আজ থেকে তিন বছর আগে মেয়েটির সঙ্গে প্রথম পরিচয় হয়েছিল শুভ্রর। ওর কাজিনের বান্ধবী ছিলো। তিথির বাসা থেকেই প্রথম দেখা শুভ্রর ইরার সঙ্গে। আস্তে আস্তে প্রনয়ের শুরু। দীর্ঘ সময় কথা আদান প্রদান। এভাবেই চলতে থাকে অনেক দিন। সম্পর্কের তিন বছর কেটে গেলো। শুভ্র এখনো পড়াশুনা করছে। ইরা হঠাৎ করে জানায় ওরা শহর ছেড়ে চলে যাচ্ছে! ওর বাবা বদলি হয়ে গেছে। যশোর ছেড়ে দুর শহর বরিশালে।
শেষ বিদায় জানাবার সুযোগ হয়নি। সেদিন সকালে পরিক্ষা ছিলো শুভ্রর। ফিরে আর ইরার দেখা মিললো না! এত দিনের ভালবাসা আজ ওকে ছেড়ে বহুদূর চলে যাচ্ছে! মন মানছে না কিছুতেই শুভ্রর। পাগলের মতো হয়ে গেছে ছেলেটা। খাওয়া, নাওয়া ছেড়ে দিয়েছে। তিথির কাছ থেকেও নতুন এড্রেস মিললো না!
ইরার বাবার অফিস থেকে খোঁজ নিয়ে জানতে
পারলো ট্রান্সফার টা পিরোজপুরে হয়েছে।
রাত কাটে না!
কাটে না দিন। সময় বড় নিষ্ঠুর বিন! ঘড়ির কাটা ঘুরছে না।
থমকে আছে সময়।
অস্থিরতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। টিভির পর্দা ঝাজালো লাগছে। সবার কথাবার্তা বোরিং লাগছে। কিছুই ভাল্লাগছে না শুভ্রর। খুব শীঘ্রই তোমার শহরে আসছি ইরা! মন মানছে না। সময় কেন এতো নিষ্ঠুর ব্যাবহার করছে শুভ্রর সঙ্গে ওর বুজে আসছে না। সারা রাত নির্ঘুম কাটিয়ে পরদিন সকালে কাউকে কিছু না বলেই বাসা থেকে নিরুদ্দেশ বেরিয়ে পড়েছে শুভ্র। গিটারের সুর তুলে গান গাওয়ার ইচ্ছে নেই। আকাশে তাকিয়ে পাখিদের ঝাঁক বেধে উড়ে চলা দেখবার ইচেছ নেই। রৌদ্রস্নান সকাল সকাল ঘামে ভেজা শরীর নিয়ে বাসে চড়ে বসেছে ছেলেটা।
৫ বছর পর....
শুভ্র খুব সুন্দর ছবি আঁকায়। মনের মাধুর্য মিশিয়ে ছবির মাঝে জীবন ঢেলে দেই!
কিছু আর্ট গ্যালারিতে ওর ছবি গুলি উঠেছে।
কয়েকটা জয় জয়কার প্রদর্শনী মেলা পেরিয়েছে।
এতো ছবির আড়ালে আজও একটা ছবি মনের কোনে চুপটি মেরে বসে আছে।
অস্পষ্ট মুখ টা। দেশ ছেড়েছে প্রায় চার বছরের বেশী। আমেরিকা মামার কাছেই আছে।
একটা নির্জন রুমেই দীর্ঘসময় ধরে নিজেকে তলিয়ে দিয়েছে। সেদিনের দুঃস্বপ্ন আজও তাড়া করে শুভ্রকে। সবকিছু ভুলতে চাই ও।
কিছুই মনে রাখতে চাইনা!
পিছ থেকে আচমকা কারো কন্ঠস্বর,
"স্যার আপনার জন্য কিছু লোক নিচে ওয়েট করছে।
-তুমি যাও আমি আসছি!
-স্যার, আপনি একা যেতে পারবেন না!
শুভ্র মাঝে মাঝে ভুলেই যায় ওর যে দুটি পা নেই!
সেদিন বাস এক্সিডেন্টে ওর পা দুটি হারিয়েছিলো! অভিশপ্ত নশ্বর জীবন টাই বয়ে বেড়াচ্ছে আজও। চারদিকে আলোর মিছিল।
অর্থ সম্পদের পাহাড় গড়েছে।
তবু আজ সব থেকেও কিছুই নেই শুভ্রর!
মনে পড়ে ইরার সাথে কাটানো দিন গুলির কথা। আজও জীবন্ত সবকিছুই।
চোখের সামনে হাতছানি দেয় সুখ স্মৃতি গুলি।
ওকে ঘিরে কত রঙিন স্বপ্ন এঁকেছিল শুভ্র রং তুলির মাঝে।
শিমুলের শুকনো ফুল গুলি আজও যত্নে রাখা আছে ডায়েরীর ভাজে। শুধু অযত্নে মরচে পড়েছে ওকে ঘিরে লেখা কবিতা,
ভালো থেকো তুমি ঝর্নার মত করে।
সকালের মিষ্টি আভা যেভাবে চারু লতায় মিশে একাকার হয়ে যায় ভালো থেকো সেভাবেই।
ভালো থেকো মৃদু হাওয়ায় দোলা ঘাস ফুলের মত করে।
সুভাস ছড়িয়ো হাসনাহেনার মতো।
ভালো থেকো প্রিয় কবিতার মাঝে
সকাল কিংবা সন্ধ্যে সাঝে পরিচিত সেই হাঁসি কিংবা নকশি কাঁথার ভাজে
ভালো থেকো।
শখের পুতুল বা রিমিঝিম বৃষ্টির ছুটে আসা শিশির কনার মতই ভালো থেকো।
আধারের বুকে টিপ টিপ জ্বলতে থাকা এক কোনের ওই সুখ তাঁরাটির মত ভালো থেকো।
এক তোড়া লাল গোলাপ অথবা ঝিনুকের মালার মত ভালো থেকো।