কিছু প্রাসঙ্গিক কথা বলে নেই।
১
যখন ইসরায়েল, ইউরোপ কিংবা আমেরিকায় ইসলাম ধর্ম নিয়ে কোন অবমাননাকর লেখা, কার্টুন কিংবা ভিডিও প্রকাশ করা হয় তখন আমি অবাক হয়ে একটা ব্যাপার লক্ষ করি। মুসলমানরা রাস্তায় নেমে নিজেরাই নিজেদের দেশের প্রপার্টি ধ্বংস করতে থাকে। কোন কোন দেশে অনেক মানুষ নিহত এবং আহত হয়। আমার ধারনা তখন ইসরায়েল, আমেরিকা এবং ইউরোপের মাস্টারমাইন্ডরা খুব আনন্দের সাথে সেটা উপভোগ করে।
আধুনিক সময়ের রাজনীতিকে অনেক ভাবেই ব্যাখ্যা করা যায়। তবে সেটা এমনই এক জটিল বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে যে কোন ব্যাখ্যাই স্বয়ংসম্পূর্ণ না। একই সাথে ইউনিভার্সালি অ্যাকসেপ্টেড এবং রিজেক্টেড অনেক মডেল কিংবা টুল আছে। তবে একটা ব্যাপার সব দিক থেকেই স্পষ্ট। সেটা হচ্ছে বর্তমান সময়ের বিশ্ব রাজনীতিতে ইসলাম ধর্মকে এবং এই ধর্মে বিশ্বাসী মানুষগুলোকে অনেকভাবেই ব্যবহার করা হচ্ছে। বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্যে তেলের দখল নিয়ে ক্ষমতাধর রাষ্ট্র এবং কর্পোরেট হাউজগুলোর মধ্যে যে প্রতিযোগিতা চলছে সেখানে খুব কৌশলে ইসলাম ধর্মকে ব্যাবহার করা হয়েছে। আমরা যদি মধ্যপ্রাচ্যের দিকে তাকাই তবে দেখব মুসলিমরা বিভিন্ন গ্রুপে ভাগ হয়ে একে অপরের সাথে যুদ্ধ করছে। নিজেরাই ভিন্ন মতবাদের নামে নিজেদের নারী এবং শিশুদের উপর অকথ্য নির্যাতন চালাচ্ছে। এসব গ্রুপগুলোকে আর্মস এবং অর্থ দিয়ে সাহায্য করছে পশ্চিমা রাষ্ট্রগুলো। আমাদের দেশের যে ছেলেগুলো আইসিসের নামে জীবন উৎসর্গ করছে তারা বুঝতেও পারেনা যে আইসিস পশ্চিমা পাওয়ার হাউজগুলোর একটা দাবার গুটি ছাড়া আর কিছুই না। অর্থাৎ সোজা ভাষায় বললে বলা যায় পশ্চিমা বিশ্বের পাওয়ার হাউজগুলোর মাস্টারমাইন্ডরা ইসলাম ধর্মে বিশ্বাসী মানুষদের ধর্মীয় অনুভূতি নিয়ে খেলছে। নিজেদের সুবিধামত তাদের কাজে লাগাচ্ছে।
২
এবার দক্ষিন এশিয়ার দিকে চোখ দেওয়া যাক। সাম্রাজ্যবাদী পরাশক্তিগুলো অনেক আগে থেকেই এখানে তাদের ঘাঁটি স্থাপন করতে চাচ্ছে। ভারত দক্ষিন এশিয়ার মার্কেটে সেই প্রথম থেকেই দাদাগিরি করে আসছে। অর্থাৎ তারা পার্শ্ববর্তী দেশগুলোর রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক পলিসিগুলোকে অনেকভাবেই নিয়ন্ত্রন করছে। আমাদের দেশের পলিসিমেকাররাও অনেক ভাবেই ভারতের উপর নির্ভরশীল। ভারতের শাসকগোষ্ঠী এমন একটা আবহ এ দেশে তৈরি করতে পেরেছে যেন এদেশের শাসকগোষ্ঠী তাদের উপর নির্ভরশীল থাকতে বাধ্য হয়।(আমি এখানে রাষ্ট্র বলতে পলিসি মেকারদের কথা বুঝাচ্ছি। কোন দেশের সাধারন মানুষদের কথা বলছিনা।)।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে আমাদের দেশে সংখ্যালঘু নির্যাতন প্রসঙ্গে ভারতের হস্তক্ষেপ চাওয়া কি সঠিক সিদ্ধান্ত? আমার পর্যবেক্ষণ এবং মধ্যপ্রাচ্যের অভিজ্ঞতা বলে ঠিক এমনটাই ভারত চাচ্ছে। পশ্চিমা বিশ্বও চাচ্ছে। অর্থাৎ এদেশের মুসলিমদের ধর্মীয় অনুভুতি নিয়ে অনেক আগেই খেলা শুরু হয়ে গেছে। নাস্তিক এবং সংখ্যালঘুরা হচ্ছে বলির পাঁঠা।
মুসলিম স্কলারদের নতুন ভাবে চিন্তা করার সময় এসেছে। তারা কেন বারবার ম্যানুপুলেট হচ্ছে তা নিয়ে গবেষণা না করে কার্যকরী ভূমিকা না রাখলে ধ্বংস অনিবার্য। ইসলাম শান্তির ধর্ম বলে জঙ্গিরা মুসলিম না বলেই ঘোষণা দিয়ে কোন লাভ নেই।কার্যকরী ভূমিকা পালন করতে হবে। মুসলিমদের রাগানো হচ্ছে যেন তারা ভুল করে। এবং তারা বারবার ভুল করছে।
নির্যাতিত সংখ্যালঘু গোষ্ঠীকে সংঘটিত হয়ে নিজ দেশের সরকারের উপর চাপ প্রয়োগ করতে হবে। যেভাবেই হোক তারা এখন এদেশের বলির পাঁঠা। আবেগ দিয়ে কিছু হবেনা। ভারতকে বিশ্বাস করা হবে সবচেয়ে বড় ভুল। তবে মুসলিমরা যদি এভাবে ধর্মীয় অনুভূতির ফাঁদে পরে অন্য ধর্মে বিশ্বাসী মানুষদের নির্যাতন করতে থাকে।নাস্তিক হত্যায় নিরব সমর্থন দিতে থাকে তবে ভারত এমনিতেই আসবে। পশ্চিমা পরাশক্তিরাও আসবে। সেটাই তারা চাচ্ছে।
আমি জাতীয়তাবাদী চেতনা দ্বারা এখন আর খুব বেশি প্রভাবিত না। ধর্ম, জাতীয়তাবাদ, বিভিন্ন মতবাদ এসবকে মডেল কিংবা ডিভাইস মনে করি। গনমানুষের স্বার্থের জন্য যে মডেল যতক্ষণ কাজ করবে ততক্ষন সে মডেল ফলো করা যেতে পারে। কাজ না করলে বাদ! এসব বিষয় নিয়ে আরো লিখব। এ বিষয়ে মোটা দাগে কিছু কথা বললাম। কেউ যদি দ্বিমত পোষণ করেন যুক্তি দিয়ে আমাকে আলোকিত করেন।
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ সন্ধ্যা ৬:৫৮