দৃশ্যপট১ঃ-
আনিস সাহেব বললেন,ভাংতি টাকা না থাকলে পুরো টাকাটা রেখে দাও।রিক্সাওয়ালা পঞ্চাশ টাকার নোট পেয়ে খুশি হয়ে একবার আনিস সাহেবের মুখের দিকে ভক্তিসহ তাকালো।চমকে উঠলেন আনিস সাহেব।স্মৃতির পাতায় স্বরণ করলেন,
-অনেক বছর আগের কথা,এ তো সেই আরিফুল ইসলাম,যিনি কিনা স্ত্রী ও সন্তানদের নিয়ে গুলশানে নিজের আলিশান দালানে থাকতেন এবং একজন রাঘব বোয়াল ও ছিলেন বটে।যাইহোক,অথচ তিনি কিভাবে আজকে এই প্রচণ্ড রৌদ্রে,খোলা আকাশের নিচে, জীবনের শেষ প্রান্তে এসে রিক্সা চালিয়ে টাকা আয় করছেন।
-ভাবতে ভাবতে আনিস সাহেব টের ও পেলেন না কখন যে রিক্সাওয়ালা চলে গেছেন।
_
দৃশ্যপট২ঃ-
পরের দিন আনিস সাহেব রিক্সাওয়ালাকে ঘটনাক্রমে খুঁজে বের করে জিজ্ঞেস করলেন,
-চাচা আপনি কি সেই আরিফুল ইসলাম সাহেব?আপনার এমন অবস্থা কেনো?বৃদ্ধ সামান্য সংকোচিত ভাব দেখিয়ে চোখ বড় বড় করে জবাব দিলেন,
-বাবা,তুমি কাকে বলছো আরিফুল ইসলাম আর আমি সামান্য রিক্সাওয়ালা আমার এই পরিস্থিতি হবেনা তো কার হবে।
এই বলে বৃদ্ধ লোক রিক্সা নিয়ে অনায়াসে চলে গেলেন।বৃদ্ধ একটি বটগাছের তলায় বসলেন এবং মনে করতে লাগলেন অনেক বছর আগের স্মৃতি
-"এরা আমার অধীনস্থ চাকরবাকর ছিলো,আমি এদের কতই না অত্যাচার করেছি,একদিন এদের মেরে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দিয়েছিলাম।আর আজকে আমি রিক্সা চালাই আর আনিস আমার রিক্সায় চরে সাহেবের মতো তার কাজে যায়।এ আমার ভাগ্যের নির্মম পরিবর্তন"।
এভাবে বলতে বলতে কান্নায় আপ্লুত হয়ে পড়লেন বৃদ্ধ রিক্সা চালক হরফে আরিফুল ইসলাম।
_
দৃশ্যপ৩ঃ-
অনেকদিন পর,আনিসুল ইসলাম তার অফিস থেকে বেরিয়ে দেখলেন রাস্তায় ভিড়,একজন রিক্সাওয়ালা এক্সিডেন্ট করেছেন।তিনি এগিয়ে গিয়ে রিক্সাটা নিরাপদে রেখে রিক্সাওয়ালাকে ধরাধরি করে একটি গাড়িতে তুলে নিয়ে হাসপাতালে গেলেন এবং চিকিৎসা শেষে তাকে বাসায় নিয়ে আসলেন।আনিস সাহেব জিজ্ঞেস করলেন,
-আপনার স্ত্রী ও সন্তানরা কোথায়?
তিনি জবাবে বললেন,
-স্ত্রী কোথায় জানিনা।তবে সন্তানরা পুত্রবধুদের নিয়ে গুলশানেই থাকে।ঐ বাসাতে আমার জায়গা হয় নি।এ কথাগুলো বলে তিনি হাউমাউ করে কান্নায় ভেঙ্গে পড়লেন।
আনিস সাহেবের স্ত্রী বললেন,
-চাচা এ আপনার পাপের শাস্তি।আপনি যেভাবে মানুষের সাথে অহংকার ও অত্যাচার করতেন ঠিক সেটাই আপনার নিজের সাথেই ঘটছে।
আনিস সাহেবের সন্তানরা আকষ্মিক দৃষ্টিতে একবার তাদের মা-বাবার দিকে তাকায়,আরেকবার করুণার দৃষ্টিতে বৃদ্ধের দিকে থাকায়।