ফিরে এসেছি আমি আবার তোমাদের জনপদে,
আবার ফিরে এসেছি আমি কবিতার জনপদে,
কিছুকাল তন্দ্রাচ্ছন্ন ছিলাম আমি নিরাবেগ চেতনায়,
কিছুকাল মাতাল মাদকাসক্তের মতো
প্রেমাসক্ত হয়ে পড়েছিলাম আমি প্রিয়তমার আঙিনায়,
কিছুকাল অস্পৃশ্য লোভের সুরায় ভাসিয়েছি দুকুল,ভিজিয়েছি গলা,
কিছুকাল কুৎসিত, জাগতিক মনোষ্কামনায়
হন্যে হয়ে ঘুরে ফিরেছি আমি কেবলই সারাবেলা,
কিছুকাল অন্ধ বাঁদুড়ের মতো বৃথাই খুঁজে ফিরেছি আলোর মিছিল,
আপনার অজান্তে অহেতুক আস্ফোলনে কিছুকাল
অরণ্যে কেঁদে ফিরেছি কেবলই শ্বাপদের সামিল
কিছুকাল আমার কবিতার শব্দ, পংক্তিগুলোকে আমি অগ্রাহ্য,
অবহেলা করেছি প্রতারক প্রেমিকের মতো,
প্রিয়তমার বাহু-ডোরে মুখ বুঁজে থেকে উন্মাতাল যৌনতার
তল থেকে অতলান্তে তলিয়ে গিয়েছি আমি,
বিশাল জলারশির মাঝে ক্রমাগতই তলিয়ে যেতে থাকা
অস্তিস্ত্বহীন খড়কুটোর মতো;
তবু অধঃচেতনে বেলা অবলোয় শুনেছি আমি দূর হতে ভেসে আসা
নুপুর-নিক্কনের আওয়াজ, জোরালো হর্ষধ্বনি তোমাদের,
বুঝেছি উঠেছে মাতম কবিতার ছন্দ-বীণায় ,
বুঝেছি তোমাদের পদচারণায় মুখরিত আসর,
কবিতার প্রমোদতালে নেচে নেচে উঠে কবিতার জলসা-ঘর,
তাই আমিও ফিরে এসেছি আবার কবিতার জনপদে,
ক্ষমতাধর সাপুড়ের পাগুলে বীণার সুরে
মাতাল নাগিনের মতো, আমিও ফিরে এসেছি আবার
কবিতার নিবিড় প্রান্তরে, শব্দরাজির অসীম মায়াছায়ায়,
যদিও আমার অস্থির গোড়ায় গোড়ায়, অস্থির মন-প্রান্তরে
এখনও বাণিজ্যকতার আঁষটে গন্ধ আপন খেয়ালে লেপটে আছে,
যদিও আমার সমস্ত শরীর জুড়ে স্পষ্ট অস্পষ্ট প্রিয়তমার প্রেমাচড় সব
তার অভিমানী দৃষ্টির ধ্বংসাবশেষের রূপে
এখনও আমায় ক্রমাগত চোখ রাঙিয়ে চলে,
যদিও এখনো দূর হতে ভেসে আসা সেই বৃদ্ধ, ধূর্ত শিয়ালের ভীতিজাগানিয়া হাঁকডাকে নিরালায় কান পেতে শুনি আমি--
কতো কবি,মহাকবির আপাত ব্যর্থ জীবনাচরণের ভুলে যাওয়া ইতিকথা,
তবুও ফিরে এসেছি আমি আবার তোমাদের জনপদে,
আবার ফিরে এসেছি আমি কবিতার জনপদে,
প্রিয়তমার বাহুডোরে নয়,
কবিতার বাহুডোরেই তবে আমৃত্যু এঁকে চলি আমি জীবনের জল-ছবি,
জাগতিক কোন প্রান্তরে নয়,
কবিতার সুজলা সুফলা প্রান্তরেই তবে মিশে মিশে যাক
এই ছোট্ট শব্দচাষীর অন্তিম নিঃশাসখানি।
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে আগস্ট, ২০০৮ রাত ১:৩৮