১.
কোন এক বর্ষার দিনে বাদল প্রথম নীলাকে দেখে। হাতের ভ্যানিটি ব্যাগ মাথার উপরে ধরে জলদি দৌড়িয়ে আসছিলো বাদল যে দোকানে দাড়িয়ে ছিল সে দিকেই। মেয়েটা বেশ রূপবতী! তাই যে কোন ছেলের ফার্স্ট দেখলেই ভালো লাগতে পারে। মেয়েটা এসে দাঁড়ালো বাদলের পাশে। বাদল হাতে ফুটবল নিয়ে দাড়িয়ে অপেক্ষা করছিলো কয়েকজন বন্ধুর। তারাও এসে গেলো। ফুটবল নিয়ে বাদল বর্ষা কে উপেক্ষা করে ঝাপিয়ে পড়লো মাঠে। দোকানের সামনেই মাঠ। এ বৃষ্টি যেন থামার নয়। বৃষ্টির ফোটা যত ভারী হচ্ছে, বাদলের ফুটবল খেলার গতি ততই বৃদ্ধি পাচ্ছে। মেয়েটা দোকানের নিচে দাড়িয়ে বাদলের ফুটবল খেলা উপভোগ করছে। বাদল ও মাঝে মাঝে দোকানের দিকে তাকাচ্ছে মেয়েটার অবস্থান নিশ্চিত করার জন্য। হঠাৎ টিপ টিপ বৃষ্টির ফোঁটা কমতে শুরু করেছে, এখনি যে মেয়েটা চলে যাবে। বাদল বার বার তাকাচ্ছে দোকানের দিকে। ব্যাগ হাতে মেয়েটা বেরিয়ে পড়েছে রাস্তায়। মেয়েটা রাস্তার পাশ ধরে হেঁটে যাচ্ছে আর বাদলের মুখের দিকে চেয়ে আছে। বাদল ও তাকিয়ে আছে মেয়েটার মুখের দিকে। ইশ এই মেয়েটাকেই তো আমার দরকার, মনে মনে ভাবছে বাদল। এখন চলে গেলে পরে কি করে দেখা পাবো? যাবো নাকি দৌড়িয়ে? জিজ্ঞেস করবো, এই মেয়ে এই ভাবে তাকিয়ে আছো কেন? তোমার কি কোন লজ্জা সরম নেই? তোমার লজ্জা না থাকতে পারে কিন্ত আমার তো লজ্জা আছে, আমি এক অবলা পুরুষ! তোমার ওই দুটি চোখের মায়াবী ডাক, আমি কেমন করে উপেক্ষা করবো বলো?
এই বাদল কিরে, কোথায় হারালি? এভাবে খেলা ফেলে কোন দিকে ধ্যান লাগালি?
ওওও তুষার, না দোস্ত কিছুনা... এমনি কোন ধ্যানে না...
তুই যা আমি আসছি, আমি একটু পর খেলবো এখন মুড নেই। ওকে তোর মর্জি ? এই কথা বলে তুষার চলে গেলো। রাস্তার শেষ প্রান্তে চলে গেছে মেয়েটি। মোড় ঘুরলেই আর দেখা যাবেনা মেয়েটিকে। তবু শেষ অব্দি পর্যন্ত না দেখে শান্তি পাচ্ছে না বাদল। তাকিয়েই আছে সেদিকে...মেয়েটাও মোড় ঘোরার আগে এক টুকরো মিষ্টি হাঁসি দিয়ে চলে গেলো। মেয়েটার হাঁসি দেখে বাদল তো দিশেহারা! নিশ্চয়ই মেয়েটার আমাকে পছন্দ হয়েছে! নয়তো এমন মায়াবী হাঁসি দেবেই বা কেন? মনে মনে প্রশ্ন জাগে বাদলের।
রাতে ঠিক মত ঘুম হচ্ছে না বাদলের। যে ছেলে রাত ১১ টার মধ্যে ঘুমিয়ে পড়ে সে আজ এতো রাত পর্যন্ত জেগে আছে। রাত ১টা বাজতে চলেছে প্রায়, তবু দু চোখ জুড়ে ঘুম নেই। অনেক রাত পর্যন্ত চিন্তা করলো বাদল কি ভাবে মেয়েটার সন্ধান বের করা যায়। হুম, যে করেই হোক কাল মেয়েটাকে খুজে বের করতেই হবে, মনে মনে ডিসিশন নিলো বাদল...
পরের দিন দুপুরের পর...
দুপুরে খাওয়ার পর কিছুক্ষন রেস্ট নিয়ে বাড়ির বাইরে বের হলো বাদল। এদিক সেদিক তাকাতে তাকাতে হঠাৎ তুষার দের ছাদের দিকে চোখ চলে গেলো বাদলের। চোখ আটকে গেলো সেখানেই। গতকাল যে মেয়েটিকে দেখেছিলো, সেই মেয়েটি তুষার দের ছাদে হাঁটাহাঁটি করছে সুমির সাথে। পকেট থেকে মোবাইল টা বের করেই বাদল তুষারের নাম্বরে কল দিলো।
হ্যালো,তুষার? কই তুই?
এইতো দোস্ত বাসায়..একটু শুয়ে আছি।
ধুর তোর শোয়ার গুষ্টি কিলাই, জলদি আমার বাসার সামনে আয়...
ক্যান দোস্ত? কোন প্রব্লেম? কি হইছে?
কাম আছে আইতে বলছি জলদি আয়,
ওকে আইতাছি, খাড়া...
ফোনটা রেখে এদিক সেদিক পায়চারি করতে লাগলো বাদল।
কিরে কি হইছে? এতো জরুরি তলব দিলি কেন ?
এদিকে আয়, ওই দিকে একটু তাকিয়ে দেখ..কি কিছু দেখতে পাইস?
কি দেখমু? ওইডা তো আমাগো ছাঁদ। অইডারে নতুন করে আর কি দেখার আছে?
ওরে হারামি ওইটা যে তগো ছাঁদ সেইটা তো আমিও জানি,
কিন্ত ছাঁদের উপরে তাকায় দেখ.ওইগুলো কি?
ও... ওইটা তো আমার বোন সুমি, কেন তুই মনে হচ্ছে চিনোস না?
হালার গাধা তোর বোনরে তো চিনি কিন্ত সাথে মেয়েটা কে?
ওও দোস্ত ওই মেয়েটার কথা বলতেছিস? এইটা আগে বলবি না?
শোন মেয়েটার নাম নীলা, বাড়ি নারায়ণগঞ্জ, আসছে আমাদের বাসার পাশের বাড়ীতে
মলি অ্যান্টির বাসায়। মলি অ্যান্টির বোনের মেয়ে। এখন থেকে মাস খানেক এখানেই থাকবে। এখানে থেকে কোচিং করবে আর মাস খানেক পর আবার...
বুঝছিস তো? আবার নারায়ণগঞ্জ...
বাব্বা! আসতে পারলো না তুই এতো ডিটেইলস, সব জেনে ফেলছিস?
শালা তুই তো আমার থেকেও বেশী কামিনারে...
আর তোর বোনের সাথে কেমনে কি?
হুম, আমার বোনের সাথে ওর ভালো সম্পর্ক তৈরি হয়ে গেছে। ভালো বান্ধবি হয়ে গেছে বলতে গেলে। আমার বাসায় প্রায় আসে দেখি...
শোন তুষার, তুই আমাকে যে করেই হোক মেয়েটার ফোন নম্বর ম্যানেজ করে দে...
ওকে দোস্ত এটা কোন ব্যাপারই না, অবশ্যই দেবো।
সব হবে, আগে একটা সিগারেট খাওয়া?
শালা সব কিছুতেই ট্যাক্স?
এর জন্য আবার সিগারেট?
না দোস্ত এমনি খাওয়ালে খাওয়া, নাইতো নাই।
ওকে চল খাওয়াচ্ছি।
রাতের বেলা...
এই সুমি তোর যে বান্ধবি আছেনা? কি জানি নাম, নীলা নীলা..ওর মোবাইল নাম্বার
টা আছে তোর কাছে?
হ্যাঁ আছে তবে তোকে দেবো কেন? তুই নাম্বার নিয়ে কি করবি শুনি?
দে না সোনা বোন আমার, খুব জরুরি দরকার!
আমার জন্য এটুকু করতে পারবি না?
হুম বুঝছি, তুই ওর প্রেমে পড়ে গেছিস...তাইনা?
আরে তোকে বলছি, দিবি কিনা সেটা বল?
এতো কিছু তোকে বলতে পারবো না। আমার নাম্বারটা লাগবে ব্যাস!
ওকে ওকে মাই ব্রাদার ওয়েট, দিচ্ছি। এই নে, ০১৯১৮****** ওকে?
এখন খুশি?
ওহ মাই সুইট শিষ্টার" শুধু খুশি না অনেক খুশি।
তোকে এর জন্য পরে একটা গিফট দিবো...
কি গিফট দিবিরে? বল না? প্লিজ,
না এখন বলা যাবেনা সারপ্রাইজ!
এখন যায়।
বাদল কে নাম্বার দেওয়া...
হ্যালো, বাদল? তোর ব্যাবস্থা হয়ে গেছে, নাম্বারটা পেয়ে গেছি!
কি বলিস তুষার? সত্যি?
জলদি দে, আমার যে আর তর সয়ছে না।
হ্যাঁ নে, ০১৯১৮****** ঠিক আছে? এখন কথা বল, কাল দেখা হবে বাই।
2.
ফার্স্ট কল...
কল দেবো কি দেবোনা? এসব নিয়ে বেশ দ্বিধা দন্দে ভুগতে ভুগতে অবশেষে কলটা করেই বসলো বাদল!
দুই তিনবার রিং বাজার পর ওপাশ থেকে ফোন রিসিভ করলো নীলা।
নিলাঃ হ্যালো, কে বলছেন?
বাদল কি বলবে ভেবে পাচ্ছে না?
ওপাশ থেকে হ্যালো, হ্যালো বলেই চলেছে নীলা। শেষ মেশ কলটা কেটেই দিলো বাদল। ২য় বার আবার কল করলো বাদল।
নীলাঃ...হ্যালো, হ্যালো কে বলছেন?
কি হলো কথা বলছেন না কেন?
হ্যা...হ্যালো, আপনি কি নীলা বলছেন?
জী হ্যাঁ আমি নীলা বলছি। কিন্ত আপনি কে? আর আপনি আমার
নাম্বারটা পেলেন কোথায়?
জী, না মানে..ইয়ে মানে আমি আপনার নাম্বরটা অনেক কষ্টে জোগাড় করেছি।
আমার নাম বাদল। আর প্লিজ এটা জিজ্ঞেস করবেন না কে বা কেন আমাকে আপনার নাম্বারটা দিয়েছে?
একচুয়ালি আমারই আপনার নাম্বারটা দরকার ছিলো।
তবে আমি কিন্ত আপনাকে চিনতে পারলাম না? কোন বাদল বা কে আপনি?
আর আমিতো অপরিচিত কারো সাথে কথা বলিনা...
প্লিজ ফোন রাখবেন না, আমার আপনাকে অনেক কথা বলার আছে।
আর আমি অপরিচিত হতে পারি, কিন্ত পরিচয় দিলে অনেকটা বুঝতে পারবেন।
তখন কিন্ত পরিচিত হয়ে যাবো।
তাই? তা আপনার পরিচয় টা দিন মহাশয়? দেখি আপনাকে চিনতে পারি কিনা...
আমি বলছি, আপনি আমাকে দেখেছেন! একটু মনে করার চেষ্টা করুন তাহলেই হবে। আরেকটু সহজ করে দেই, সেদিন বর্ষার দিনে আমার সাথে আপনার প্রথম দেখা হয়েছে।
তাই নাকি?
হুম...কোই চিন্তা করলাম, কিন্ত মাথায় আসছে না, সেরকম কারো সঙ্গে তো ওইদিন দেখাই হয়নাই। আমি কোচিং থেকে আসলাম এর মাঝে বা আগে কোথায় দেখলাম? কোচিং থেকে ঢোকা বা বের হবার মধ্যেও তো তেমন কারো সাথে দেখা হয়নাই? তাহলে কে আপনি? আমি চিনলাম না আপনাকে..
আপনি যখন রিকশা থেকে নামছিলেন বৃষ্টির মধ্যে তখনো কি কাউকে খেয়াল করেন নাই? কেউ কি আপনার দিকে তাকিয়েও ছিল না?
ও হ্যাঁ, মনে পড়েছে..একটা মোটা করে বলদ রকমের ছেলে আমার দিকে হা করে তাকিয়ে ছিল, ওইটা আপনি?
যাহ্ কিজে বলেন আমি এতো মোটাও নোই! আর বলদও নয়!
তাই নাকি? তাহলে তো ভলোই, তবে আমার কাছে মনে হচ্ছিলো ওই রকমই কিছু,
হিহিহি...
হাসছেন কেন? এখন তো চিনতে পেরেছেন নাকি? হুম, চিনতে পারছি,
আপনিতো ফুটবল খেলেন নাকি?
হ্যা, টুকটাক খেলি আর কি...
তবে আপনার একটা জিনিস ভালো, সেটা হচ্ছে আপনি অনেক ভালো ফুটবল খেলেন।
তাই নাকি? আমিতো নিজেও জানতাম না যে আমি এতো
ভালো খেলি! ধন্যবাদ আপনাকে।
না, সত্যি ভালো খেলেন.
দুজনের মধ্যে কিছুক্ষন ভালো, মন্দ রোমাঞ্চকর কিছু কথাবার্তার একপর্যায়ে বাদল, নীলাকে বলল,
আমি আপনার সাথে দেখা করতে চায়। আগামীকাল দেখা করবো, আপনার কি কোন আপত্তি আছে?
হুমমম...চিন্তার বিষয়, আচ্ছা দেখি কি করা যায়।
আপনাকে ভেবে জানাবো।
ভাবাভাবির মধ্যে নাই, কালই দেখা করবো। হ্যাঁ, কি না, বলেন?
আচ্ছা বাবা ঠিক আছে করবো, কাল কোচিং থেকে আসার পথে দেখা হবে।
যেখানে আমাদের প্রথম দেখা হয়েছিলো সেখানেই, ঠিক আছে?
ওই দোকানটার নিচে? ওইখানে কেন? অন্য কোথাও দেখা করলে কি সমস্যা?
কোন সমস্যা নেই, তাহলে আমার কোচিং এর পেছনটাতে একটা কফি শপ আছে সেখানে দেখা করি?
এনাম কফি শপে?
হ্যাঁ! আপনি তো দেখছি সবই চিনেন?
না আন্দাজে ঢিল ছুড়লাম। তাছাড়া এলাকার ছেলেতো কম বেশী সবই চিনি।
পরের দিন...
দুপুরের খাবারও ঠিক মত খাওয়া হয়নি বাদলের। কোন মতে কইটা খেয়ে দেয়েই বাসা থেকে বেরিয়ে পড়েছে। দুপুরের রোদের মধ্যে হাঁটতে হাঁটতেই রওনা হয়েছে। তুষার কে এসব বিষয়ে কিছুই যানাইনি বাদল। কেস ফাইনাল হলেই সব কিছু যানাবে বলে ভাবছে!
কফি শপে বসে অপেক্ষা করছে বাদল, নীলার জন্য। বার বার হাতের ঘড়ির দিকে তাকাচ্ছে। ৩ টা বাজে, এখনো এক ঘণ্টার মত বসে থাকতে হতে পারে। অপেক্ষার প্রতিটা সেকেন্ড যেন এক একটা ঘণ্টার সমান বলে মনে হচ্ছে। বাদলের অপেক্ষার সময় কিছুতেই কাটছেনা। একটার পর একটা কফি অর্ডার দিয়ে খাচ্ছে। মাথায় টেনশন কাজ করছে। এক ঘণ্টার একটু বেশী সময় পরেই নীলার দেখা পাওয়া গেলো। নীলা রিকশা থেকে নামছে, পরনে নীল রঙের একটা ড্রেস। নীল কালারের ড্রেসে নীলাকে অনেক সুন্দর লাগছে। রিকশার ভাড়া মিটিয়ে নীলা গুটি গুটি পায়ে আসছে। এসেই সরি বলল বাদল কে।
বাদলঃ "ইটস ওকে! অপেক্ষা করতে আমার বেশ ভালোই লাগছিলো। সরি বলার দরকার নাই। বসুন।
কফি অর্ডার দেই?
নীলা মাথা নাড়িয়ে সায় দিলো।
বাদল একজন কর্মচারীকে ডেকে আরেকটা কফির অর্ডার দিলো।
দুজনেই চুপচাপ বসে আছে। বাদল উপর নিচে আলাদা ভঙ্গিতে তাকাচ্ছে। শরীরটা এখন একটু বেশীই ঘামছে! পকেট থেকে রুমাল বেরিয়ে কপালের ঘাম মুছছে বাদল!
নিরাবতার অবসান ঘটিয়ে নীলা কথা বলা শুরু করলো।
এতক্ষন বসে বসে তো দেখছি ৫/৬ কাঁপ কফি শেষ করে ফেলেছেন!
বাদলঃ নাহ, মানে..ওইটা কিছুনা। মানে একটু বেশীই কফি খেতে ভালো লাগে আর কি!
নীলাঃ কি ব্যাপার! আপ্নাকে দেখে একটু নার্ভাস নার্ভাস মনে হচ্ছে?
কোন সমস্যা?
বাদলঃ নাহ, কিসের সমস্যা? কোন সমস্যা নাই! কফি চলে এসেছে কফি খান।
নীলাঃ আপনি আরেক কাঁপ খেতে পারেন আমার সঙ্গে। কি খাবেন? অর্ডার দেই?
বাদলঃ নো নো! আর সম্ভন না! আপ্নিই খান আমি দেখছি।
নীলাঃ শুধু দেখলেই হবে?
বাদলঃ হুম, হবে।
নিলাঃ ওকে, আপনার মর্জি। ওও আচ্ছা, কিসের জন্য দেখা করতে চেয়েছিলেন যেনো? এখন বলুন!
বাদল কপালের ঘাম মুছতে মুছতে জবাব দিলো, কফিটা শেষ করো তারপর বলছি।
নীলাঃ না, এখনই বলেন। কফি শেষ হলেই আমি চলে যাবো। অনেক কাজ আছে। বাসায় যাওয়া লাগবে।
বাদলঃ না, কি বলবো বুঝতে পারছিনা। আপনি কেমন আছেন?
নিলাঃ এই কথা বলার জন্য আপনি আমার সাথে দেখা করতে চেয়েছিলেন?
এটাতো ফোনেই বলতে পারতেন নাকি?
বাদলঃ না আসলে এটা বলার জন্যও দেখা না।
নিলাঃ তবে কিসের জন্য? বলেন?
বাদলঃ আপনাকে খুব দেখতে ইচ্ছে করতেছিল,
কাল সারা রাত আমি ঘুমোতে পারিনি, শুধু আপনার কথা মনে করেই।
এই জন্য আপনাকে একটু দু চোখ ভরে দেখতে ইচ্ছে করছিল।
নিলাঃ ও তাই? তাহলে দেখুন, আমি তো আপনার সামনেই আছি। ভালো করে দেখুন, কফি শেষ না হওয়া পর্যন্ত দেখতে থাকুন, আর
আর দেখা শেষ হলে জানাবেন দেরী হয়ে যাচ্ছে।
বাদলঃ আসলে শুধু দেখার জন্যও না, একচুয়ালি আমার আপনাকে আরো কিছু বলার ছিল..
নীলাঃ কি কথা?? একবারে বললেই তো হয়?
বাদল আমতা আমতা করতে করতে.. না মানে, আমি মানে আমি আপনাকে পছন্দ করি।
আই মিন, ভালবাসি..
এই কথা শোনার পর নীলার বিষুম খাওয়ার উপক্রম হলো। গ্লাসে পানি ঢেলে খেতে খেতে বাদলের মুখের দিকে তাকালো গম্ভীর দৃষ্টিতে।
নীলার অমন দৃষ্টিতে তাকানো দেখে বাদল নেহাত ভয় পেয়ে গেলো। বার বার ঢোক গিলছিলো বাদল।
নীলা বাদলের দিকে কিছুক্ষন চেয়ে থেকে হঠাৎ খিলখিল করে হেঁসে উঠলো।
হিহিহিহি, আমি আগেই বলেছিলাম আপনি একটা বলদ। সত্তিই বলদ।
এই বলে আবার জোরে হেঁসে উঠলো নীলা। নীলার হাঁসি দেখে বাদলের মনে
একটু স্বস্তি ফিরে এলো।
কেন? আমি বলদের মত কি করলাম?
কি করেননি? এই রকম স্টাইলে কেউ কোন মেয়েকে প্রপোজ করে নাকি?
হিহিহিহি...
তাহলে কেমন করে করে? আমি আগে কখনো কোন মেয়েকে প্রপোজ করিনিতো তাই জানিনা।
-সত্যিই জানেন না? নাকি নাটক করছেন?
সত্যিই জানিনা, আমি কি কোন ভুল করলাম?
না না ভুল করেননি, আমার দেরী হয়ে যাচ্ছে আমি এখন যায়।
এই বলে আবারো -খিলখিল করে হেঁসে উঠলো নীলা।
-চলে যাবেন? -আমার উত্তরটা...
পরে ভেবে দেখবো, হিহিহিহি, যায়। নীলা চলে গেলো, বাদল চেয়ার ছেড়ে দাঁড়িয়ে আছে - ভাবছে কোন ভুল করলাম না তো?
মেয়েটা হাসলো কেন?-এই হাঁসির কোন রহস্য খুজে পাচ্ছেনা বাদল...
3.
সন্ধ্যার পর...
বিকেলে এদিক, সেদিক ঘুরে সন্ধ্যার দিকে বাদলের তুষারের সাথে দেখা হলো।
কি মামা? কেমন চলছে? আর আমার খাওন কোই? এতো কষ্ট করে নাম্বারটা ম্যানেজ করে দিলাম। কুচ তো মাংতাহে বস...
আরে রাখ তোর খাওন। মেয়েটা কোন উত্তর না দিয়েই চলে গেলো সেই টেনশনে আছি।
কি হয় কে জানে?
কেন, কি হয়ছে দোস্ত? আমারে একটু খুলে বল তো?
আরে কাল রাতে অনেক্ষন কথা কইলাম, রাতে বলছিলাম আজকে দেখা করার কথা, হইলো দেখা কিন্ত একটা পেজগি লাইগা গেছে দোস্ত।
কি পেজগি? খুইলা ক...
মেয়েটারে সরাসরি প্রপোজ করে দিছি! হের পর...
আরে এরপর কি? জলদি ক'..
এরপর মেয়েটার যে কি হইলো বুঝলাম না? হিহিহি কইরা খালি হাঁসে।
কোন উত্তর না দিয়াই হিহিহি করে হাঁসতে হাঁসতে চইলা গেলো।
এখন কি হবে বুঝতেছিনা।
ধুর বোকা কোন কাম করলি তুই এইডা? প্রথম দিনই প্রপোজ কইরা বসলি?
মাইয়াটা ভালো বিধায় কিছু কয়নাই, অন্য কেউ হইলে তরে থাব্রাইতো!
শালা, তুই মনে হয় ম্যালা এক্সপার্ট!! তুই হইলে কি করতি? আমি হইলে?
হুম...চিন্তার বিষয়, দোস্ত আসলে আমি হইলেও ডাইরেক্ট প্রপোজ করে বসতাম।
অভিজ্ঞতা নাইতো...
হা হা আমি জানতাম, তুইও এই কাজই করতি, তরে আমি চিনিনা?
তুই যে বোকার বোকা...
হ' তুমি মনে হয় ম্যালা চালাক?
বাদ দে, এসব।
এখন বল কি করা যায়?
দাড়া একটু চিন্তা করে নেই,
হুম...দোস্ত মাথায় কিছু আইতেছেনা, তুই বল' কি করা যায়?
ধুর, দুই বলদ এক জায়গায় পড়ছে।
বাদ দে, চল চা, বিড়ি খায়। হ' এইডাই ভালো বুদ্ধি চল...
পরের দিন রাত ১২ টার পর...
১ দিন কেটে গেলো তবু নীলার কোন খবর নেই। বাদল তার কোন জবাব পেলোনা। মনে মনে সংকোচ বোধ করছে বাদল। ভাবছে ফোন দিয়ে সরি বলে নেবে। এভাবে মনে হয় প্রপোজ করাটা ঠিক হয়নাই। অনেক্ষন চিন্তা ভাবনার পর শেষমেষ ফোন দিলো বাদল। ওদিকে নীলার ফোন বিজি। এতো রাতে কার সাথে কথা বলে? এসব কিছুতেই ভেবে পাচ্ছেনা বাদল। যাই হোক কোন জরুরী ফোন হতে পারে? একটু পর দেই। রাত একটার পর আবারো ফোন দিলো। কিন্ত আবারো বিজি! মনে মনে ভাবছে নিশ্চয়ই নীলার কারো সাথে এফেয়ার আছে। জানিনা তবে আমি আর ফোন দিবোনা, ওর যদি ইচ্ছে হয় যোগাযোগ করবে। নাহলে করবেনা।
৪র্থ দিন বিকাল বেলা...
বাদল এবং তুষার মাঠে ফুটবল খেলছিলো। হঠাৎ তুষার বাদলকে ডেকে বলল,পিছে দেখ, নীলা আসছে...
তুই মাঠে থাক আমি আসছি, এই বলে বাদল মাঠ ছেড়ে দৌড়ে চলে গেলো।
নীলা বাসার দিকে যাচ্ছিলো। বাদল নীলার পাশে পাশে হাঁটছে।
আস্তে আস্তে হাঁটতে হাঁটতে বাদল জিজ্ঞেস করলো,
কি ব্যাপার, তুমি আমার কথার কোন জবাব দিলা না তো?
আর আমার ফোনও রিসিভ করো না? প্রায় বিজি থাকে তোমার নাম্বার।
কেউকে পছন্দ করলে বলো, আমি সরে যায়। কোন কিছু না বলে
এভাবে ঝুলিয়ে রাখার মানে কি?
তুমি কি আমাকে বিয়ে করবে বাদল?
মানে, ইয়ে মানে...এটা কেমন উত্তর হলো?
যেটা বলেছি তার উত্তর দাও? বিয়ে করবে কিনা সেইটা বলো?
এবং ২/৩ দিনের ভেতরে, পারবে?
ইয়ে মানে, আমার তো এখনো বিয়ের বয়স হয়নাই, তাছাড়া এই মুহূর্তে কেমনে কি?
সম্ভব বলে মনে হচ্ছেনা...
এক্স্যাক্টলি! ,এটাই তোমাকে বলতে চাচ্ছিলাম। দেখো বাদল, বয়সে তুমি আর আমি প্রায় সেম এজ বলতে গেলে। কিন্ত এই একই বয়স থাকা সত্তেও মেয়েরা বিয়ে করতে পারে, সংসার করতে পারে, বাচ্চা-কাচ্চা মানুষ করতে পারে, একটা পুরো সংসারের দায়িত্ব নিতে পারে। আর ছেলেরা? ছেলেরা, মানে তোমার কথা বলছি, তুমি এই বয়সে, একে তো বেকার! দ্বিতীয়ত নিজেও ঠিকমত চলতে পারোনা। তুমি নির্ভরশীল তোমার বাবার উপরে, এই মুহূর্তে তুমি বিয়ে করতেও সক্ষম না। আর সেম বয়সে মেয়েদের কি হতে পারে সেটা আগেই বললাম...তাই আমার পক্ষে তোমার সাথে প্রেম করাটা সম্ভব না। আমি একটা ছেলেকে পছন্দ করি। ছেলেটা বড় ব্যাবসায়ী। শহরের অনেকে তাকে এক নামেই চেনে। কিছুদিন আগে তার সাথে আমার প্রথম দেখা হয়, আমার এক বান্ধবীর জন্মদিনের অনুষ্ঠানে। সেখান থেকেই আমাদের সম্পর্কটা শুরু হয়। খুব শীঘ্রই আমরা বিয়ে করবো। ছেলেটা অনেক বড়লোক। আর বয়সের দিক থেকে তোমার থেকে ১০ বছরের বড় হবে। আর কিছু শুনতে চাও?
আর কি শুনবো?
যা বলার তার থেকে অনেক বেশি কিছু বলে ফেললে তুমি। আর কিছু বলার নাই। একটা কথা বলার ছিল, তুমি এতো বয়স্ক একটা ছেলের সাথে সম্পর্ক করলে কেন?
আমি বলি কি বাদল, যদি পারো তোমার থেকে ৪/৫ বছরের কম বয়সী কোন মেয়ের সাথে প্রেম করো। তাতে তোমার সুবিধা কি হবে জানো?
তুমি আগামি চার/পাঁচ বছরে ইষ্টাবলিস্ট হয়ে যেতে পারবে। আর তুমি যখন নিজের পায়ে দাড়াতে পারবে, তখন সেই মেয়েটার বয়স হবে তোমার বর্তমান যে বয়স এমনই। তখন তোমার তাকে বিয়ে করতেও প্রব্লেম হবেনা। যেহেতু মেয়েদের বিয়ে হয়ে যায় খুব অল্প বয়সে, তাই সব সময় একটু কম বয়সী মেয়ের সাথেই রিলেশন করা উচিৎ।
সবই বুঝলাম, কিন্ত আমার যে তোমাকে ভুলতে কষ্ট হবে।
তোমাকে যে অনেক ভালবেসে ফেলেছিলাম...
তাই? আরে বোকা এতো আবেগ দিয়ে দুনিয়া চলেনা।
সময় আসুক আমার থেকে অনেক সুন্দর মেয়ে পাবে, তুমি তোমার জীবনে।
কতজন আসবে, কতজন যাবে। আমাকে এখন সামনে দেখছো তাই কষ্ট লাগছে,
যখন চলে যাবো, তোমার সামনে কখনো আসবোনা তখন দেখবে আস্তে আস্তে আমার চেহারাটাও তোমার মন থেকে মুছে যাবে।
না নীলা আমি তোমাকে ছাড়া, কি করে থাকবো? আমি বাঁচবোনা...
হা হা হা... বলেছিলাম না তুমি বলদ, সত্যিই বলদ।
আরে বোকা, জীবন কখনো থেমে থাকেনা। ঠিকই বাঁচবে।
ক'দিন পর যখন বুঝবে তখন এসব মনে থাকবেনা কিছুই।
আর আমি তোমার সাথে মাঝে মাঝে যোগাযোগ রাখবো।
প্রেমিকা না হয়ে পারি, অন্তত বন্ধু হয়ে তো থাকতে পারি আমরা, নাকি?
হুম...জানিনা... নীলা, জানিনা হয়তো মন থেকে তোমাকে আমি ভুলতে পারবোনা। তবে যেখানেই থাকো ভালো থেকো। সুখে থেকো। সব সময় তোমার সুখের জন্য দোয়া করবো, "আল্লাহ" যেন সব সময় তোমার মঙ্গল করেন। যায়, আর হয়তো দেখা হবেনা। আর আমি পারবোনা তোমার সামনে আসতে, আমি তোমার সাথে কথা বললে বা দেখলে, আমি নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারবোনা। দূরে দূরে থেকে চেষ্টা করবো তোমাকে ভোলার। যায় নীলা...বাই...............
পরের দিন সন্ধ্যার দিকে...
কিরে তোকে একদিন ধরে কোথাও খুজে পাচ্ছিনা? ফোন অফ, বাইরেও বের হচ্ছিস না? আর এখন সন্ধ্যার সময় ছাদে দাড়িয়ে আছিস?
তুষার, দোস্ত! শরীরটা ভালোনা। তাই একদিন বাইরে বের হতে পারিনি।
কি হয়েছে তোর, শুনি?
না তেমন কিছুনা, এমনি..বাদ দে, তোর অবস্থা কি?
আমার অবস্থা মনে হয় তুই জানোস না? ভাব ধরিস? পকেট একবারে খালি,
তুই বাইরে বের হইস নাই এজন্য কাইল থেকে একটাও বিড়ি খাইতে পারি নাই।
পকেটে টাকা নাই, দোস্ত জলদি চল আমারে একটা বিড়ি খাওয়া?
চল চল...
আমি যাবোনা, তোকে টাকা দিচ্ছি তুই যা, আমার ভালো লাগছেনা...
কিরে? এতো উদাস হইলি কবে থেকে? ছ্যাকা খাইছোত নাই?
সত্যি কথা কতো কি ব্যাপার?
নীলার সাথে কিছু হয়নিতো?
নারে দোস্ত, ও আমারে পছন্দ করেনা। ওর বয়ফ্রেন্ড আছে।
কিছুদিন পরেই বিয়ে করবে তাকে।
ওরে শালা, এই ব্যাপার নিয়া তুই মন খারাপ করে বসে আছিস?
এইটা কোন কথা হইলো দোস্ত?
আমারে তো একবার জানাইতে পারতিস?
আরে এসব ফালতু জিনিস নিয়া মন খারাপ করে বসে থাকোনের টাইম আছে?
আরে তরে একটা না, ১০ টা নীলার থেকেও সুন্দরী মাইয়ার সাথে প্রেম করাইয়া দিমু। আরে ওর থেকে ভালো মাইয়া আছে, প্রেম করবি? খালি ক'...
আমাদের গলিতে মুন্না আছেনা? ওই যে পিচ্চি মুন্না? চিনছস?
হ হ' চিনছি, তো কি করছে মুন্না?
আরে মুন্না কিছু করে নাই, মুন্নার কোন, ফুফু' নাকি? তার মাইয়া আইছে! গতকাল ওদের বাড়ি বেড়াতে। আরে মামা, কি ফিগার আর কি চেহারা তরে কি কমু,
কস্কি? সত্যিই?
আব্বে তরে কি মিথ্যা কইতাছি নাকি?
কাল সারাদিন তোকে বলবো বলে ফোন দিলাম কিন্ত তোর ফোন তো বন্ধ।
শালা তুই আছিস শোকে, এসব তরে কইয়াও বা লাভ কি?
আরে বাদ দে তোর শোক। তুই অহনি চল, তোর কথা শুনে তো আমার
মাইয়াটারে দেখতে ইচ্ছা করতেছে। আমি এখনি দেখবো। জলদি চল...
কস্কি সত্যিই যাবি?
আরে, 'হ' যাবো, চল। আর একটা কথা, এই মাইয়াও যদি
ছুঁইটা যায় তাইলে, তুষার...
তাইলে কি?
তাইলে.. থাক পরে কমুনে।
পরে না, এখনি বলবি...
আমি বারবার ছ্যাকা খাইতে পারুম না!
এইটাও যদি ছুঁইটা যায়? তাইলে দোস্ত! তোরেই আমার
"শালা" বানাবো বুঝলি...
হাহাহাহা...
ওরে হারামি দাড়া তুই......
(রিপোষ্ট)