১. রাস্তা পার হচ্ছিলাম। আমি গাড়িটাকে দেখে দাড়িয়ে গেলাম আর গাড়িটা আমাকে দাড়িয়ে গেলো। গাড়িটা কম করে হলেও আমার থেকে ১৫-২০ মিটার দুরত্বে ছিলো। আমার অবাক চাহনি দেখে, ড্রাইভার সাহেব হাতের ইশারায় আমাকেই আগে রাস্তা পার হতে বললেন, আমার জাত ভাইদের মতো মুখ ভেংচি দিয়ে নয়-সুন্দর করে হেসে বিনয়ের সাথে। বাহ্ দারুনতো-আগে পথচারী তারপর গাড়ি। হুমায়ুন আহমেদের একটা লেখায় পড়েছিলাম বাংগালরা নাকি ধন্যবাদ দিতে কুন্ঠাবোধ করে। কথা সত্য, জীবনে যতবার মানুষকে পাবলিক বাসে সিট ছেড়ে দিয়েছি, বিদ্যুতবিলের লাইনে মহিলা/বৃদ্ধ/অন্যান্যদের আগে যেতে দিয়েছি, একটা ধন্যবাদ তো দুরের কথা, তারা এমনভাব করেছে যেন এটা তাদের অধিকার। আমি ড্রাইভার সাহেবকে দুর থেকে ধন্যবাদ দিলাম, তিনিও তার প্রতিউত্তর করলেন।
২. মি: বিনের একটা পর্বে দেখেছিলাম মি: বিন একটা হোটেলে গিয়ে বারবার লাইট বন্ধ করে আর জ্বালায়, তারপর বিছানায় লাফালাফি করে। আমিও আমাদের গেস্ট রুমে ঢুকেই মনে হলো মি:বিনের মতো করতে হবে। ব্যস কি আর করা- লাইট অন-অফ-অন-অফ-অন-অফ-অন-অফ(কতোবার করছি গুনি নাই)। বিছানায় লাফ (এটাও কতবার করছি গুনি নাই)। তবে খুব মজা লাগছে।
৩. ইন্ডিয়ান দু-জনের সাথে কেন জানি কেউই মিশতে পারলোনা। বাংলাদেশের প্রতি তাদের কটাক্ষ আমাকে আহতো করেছিলো। বাংলাদেশে ক্ষমতার পালাবদলে নাকি ইন্ডিয়া একটা বিরাট ফ্যাক্টর, এবং বাংলাদেশের সব বড়ো সাহেবেরা বর্তমানে ইন্ডিয়ার দৃষ্টিআর্কষণে বিশেষ ব্যস্ত সেটা নিয়ে তারা আমাদের লক্ষ্য করে হাসাহাসি করলো। আগামীকাল লাঞ্চ টাইমে তারা আমাদের সম্ভাব্য কি কি কথা বলতে পারে মনে মনে তার একটা তালিকা তৈরি করছিলাম এবং একটা করে সমুচিত জবাব বানাচ্ছিলাম। আহ, আমাদের বড়ো সাহেবরা যদি জানতেন তাদের এই দেউলিয়াপনা কিভাবে আমাদের ভোগায়! ইন্ডিয়ানদের সাথে আমার এই কাল্পনিক ঝগড়া আমাকে অনেক রাত পর্যন্ত ঘুমাতে দিলোনা। লস-ব্যানোসের বাতাসে তখন মধ্যরাতের হাহাকার আর লেগুনা লেক থেকে উঠে আসা আদ্রতার মহাসম্মেলন চলছে.............।
৪. লাঞ্চে যেতে যেতে গাড়িতে ইন্ডিয়ানটার সাথে আমার কথোপকথোন
“তুমি হিন্দি জানো”?
“না, তুমি বাংলা জানো”?
“না, বাংলা জানিনা, তুমি হিন্দি ছবি দেখোনা (কৃত্রিমতার সাথে অবাক হয়ে)”?
“না দেখিনা, হিন্দি ছবিতে আসলে দেখার কিছু নাই, ওসব দেখে আমাদের দেশের কিছু বেকার-অপদার্থ লোকজন, তাই তারা হিন্দি কিছুটা পারে ”।
তারপর দুই ইন্ডিয়ানের মধ্যে লেগে গেলো রাজনীতি নিয়ে তর্ক। একজন মোদীর সমর্থক আরেকজন বিরোধী। উপস্থিত সবাইকে তাদের যুক্তির ধার জানান দিতে তারা কথা বলছিলো ইংরেজিতে। আমরা দারুণ ভাবে তাদের কামড়াকামড়ি উপভোগ করলাম।
৫. ফেরার সময় ম্যানিলা এয়ারপোর্টে আমাদের জুতা-বেল্ট-ঘড়ি খুলে আমাদের প্রমাণ করতে হলো আমরা সাধু প্রকৃতির লোক। ভাবছিলাম শার্ট-প্যান্টও আবার খুলতে বলে কিনা। এয়ারপো্র্টে এসব হয় শুনেছি। বল্লাম, তোরা বাংলাদেশে আয় একবার তারপর দেখবি মজা কাকে বলে (কোনো কারণ ছাড়াই খামোখা বলছি, আমার মতো চুনোপুটির কিছুই করার নাই)।
৬. আমরা একদিন সিদ্ধান্ত নিলাম আজকে হেটে হেটে, ছবি তুলতে-তুলতে, সব কিছু দেখতে-দেখতে গেস্টহাউজে ফিরবো। স্বল্পবসনা মেয়েদের দিকে আমার তাকাতেই যেন ইচ্ছা করলো না। জীবনে প্রথমবারের মতো আমি কোনো আকর্ষন বোধ করলাম না। মেয়েরা যেন একটু আড়াল হয়ে থাকলেই তাদের ভালো লাগে (পুরাই পারসোনাল মতামত, প্লিজ কেউ ত্যানা পেচাইস না)।