১
মফিজ হঠাৎ বুঝতে পারে সে মরে গেছে। মরার পর কি হবে না হবে এসব নিয়ে মফিজের কোন ভয় ডর ছিলনা। তবে মরার পর কোন পাপের জন্য কার কি শাস্তি হবে তা নিয়ে মানুষকে ভয় দেখাতে খুব পছন্দ করত সে। ফতোয়া দিয়ে মানুষকে নির্যাতন করে একধরনের পৈশাচিক আনন্দ পেত মফিজ। কিন্তু এখন সে নিজেই খুব আতংকিত। তাকে একটা গোলপোস্টের সাথে হাত পা বেঁধে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে। তার সামনে একটা মেয়ে দাঁড়িয়ে আছে। মেয়েটার পায়ের কাছে একটা ফুটবল। মফিজ চরম বিস্ময়ের সাথে উপলব্ধি করল মেয়েটা তার পরিচিত। ফুটবল খেলার অপরাধে এই মেয়েকে জুতাপেটা করবে বলে ঠিক করেছিল সে। মেয়েটার বাবাকে খুব অপমানও করেছে মফিজ। এসব করে সে খুব তৃপ্তি নিয়েই ঘুমাতে গিয়েছিল। কিন্তু ঘুমের মধ্যেই মরে গেল। তারপরই সে নিজেকে এ অবস্থায় আবিষ্কার করে। তবে কি এটাই আসল দোজখ? এখানেই অনন্তকাল ধরে তাকে নির্যাতন করা হবে? মফিজ আর ভাবতে পারেনা। তীব্র গতিতে একটা ফুটবল তার অণ্ডকোষে এসে আঘাত করে। মফিজের কয়েক মুহূর্ত মনে হচ্ছিল সে যন্ত্রণায় মরে যাবে! কিন্তু সেত মৃত। তার মানে সে আর মরবেনা। তাকে এ যন্ত্রণা সহ্য করে যেতে হবে। মফিজ মেয়েটাকে কিছু বলার চেষ্টা করে। তার কাছে মাফ চাওয়ার চেষ্টা করে। কিন্তু তার মুখ থেকে কোন শব্দই বের হচ্ছেনা। শব্দগুলো সব আর্তনাদ হয়ে তার ভেতরেই গুমরে মরতে থাকে। মেয়েটা আবার ফুটবলে কিক করে। আবার এসে তা একই জায়গায় আঘাত করে। কিন্তু মৃত মফিজ আর মরেনা। শুধু এক অলৌকিক যন্ত্রণা ছাড়া আর কিছুই অনুভব করতে পারেনা মফিজ। স্বপ্ন ভাঙ্গার পরও তীব্র আতংকে কাঁপতে থাকে মফিজ।
ভোরবেলা মফিজকে পাগলের মত বাজারে ঘুরতে দেখা যায়। সেখান থেকে সে একটা ফুটবল কিনে নিয়ে আসে। এলাকার মানুষ অবাক বিস্ময়ে দেখে মফিজ তার মেয়ের সাথে রাস্তায় ফুটবল খেলছে। মফিজ এবং তার মেয়ে দুজনকেই খুব আনন্দিত মনে হয়।
২
খেলা কখন থেকে শুরু করবেন? জুম্মার পরপরই শুরু করে দেওয়া উত্তম। তবে আগেই বইলা রাখি এই খেলায় আপনার লোকজনের ক্ষয়ক্ষতি বেশী হইব। কিন্তু ঘটনা ঘটার পর আপনারা ভালোই সিমপ্যাথি পাইবেন। এইটা বাংলাদেশ না হইয়া পাকিস্তান হইলে আপনাদের দেখাইতাম খেলা কারে কয়। মন্দিরের লগে বউ মাইয়া সব কিছুর দখলই নিয়া নিতাম। ইমাম সাহেবের কথা শুইনা পুরোহিত সাহেব মুচকি হাসেন। খেলাটা গুজরাটে হইলে আমরাও দেখাইয়া দিতাম। শুনছিলাম সেইখানে এক মুসলমান গর্ভবতী নারীর পেট কাইটা আগুন ধরাইয়া দিছিল। গর্ভের বাচ্চাটাও মুসলমান, তাই তাকেও আগুনে পুড়াইয়া দেওয়া হইছিল। ইমাম সাহেব এবার একটু নড়েচড়ে বসেন। তা ঠিক। ভারতে এইরকম কাজকারবার হইলে ভালোই হয়। সেই উছিলা ধইরা আমারাও দুই একটা হিন্দু রমণী ধইরা ধর্ষণ করতে পারি। পাকি বড় ভাইরা কইছিল, হিন্দু রমণীদের টেস্ট ভালো। পুরোহিত পান চাবাইতে চাবাইতে কইল আমার কাছে মুসলিম মেয়েদের আগুনে পুড়াইয়া মারাটাই বেশী আনন্দদায়ক মনে হয়। তবে কথা না বাড়াইয়া চলেন খেলা শুরু কইরা দেই।
মসজিদের সামনে এক ইমামকে বেঁধে রাখা হয়েছে। সে নাকি নামায পড়তে আসা মানুষকে উসকিয়ে দিয়ে মন্দির আক্রমন করতে বলেছে। সেটা শুনে মুসলমানরা উল্টা তাকেই গণধোলাই দেয়। ইমাম সাহেব মনে মনে বাঙ্গালিদের গালি দেয়। পাইক্কাদের উপরও তার খুব রাগ হয়। তাকে বাঁচানোর জন্য আশেপাশে কোন পাইক্কা দালাল খুঁজে পাচ্ছেননা।
মন্দিরে মিটিং চলছে। পুরোহিতকে রিফিউজি হিসাবে ভারত পাঠাইয়া দেওয়া হবে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। বাকি জীবন সে ভারত যাইয়া ভিক্ষা কইরা কাটাবে এটাই তার পানিশমেন্ট।
ইমাম সাহেব এবং পুরোহিত সাহেব দিনশেষে বুঝতে পারেন- এদেশের নাম পাকিস্তান না। এদেশের নাম ভারতও না। এদেশের নাম বাংলাদেশ!
৩
একটা লোককে ফাঁসি দিয়ে মাইরা ফালাইব এটা খুব দুঃখের কথা। মৃত্যুদণ্ড এবং মানবধিকার এক সাথে চলেনা। চলতে পারেনা। লোকটা নাহয় একসময় দুএকটা খুন করছিল। অনেকের উপর অকথ্য নির্যাতন চালাইছিল। যুদ্ধের সময় এমন ভুল অনেকেই করে। মাযহার সাহেবের মনটা খুব খারাপ আজকে। ভুল কইরা খুন করার অপরাধে এমন একটা দেশপ্রেমিক মানুষকে আজ ফাঁসিতে ঝুলিয়ে দেওয়া হবে!
কয়েকদিন পর একটা লোককে প্ল্যাকার্ড হাতে শাহবাগের মোড়ে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। প্ল্যাকার্ডে লেখা আমার মেয়ের ধর্ষকদের ফাঁসি চাই। কথা বলে জানা যায় লোকটার নাম মাযহার। কারা যেন ভুল করে তার মেয়েকে ধর্ষণ এবং খুন করে পালিয়ে যায়। তার এখন একটাই দাবী, একটাই চাওয়া। তিনি সকল অপরাধীর মৃত্যুদণ্ড চান!
৪
সুন্দরবনকে হঠাৎ কইরা খুব স্মার্ট দেখাচ্ছে। মানুষজনকে খুব আনন্দিত মনে হচ্ছে। তাদের মনের সব সংশয় আজ কেটে গেছে। হঠাৎ কইরা কেমনে সংশয় কাইটা গেল? দুএকজনের সন্দেহ তবু যায়না। তারা ভয়ে ভয়ে গোপনে গোয়েন্দাগিরি কইরা জানতে পারে, আলাদিন মুভির জেনারেল আলাদিনের প্রেতাত্মা নাকি আমাদের দেশের উপর ভর করেছে। মুভির মতই বাস্তবেও তিনি নিজেকে বিজ্ঞানিদের চাইতেও বড় বিজ্ঞানি মনে করেন। তিনি জাতিকে অভয় দিয়ে বলেছেন সুন্দরবনের উপর নাকি পারমানবিক বোমা ফালাইলেও সুন্দরবনের কিছু হবেনা। সুন্দরবন সব অবস্থাতেই এভারগ্রিন থাকবে। তাই সেটা পরিক্ষা কইরা দেখার জন্য পারমানবিক বোমা মারার আয়োজন করা হচ্ছে!
দুএকজন সংশয়বাদী তবুও ভয়ের মধ্যে আছেন। তাদের এখন একটাই আশা। যদি মুভির মত বাস্তবেও আলাদিন ভালো হইয়া যায়!
৫
ম্যাডাম গোলাপির শুধু একটাই ভাবনা। দেশ থেকে ইসলাম নাই হয়ে যাচ্ছে। যেকোন সময় মসজিদে মসজিদে উলধ্বনির আওয়াজ শোনা যেতে পারে। আজকাল ঘুমের মধ্যেও তিনি খারাপ খারাপ স্বপ্ন দেখেন। তবে একদিক দিয়ে তিনি খুব আনন্দিত। তার দুই ছেলেও তার মত বেশ ইসলাম ভক্ত হয়েছে। একটা ড্রাগ নেয়। আর আরেকটা পারলে পুরো দেশই চুরি কইরা খাইয়া ফালায়। তবে এসব করলেও তারা কিন্তু একদমই ইসলামের পথ থেকে বিচ্যুত হয় নাই। তাদের তিনি শিখাইছেন ক্ষমতায় থাকলে শত্রুর সাথে ভাব কইরা চলতে হয়। তাই ক্ষমতায় থাকলে তিনি ইসলামের শত্রু ভারতের সাথে ভাব কইরা চলেন।ইসলাম শান্তির ধর্ম। তাই তিনি ভারতের সাথে ভারতপন্থি হয়ে বেশ শান্তিতে থাকেন। আবার ক্ষমতায় না থাকলে তিনি তীব্র ভারত বিরোধী হয়ে যান। তখন তিনি জিহাদের পথে চলতে থাকেন। জিহাদের পথে পাকিদের চাইতে উত্তম বন্ধু আর কে আছে.........
গল্প লিখতে বইসা লেখক এইসব কি শুরু করছে? লেখক কি মানুষ না আওয়ামীলীগ???
ধর্ম যার যার! রাষ্ট্র সবার! উৎসবও সবার। সবাইকে ঈদের অগ্রিম শুভেচ্ছা। উৎসব আনন্দময় হোক।
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ সন্ধ্যা ৭:০২