কেদার নাথের পুরনো জমিদার বাড়ি তে ভূতেদের গোল মিটিং বসেছে। প্রতিবছর ভুতেদের একটা প্রতিযোগিতা হয়ে থাকে। বরাবরের ন্যায় এবারও তাঁর ব্যাতিক্রম হবে না। মানুষের বসবাস স্থান থেকে দূরে নিজের একটি যথোচিত ঘাটি তৈরি করেছে ভূতের সরদার রাম লাল।
রাম লাল কেদার নাথের খাছ চামচা ছিলো। ইষ্ট পাকিস্তান আমলে কেদার নাথ ভারত বর্ষের জয়পুর থেকে পূর্ব বঙ্গে আসে। ধনকুবের সন্তান হওয়ায় বিভিন্ন দেশ বিদেশও ভ্রমন করার সুযোগ হয়েছিলো কেদার নাথের। ফরিদপুর জেলার মধুখালীতে শত বিঘার উপরে জায়গা কেনে কেদার নাথ। ব্রিটিশদের থেকে অত্র এলাকায় জমি ক্রয় করে কেদার নাথ "রায় চৌধুরী" উপাধি লাভ করে। ধীরে ধীরে কেদারনাথ জমিদার রুপে আবির্ভূত হয়।
রাম লাল মৃত্যুর পূর্বে গোলাম ছিল।
কিন্ত এখন মহাজন সে। তাঁর কথায় নতুন পুরাতন ভূতেরা উঠে আর বসে। জমিদারের আদেশ পালন করতে যেয়ে
খাজনা আদায় করতে করতে একটা সময় মৃত্যু হলো মজদুর কৃষকদের হাতেই! বেচারা রাম লাল দোষ না করেও দোষী হয়ে পরলোক গমন করলো।
তাই তো এখন সে দলবল গুছিয়ে রীতিমত ভূত দলের সরদার হয়ে গেলো। কেদারনাথের মৃত্যুর জন্য অনেক দিন অপেক্ষা করতে হয়েছিলো রাম লালের।
রাম লালের মৃত্যুর প্রায় ৬ বছর পর কেদারনাথের মৃত্যু হলো।
সে রাতে প্রচুর মদ্যপানের পর নর্তকীর সাথে রাত্রি যাপনের শেষ অধ্যায়ে পটল তুললো কেদারনাথ।
আগে থেকেই বাহিনীর সদস্য কিছু নিয়োগ রত ছিলো কেদারনাথের পেছনে। কেদারনাথের পটল তোলার অপেক্ষায় ছিলো তাঁরা। এই বাহিনীর কিছু সদস্য আবার খাজনা দিয়ে সর্বস্ব হারানো জনগনের মধ্যে কেউ কেউ।
তাঁরা তো অধীর আগ্রহে দিন গুনতে ছিলো কখন কেদারনাথ তাঁদের লাইনে এসে দাঁড়াবে!
খাজনা যে সুদে আসলে আদায় করিতে হবে তাহাদের।
সেই শুভ লগ্নে রামলাল ছিলো নতুন ভূতদের নিয়ে আলাপ আলোচনায়।
তখনই হকি টকিতে সিগন্যাল আসে।
বাটন দাবানোর সাথে ওপাশ থেকে উল্লাসিত কণ্ঠ শোনা যায়!
-'কেদারা কে পাইয়া গেছি বস!
মন তো চাইতেছে এইখানেই গুলি কইরা মাইরা ফেলি হালারে।
শুধু অর্ডার দেন কি করুম? বস, গাঙ্গে নিয়া আমরা একটু খেলাধুলা করি হেতের সাথে? কি বলেন?
-উঁহু, কি বলছো তোমরা? না, না। তাকে স-সম্মানে জুতার মালা পরিয়ে আমার কাছে নিয়ে এসো। তাঁকে যেন তেনো শাস্তি দিলে তাঁর তো অপমান করা হবে। আমি তাঁর জন্য লম্বা লিস্ট তৈরি করিতেছি তোমরা তাঁকে জঙ্গলের ভাঙ্গা বাড়িতে নিয়ে এসো। কেদারনাথের মৃত্যুর আগ পর্যন্ত রাম লালের আস্থানা ছিলো জঙ্গল বাড়িতে। কেদারনাথের মৃত্যুর ৫ বছর পর সেখানে রাম লাল এবং তাঁর সৈন্য দল জমিদার বাড়ি দখল নেয়। এই দখল নেওয়া সৈন্যদলের মধ্যে কেদারনাথ ছিলো অতি সাধারন একজন সৈন্য।
উৎফুল্ল রাম লাল কেদারনাথের মৃত্যুর খবর শুনিয়া পার্টির নির্দেশ দিলেন। জঙ্গলের পশু পাখিদের রক্ত হলো ভূতেদের সব থেকে সুস্বাদু খাবার। রাম লাল, এই খাবার ম্যানেজ করার নির্দেশ দিলেন সব ভূত বাহিনীর কর্মরত সদস্যদের। আর খুশির সহিত বলতে লাগলেন,
'আজ যে পার্টি হবে! এতো আমাদের সুখের দিন। যাও তোমরা ভূত রমনিদের নিয়ে এসো। যে যার ড্যান্সিং পার্টনার খুজে নাও। এখানে রমণীদের সংখ্যা খুব নগনিয়।
কেদারনাথ কে খুব সাজ সজ্জা করে সাজানো হয়েছে। পরনে শুকরের চামড়া দিয়ে বানানো অতি নগন্ন পোশাক। মাথায় পরানো হয়েছে ছাগলের পেছনের অংশ দিয়ে বানানো হ্যাট। পায়ের মধ্যেও ঢুকিয়ে দিয়ে রেখেছে জ্যান্ত গুইশাপ দিয়ে তৈরি জুতা।
কেদারনাথ আতঙ্কে দশখানা!
কি সব হচ্ছে ওকে ঘিরে বুঝে উঠতে পারছে না!
নিয়তির উপর এতো জঘন্য রকমের দুর্ভোগ কেউ হয়তো আশা করে না। ভাঙ্গা বাড়ি জমে উঠেছে উৎসবে মাঝ রাত্রে। পার্টনার নিয়ে দূর দুরন্ত থেকে ভূতেদের আগমন লক্ষ্য করা যাচ্ছে।
খোলা দোতালা বাড়ির মাঝখানে স্টেজ বানিয়ে মল মূত্র দিয়ে তৈরি সিংহাসনে বসিয়ে রাখা হয়েছে কেদারনাথ কে।
সবাই আসছে দেখছে, কিছু খেতে না পারলে তা ছুড়ে মারছে কেদারের দিকে। কেউ কেউ রাম লালের কাছ থেকে অনুমুতি নিয়ে দু চার ঘা বসিয়ে দিচ্ছে কেদারের চান্দির উপর।
আবার মারতে পারার খুশিতে নিচে এসে ডিজে ড্যান্স করছে।
এ এক খুশির মহড়া চলছে। যেটা শুধুমাত্র কেদারের মৃত্যুই সুযোগ করে দিয়েছে তাঁদের। আর কেদার আফসোস করছে কেন যে মরলাম!
শালা! এর থেকে নরকই তো ভালো ছিলো আমার জন্য।
পার্টিতে সবার উদ্দেশ্য রাম লাল এটেনশন জানালেন। উৎসুক ভূতগন তাঁদের নেতার দিকে তাকালেন, নেতার মুখের বক্তব্যে শোনার জন্য।
রাম লাল,
-শ্রদ্ধেয় ভূত গন, আমি রাম লাল সারা টা জীবন এই কেদারের গোলামী করেছি! তাই আজ সবার সম্মুখে ঘোষণা দিলাম এই কেদারা কে আজ থেকে আমার গোলাম বানালাম।
রামলালের এমন বক্তব্য শুনে উৎসুক ভূতগণ হৈচৈ শুরু করে দিলো। এদের মধ্যে কিছু ভূতের মন খারাপ দেখা গেলো নিউজ টি শোনার পর। তাঁরা ভেবেছিলো কেদারা কে তাঁরাই গোলাম হিসেবে ব্যাবহার করবে। অবশ্য কিছুই করার নেই, রাজা মহাশয়ের আদেশ বলে কথা! অমান্য করার কোন সুযোগ নেই।
রাম লালের খাছ কর্মচারী এখন কেদারনাথ। রাম লাল যখন তখন ডাক দেয়,
-কেদার!
-জী, মালিক?
-আমার হুক্কাই আগুন কই?
-জী, মালিক এখনই ধরিয়ে দিচ্ছি।
কথা শেষ হবার আগেই পশ্চাতে লাথি।
-কেদার?
-জী, হুজুর?
-আমার ড্রিংস কই?
-হুজুর, আজ কোন পশু শিকার করতে পারিনাই।
-কি! তবে রে হতভাগা!
উদম পিটিয়ে তারপর শান্তি লাভ করে রাম লাল।
বড়ই অশান্তিতে আছে কেদারা। কিন্ত কিছু করার নাই, তাঁর ভৌতিক জীবন টা এভাবেই চলতে থাকবে। তবে বড়জোর ভূত পরিষদে দরখাস্ত করে মালিক পরিবর্তনের আবেদন করতে পারে সে। কিন্ত সেটাও যে এর থেকে ভয়াবহ হবে না তাঁর ও কি কোন গ্যারান্টি আছে? ওদিকে অন্যরা সব ওঁত পেতে বসে আছে কবে রাম লাল গোলাম পরিবর্তন করবে। খাজনা চার গুন বেশী দিয়ে হলেও কেদারা কে কেউ মিস করতে রাজী নয়!
প্রতিযোগিতার দিনক্ষণ ঘনিয়ে আসছে। কেদারের ভয়ও বেড়ে চলেছে। প্রতিবার প্রতিযোগিতার শীর্ষ স্থান অধিকারীর হাতে কেদার কে হস্তান্তর করা হয় এক মাসের জন্য। পুরো এক মাস কেদারের উপর চলে অমানবিক নির্যাতন। আর বিজয়ীগণ মেতে ওঠে এক অন্যরকম পৈশাচিক আনন্দে।