কোলকাতাভ্রমণ , দিল্লীভ্রমণ এবং শীমলাভ্রমনের পর থেকে......
ভেজালটা বাঁধিয়েছিল আলিয়া ভাট। ইন্ডিয়া যাওয়ার আগে হীমাচল প্রদেশে শ্যুটিং হয়েছে এমন বেশ কয়েকটা মুভি দেখে গিয়েছিলাম। এর মাঝে আলিয়া ভাটের ‘হাইওয়ে’ মুভিটাও ছিল। মুভিতে আলিয়া ভাটকে কিডন্যাপ করে নিয়ে যায় নায়ক (স্পয়লার অ্যালার্জিকদের জন্য আরেকটু বলে রাখি- মুভির শেষে নায়ককে কুকুরের মত গুলি করে মারা হয়। আলিয়া ভাট শারীরিকভাবে অক্ষত থাকে, কিন্তু মানসিকভাবে বিকারগ্রস্থ হয়ে পড়ে)। যাইহোক, মুভিটা দেখার পর শফিকের মাঝে চিন্তার উদ্রেক হয়,“ আরে! মুক্তিপণের দাবিতে আমাকেও তো কিডন্যাপ করা হতে পারে! আমিওতো কিছুমাত্র কম আকর্ষনীয় নই!”। ‘শফিক ইসলাম’ যে কোনভাবেই ‘আলিয়া ভাট’ না এটা তাকে বুঝাতে বেশ বেগ পেতে হয়েছিল তখন।
২২.০৭.১৪
ড্রাইভার রাহুল ভাইকে নিয়ে বলছিলাম। লোকটাকে প্রথমবার দেখার পর থেকেই ইনফেরিওরিটি কমপ্লেক্সে ভুগছি সবাই। মানুষটা বাড়াবাড়ি রকমের হিপ। হাতে ট্যাটু, ফ্রেঞ্চকাট দাঁড়ি, একহারা দেহ...... just the kind of dudes আজিম likes. প্রথমদর্শনেই ছেলেটা স্বপ্নালু চোখে উনাকে যেভাবে জরিপ করছিল তাতেই আমরা বুঝে গিয়েছিলাম রাহুল ভাই হতে যাচ্ছেন আজিমের জীবনের প্রথম পুরুষ (পরে অবশ্য আমাদের বাকরুদ্ধ করে দিয়ে আজিম জানায় যে রাহুল ভাইয়ের আগেও তার জীবনে অন্য পুরুষ এসেছিল)। বাকিরা সঙ্গে সঙ্গে সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেললাম- আর যাই হোক, এই লোকের সাথে কোন ছবি তোলা যাবেনা। নতুবা মানুষ আমাদের ছবির দিকে ফিরেই তাকাবে না! যাইহোক গাড়ি ছাড়ার আগে জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে যা দেখলাম তাতে মেরুদন্ডে শীতল একটা স্রোত বয়ে গেল। দেখলাম রাহুল ভাই দক্ষ হাতে গঞ্জিকার স্টিক বানাচ্ছেন। তাও আবার ভারতবর্ষের অন্যতম বিপজ্জনক র্যূটের একটিতে যাত্রা করার পূর্বে। দেশে ফেলে আসা প্রিয়জনদের মুখগুলো শেষবারের মত ফ্ল্যাশব্যাক করে দেখে নিলাম।
গাড়ি মানালীর উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করলো। রাহুল ভাই গান চালিয়ে দিলেন। সব রক্তে নাচন জাগানিয়া গান- কিছু গান শিল্পগুনে আর কিছু গান তাদের মিউজিক ভিডিওর কল্যানে। লোকাল মিউজিক থেকে শুরু করে হিন্দি পুরোনো দিনের গান, নতুন আইটেম সং কিছুই বাদ যাচ্ছিলো না। আমরাও বিপুল উৎসাহে দু-একটা লাইনে গলা মিলিয়ে আসর জমিয়ে ফেললাম।
এদিকে বাইরে তুমুল বৃষ্টি। রাস্তা ছাড়া আশপাশের পাহাড়-পর্বত কিছুই দেখা যাচ্ছে না ঘন মেঘের কারণে। মেঘ কাটতে কাটতে প্রায় ঘন্টাখানেক সময় লেগে গেল। প্রথমবারের মত দুপাশ দেখার সুযোগ হল। রাস্তার দৃশ্য খুবই টিপিক্যাল, আহা-উঁহু করার মত কিছু নেই। এদিকে ক্ষুধার জ্বালায় রাস্তায় কোন সৌন্দর্য খুঁজতেও মন সায় দিচ্ছিলো না। সেই কোন সকালে লুচি-আলুর দম দিয়ে নাস্তা সেরেছি সেসব কি আর কিছু পেটে আছে! বিশেষ করে আদিব শীমলায় বেশ উত্তেজনার এক রাত কাটিয়ে কাহিল হয়ে পড়েছে। রাহুল ভাই ব্যাপারটা ধরতে পারলেন। পাগলা ঘোড়ার মত গাড়ি ছুটালেন। লোকটাকে প্রথমবার দেখছি; তাই কিছুটা টেনশনে পড়ে গেলাম, যদি মানালী-লেহ রাস্তায়ও এই গতিতে গাড়ি চালায় তাহলে আর জান নিয়ে বাড়ি ফিরতে হবেনা। বিকালের আগে আগে লাক্সমী (লক্ষ্মী) ধাবায় গাড়ি থামিয়ে নিজেই আশ্বস্ত করলেন যে আমাদের লাঞ্চের সময় পেরিয়ে যাচ্ছে বলেই তার এতো তাড়াহুড়া।
লক্ষ্মী ধাবাও ভেজিটেরিয়ানদের দখলে। এক থালি খাবার সার্ভ করা হল। আমাদের ভেজ-আতঙ্ক তখনও চরমে উঠেনি, তাই বিনা বাক্যব্যায়ে খেয়ে নিলাম সবাই। পেট ঠান্ডা, অতএব এবার রাস্তায় মনযোগ দেয়া যায়।
রাহুল ভাই গাড়ির গতি কমালেন। সুন্দরনগর লেকে পৌঁছাতে বিকেল হয়ে গেল। লেকের পাশে সাইনবোর্ডে লেখা আছে ছবি তোলা নিষিদ্ধ। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যের জায়গায় এইধরণের নিষেধাজ্ঞার পেছনে কোন যৌক্তিকতা খুঁজে পেলাম না। অতএব কয়েকটা ছবি তুলতেই হলো।
সুন্দরনগর লেক
লেক ছেড়ে আসার কিছুক্ষণ পরেই পৌঁছালাম মান্ডিতে... এবং রাস্তার এতক্ষণের বোরিং পার্টটা এখানেই শেষ হয়ে গেল।
আমাদের সাথে যোগ দিয়েছে পাহাড়ী খরস্রোতা নদী বিয়াস। বিয়াস নদীর বাংলা নাম বিপাশা । নদীটাকে দেখে দেশে ফেলে আসা বিপাশাকে মনে করে আয়াজ বেশ উল্লসিত হয়ে পড়লো। বিপাশাকে আমাদেরও বেশ পছন্দ হয়ে গেল। পছন্দ হবেনাই বা কেন! বিয়াস নদীকে বলা যায় হীমাচলের সাঙ্গু নদী। বড় বড় পাথরে অসুরের শক্তি নিয়ে আছড়ে পড়ছে পানির স্রোত। একই স্রোত বাঁকে বাঁকে নানান রূপ নিয়ে বয়ে চলেছে নীচের দিকে। মনটা কিঞ্চিৎ উদাস হয়ে গেল। সাঙ্গুর এমন একটা বাঁক দেখতে কি অমানুষিক খাটনিটাই না খাটতে হয়! আর এখানে নরম গদিতে হেলান দিয়ে আরাম করছি। বিয়াস নদী রোথাং পাস পর্যন্ত সঙ্গ দিয়ে যাবে আমাদের।
মান্ডি থেকে কিছু দূরে পান্ডোহ্ ড্যাম। নদীতে বাঁধ দিয়ে দিয়ে পানিবিদ্যুৎ উৎপাদনের ব্যবস্থা। বিয়াস এখানে ভয়ংকর! পানির শব্দে কান ঝালাপালা। ফেনীল নিম্নভাগের দিকে হাঁ করে চেয়ে থাকতে হয়। এখানে বিয়াসের কাছে যাওয়া কঠোরভাবে নিষিদ্ধ। বাজে কিছু দূর্ঘটনার ইতিহাস আছে এখানটায়। ছবি তোলাও নিষেধ। এধরণের নিষেধাজ্ঞা যেন আইন ভঙ্গেরই উদাত্ত আহ্বান! সুতরাং আরো কিছু ছবি উঠলো।
পান্ডোহ্ বাঁধ
বাঁধ পার হয়ে বিয়াস আমাদের ডানে চলে আসলো। পাহাড়ের গা ঘেঁষে সর্পিল রাস্তা ধরে চলেছে গাড়ি, আর দু-পাহাড়ের মাঝ দিয়ে বয়ে চলেছে বিয়াস। নদীর ধারে, পাহাড়ের গায়ে গায়ে অসংখ্য ছোট ছোট মন্দিরের ছড়াছড়ি। বেরসিক বিদ্যুতের তারগুলা অবশ্য ছবি তোলায় বেশ বাগড়া দিচ্ছিলো।
হঠাৎ রাস্তার ডানপাশে দারুণ একটা ঝুলন্ত ব্রিজের দেখা মিলে গেল। এটাই সম্ভবত আজকের দেখা সবচেয়ে সুন্দর জায়গা। দুইপাশের পাহাড়কে এক করেছে ব্রিজটা।ব্রিজের দুপাশে নদী দুদিকে বেঁকে গিয়ে হারিয়ে গেছে পাহাড়ের আড়ালে। অনেক দূরে দেখা যাচ্ছে বেশ উঁচু একটা ঝর্না। ব্রিজের পাশের দোকানে চা-বিরতি দিয়ে আবার যাত্রা শুরু হল।
সন্ধ্যার দিকে বিয়াসের খুব সুন্দর একটা বাঁকে এক পাঞ্জাবী ধাবায় গাড়ী থামালেন রাহুল ভাই। উদ্দেশ্য বাকি রাস্তার জন্য গঞ্জিকা খরিদ করা। আদিত্য সিং বেশ উদাস হয়ে গেল নিজেদের দৈন্যদশার কথা চিন্তা করে। হীমাচলের গঞ্জিকা নাকি জগদ্বিখ্যাত! হীমাচলে এসে এ জিনিস না খেলেই নয়! কিন্তু গঞ্জিকার পেছনে পাঁচশো রুপি ব্যায় করার মত বিলাসিতা দেখানোর সুযোগ আমাদের ছিলনা। আদিত্যর চেহারা দেখে মায়াই লাগছিলো। ছেলেটার এমনিতেই মুখের লাগাম নাই। এখনতো অল্প বা বিনা উস্কানিতেই গালির তুবড়ি ছোটাচ্ছিল। যাইহোক, আদিত্যের খায়েশ পূর্ণ না হলেও গাড়িতে রাহুল ভাইয়ের ঠিক পেছনের সীটে বসার কারণে বাকি নয় দিনে প্যাসিভ স্মোকিং এ বেশ ভালো পরিমাণের গঞ্জিকা সেবন করতে হয়েছে আমাকে।
প্রায় তিন কিলোমিটার লম্বা একটা টানেল পার হয়ে যখন কুল্লু পৌঁছালাম তখন রাত হয়ে গেছে। অবশ্য পাহাড়ের দিকে তাকিয়ে দিনে দিনে কুল্লু পৌঁছাতে না পারার দুঃখটা আর থাকলো না। পাহাড়ের গা ভর্তি বাড়িঘর জোনাকির মত জ্বলছে। দিনে আসলে তো এই দৃশ্যটা আর দেখা হতো না! অন্ধকার কুল্লুর জনপদ পাড়ি দিয়ে চললো গাড়ি বিয়াসের একদম ধার ঘেঁষে। অন্ধকারে নদীর খুব বেশী কিছু দেখা যাচ্ছিলো না, পাথরে আছড়ে পড়া পানি বাষ্প হয়ে ছাঁট দিচ্ছিলো গাড়ির গায়ে। সাথে তীব্র গর্জনটা জানান দিচ্ছিলো নদী কতটা ক্ষেপে আছে!
পাহাড়ের গায়ে মন্দির এবং কুল্লুর টানেল
মানালী পৌঁছাতে পৌঁছাতে ঘড়ি আটটা পার করে ফেললো। হোটেল সৌরভ আমাদের দু-রাতের আবাসস্থল। বেশ ভালো হোটেল। হোটেলের সামনে কি আছে তা অবশ্য কিছুই দেখা যাচ্ছিলো না। তবে বিয়াসের শব্দ জানান দিলো যে সকালে বড়সড় কোন চমক অপেক্ষা করছে আমাদের জন্য। হোটেলেই আমাদের খাবারের ব্যাবস্থা করা ছিল। রাতের খাবারেও সেই ভেজ। খাবারের প্রতি বিতৃষ্ণা চড়তে শুরু করলো। নদীর গর্জন শুনতে শুনতে ঘুমাতে গেলাম।
২৩.০৭.১৪
সকালে ঘুম থেকে উঠেই চমকটা পেয়ে গেলাম। বিয়াস তার ভয়ংকর সৌন্দর্য্য নিয়ে বয়ে চলেছে হোটেল থেকে কয়েক মিটার দূরে। জুলাই মাসের তুলনায় আবহাওয়া বেশ ঠান্ডা। দোতলার ব্যালকনিতে চায়ের কাপ নিয়ে সকালের রোদ পোহানো হল কিছুক্ষণ। আজকের দিনটা মোটামুটি এভাবেই কাটানোর প্ল্যান। হালকা-পাতলা ঘোরাঘুরি আর যথাসম্ভব বিশ্রাম নিয়ে লাদাখ ভ্রমণের জন্য শরীর প্রস্তুত রাখা।
দোতলার ব্যালকনিতে
ব্রেড-ওমলেট দিয়ে নাস্তা সেরে গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে পড়লাম। আমাদের হোটেলটা মানালীর মূল জনপদের একটু বাইরে। গাড়ি মানালীর বাজার আর মল এরিয়া পার হলো। জায়গাটা শীমলার মলের মত অত শুনশান না, বেশ ঘিঞ্জি।
শহর পার হয়ে গাড়ি সবার আগে হিড়িম্বা দেবীর মন্দিরে থামলো। মন্দিরের বয়স প্রায় পাঁচশো বছরের কাছাকাছি। দরজায় এবং ভেতরে কাঠ ও পাথরের দারুণ কারুকার্য। হিড়িম্বার ধ্যানের গুহাকে কেন্দ্র করে এই মন্দির। চারিদিকে উঁচু সিডারের বন ঘিরে রেখেছে মন্দিরটাকে। মন্দিরের চারপাশে নানা রঙের ফুলের বাগান। মন্দিরের প্রবেশপথে রোমশ চামরী গাই এবং খরগোশ নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে স্থানীয় লোক। টাকার বিনিময়ে ইঅকে চড়ে কিংবা খরগোশ কোলে নিয়ে ছবি তোলা যায়। নিতান্তই পয়সার অপচয়। এমনই এক দূর্গন্ধময় চামরী গাই আশফাককে বেশ পছন্দ করে ফেললো। কিন্তু শত নারীর হৃদয় ভাঙ্গার অপরাধে অপরাধী আশফাক সেই ডাকে সাড়া না দিয়ে হৃদয় ভাঙ্গাদের সারি দীর্ঘায়িত করলো।
হিড়িম্বা , তিব্বতীয়ান মনেস্ট্রি
হিড়িম্বার মন্দির থেকে ফেরার পথে গাড়ি থামলো ক্লাব হাইজে। নানারকম খেলাধুলা এবং বিনোদনের ব্যাবস্থা আছে এখানে। যদিও সামনের বহমান অপরূপা বিয়াসকে ছেড়ে কে এখানে টেবিল টেনিস খেলতে আসে তা আমার বোধগম্য হলোনা। এখানে আসার মূল উদ্দেশ্য ছিল রিভারক্রসিং। কোমরে দড়ি বেঁধে বিয়াসের উপর দিয়ে পারাপার এবং শেষে বিয়াসের মাঝখানে পা ডুবানো- এ জিনিস একবার ট্রাই না করলে নিজের বিবেককে কি জবাব দিব!? বোর্ডে একদাম ১৫০ রুপি লেখা থাকলেও দামাদামি করে ১০০ রুপিতে নামিয়ে আনা হল। নদীর পছন্দসই একটা বাঁকে একে একে সবাই করলাম রিভার ক্রসিং। এক কথায়- ১০০ রুপির এর চেয়ে ভালো কোন ব্যায় হতে পারেনা! যতই নিরাপত্তা অবলম্বন করা হোক না কেন বিয়াসের ঠিক মাঝামাঝি গেলে রক্তে একটা শিহরন বয়ে যেতে বাধ্য! পয়সা উসুলের প্রশস্তি নিয়ে মাটিতে পা রাখলাম একেকজন।
নিজেদের একটা ছবি রেখে দিলাম
সময় এসেছে ফতোয়াবাজ রাবার মুখোশ খুলে দেওয়ার। আমরা যখন রিভার ক্রসিং করে বিয়াসের সৌন্দর্য্যে আহা উঁহু করছিলাম, রাবাও তখন আহা উঁহুই করছিলো- কিন্তু তা সম্পূর্ণ ভিন্ন কারণে। ছেলেটা প্রকৃতির ছবিই তুলছিলো বটে! কিন্তু এ প্রকৃতি বড় আদিম! অবশ্য ছবিগুলো নিয়ে আমাদের বিশেষ আপত্তি নেই, সাগ্রহেই দেখি মাঝে মাঝে। তবে আপনারা এখন থেকে ফতোয়া নিতে রাবার কাছে যাওয়ার আগে দ্বিতীয়বার ভেবে দেখবেন।
রাবা’স ফটোগ্রাফি
দুপুরের খাবার সারতে হোটেলে ফিরলাম। দুপুরে মাছের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এইবেলা বলে রাখি- মাছকেও আমরা একটু উন্নতমানের সবজী হিসেবে গন্য করি। ফলে সবারই মেজাজ বেশ খিঁচড়ে গেল। বাঙ্গালী বাবুর্চিকে অনুরোধ করতেই সে জানালো, রাতে মুরগীর ব্যবস্থা করা যাবে। কিন্তু হালাল করার দায়িত্বটা আমাদেরই নিতে হবে। আরে এটা কোন ব্যপার! আয়াজতো সেই সেন্ট মার্টিনেই মুরগী জবাইয়ে হাত পাকিয়ে এসেছে! অতএব, রাতে আসন্ন মুরগীর কথা চিন্তা করে সবাই স্বপ্নের জগতে হারিয়ে গেলাম।
আরো একবার গাড়ি নিয়ে বেরোলাম আমরা। রাহুল ভাই ‘বন-বিহার’ নামক এক জায়গায় নামালেন। দশ রুপির টিকেট কেটে ভেতরে ঢুকেই মেজাজ খারাপ হয়ে গেল। সিডারের বন তো সেই হিড়িম্বাতেই দেখে এসেছি, এটা আর নতুন কি! কিন্তু দশ রুপি কি এভাবে জলে ফেলে দিবো! কভি নেহী! গাছ দেখতে ভালো না লাগলে মানুষ দেখবো! তার উপর আমরা একেকজন আবার জোয়ী ট্রিবিয়ানীর ফ্যান। সুতরাং সুন্দরী রমনীদের খোঁজে ঘুরে বেড়াতে থাকলাম জঙ্গলে। To make long story short, বন-বিহার থেকে বের হওয়ার সময় আদিবের সাথে হিসেব করে দেখলাম যে আমরা কমপক্ষে চল্লিশ রুপি লাভ করে যাচ্ছি সেখান থেকে। কিভাবে এই হিসেব-নিকেশ করা হল তা বিস্তারিত বলে ফেমিনিস্টদের তোপের মুখে পড়তে চাচ্ছি না।
মনিষী জোয়ী ট্রিবিয়ানীর বাণী
এই প্রতিকী ছবিটাই মূলত আমাদের বন-বিহার ভ্রমণের সারমর্ম। বিয়াসের পাশে রোমান্টিক কাপলদের সাথে ফরেভার অ্যালোন আদিত্য
বন-বিহারের ঠিক বিপরীত পাশে ‘তিব্বতীয়ান মনেস্ট্রি’। বন-বিহারের পাপমোচনে ঢুকে পড়লাম সেখানে। দোতলা একটা দালানে মূল ধর্মালয়। বেশ বড়সড় একটা প্রেয়ার হুইল আছে বাইরের আলাদা একটা রুমে। তিব্বতীয়ান বুদ্ধিজম সম্পর্কে আমার তেমন কোন ধারণা নাই। তাই এখানকার অনেক কিছুই সাধারন প্যাগোডার চেয়ে ভিন্ন লাগলো। বিশেষ করে গৌতমবুদ্ধ ছাড়াও আরো বেশ কিছু অচেনা প্রতিমূর্তি দেখলাম এখানে।
মনেস্ট্রি থেকে বের হয়ে মানালীর মল চত্বরে সময় কাটালাম কিছুক্ষণ। জায়গাটা মানালীর কেন্দ্রস্থল। সব দোকানপাট এখানটা ঘিরেই। ক্যামেরার দোকানে একশো রুপির বিনিময়ে সবগুলো ক্যামেরার ডাটা পেনড্রাইভে ট্রান্সফার করে নিলাম। রাস্তার ধারের ছোট ছোট গরম রসগোল্লাও খাওয়া হল। এখানকার আপেল বেশ বিখ্যাত। কিন্তু আপেল পাকা তখনো শুরু হয়নি বলে চেখে দেখার সৌভাগ্য হলো না।
রাতের খাবারটা নিয়ে কারো আপত্তি থাকলো না। রান্না যেমনই হোক, আমিষ তো! বৃষ্টির কারণে স্থানীয় সিনেমা হলে মুভি দেখার প্ল্যান বাদ দিতে হল। হোটেলের বাঙ্গালী বাবুর্চি রাতে আড্ডা দিতে আসলেন আমাদের সাথে। জানালেন বাংলা ভাষাভাষী কাউকে পেলে তিনি আড্ডা দেয়ার সুযোগ ছাড়েন না। চিরকুমার লোকটা তার জীবনের কাহিনী শুনালেন। নিজের বাংলাদেশ ভ্রমণের অভিজ্ঞতা জানালেন। উত্তর ভারতের প্রকৃতি আর সেখানকার মানুষের প্রশংসা ঝরালেন মুখ থেকে। রান্না যেমনই হোক, অন্তত লোকটার গল্প বলার ক্ষমতার জন্য হলেও তাকে বখশিশ দেয়াটা জরুরী হয়ে পড়লো। বারোটার দিকে সবাই ঘুমাতে চলে গেলাম। মানালীতে শেষ রাত। পরদিন থেকে ভ্রমণের মূল অংশ শুরু- যার জন্য দেশ থেকে এদ্দুর এসেছি সবাই। সবার শরীর ঠিক থাকাটা খুবই জরুরী......
*কিছু ছবি রাবা এবং আয়াজের তোলা।
*মূল লেখা এখানে
এরপরের লেখাঃ ভারতভ্রমণঃ মানালী টু কিলং
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে মে, ২০১৫ রাত ৮:৫৯