মুভি: The Tiger: An Old Hunter’s Tale
শিকার এবং শিকারির মধ্যে সবসময় একটা রহস্যময় সম্পর্ক বিরাজ করে। আর সেটা যদি মানুষ এবং বাঘের মধ্যে হয়ে থাকে তবে শিকার আর শিকারির সম্পর্কটা ভাইস ভার্সা হয়ে যায়। অর্থাৎ এখানে দুজনই শিকারি আবার দুজনই শিকার। আপনারা যারা জিম করবেটের লেখার সাথে পরিচিত তারা এই ব্যাপারটা খুব ভালো ফিল করতে পারবেন। তবে শিকার এবং শিকারির মধ্যে মাল্টি ডাইমেনশনাল সম্পর্কের আবেগটা যদি অনুভব করতে চান তবে The Tiger: An Old Hunter’s Tale মুভিটা দেখে ফেলতে পারেন। ভালো কোরিয়ান মুভি গুলোর একটা অন্যরকম স্বাদ আছে। তাদের গল্প বলার ধরনটা ঠিক আমাদের মত না হলেও এমন কিছু ইউনিভার্সাল থিম থাকে যা আসলে সবাইকেই স্পর্শ করে। এমন এক্ থিম নিয়েই এই মুভির মূল কনসেপ্ট আবর্তিত হয়।
একটা সময় বেঁচে থাকার জন্য মানুষকে শিকার করতে হত। কিন্তু সেই প্রয়োজন না থাকার পরও শিকারের অভ্যাসটা মানুষ ত্যাগ করতে পারেনি। বিশেষ করে ক্ষমতাবান মানুষরা তাদের ইগোকে স্যাটিস্ফাই করার জন্য বেশ আয়োজন করেই বনে বাঘ শিকার করতে যেত। বনের রাজাকে মেরে তারা একধরনের ক্ষমতার স্বাদ নিতে চাইত।
এবার মুভির মূল স্টোরি লাইনে আসা যাক। ১৯২৫ সালে চান ম্যান ডাক (Chun Man-duk) নামক এক শিকারির যাপিত জীবনকে কেন্দ্র করে মুভির সাবপ্লটগুলো বিকশিত হতে থাকে। চান ম্যানকে বলা হয় তার সময়ের সেরা শুটার। মাউন্ট গিরিসানকে কেন্দ্র করে সে সহ আরো কিছু শিকারির বেঁচে থাকার সংগ্রাম চলে। চান ম্যান শিকার করা ছেড়ে দেয়। যে মাউন্টেনে সে শিকার করে জীবন অতিবাহিত করেছে সে প্রকৃতির সাথে সে একধরনের আত্মিক বন্ধনে জড়িয়ে যায়। যা একই সাথে তার কাছে অভিশাপ এবং আশীর্বাদের মত। মাউন্ট গিরিসানের সব বাঘকে শিকার করে ফেলা হয়। কিন্তু একটা বাঘকে কিছুতেই শিকার করা যাচ্ছিল না। এই বাঘকে বলা হত মাউন্টেন লর্ড অব মাউন্ট গিরিসান। এই মাউন্টেন লর্ড ছিল লাস্ট লিভিং কোরিয়ান বাঘ। তাকে শিকার করার জন্য জাপানিজ আর্মি কোরিয়ান শিকারিদের নিয়ে একের পর এক অভিজান চালাতে থাকে। তারা চান ম্যানকে তাদের সাথে যোগ দিতে অনুরোধ করে। অনেকেই মনে করত একমাত্র চান ম্যান ছাড়া আর কারো পক্ষে এই বাঘ শিকার করা সম্ভব না। তারপর কি হয় জানতে হলে মুভিটা দেখে ফেলুন।
এই মুভিতে আপনি প্রকৃতির সাথে মানুষের এক চিরায়ত কনফ্লিক্ট দেখতে পারবেন। মানুষের ফলস ইগো, ধ্বংসের প্রতি মানুষের মোহ, প্রকৃতির প্রতিশোধ সবই একটা মুল স্টোরির মধ্যে সাবস্টোরি হিসাবে খুব চমৎকার ভাবে খাপ খেয়ে গেছে।
মুভি: Sphere
Sphere মুভিটা অনেক আগে দেখেছিলাম। মুভিটা আমার ভালো লেগেছে। যদিও আহামরি কোন সাই ফাই না বাট স্টোরিতে একটা দার্শনিক অনুসন্ধান আছে। একটু ক্লিয়ার করি। ধরেন আপনাকে এমন কোন ক্ষমতা দেওয়া হলো যার ফলে আপনি যা কল্পনা করবেন তাই ঘটতে থাকবে। আপনি যা মনে মনে চিন্তা করবেন তাই বাস্তবে পরিনত হবে। ভাবছেন খারাপ কি? জটিল ক্ষমতা। কিন্তু ভেবে দেখেন আপনি প্রতিদিন অনেক ভয়ংকর ব্যাপারও কল্পনা করে থাকেন যা আপনি আসলে বাস্তবে ঘটুক তা চান না। কারন আপনার সব চিন্তার উপর আপনার নিয়ন্ত্রন নেই। ধরেন আপনি উড়ন্ত তেলাপোকা ভয় পান। প্রায়ই ভাবেন আপনি কোন রুমে আবদ্ধ। সেই রুমে হাজার হাজার তেলাপোকা উড়ছে। সেই প্রাপ্ত ক্ষমতা বলে কিন্তু এই কাল্পনিক দৃশ্যও বাস্তব হয়ে যাবে। এখন প্রশ্ন হলো মানুষ কি আসলেই সব রকম ক্ষমতা অর্জনের জন্য প্রস্তুত? তার নিজের প্রাপ্ত ক্ষমতার উপরই নিয়ন্ত্রন নাই। তাহলে যদি হঠাৎ করে মানুষের হাতে এমন কোন সুপার পাওয়ার চলে আসে যার উপর তার কোন নিয়ন্ত্রন নেই তখন কি করা উচিৎ? এই কনসেপ্ট নিয়েই এই মুভির কাহিনী। কনসেপ্ট পছন্দ হলে দেখে ফেলতে পারেন।
মুভি: Nerve
আমরা সবাই কোন না কোন ভাবে বিভিন্ন নেটওয়ার্কের জালে আবদ্ধ। আমাদের নিয়ে সবসময় একটা খেলা চলতে থাকে। যেমন ধরেন আপনি হয়তো প্রবল পুঁজিবাদ বিরোধী বাম কিংবা সুদ বিরোধী ধার্মিক। আপনি সকাল বিকাল ব্যাংকিং সিস্টেমকে গালি দেন। কিন্তু আবার সেই সিস্টেমের উপর আস্থা রেখেই আপনার টাকাগুলো ব্যাংকে রেখে আসেন। আপনার যাপিত জীবন শেষ পর্যন্ত একটা সিস্টেমের মধ্যে কিংবা একটা নেটওয়ার্কের বলয়ের মধ্যে ঘুরপাক খেতে থাকে। কেউ কেউ আবার এই খেলায় খুব সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করে। খেলোয়াড়রা একে অপরের সাথে প্রতিযোগিতা করে সেরা হতে চায়। কিন্তু তারাও আসলে সে একই গেম দ্বারাই নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে।
নার্ভ মুভিটা খুব আহামরি কোন মুভিনা। স্টোরিটাও নতুন না। তবে মুভিটা খারাপ লাগে নাই। খারাপ না লাগার কারন হচ্ছে মুভিতে ডার্ক ওয়েব গেম নিয়ে যে স্টোরিটা দেখানো হয়েছে তার সাথে আসলে আমাদের এই যাপিত জীবনের খুব একটা পার্থক্য নেই। মুভির কাহিনী দিয়েই সেটা ব্যাখ্যা করছি। নার্ভ নামে একটা খুব জনপ্রিয় গেম আছে। সে গেমে অংশ নিতে হলে সাইন ইন করে হয় ওয়াচার হতে হয় নাহয় প্লেয়ার হতে হয়। ওয়াচাররা গেমটা উপভোগ করতে পারে। তবে প্লেয়াররা গেম খেলার জন্য টাকা পায়। তাদের বিভিন্ন মিশন দেওয়া হয়। সেসব কমপ্লিট করতে পারলেই তারা টাকা পায়। শুধু টাকাই না, ওয়াচারদের রেসপন্স তাদের স্টার কিংবা সেলিব্রিটিতে পরিনত করে। আসলে এখানে প্লেয়াররা যেমন ওয়াচারদের কাছে হিরো, আবার তারা সেই ওয়াচারদের রিভার্স সাইকোলজি গেম দ্বারাই নিয়ন্ত্রিত হয়। এই ব্যাপারটা সাম্প্রতিক সময়ে কিছু ফেসবুক সেলিব্রিটি এবং তাদের ফলোয়ারদের কর্মকাণ্ড দেখলেই বুঝা যাবে। যাইহোক এই গেমের কিছু নিয়ম আছে। তা হচ্ছে এ গেম থেকে প্লেয়াররা সরে আসতে পারবে। ফেল করলেই বাদ হয়ে যাবে। তবে কোন ভাবেই এই গেম অর্থাৎ নেটওয়ার্ক বন্ধ করার চেষ্টা করা যাবেনা। তা করার চেষ্টা করলেই খুব ভয়াবহ পরিনাম নেমে আসবে।
আমাদের যাপিত জীবনেও আমরা এমন অনেক প্রোগ্রামড গেমের ওয়াচার এবং প্লেয়ার হতে বাধ্য হই। কখনো খেলি, কখনো অন্যের খেলাকে প্রভাবিত করি। তবে যখনি মূল প্রোগ্রাম কিংবা গেমটাকে পরিবর্তন করতে চাই তখনই নেমে আসে বিপর্যয়। তারপরও ইতিহাসে বারবার এক প্রোগ্রাম ধ্বংস হয়ে আরেক প্রোগ্রাম স্থান করে নিয়েছে। খুব কম মানুষই পেরেছে বলয় থেকে বের হয়ে পুরাতন সিস্টেম ভেঙ্গে নতুন কিছু বিনির্মাণ করতে।
টিভি সিরিজঃ Hannibal
Hannibal টিভি সিরিজটা আমার কাছে বেশ চমৎকার লেগেছে। থমাস হ্যারিসের রেড ড্রাগনের চরিত্রগুলোকে ব্রায়ান ফুলার যেভাবে রিপ্রেজেন্ট করেছে তার জন্য ফুলারের প্রশংসা করতেই হবে। সিরিয়ালটাকে ডার্ক সাইকোলজির একটা আরটিস্টিক এক্সিবিশন বলা যেতে পারে।
সেখানে একটা দৃশ্যে গ্রাহাম এবং বেদেলিয়ার মধ্যে হ্যানিবলকে নিয়ে আলোচনার কিছু ব্যাপার আমার কাছে বেশ ইন্টারেস্টিং মনে হয়েছে। বেদেলিয়ার মতে হ্যানিবল যা কিছু করছে সব আসলে বিবর্তনের ফল। অর্থাৎ আমরা যা করি তা সবই জেনেটিক ডিটারমিনিজমের কারনেই করি। তার জবাবে গ্রাহামের কাউন্টার লজিক ছিল, যদি তাই হয় তবে মার্ডার সহ সব রকমের অপরাধকে গ্রহন করে নিতে হবে। বেদেলিয়ার পাল্টা জবাব ছিল খুনি এবং অপরাধীদের কাছে সেটা গ্রহণযোগ্য।
এখন ব্যাপার হলো অপরাধী কেন অপরাধ করে এটা শুধুমাত্র বায়োলজিক্যাল সাইন্স দিয়ে বুঝার চেষ্টা করলে বিপদ আছে! বিপদটা হলো তখন সেটা মেনে নেওয়া ছাড়া উপায় থাকেনা। তাই কালচারাল ডিটারমিনিজমের ব্যাপারটাও এক্ষেত্রে ভেবে দেখতে হবে। এসব নিয়ে স্কলারদের মধ্যে অনেক বিতর্ক চলছে। সমাধানের জন্য কালচার অরিয়েন্টেড গবেষণার কোন বিকল্প আছে বলে মনে করিনা।
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ সন্ধ্যা ৭:০১