প্রথমেই বলে নেই এটা কোনো ভ্রমণপোস্ট নয়। ভ্রমণে গিয়ে কিছু টুকরো ঘটনা যা প্রায় অর্থহীন। দেবার মতো কোন ছবি নাই (অনেক ছবি আছে, ইচ্ছা কইরা দেই নাই)। তবে আমি ফিলিপাইন গেছিলাম একথা সইত্য।
১. আমরা শপিংএ যাচ্ছিলাম বাসে করে। ৬ দেশের ১৭ জন মানুষ। গন্তব্য ম্যানিলা। লস-ব্যানোস থেকে ঘন্টা দুয়েকের রাস্তা। সবার ঘাড়ে একটা করে কাজ পড়লো কিছু একটা করে দেখানোর জন্য। যে যা পারে, যেমন গান-কবিতা-জোকস। যে যা পারে করলো। সব শেষে আমার বসের পালা। তিনি একটি জোকস বললেন। জোকস মজার হোক না হোক, জোকস শুনে হাসাটা একটা ভদ্রতা। আমি তালে-বেতালে একটু বেশিই ভদ্রতা দেখিয়ে ফেললাম। স্বাভাবিকের চাইতে উচ্চস্বরে এবং বেশি সময় ধরে হাসলাম, সবাই যেখানে তাদের ভদ্রতার হাসি শেষ করেছে অর্ধশত যুগ আগেই। আসলে হাসছিলাম মনের দু:খে। কারণ এমন জঘন্য জোকস আমি জীবনে শুনিনাই। বস ব্যাপারটা খেয়াল করলেন এবং ঠোটের কোনা দিয়ে বিশেষ কায়দায় হাওয়া ছাড়লেন যা অল্প পরিমাণে শদ্ব উতপাদন করলো। যার অর্থ “দাড়া তোরে চিপায় ফেলতাছি”। আমিও চিপা-চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় রেডি হলাম। ইদুর-বিড়াল খেলা শুরু। এই খেলায় থ্রিলিং আছে।
২. মল অব এশিয়ার সামনে আমরা সবাই মিলে বসে আছি। রাত প্রায় ৯ টা। দুই ইন্ডিয়ান হারামীর তখনো কোনো খবর নাই। তারা শপিংয়ে ব্যস্ত। আমার সামনে এসে দাড়ালো তিন দরিদ্র ফিলিপিনো। ভিক্ষুক। অনেক লোকের ভিড়ে তারা আমাকেই সিলেক্ট করলো। সরাসরি আমার চোখের দিকে তাকিয়ে মহিলাটি অত্যন্ত বিনয়ের সাথে ভিক্ষা চাইলো, এবং তাতে হাত-পা-মাথা নেড়ে প্রবল সমর্থন জোগালো তার কোলে থাকা অবুঝ শিশুটি এবং পাশে দাড়িয়ে অপলক চেয়ে থাকা ১২-১৩ বছরের অতি-মায়াবী চেহারার মেয়েটি। অনেক মানুষের ভীড়ে আমার নরম-সরম, বলদ-মার্কা চেহারা দেখে হয়তো তারা আমাকে বাছাই করেছিলো। ভিক্ষার স্টাইল দুনিয়ার সবর্ত্রই একই রকম।
৩. ফিরতি বাসে আমার পাশে বসেছিলেন মিয়ানমারের ‘পি’ ম্যাডাম। আমি গভীর ভাবনায় মগ্ন। আমি ভাবছিলাম আল্লহর কাছে কিছু চাইলে ভিক্ষার স্টাইল ফলো করতে হবে এবং আল্লহর কাছ থেকে যে কোনো কিছু আদায়ে এই পদ্ধতি হয়তো অব্যর্থ।
৪. ফিলিপাইনের লোকগুলো অনেক ভদ্র। বাংগালদের মতো অতো গোমড়ামুখো নয়। তারা হাসতে জানে-হাসাতে জানে। ছেলেদের তুলনায় মেয়ের সংখ্যা আমার কাছে বেশিই মনে হলো। তাদের সুন্দর মেদহীন ঝরঝরে শরীর, হাস্যজ্জ্বল মুখ, জীবনের প্রানস্পন্দন মাখা গতিময়তা বলে দেয়- তারা সুখে আছে।
...........চলবে।