somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সুরঞ্জনা ফিরে এসেছে

০৩ রা মে, ২০১৬ বিকাল ৩:৩০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


(১)
আজ আমার মেয়ে কথা আমাকে বলেছে "পাপ্পা আজ আসার সময় আমার জন্য একটা মা-মনি নিয়ে আসবে কেমন"? সানজিদার মা-মনির মতো পচা মা-মনি আনবেনা কিন্তু। বর্ণ ভাইয়ার মা বৃষ্টি আন্টির মতো একটা সুন্দর ও লক্ষি মা-মনি আনবে। না না বৃষ্টি আন্টির চেয়ে অনেক অনেক বেশী বেশী সুন্দর ও ভাল মা-মনি আনবে কেমন?

আমার মেয়েটা হয়তো ভেবেছে মা-মনি বাজারের আইসক্রিম বা চকলেটের মতোই, টাকা থাকলেই কিনে নেওয়া যায়। তাই সে আজ আইসক্রিম চকোলেটের বধলে মা-মনির নিয়ে যেতে বায়না ধরেছে। যদিও সে প্রতিদিন বিভিন্ন ধরনের চকলেট, আইসক্রিম, আরো কতো কি বায়না ধরে। কিন্তু আজ শুধু একটাই বায়না ধরেছে বলেই আমি ধিদায় পরে গেছি। নিজেই নিজের কাছে এখন প্রশ্ন বিধ্য। আজ মেয়েটার জন্য কি নেব? চাইলেই তো আর তার জন্য আমি মা-মনি নিয়ে যেতে পারিনা। তবে কি আজ আর আমার ঘরে ফেরা হবেনা। তবে কি এই পিচঢালা পথে পথে হেটে রাতটা কাঠিয়ে দিতে হবে আমার।

যদি সকাল বেলা আমি আসিনি জেনে মেয়েটা মা-মনি নিয়ে যেতে বলেছিল কথাটা ভুলে যায় তবে আমার জন্য অনেক ভাল। আর না ভুলে ইস কিচ্ছু মাথায় ডুকছে না। আজ যে কি করি?

ফুতপাতের একটা চায়ের দোকানের লম্বা বেঞ্চে বসে দোকানিকে বললাম একটা কড়া লিকারের চা দিতে। যদিও আমি জানী দোকানি কড়া লিকারের চা দিতে পারবেনা। কারন তার পক্ষে কড়া লিকার করা সম্ভভবনা। তার চায়ের কেটলিতে যে লিকার আছে সেটা দিয়েই আমায় চা দেবে তবুও বললাম আরকি ।

দোকানিটা বুদ্ধিমান বটে। সে আমাকে কড়া লিকার দিয়েছে বুঝানোর জন্য চায়ে দুধ চিনি কম দিয়ে একটু তিতে তিতে চা বানিয়ে দিয়েয়েছে যাতে আমি ভেবে নেই এটাই কড়া লিকার।

চা'টা শেষ করে একটা গোল্ডলিফ সিগারেট নিয়ে বিল পরিশোধ করে হেটে হেটে সিগারেটটা টানতে টানতে হাটতে লাগলাম। গোল্ডলিফ সিগারেটটায় অতিরিক্ত নিকোটিন থাকে বলে সাধারন তো আমি গোল্ডলিফ সিগারেট খাইনা। কিন্তু আজ আমার মেয়েটা আমাকে এতোটাই টেনশন দিয়েছে যে গোল্ডলিফ সিগারেটেও আমার নিকোটিনের পরিমান কম বলে মনে হচ্ছে।
(২)
আজ সকালে যখন আমার মেয়ে কথার দাবি দাওয়া শুনে অফিসে যাই, তখন আমার এক মহিলা কলিগ আমার চেহারার মধ্যে টেনশন দেখে জিজ্ঞেস করলেন- আমার কি হয়েছে? আমি আমার চেয়ারে বসতে বসতে উনাকে সামনের চেয়ারে বসার ইশারা করলাম।

আমি অফিস পিয়নকে একটা কড়া লিগার রঙ চা আর একটা নরমাল দুধ চা দিতে বলে সৌদার অর্থাৎ আমার কলিগের উদ্যেশ্যে বললাম সত্যিই আমি একটা টেনশনে আছি।
সৌদা হাসতে হাসতে বললেন যার বঊ নেই তার আবার টেশন কি?
পুরুষ মানুষের টেনশন নাকী একমাত্র বউর কারনে। আপনার তো বউ নেই তবে আপনার এতো টেনশন কেন?
সৌদার হাসিটা অনেক মিষ্টি যদিও এখন তার হাসিটা আমার কাছে বিস্বাদ বলে মনে হচ্ছে। তার হাসিটা এখন আমার খুব বিরক্ত লাগছে। বলতেও পারছিনা আপনার হাসিটা বন্ধ করুন। কারন আমি প্রায় সময়ই উনার হাসির প্রশংসা করি।
এই বিরক্ত বোধ নিয়েই বললাম আসলেই মনে হয় আপনার কথাটা সত্য। পুরুষের সকল টেনশন তার বউকে নিয়ে। আমার বউ নেই তবুও বউকে নিয়েই টেনশনে আছি।
আশ্চর্য আপনার বউ তো সেই কথার জন্মের ৮ মাসের সময় কোন এক পয়সা ওয়ালার সাথে চলে গেল। বউ নেই তবুও বউকে নিয়ে টেনশনে আছেন কিভাবে?
আসলে আমি সুরঞ্জনা অর্থাৎ কথার মাকে নিয়ে টেনশনে না, টেনশনে কথাকে নিয়ে।
সৌদা চমকে গিয়ে বলে উটলেন- কথার কি হয়েছে? আর এইনা আপনি বলেন আপনি বউকে নিয়ে টেনশনে আছেন?
আসলে কি ভাবে যে আপনাকে বুঝাবো বুঝতে পারছিনা।
আপনি যে ভাবে বলতে পারেন বলুন আমার বুঝতে সমস্যা হবেনা।
ওকে শুনুন তবে- আজ সকালে আসার সময় কথা আমার গালে মুখে চুমু দিয়ে বলছে বাবা আজ আসার সময় আমার জন্য একটা মা-মনি নিয়ে আসবে কেমন।
সৌদা হাসতে হাসতে বললেন কথা তো টিকি বলেছে। এটা নিয়ে এতো টেনশন করা কি আছে? যাওয়ার সময় আমাকে নিয়ে গেলেই তো পাড়েন। আমি তো এক পায়ে খাড়া আছি।
আরে সৌদা আপনি সব সময় হেয়ালি করেন। এখন আমার আপনার হেলায়ি মোটেও ভাল লাগছেনা।
আরে আমি কই হেয়ালি করলাম আমি তো সিরিয়াস।
সৌদা আপনি আবার হেলালি করছেন কিন্তু। হেয়ালি না করে আমাকে সুন্দর একটা বুদ্ধি দিয়ে উপকার করুন প্লীজ।
আসলে আপনার এখন উচিত আমাকে বিয়ে করে নিয়ে আপনার মেয়ের মা-মনি উপহার দেওয়া।
সৌদা আপনি কি সত্যি সিরিয়াস বলছেন? নাকী আমার সাথে হেয়ালী করছেন?
আরে কি যে বলুন আপনি একজন সিনিয়র কলিগ বয়সেও বড় আপনার সাথে কি আমি হেয়ালিপনা করতে পারি।
কিন্তু আপনি একজন অবিবাহিতা। আর আমি একজন বিবাহিত, এক বাচ্চার বাবা।
সৌদা মুখে পড়নের উড়না দিয়ে বউ সেজে বলেন- তাতে কি? চলেন এখনি চলেন কাজী অফিসে।
আমার আর বুঝতে বাকী রইলনা যে সৌদা আমার সাথে পাজলামী করছে। আমি চুপ হয়ে বসে রইলাম সৌদার কথা কোন উত্তর না দিয়ে।
সৌদা কই চলেন।
আমি চেয়ার থেকে উঠে দাড়াতেই সৌদা উঠে দৌড় দিল তার চেয়ারের দিকে।
আমি রাগি কন্ঠে বললাম কই আসেন। পালালেন কেন এখন? চলেন চলেন।
সৌদা বললো এখননা ডিউটি শেষে যাবো কেমন?
আমি আস্তে আস্তে ফাজিল বলে গালি দিলাম সৌদাকে। সৌদা সম্ভবত বুঝতে পেরে আমাকে বেংছি কাটলো।
বিকেল বেলা অফিস শেষে যখন আমি গেইটের বাহিরে আসলাম সৌদা ভুতের মতো দৌড়ে এসে বললো এই যে মিস্টার আমায় রেখে কই পালাচ্ছেন?
এই মেয়ে এই মেয়ে পালাচ্ছি কি?
এই যে পালাচ্ছেন? চলেন কাজী অফিসে চলেন।
আবার আপনি আমার সাথে পাজলামি করছেন?
জি না ফাজলামি না সিরিয়াস। চলেন এখন।
আপনি জান। আপনাকে বিয়ে করার স্বাদ আমার নেই।
আচ্ছা বিয়ে করতে হবেনা। চলেন আপনার বাসায় যাই।
আমি খুব রাগান্বিত চোখে সৌদার দিকে তাকিয়ে বললাম আপনি আমার বাসায় যাবেন কেন?
আপনার মেয়েকে দেখতে।
সেটা অন্য দিন গিয়ে দেখে আসবেন। সরেন এখন আমাকে যেতে দিন।
আরে আমাকে সঙ্গে নিননা। আমিও তো যাবো।
আমি বুদ্ধি করে বললাম আজ আমি বাসায় যাবোনা রাস্থায় রাস্থায় ঘুরবো।
ওকে তবে আপনি রাস্থায় রাস্তায় ঘুরেন আমি আপনার বাসায় গেলাম। অহে ঘরে চাল ডাল আছে তো।
না নেই কিচ্ছু নেই। থাক বা না থাক তাতে আপনার কি?
বারে আজ থেকে যে আপনার বাসা আমার বাসা।
আবার ফাজলামি।
জি না মিস্টার। ওকে আপনার চাল ডাল এর চিন্তা করা লাগবেনা। আজ আমি বাহির থেকেই বিরানি কিনে নিয়ে যাবো। বাড়িতে তো আপনি কথা আর কাজের বুয়া তিনজন থাকেন তাইনা। আজ আপনি তো বাড়ি যাচ্ছেননা তবুও আজ আপনার বাড়িতে তিনজন থাকবে।
মানে।
আরে আমি যাচ্ছিনা আজ আপনার, দূর আপনার না আমার, আরে না না আমাদের বাসায়।
আমি আর কথা না বাড়িয়ে- যান যান বলে উল্টো পথে হাটা শুরু করলাম।
একটু দূরে গিয়েই দেখি সৌদা একটা রিক্সা ডাকছে- এই খালি লালকুঠি যাবে?
বজ্জাত মেয়েটা আমাকে বোকা বানানুর জন্যই আমার বাসার ঠিকানা বলে রিক্সা ওয়ালাকে ডাকছে। আমি জানী এই বজ্জাত মেয়ে একটু সামনে গিয়ে রিক্সা ওয়ালাকে বলবে- আপনি লালকুঠি না টোলারবাগ সরকারী কর্মজীবী মহিলা হোস্টেল যান। কারন সে ঐ হোস্টেলেই থাকে।
(৩)
এই পিচঢালা পথে হেটে হেটে সৌদা বজ্জাত মেয়েটির সারাদিনের বজ্জাতির কথা ভেবে একা একা হাসছি। সিগারেটে আরেকটা টান দিয়ে দেখি সিগারেটের আগুন বহু আগেই নিবে গেছে। সিগারেটটা ফেলে দিয়ে সামনে এগিয়ে গিয়ে আবার ফুতপাতের চায়ের দোকানে বসে আরেকটা চা খেয়ে আরেকটা গোল্ডলিফ ধরিয়ে হাটতে লাগলাম।

আমার অফিস মিরপুর ১ নাম্বার। শাহ আলী মাজার তাই খুব কাছেই। ভাবলাম আজকের রাতটা এই মাজারেই পাগলদের সাথে কাটিয়ে দেব। তারপর খুব ভোরে বাসায় ফিরে যাবো। আমার বাসাটা এখান থেকে পায়ে হেটে মাত্র ১০ মিনিটের রাস্তা। কিন্তু তবুও বাসায় ফিরছিনা আমার মেয়ে কথার মা-মনি নিয়ে যেতে পারবনা বলে। আমি কোন দিন মেয়ের কোন চাহিদা অপূর্ণ রাখিনি। কিন্তু এই একটা চাহিদা পূর্ণ করা আমার পক্ষে সম্ভবনা বলেই আজ রাতের জন্য আমি যাযাবর। আমার ধারনা সকালে আমার মেয়ে তার মা-মনি নিয়ে যাওয়ার কথা সে ভুলে যাবে। আমি রাতে বাসায় ফিরিনি কেন জানতে চাইবে। আর এই জানতে চাওয়ার মাঝেই মা-মনির কথা ভুলে যাবে।

মাজারের সিড়িতে বসে বসে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। এক পাগলের চিৎকারে ঘুমটা ভেঙ্গে গেল। চেয়ে দেখি মাজারের একটা পাগল শুধু পাগলামি করছে বাকী গুলি ঘুমিয়ে আছে। রাস্তার দিকে তাকিয়ে দেখি রাস্তাঘাট জনশূন্য। হাতের ঘরির দিকে তাকিয়ে দেখি ৩ টা ২০ মিনিট। ভোর হতে আরো দুই ঘন্টা বাকী।

পকেট থেকে সিগারেটের প্যাকেট বের করে সিগারেট ধরিয়ে টানতে লাগলাম।
আজ কেন জানী সুরঞ্জনার কথা খুব মনে পরছে। চোখ খোলা অবস্থায়ই সুরঞ্জনার স্মৃতি গুলি চোখে বেসে উঠছে।
আমি খুব হত ধরিদ্র পরিবারের একমাত্র ছেলে ছিলাম। সুরঞ্জনার সাথে এক অনাকাংখিত সাক্ষাৎ ধীরে ধীরে ভালিবাসায় রুপ পায়। সেই ভালবাসা থেকেই পালিয়ে বিয়ে করা। পালিয়ে বিয়ে করার কারন ছিল সুরঞ্জনা বড় লোকের মেয়ে আর আমী গরীব। তার বড় লোক বাপ ভাই আমাকে মেনে নেবেনা বলেই সে আমাকে নিয়ে পালিয়ে বিয়ে করেছে। সেই পালানো থেকে বিয়ে শাদী নতুন বাসা বাড়ার এডভান্স দেওয়ার মতো একটা টাকাও আমার ছিলনা। সুরঞ্জনাই সব খরচ বহন করেছে। তখন খরচ করার মতো আমার কোন সাধ্য ছিলনা। শুধু খুব অল্প দামী বিয়ের শাড়িটা আমি কিনে এনেছিলাম পালিয়ে আশার সময়।

খুব অল্প দিনের মাঝেই আমি একটা চাকরি পাই। ভাল চলে যাচ্ছিল আমাদের দুজনার সংসার। সুরঞ্জনার একা একা বাসায় থাকতে ভাল লাগতনা বলে একদিন আমাকে বললো সেও একটা চাকরি করতে চায়। আমি কোন দিধা না করে সায় দিলাম। অল্প দিনের ভিতরেই সে তার কোন এক বড় লোক আত্মীয় অফিসে চাকরি পেয়ে গেল।

দুজনে সারা দিন কাজকর্ম করেও এসেও আমাদের সংসার এক বিন্দু সুখের কমতি ছিলনা।
কয়েক মাস পরে আমাদের সুখের সংসারে আরো সুখ নিয়ে আসলো আমাদের একমাত্র সন্তান কথা। কথার নামটি তার মা'ই রেখেছিল। চার মাসের ছুটি কাটিয়ে সুরঞ্জনা আবারো অফিস করতে লাগলো। মেয়েকে বাসায় রাখার জন্য একজন বুয়া রাখা হয়েছে। সে খুব আদর যত্নে নিজের মেয়ের মতোই কথাকে লালন পালন করে।

কথার বয়স যখন পাঁচ মাস তখন তার মা এক রাত বাসায় ফিরেনি।
পরের দিন সকালে সে বাসায় ফিরে এসেই আমি কিছু বলার আগেই সে আমাকে বলে উঠে আমার প্রমোশন হয়েছে। আমি আর কোন কিছু জানতে না চেয়ে ফ্রিজ থেকে মিষ্টি বের করে খাইয়ে দিয়ে বলি অভিন্দন সুরঞ্জনা। সে নিজেই বলে উঠে আমার বস অর্থাৎ আমার ফুফাতো ভাই কাল রাতের ডিউটিতে খুসি হয়ে আমাকে আজ সকালেই প্রমোশন দিয়েছে।
রাতে কি-- ডিউটি করেছো জানতে চেয়ে গিয়ে থেমে গিয়ে বলি রাতে কি খাওয়া দাওয়া করেছো।
হ্যা করেছি তো ভাইয়া মানে বস কত্ত কিছু খাবার এনেছিলেন আমার জন্য। ইস প্রতিদিন যদি একটা করে প্রমোশন পেতাম।
আমি সুরঞ্জনাকে পাবে পবাএ বলেই অফিসে চলে গেলাম।
সুরঞ্জনা প্রতি সপ্তায় একদিন নাইট ডিউটি করে। সকালে এসেই আমায় বলে আজ আরেকটা প্রমোশন পেয়েছি। এভাবে চললো তিন মাস। কথার বয়স যখন আট মাস তখন ছুটির দিন এক সকালে সুরঞ্জনা খুব সাজগুজ করে একটা একটা ট্রাবেল ব্যাগে তার অনেক গুলি কাপর ঢুকিয়ে আমার কোল থেকে কথাকে কোলে নিয়ে আদর করতে করতে আমাকে বলল- আমি কয়েক দিনের জন্য অফিস টুরে যাচ্ছি। ফিরতে কয়েক দিন লাগবে।
আমি বললাম আচ্ছা ঠিক আছে।
সুরঞ্জনা কথাকে আমার কোলে দিয়ে বললো- আচ্ছা তুমি আমাকে কোন প্রশ্ন করনা কেন?
আমি বললাম- হয়তো অতিরিক্ত ভালবাসা আর কৃতজ্ঞতায়।
সুরঞ্জনা আমার হাতে ধরে বললো- ক্ষমা করো আমায় আমি তোমার ভালবাসা আর কৃতজ্ঞতার মূল্য দিতে পারলামনা। আমি চিরতরে চলে যাচ্ছি তোমাকে ছেড়ে।
কথাকে দেখে রেখ। অনেক ভালবাসা দিও রেখ। বলেই চলে গেল। আমি কোন কথা না বলে নিরব হয়ে দাঁড়িয়ে রইলাম।
(৪)
আমার গায়ে ধাক্কা অনুভব পেয়ে আমার স্মৃতির ঘোর কেটে গেল। ফিরে এলাম বাস্তবতায়। তাকিয়ে দেখি একটা পাগল আমাকে ধাক্কাতে ধাক্কাতে বলছে একটা সিগাটের খাওয়া। আমি দেখেছি তোর কাছে অনেক গুলি সিগারেট আছে।
আমি পাগলটাকে আমার পাশে বসতে বলে পকেট থেকে সিগারেটের প্যাকেট বের করে এনে একটা সিগারেট আমি ধরাই আর পাগলটাকে একটা সিগারেট দেই।
পাগলটা সিগারেট ধরিয়ে খুসিতে নাচতে নাচতে চলে গিয়ে আমাকে বুঝিয়ে দিল সুখ কাকে বলে। বুঝিয়ে দিল সুখি মানুষ তারাই যারা এই ভবে পাগল রুপী।

চারিদিকে ফজরের আজান পড়ছে। একটু একটু আলো ফুটে উঠেছে প্রকৃতিতে। আমি হাটা ধরলাম। লালকুঠি বাজারে পৌছে আমার বাসার গেইটের দিকে উকি দিয়ে তাকিয়ে দেখলাম বাসাটা এখনো ঘুমিয়ে আছে। ঘুমিয়ে আছে বাসার মানুষ গুলি। তাই আর বাসায় না গিয়ে সোজা পথ ধরে হাটতে হাটতে বড় বাজার নদীর ঘাটে চলে এলাম। তুরাগ নদীর এই ঘাটটা আমার অনেক প্রিয়। আমার যখন মনটা খুব খারাপ থাকে তখন এখানে এসে একা একা কথা বলি তুরাগ নদীর সাথে। সুরঞ্জনার কথা জানতে চাই নদীর কাছে। নদী কোন দিন উত্তর করেনা। শান্ত হয়ে তাকিয়ে থাকে আমার দিকে। হয়তো নদীর ধারনা আমার চেয়ে বেকুব তার দেখা চোখে আর কেউ নেই তাই হয়তো সে আমার দিকে তাকিয়ে থাকে অবাক দৃষ্টিতে।

হাতের ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখি ৭টা ৩০ মিনিট বাজছে। তাই আবার বাসার উদ্যেশ্যে হাটতে থাকি। আমি জানী আমার মেয়েটা এখন জানালার গ্রিল ধরে পথের দিকে তাকিয়ে আছে তার পাপ্পার অপেক্ষায়। প্রতিটি রিক্সা দেখেই সে ভাববে এই বুঝি তার পাপ্পা আসছে।

হাটতে হাটতে বাসার গেইটে চলে এসেছি। দুতলার জানালার গ্রিলের দিকে তাকিয়ে দেখি আমার মেয়েটি আমার অপেক্ষায় জানালার গ্রিলের দিকে তাকিয়ে নেই। হয়তো মেয়েটি আমার অপেক্ষা করতে করতে অনেক রাত করে ঘুমিয়েছে তাই এখন জানালার গ্রিলে ধরে সে তার পাপ্পার অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে নেই।

আমি পাশের দোকান থেকে আইসক্রিম, চিপস, ও বিভিন্ন ধরেনের চকোলেট নিয়ে এসে আমার বাসার দরজার কলিং বেলে টিপ দেই। আমি বুঝতে পারছি ভিতর থেকে আমার মেয়ে কথা দরজার নিচের ছিটকারী খুলছে।
আমি চিৎকার দিয়ে বলতে থাকি পাপ্পা তুমি পারবেনা।
দাঁড়াও পাপ্পা আমি পারবো বলেই দরজার চিটকারীটা খুলে আমার তিন বৎসর বয়সী মেয়েটা বিশ্ব জয় করার মতো হেসে উঠলো।
অরে আমার সোনা পাপ্পারে বলে কথাকে কোলে নিয়ে আইসক্রিম চকোলেট চিপসের ব্যাগটা তার হাতে দিতেই সে রাগ করে আমার কোল থেকে নেমে গিয়ে আমাকে বললো- আমি এখন আর আইসক্রিম চকোলেট চিপস চাইনা।
আমি বললাম- কেন মা-মনি?
না আমি তোমার মা মনিনা। আমি তোমার কথা। আমি শুধু আমার মা -মনিকে চাই।
আমি তো মাথায় হাত দিয়ে বসে পরলাম ফ্লোরে। যেই মা-মনির কথা ভুলিয়ে দেবার জন্য আজ সারা রাত আমি পথে পথে হেটে হেটে কাটিয়েছি সেই মা-মনির কথা, কথা এখনো ভুললনা। তবে কি আমার এই নির্ঘুম রাতটা ব্যর্থ।
আমি ফ্লোলে হাটুগেরে বসে দু হাত দিয়ে হাটুতে ভর দিয়ে মাথা নিচের দিকে করে বসে রইলাম। পিছন দিকে আমার মেয়েটা এসে আমার দু-চোখে দু হাত দিয়ে ঢেকে পাপ্পা তাকাবেনা কিন্তু।
আমি বললাম কিন্তু কেন?
আমি একটা মা-মনি কুড়িয়ে এনেছি।
আমি চোখ দুটি ছাড়িয়ে নিয়ে বলি- মানে?
পাপ্পা তুমি না পচা। তোমাকে না বলেছি তাকাবেনা।
অহ সরি মা-মনি। আচ্ছা আবার ধরো আর থাকাবোনা।
কথা আমার চোখে আবার ধরলো। কিন্তু তার ছোট্ট হাত আমার চোখকে ঠিক মতো ডাকতে পারছিলনা। তাই আমি নিজেই আমার হাত দিয়ে তার হাতের উপর রেখে আমার চোখ গুলি ঢেকে নিলাম।
কথা এবার ডাকলো- মা-মনি আসো আমি পাপ্পার চোখ ধরে রেখেছি।
আমি এক জোরা মেয়েলি পায়ের হাটার অল্প অল্প শব্দ শুনলে পেলাম। ভাবলাম হয়তো বুয়া যাওয়া আসা করছে।
কথা বললো মা-মনি এবার ছেড়ে দেই পাপ্পার চোখ। আমি বুঝতে পারলাম কথা কারো ইশারার অপেক্ষা করছে। কথা একটু সময় অপেক্ষা করে আমার চোখ ছেড়ে দিতেই আমি দেখি আমার সামনে একজন মেয়ে ঘুমটা দিয়ে বসে আছে সেই শাড়ীটা পরে, যেটা আমার আর সুরঞ্জনার বিয়ের সময় আমার একমাত্র নিজের টাকায় কেনা।
আমি শক্ত হয়ে বসে রইলাম। আমি বুঝতে পারছি আমি বাক শক্তি হারিয়ে ফেলেছি।
আমার মেয়েটা আমার কাদে উঠে বললো পাপ্পা যাওয়ানা ঘুমটা খুলে আমার কুড়িয়ে পাওয়া মনিটাকে দেখ।
মেয়ের কথায় আমার ধ্যন ভাংল। আমি একটু এগিয়ে গিলে বললাম- মেয়েটার উদ্যেশ্যে বলতে লাগলাম তুমি আসবে আমি কল্পনাও করনি কোন দিন।
আমার মেয়েটা আমাকে বলে উঠলো পাপ্পা ম-মনি আসেনি তো আমি আমাদের বাসার গেইটের পাশে কুড়িয়ে পেয়েছি।
আমি আমার কথাকে কুলে তুলে নিয়ে গালে মুখে চুমু দিতে দিতে মেয়েটার উদ্যেশ্যে বললাম- সুরঞ্জনা তুমি কি সত্যি সত্যি ফিরে এসেছো?
আমার কথাটা শেষ হতেনা হতে সৌদা তার মাথার ঘুমটা খুলে কোমরে আটকে নিয়ে বলতে লাগলো ঐ ঐ আমি আমি সুরঞ্জনা না সৌদা। কথাকে আমার কুল থেকে কেড়ে নিয়ে আমাকে বলতে লাগলো তুমি একটা আস্ত বোকা। আমার মেয়েটা বোকা শব্দটা শুনে হাত তালি দিয়ে বলতে লাগলো পাপ্পা বোকা পাপ্পা বোকা। মা-মনিকে চিনতে পারেনি। পাপ্পা বোকা। সৌদাও কথার সাথে বলতে লাগলো আস্ত বোকা আস্ত বোকা। আমি সৌদাকে মারার ভং করে সৌদার দিকে এগিয়ে যেতেই পাপুসে পিছলা খেয়ে সৌদার বুকের উপরে পরে গেলাম। সৌদা আর কথা আমাকে বুকের সাথে ধরে হেসে উঠলো। আমিও লজ্জা পেয়ে গেলাম। সাথে সাথে দরজার কলিং বেল বেজে উঠল। আমি ভিতরে আসার সময় দরজা আঠকে আসিনি। কথা সৌদার কুল থেকে নেমে গিয়ে দরজাটা খুলে দিতেই আমি সৌদার বুক থেকে মাথা তুলে বাহিরে তাকিয়ে দেখি সুরঞ্জনা ফিরে এসেছে। দাঁড়িয়ে আছে মাথা নিছু করে দরজার ওপাশে।
কেউ সুরঞ্জনাকে চিনলানা শুধু আমি ছাড়া। না কথা না সৌদা। তাদের চেনার কথাওনা।
আমি নিরব নির্বাক অদ্ভুদ প্রাণহীন প্রাণীর মতো দাঁড়িয়ে রইলাম।
------------------------সমাপ্ত----------------
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা মে, ২০১৬ বিকাল ৩:৩১
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=বেলা যে যায় চলে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:৪৯



রেকর্ডহীন জীবন, হতে পারলো না ক্যাসেট বক্স
কত গান কত গল্প অবহেলায় গেলো ক্ষয়ে,
বন্ধ করলেই চোখ, দেখতে পাই কত সহস্র সুখ নক্ষত্র
কত মোহ নিহারীকা ঘুরে বেড়ায় চোখের পাতায়।

সব কী... ...বাকিটুকু পড়ুন

মার্কিন নির্বাচনে এবার থাকছে বাংলা ব্যালট পেপার

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৫:২৪


আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বাংলার উজ্জ্বল উপস্থিতি। একমাত্র এশীয় ভাষা হিসাবে ব্যালট পেপারে স্থান করে নিল বাংলা।সংবাদ সংস্থা পিটিআই-এর খবর অনুযায়ী, নিউ ইয়র্ক প্রদেশের ব্যালট পেপারে অন্য ভাষার সঙ্গে রয়েছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সত্যি বলছি, চাইবো না

লিখেছেন নওরিন হোসেন, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৮:০৮



সত্যি বলছি, এভাবে আর চাইবো না।
ধূসর মরুর বুকের তপ্ত বালির শপথ ,
বালির গভীরে অবহেলায় লুকানো মৃত পথিকের... ...বাকিটুকু পড়ুন

বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা কি 'কিংস পার্টি' গঠনের চেষ্টা করছেন ?

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৮:১০


শেখ হাসিনা সরকার পতনের পর থেকেই আন্দোলনে নেতৃত্বদানকারী বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন নামক সংগঠন টি রাজনৈতিক দল গঠন করবে কিনা তা নিয়ে আলোচনা চলছেই।... ...বাকিটুকু পড়ুন

শেখস্থান.....

লিখেছেন জুল ভার্ন, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:১৫

শেখস্থান.....

বহু বছর পর সম্প্রতি ঢাকা-পিরোজপু সড়ক পথে যাতায়াত করেছিলাম। গোপালগঞ্জ- টুংগীপাড়া এবং সংলগ্ন উপজেলা/ থানা- কোটালিপাড়া, কাশিয়ানী, মকসুদপুর অতিক্রম করার সময় সড়কের দুইপাশে শুধু শেখ পরিবারের নামে বিভিন্ন স্থাপনা দেখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×