্তনাদের তল থেকে অতলান্তে তলিয়ে যেতে যেতে সেই
সুর কখনো কখনো যখন বড় ক্ষীণ সুরে আমার কানে বেজে ওঠে--
পাংশু স্মৃতির ঝড়ে এলোমেলো আমি জগতের সকল শূন্যতা নিয়ে
তখন চেয়ে থাকি রাতের আকাশের পানে,
নিষ্পলক চোখে চেয়ে দেখি নক্ষত্রের আলাপন নক্ষত্রের সাথে,
অথচ নক্ষত্রের আলাপচারিতায় ব্যতিব্যস্ত এমনই কতো রাত্রির
কোলাহলময়তাকে কত অবলীলায়ই না আমরা নিথর করে দিয়েছিলাম
আমাদের প্রেমাতালের অপার্থিব শাব্দিক দ্যোতনায়,
স্মৃতির পথ থেকে পথে এমনই হাঁটতে হাঁটতে যখন এসে থেমে যাই
কোন এক অন্ধ উপত্যকায়,
মনের অজান্তেই কেবলই তোমার প্রতিবিম্ব খুঁজে ফিরি তখন,
আবার কখনো কখনো বিজন সন্ধ্যাকালে
ক্ষাণিক আগেই গত হয়ে যাওয়া আলোর ছায়াতলে
নিজের প্রতিবিম্ব হাতড়ে ফিরি,
অস্তিস্ত্বের সংকটটা যখন বড় ভয়াল সুরে অণুরণিত হয়,
জলের মাঝে এসে তীর্যকভাবে পড়া
নিজের ছায়ার অবধারিত অস্তিত্বটাকেও ভুলে গিয়ে
আজকাল আতকে উঠি কখনো কখনো--
ভাবি এই বুঝি তুমি এসে দাঁড়িয়েছো পেছনে,
শেষে তামাক পাতার জ্বলনে--
অনাহূত বেদনার লেলিহান শিখা নেভাবো বলে ,
হৃদয়ের বাতাস ভারী করে গুবলে উঠা তোমার স্মৃতির ঝড় থামাবো বলে তোমার উপহার লাইটারটায়
আজো যখন বড় আলতো করেই খোঁচা দেই--
নিমিষেই জ্বলে ওঠে আগুন,
অথচ আজ কতোকাল ধরে তোমার স্মৃতির
সমস্ত প্রান্তরটা জুড়ে খোঁড়াখুঁড়ি চালালাম কতো বিষম বেদনার ছলে,
অথচ আজো এতোটাকাল পরেও একটা বারের তরেও
তোমার স্মৃতির বুক জুড়ে ধপ্ করে জ্বালানো গেলো না
আমায় দিয়ে যাওয়া আপাত মধুর তোমার প্রেমের
সেই সব ছন্নছাড়া অভয়বানী;
কারণ স্মৃতিরা কেবলই বেদনার ছল।