ব্লগার পরিচিতি এবং বৃত্তান্ত (আরিফ জেবতিক, পিয়াল, কৌশিক, ত্রিভুজ, সবাক, আইরিন সুলতানা)
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
Tweet
ব্লগ হলো মুক্তচিন্তার স্থান। মননশীল মানুষেরা ব্লগের মাধ্যমে নিজের মুক্তচিন্তার প্রকাশ ঘটায়। শিল্প-সাহিত্য, রাজনীতি, অর্থনীতিসহ আরও নানা বিষয়ে ব্লগের মাধ্যমে নিজের মতামত প্রকাশ করেন ব্লগাররা। আবার জাতীয় স্বার্থের জন্য ব্লগের মাধ্যমে জনসাধারণকে জানানো যায় নিজের কথা। আমাদের এবারের আয়োজনে উঠে এসেছে এই প্রজন্মের কয়েকজন ব্লগারের নিজস্ব ভাবনা। তাদের নিয়ে লিখেছেন খালেদ আহমেদ,প্রাঞ্জল সেলিম ও রিয়াদ খন্দকারঃ-
১। আরিফ জেবতিক
২। অমি রহমান পিয়াল
৩। এম এস আলম (ত্রিভুজ)
৪। কৌশিক আহমেদ (কৌশিক)
৫। ইব্রাহীম খলিল (সবাক)
৬। আইরিন সুলতানা
৭। ফারুক ওয়াসিফ
৮। ফাতেমা আবেদীন
১। আরিফ জেবতিক
‘আমাদের সবারই কিছু না কিছু ভাবনা থাকে। আর সেই ভাবনাগুলো অন্যের সঙ্গে শেয়ার করতে ইচ্ছা থাকাটাও স্বাভাবিক। ব্লগ হচ্ছে এই ভাবনাগুলোকে ছড়িয়ে দেওয়ার সহজতম মাধ্যম, তাই ব্লগ লিখি’—কথাগুলো বলছিলেন এই প্রজন্মের একজন জনপ্রিয় ব্লগার আরিফ জেবতিক। ব্লগ লেখা শুরুর গল্প জানতে চাইলে তিনি মৃদু হেসে বলেন, ‘দিনতারিখ মনে নেই, তবে ২০০৭ সালের শেষের দিকে প্রথম ব্লগ লেখা শুরু করি। এর আগে আমি কয়েকটি পত্রিকায় লিখতাম। কিন্তু যা লেখি তা প্রায় সবই সম্পাদনার কাঁচির নিচে পড়ে যায়। ছাপা হওয়ার পরে নিজের লেখা চেনাই মুশকিল হয়ে যায়। এজন্য বিরক্ত হয়ে আমি পত্রিকায় লেখালেখি বাদ দিয়ে দিই। তার কয়েক বছর পরে সম্ভবত ২০০৭ সালের দিকে আমি প্রথম ব্লগ লেখা শুরু করি।’ আপনার নিজের কোনো ব্লগ সাইট আছে কি? জবাবে তিনি বলেন, ‘না, আমার নিজের কোনো ব্লগ সাইট নেই। আমি মনে করি আমার লেখা ফেরি করে বেড়ানো উচিত, পাঠক খুঁজে এসে আমার লেখা পড়বে, এমন বড় লেখক আমি নই। আমি তাই বিভিন্ন কমিউনিটি ব্লগে পাঠকের ভিড়ে নিজের লেখা নিয়ে উপস্থিত হই। সাধারণত আমি রাজনৈতিক পর্যবক্ষেণগুলো আমারব্লগ.কম-এ লিখি, সাহিত্যের জন্য সচলায়তন আমার প্রিয় লেখালেখির জায়গা। তবে ব্যক্তিগতভাবে আমার ফেসবুক নোটগুলোই আমার নিজের ব্লগ হিসেবে বেশি পাঠকপ্রিয়।’ ব্লগ লেখার সময় ও বিষয় প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘লেখালেখির জন্য আসলে ওভাবে কোনো নির্দিষ্ট সময় নেই। তবে রাতের বেলা একটু অবসর পাওয়া যায়, তখন লেখালেখিটা বেশি হয়। সমকালীন রাজনীতি, রাষ্ট্র ও সমাজ আমার ব্লগ লেখার প্রিয় বিষয়।’ আপনার প্রিয় ব্লগার কারা জানতে চাইলে আরিফ বলেন, ‘এই প্রশ্নের জবাব দেওয়া মুশকিল। বাংলা ব্লগে অনেক অনেক লেখক, তাদের অনেকের লেখাই কোনো না কোনো সময় ভালো লেগেছে। তবে তালিকা করতে বললে, আমার মনে হয় আমি সবার আগে হিমুর নাম বলব। সচলায়তন ব্লগ সাইটের এই নিয়মিত ব্লগার আমার দেখা শুধু সেরা ব্লগার শুধু নন, আমি তো মনে করি এই প্রজন্মরে অন্যতম শক্তিশালী লেখক। উনি লেখালেখিতে সিরিয়াস হলে দেশের অন্যতম সেরা জনপ্রিয় লেখক হবেন বলে আমার বিশ্বাস। এর বাইরে আমারব্লগের রাসেল, যিনি ডটু রাসেল নামে বেশি পরিচিত, তার লেখা আমার প্রিয়। এ ছাড়া অমি রহমান পিয়ালের গবেষণাধর্মী লেখাগুলোর আমি ভক্ত। হাসান মোরশেদের লেখায় নিজের অনেক চিন্তার প্রতিচ্ছবি পাই। বাংলাব্লগকে প্রযুক্তিগত দিকে এগিয়ে দেওয়ার জন্য এসএম মাহবুব মুর্শেদ এবং অরূপ আমার প্রিয় তালিকায় আছেন। ডেডিকেটেড ব্লগার হিসেবে মাহমুদুল হাসান রুবেল আমার প্রিয় ব্লগার। নতুনদের মাঝে আলিম আল রাজী এবং হাসান মাহবুবের লেখা আমি পড়ি। সিন্ডিকেট নিক হিসেবে একই নামে কয়েকজন ব্লগার লিখে থাকেন। এর মাঝে দিনমজুর নিকের সবার লেখা এবং লোকাল টক নিকের কয়েকজনের লেখা আমার ভালো লাগে।’ ব্লগ লেখাটা কি কাজে লাগে নাকি নিছক সময় কাটানো? উত্তরে তিনি বলেন, ‘বলেন কী! অবশ্যই কাজে লাগে। চিন্তার বিস্তার সবসময়ই কাজে লাগে। যেকোনো সত্য ও সুন্দরের উচ্চারণ প্রতিধ্বনিত হয় এবং সেগুলো বড় আওয়াজ হিসেবে মানুষের মাঝে ছড়িয়ে পড়ে।’ ব্লগকে বলা হয় মুক্ত চিন্তার স্থান। এখানে মুক্ত চিন্তার সুযোগ কতটুকু জানতে চাইলে জেবতিক বলেন, ‘অবশ্যই ব্লগ মুক্তচিন্তার স্থান। তবে আমাদের দেশে যেভাবে কমিউনিটি ব্লগিং হচ্ছে, সেখানে মুক্তচিন্তার চর্চা সবসময় সম্ভব হয় না। বড় কমিউনিটি ব্লগগুলোর মাঝে আমারব্লগ ছাড়া বাকিগুলোতে মডারেশন আছে। কোনো কোনো ব্লগের মডারেটরদের তো ভালো লেখা আর খারাপ লেখার পার্থক্য করারই যোগ্যতা নেই। এরা মুক্তচিন্তা শব্দটি বানান করে লিখতেই পারবে না, সুতরাং এসব স্থানে কিছুটা সমস্যা হচ্ছে। তবে এসবই হচ্ছে প্রক্রিয়াগত ত্রুটি, এর জন্য ব্লগকে দোষারোপ করা ঠিক হবে না।’ ব্লগ কি সচেতনতা তৈরি করে? করলে তা কোন শ্রেণীর মানুষের কাছে বেশি করে? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘অবশ্যই করে। অনেক প্রচলিত মিথ আর রাজনৈতিক কুসংস্কার ব্লগের আলোচনার মাধ্যমে আলো পায়। এখন তো ব্লগাররা রাজনৈতিক মুভমেন্টও সংগঠিত করছে। আমি নিজেও রাজনীতি নিয়ে লিখতে বেশি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করি।’ ব্লগ লেখা কি আপনার পেশা বা কাজের কোনো ব্যাঘাত ঘটায় কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘না, তেমন একটা করে না। বরং যে বিষয়টি আমাকে তাড়িত করে, সে বিষয়ে লিখতে না পারলেই এক ধরনের চাপ অনুভব করি, সেটাই বরং দৈনন্দিন কাজে ব্যাঘাত ঘটায় বেশি।’ প্রায়ই ব্লগারদের মধ্যে দেখা যায় একদল আরেক দলকে হেয় প্রতিপন্ন করার চেষ্টা করে, এটা আপনার কাছে কতটুকু যৌক্তিক বলে মনে হয়? এমন প্রশ্নের জবাবে আরিফ জেবতিক বলেন, ‘আমি এমনটা কখনো দেখিনি। তবে দেশ ও মাটির বিরুদ্ধে কেউ লেখালেখি করলে, স্বাভাবিকভাবেই তরুণ পাঠকরা সেটির প্রতিবাদ করবে। এই প্রতিবাদ যে সবসময় শোভন হয়, এমন নয় কিন্তু এটাকে অযৌক্তিক বলারও কোনো কারণ নেই।’
আরিফ জেবতিক
ডাকনাম :আরিফ
জন্মের তারিখ ও স্থান :২১ জুন, সিলেট
বাবার নাম :আতিকুল হক
মায়ের নাম :জেবুন্নাহার হক
প্রথম স্কুল :ব্লুবার্ড হাই স্কুল, সিলেট
প্রিয় মানুষ :আমার মেয়ে নায়রা প্রিয় উক্তি :মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড়—আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ স্যারের এই উক্তিটি
প্রিয় পোশাক :জিন্স-টিশার্ট
অবসর কাটে যেভাবে :ঘুমিয়ে
সাফল্যের সংজ্ঞা :আত্মতৃপ্তি
০০০০০০০০০০০
২। অমি রহমান পিয়াল
ব্লগের সঙ্গে তার পরিচয় বন্ধু ব্রাত্য রাইসুর মাধ্যমে। তখন তারা নতুন একটা পত্রিকায় ঢুকেছেন, বাজারে নেই বলে অলস সময় কাটাচ্ছেন বুট ক্যাম্পে। তো একদিন বন্ধু রাইসু এসে বলল, ‘এই সাইটটা দেখো, এখানে লেখো।’ সেটা ছিল সামহোয়্যারইন ব্লগের ঠিকানা। বাংলাদেশে বাংলাভাষায় প্রথম কমিউনিটি ব্লগসাইট। ভালো লেগে গেল এবং সেই থেকে শুরু। সামহোয়্যারে আর যাওয়া হয় না, তবে ব্লগ লেখা চলছে সমান তালে। কথা বলছিলাম বিশিষ্ট ব্লগার অমি রহমান পিয়ালকে নিয়ে। বন্ধু মহলে পিয়াল নামেই পরিচিত। বাবার চাকরির সুবাদে ব্রাহ্মণবাড়িয়াতে পিয়ালের জন্ম। তারপর দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ঢাকায় চলে আসেন। তখন থেকেই এখানেই আছেন। তিনি মেট্রিক পাস করেন আইডিয়াল স্কুল থেকে, তারপর ঢাকা কলেজ এবং চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ। বিয়ে নিয়ে তার একটি মজার ঘটনা আছে। এখন পর্যন্ত ব্লগে সরাসরি সম্প্রচারকৃত বিয়েটি কিন্তু তারই। পরিবারের অসম্মতিতে লুকিয়ে বিয়ে করেছিলেন দুজনে তাও আবার এক ব্লগারের বাসায়, সুতরাং সেখানে উপস্থিত ছিলেন অন্যান্য ব্লগার বন্ধুরাও এবং তারাই তা নিজ দায়িত্বে ব্লগে পোস্ট দিয়ে আপডেট করেছিলেন। পিয়াল এক সন্তানের জনক, তার মেয়ে ‘রাজকন্যা’।
ব্লগ লেখার ক্ষেত্রে তার কোনো ধরাবাঁধা সময় নেই। তবে লোডশেডিংয়ের ঝক্কি এড়াতে গভীর রাতই তার পছন্দ। কিছু আবার লেখেন তাত্ক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায়, কোনো হালনাগাদ ঘটনার পরিপ্রক্ষিতে। পিয়াল মূলত মুক্তিযুদ্ধ নিয়েই লিখেছেন বেশি। তবে যেকোনো বিষয়েই ব্লগ লিখতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন তিনি। গান, সিনেমা, খেলা, কবিতা, গল্প, সাধারণ রোজনামচা, মজার স্মৃতি—সবই লিখেছেন এবং এখনো লিখেন।
ওয়ার্ড প্রেসে তার একটা ব্যক্তিগত ব্লগ সাইট আছে, কিন্তু সেখানে তার খুব বেশি লেখা হয় না, বরং ওটাকে ব্যবহার করেন লেখার ব্যাকআপ রাখার জায়গা হিসেবে। আগে লিখতেন সামহোয়্যারে, সচলায়তনে। সদস্য হয়েছেন আমরা বন্ধু, চতুর্মাত্রিক ব্লগেও। তবে লেখালেখি করেন শুধু আমার ব্লগ ডট কমে। প্রিয় ব্লগার কারা? আপনার কাছে কেন তার ব্লগ প্রিয়? এমন প্রশ্নের উত্তরে পিয়াল বলেন, ‘প্রিয় ব্লগারদের তালিকা বিশাল। আর পছন্দের বিষয়টায় আমি গুরুত্ব দিই আসলে বিষয় বৈচিত্র্য, লেখনশৈলী, সেন্স অব হিউমার—এই বিষয়গুলোকে। আমার ব্লগের ডাক্তার আইজুদ্দিন, আরিফ জেবতিক, শনিবারের চিঠি, আদিল মাহমুদ, নুরুজ্জামান মানিক, আমরা বন্ধু শওকত হোসেন মাসুম, হাসান সাঈদ, জয়িতা, সচলায়তনের হিমু, হাসান মোরশেদ, সুমন চৌধুরী, সামহোয়্যারইনের ইমন জুবায়ের, কৌশিক, মনজুরুল হক—এরা আমার প্রিয় ব্লগারদের মধ্যে পড়েন। আর বিনোদনের জন্য ত্রিভুজের ব্লগ আমার সবচেয়ে বেশি পছন্দ।
ব্লগ লেখাটা কি কাজে লাগে নাকি নিছক সময় কাটানো? উত্তরে অমি রহমান পিয়াল বলেন, ‘কিছু ব্লগে ঢুকে সংবাদপত্রের খবরের কাটপেস্ট দেখে লোকে হয়তো বিভ্রান্ত হয়, কিন্তু এর শক্তিটা সম্পর্কে অনেকেই জানে না। ২০০৬ সালে ক্যান্সার আক্রান্ত পাপড়িকে নিয়ে আমি একটা ব্লগ লিখেছিলাম। সাথে সাথে তাতে সাড়া দিয়েছিলেন ব্লগাররা। সেই পাপড়ি আজ সুস্থ। আরিফ জেবতিকের ভেলরি টেইলরকে নিয়ে পোস্ট এখনো বেশ আলোচিত একটি ব্লগ যা প্রশাসনকে বাধ্য করেছিল সিদ্ধান্ত নিতে। শহীদ মুক্তিযোদ্ধা লালুকে নিয়ে আমার একটি পোস্টের পর তার পরিবারের পুনর্বাসন করা হয়েছে। এমন অনেক ঘটনা আছে যার মাধ্যমে বুঝা যায় ব্লগ কোনো ফালতু জায়গা না। এর শক্তি আছে মানুষকে প্রভাবিত করার, তাদের একাট্টা করার। আর আমি মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস নিয়ে কাজ করি, স্বাধীনতাবিরোধীদের বিভ্রান্তিমূলক অপপ্রচারের জবাব দিই, এটা সময় কাটাতে করি না। বরং ব্যক্তিগত যাপনের সঙ্গে আপস করে সময় বের করি। এখন এই সুযোগটা যে যেভাবে নেয়। একটা শাবল দিয়ে আপনি মাটিও খুঁড়তে পারেন, আবার মানুষও খুন করতে পারেন। মুক্তচিন্তার নামে প্রচলিত বিশ্বাসকে যখন আক্রমণ করা হয় কিংবা স্বাধীনতার অর্জনগুলোকে যখন প্রশ্নবিদ্ধ করা হয়, তখন সেটা আর মুক্তচিন্তা থাকে না। তাই ব্লগে এই অপব্যবহারটাই বেশি।’
ব্লগ কি সচেতনতা তৈরি করে? করলে তা কোন শ্রেণীর মানুষের কাছে বেশি করে? এই প্রশ্নটি বোধকরি অনেকের এই প্রশ্নের মুখোমুখি হয়ে পিয়াল বলেন, ‘দেশে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের একটা বড় অংশই তরুণ। এদের অনেকে ফেসবুকের লিংক ধরে ব্লগে ঢোকে। গত নির্বাচনের আগে যুদ্ধাপরাধীদের বিরুদ্ধে সচেতনতা তৈরিতে একটা বড় ভূমিকা ছিল ব্লগের। তরুণ ভোটারদের একটা বড় অংশই প্রভাবিত হয়েছিল, সচেতন হয়েছিল স্বাধীনতাবিরোধীদের পক্ষে রায় না দিতে এবং তাদের বিচার দাবি করতে।’ ব্লগ লেখা কি আপনার পেশা বা কাজের কোনো ব্যাঘাত ঘটায়? প্রশ্নটির উত্তরে সোজাসাপ্টা পিয়াল বলেন, ‘নিশ্চয়ই ঘটায়। ব্লগিং একটা নেশার মতো। কতবার কাজ ফাঁকি দিয়ে ব্লগিং করেছি, ব্লগ লিখতে গিয়ে রিপোর্ট দেখতে দেরি হয়ে গেছে, নিউজ মিস করে গেছি। তারপর ঘরে এসে যে সময়টা পরিবারকে দেওয়ার, তারও অনেকখানি দখল করে নেয় ব্লগ। অবশ্য এসব শুরুর দিকে হতো, এখন অনেকখানি সামলে উঠেছি। ব্লগই জীবন নয়।’
প্রায়ই দেখা যায় ব্লগারদের মধ্যে একদল আরেক দলকে হেয় প্রতিপন্ন করার চেষ্টা করে, এটার যৌক্তিক ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে পিয়াল বলেন, এখানে সুস্পষ্ট দুইটা পক্ষ। একদল আছে স্বাধীনতাবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতিনিধি, এদের কাজই মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে বিকৃত করা, সবসময় সাম্প্রদায়িক ঘৃণা ছড়ানো, উস্কানিমূলক লেখালেখি করা। এদের প্রতিরোধ করতেই আরেকদল ব্লগারকে ভব্যতার সীমা অতিক্রম করতে হয়। এখানে যৌক্তিকতার কিছু নেই। দেশকে ভালোবেসে, জাতীয় সংগীত ও জাতীয় পতাকার মর্যাদা রাখতে এইসব পাকিস্তানপন্থীদের সব উপায়ে প্রতিরোধ করাটা আমি জরুরি মানি।’
অমি রহমান পিয়ালের স্বপ্ন একটাই যুদ্ধাপরাধীদের বিচার এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়ন। কেননা এটা পূরণ হলেই আগামী প্রজন্মের জন্য সুন্দর এক বাসভূমি রেখে যেতে পারবেন।
অমি রহমান পিয়াল
ডাক নাম :পিয়াল
জন্মতারিখ ও স্থান :২ নভেম্বর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া
বাবার নাম :মরহুম ডা. মোহাম্মদ শফিকুর রহমান
মায়ের নাম :খুরশীদ জাহান
প্রথম স্কুল :মনোয়ারা শিশুবাগ
প্রিয় মানুষ :বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান
প্রিয় উক্তি :আমি বাঙালি, আমি মানুষ, আমি মুসলমান—একবার মরে, দুইবার না।
প্রিয় পোশাক :জিন্স, টিশার্ট
অবসর কাটে যেভাবে:বই পড়ে, গান শুনে, মুভি দেখে
সাফল্যের সংজ্ঞা : আমার জানা নেই।
০০০০০০০০০০০০০
৩। এম এস আলম (ত্রিভুজ)
প্রথমত, লিখতে ভালো লাগে। নিজের চিন্তাভাবনা লেখার অক্ষরে বন্দী করে সেটার দিকে তাকিয়ে থাকলে চিন্তাটা আরও প্রসারিত হয়। শুধুমাত্র মাথার ভেতরে রেখে চিন্তা করলে যতটুকু চিন্তা করা সম্ভব লেখার অক্ষরে পরিণত করে ফেলার পর তারচেয়েও আরও বেশি করা যায়। দ্বিতীয়ত, অন্যদের সাথে শেয়ার করা যায় এবং তাদের দৃষ্টিভঙ্গি ও মতামত পাওয়া যায়। তা ছাড়া বিভিন্ন বিষয়ে নিজের যুক্তিটুকু তুলে ধরা সম্ভব হয়, যা অন্যদের চিন্তাধারাকে সঠিক পথে ধাবিত করতে পারে। সহজ কথায় সচেতনতা তৈরি।
২০০৩-০৪-এর দিকের ঘটনা, ব্লগ কনসেপ্টের সাথে তখনো তার পরিচয় ঘটেনি। অনলাইনে বিভিন্ন সাইটে ওয়েব জার্নাল নামের অপশন দেখতে পেয়ে রেজি. করে টুকটাক লেখালেখি করছেন। পরবর্তীতে ২০০৪-০৫-এর দিকে নিজের সাইটে জার্নাল লিখতে শুরু করেন। ২০০৫-এর শেষ দিকে সামহোয়্যারইন ব্লগের মাধ্যমে শুরু হয় বাংলা ব্লগের শুভ সূচনা। ওয়েবে তখন পর্যন্ত বাংলা ভাষার চর্চা তেমন নেই তাই বাংলা লেখার আনন্দ পেতে বাংলায় ব্লগিং শুরু করেন। কথা বলছিলাম এই প্রজন্মের তরুণ ব্লগার এম এস আলম ত্রিভুজ।
দুই ভাই, তিন বোনের মাঝে ত্রিভুজ ভাইদের ভেতরে ছোট। বাবা ছিলেন সরকারি কর্মকর্তা, মা গৃহিণী। পড়ালেখার শুরুটা কেটেছে চাঁদপুর সদর থেকে, এসএসসি কুমিল্লা বোর্ডে, এইচএসসি ঢাকা বোর্ড এবং পরিশেষে ন্যাশনাল ভার্সিটির অধীনে বাণিজ্য শাখায় অনার্স করেছেন (বিবিএ)।
ছোটবেলা থেকেই ত্রিভুজ অনেকটা ঘরকুনো স্বভাবের ছিলেন, বেশির ভাগ সময় কেটেছে পাবলিক লাইব্রেরি বা বাসার এক কোনায় বসে বই পড়ে, কম্পিউটারে গেম খেলে, গবেষণা করে। ভার্সিটি লাইফে ঘরের কোনা থেকে বের হয়ে দেশের বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে বেড়িয়েছেন, ভ্রমণ বাংলাদেশ নামের বাংলাদেশের প্রাচীনতম ট্র্যাকিং ক্লাবের সাথে জড়িত হয়ে ট্রাকিং ও অ্যাডভেঞ্চার ভ্রমণও করেছেন। এ ছাড়া বিভিন্ন ক্লাব, চ্যারিটি ও কমিউনিটির সাথে জড়িয়ে পড়েন এসময়টা থেকেই।
২০০৪-এর ২২ জুন ত্রিভুজ ডট কম নামের একটি সাইট শুরু করেন যেটা তার প্রথম অফিসিয়াল ব্লগ হিসেবে পরিচিত। তবে সামহোয়্যারইন ব্লগ ও ফেসবুক নোটে সবচেয়ে বেশি লেখালেখি ও আলোচনা করেছেন। এ ছাড়াও প্রথম আলো ব্লগ, সোনার বাংলাদেশ ব্লগ, প্রজন্ম ফোরামসহ বেশকিছু প্লাটফর্মে লেখালেখি করেছেন। তার বেশির ভাগ লেখালেখি গভীর রাত বা ভোরের দিকে হয়েছে। বিভিন্ন ইস্যুতে যখন লিখেছেন তখন অফিস টাইমেও লিখেছেন। জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক বিভিন্ন ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে দিনের পর দিন টানা ব্লগিং করেছেন, অন্যদের লেখায় আলোচনা করেছেন। ব্লগ লেখার বিষয়ের ক্ষেত্রে তিনি কোনো বাঁধাধরা নিয়ম মানেন না। ব্লগ তার কাছে ‘যেমন ইচ্ছে লেখার পাতা’। তাই শিল্প, সাহিত্য, রাজনীতি, ধর্ম, প্রযুক্তিসহ সকল বিষয়ই কমবেশি স্থান পেয়েছে। নিজের প্রিয় ব্লগার সম্পর্কে বলতে গিয়ে ত্রিভুজ বলেন, ‘ব্লগ পুরো বিশ্বব্যাপী একটি জনপ্রিয় মাধ্যমে পরিণত হয়েছে এবং এই মাধ্যমটি এখন সকল ক্ষেত্রেই জনপ্রিয়। সুতরাং ব্লগারের শ্রেণীবিভাগ ও সংখ্যাও অসংখ্য। প্রিয় ব্লগারের কথা যদি বলতে যাই তাহলে এই সকল শ্রেণীর ব্লগারদের ভেতর থেকে বাছতে গেলেও নামের তালিকা উপন্যাস আকৃতি ধারণ করতে পারে, তাই প্রিয় ব্লগারদের নাম বলতে চাচ্ছি না। শুধু বলতে পারি, তারা আমার কাছে একজন সুপরিচিত লেখকের চাইতেও বেশি গুরুত্বপূর্ণ। তারা কেন আমার প্রিয় এটা বলতে গেলেও অনেক কথা বলতে হয়। অল্প কথায় বলার চেষ্টা করি, প্রথমেই টেকনিক্যাল ব্লগগুলোর কথা বলি। যারা নিয়মিত ইন্টারনেট ব্যবহার করে থাকেন তারা জানেন গুগলে আজকাল যেকোনো বিষয়ে সার্চ দিলেই অনেক রিসোর্স পাওয়া যায়। টেকনিক্যাল, ননটেকনিক্যাল বিভিন্ন বিষয়ে। টেকনিক্যাল যেসব বড় বড় ব্লগার আছেন তাদের লেখাগুলো যে কর্মক্ষেত্রে আমাদের কি পরিমাণ সাহায্য করে তা লিখে প্রকাশ করা সম্ভব না। ননটেকনিক্যাল ও চিন্তামূলক লেখাগুলো থেকে প্রচুর চিন্তার খোরাক পাই, সমসাময়িক বিষয় নিয়ে যারা লিখেন তাদের লেখাগুলো প্রকৃত ঘটনা জানতে সাহায্য করে, ঘটনার পেছনের ঘটনা, ব্যাখ্যা, বিশ্লেষণ এবং আরও অনেক খুঁটিনাটি বিষয় অনেকে এত সুন্দর করে লিখতে পারেন যা দেখে মুগ্ধ না হয়ে পারা যায় না। পত্রিকাগুলো বিভিন্ন সীমাবদ্ধতার কারণে যা লিখতে পারে না, ব্লগাররা তা অনায়াসে লিখে ফেলেন, সুতরাং দিনে দিনে মেইন স্ট্রিম মিডিয়ার চাইতে ব্লগ লেখকরা জনপ্রিয় হয়ে উঠছেন।’
ব্লগ লেখাটা কি কাজে লাগে নাকি নিছক সময় কাটানো? উত্তরে ত্রিভুজ বলেন, ‘ব্লগারদের কল্যাণে কতকিছু জানতে পারছি, চিন্তার খোরাক পাচ্ছি, কর্মক্ষেত্রে সহায়তা পাচ্ছি এবং আপটুডেট থাকতে পারছি। সুতরাং ব্লগিং যে কাজে লাগে তাতে কোনো সন্দেহ নেই। তবে অনেকের কাছে নিছক সময় কাটানোও হতে পারে, যে যেভাবে নিচ্ছে। নির্দিষ্ট করে বলা যাচ্ছে না কিছু। ব্লগের নিজের চিন্তাকে প্রকাশের সুযোগ তো যথেষ্ট আছে, বিষয় হচ্ছে, কে কীভাবে কাজে লাগাচ্ছে। যদিও ব্লগিং কমিউনিটির চাপে ও বিভিন্ন সমস্যার কারণে অনেকে নিজের মন খুলে লেখালেখি, আলোচনা করতে পারছেন না, তবুও মুক্তচিন্তার জন্য ব্লগ একটি উত্কৃষ্ট মাধ্যম বলে মনে হয় আমার কাছে।’
এম এস আলম
ডাক নাম :ত্রিভুজ
জন্মতারিখ :১৩ অক্টোবর, ১৯৮২
বাবার নাম :আব্দুস সালাম
মায়ের নাম :আক্তারুন্নেসা
প্রথম স্কুল :চাঁদপুর হাসান আলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়
প্রিয় পোশাক : জিন্স, টিশার্ট
অবসর কাটে যেভাবে :বই পড়ে, ব্লগ পড়ে-লিখে ও সামাজিক যোগাযোগ সাইটগুলোতে গঠনমূলক অ্যাকটিভিটি করে।
সাফল্যের সংজ্ঞা :আমার কাছে সাফল্য মানে আমার কোনো কাজের ফলাফল আমার মনের মতো হওয়া।
০০০০০০০০০০০০০০০
৪। কৌশিক আহমেদ (কৌশিক)
তরুণ প্রজন্মের কাছে ব্লগ একটি নতুন ধারা। এই ধারায় গা ভাসিয়ে তারা ছুটে যায় তাদের মনের সেই প্রান্তরে... একা নয়, সবাইকে সাথে নিয়ে যাওয়া যায় সেখানে। বলা যায় মনের সব কথা। আর অনেকেরই সাথে পরিচয়, ভাব বিনিময়ের মাধ্যমে হয়ে ওঠা যায় আরও বিকশিত। এমনই একজন হলেন, এ প্রজন্মের প্রতিনিধি, কৌশিক আহমেদ। তিনি ব্লগ লেখেন তার নিজের কথা বলতে, সংবাদ জানাতে, শিখতে এবং আরও বিকশিত হতে। প্রথম ব্লগ লেখার তাগিদ অনুভব করেন মূলত ব্লগ দেখার পরে। লেখার চর্চাটা ছিল আগে থেকেই। ব্লগে সেটা ট্রান্সফার হয়েছে। তবে তার নিজস্ব কোনো ব্লগ সাইট নেই। মূলত চারটা ব্লগে লিখেন তিনি সামহোয়্যারইনব্লগ, বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ব্লগ, আমরাবন্ধু ও উন্মোচন। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘রাতে ব্লগ লিখি। গল্প, কবিতা থেকে শুরু করে এখন সিটিজেন জার্নালিজম ও পডকাস্টিং প্রধান বিষয়।’ সেই সাথে জানান তার প্রিয় কিছু ব্লগারদের তালিকা। লোকাল টক, সবাক, নাফিস ইফতেখার, আলিম আল রাজি—এদের ব্লগ মানেই ক্রিয়েটিভিটির চূড়ান্ত। সাম্প্রতিক সময়ে ব্লগ হলো বিকল্প মিডিয়া। প্রচুর পাঠক ও ইন্টার অ্যাকশন। সর্বাগ্রে সংবাদও চলে আসছে। কাজেই হালনাগাদ থাকতে ব্লগই এখন একমাত্র ভরসা। অনেকে মনে করেন, ব্লগকে বলা হয় মুক্তচিন্তার স্থান। এখানে মুক্ত চিন্তার সুযোগ কতটুকু সেই বিষয়ে তিনি বলেন, ‘মুক্ত চিন্তাই দেখা যায় পুরোপুরি। তবে এখানে একধরনের সংস্কৃতি তৈরি হয়েছে—যা রপ্ত করে নিলে একজন মানুষের স্বাধীন চিন্তার প্রকাশ দেখা যায়।’ বাংলাদেশে ব্লগিং ইতিবাচকভাবেই দেখে থাকে এর ব্যবহারকারীরা। সে অর্থে একটা সম্মিলিত প্রয়াস থাকে এর জনসচেতনতামূলক কর্মকাণ্ড প্রসারে। ব্লগাররা বিভিন্ন ইস্যুতে রাজপথে নেমেও নানান ইতিবাচক ও উন্নয়নমুখী মেসেজ জনসাধারণকে পৌঁছে দিচ্ছে। তিনি পছন্দ করেন, হিউমারাস স্যাটায়ার। সাধারণত এই ধরনের ব্লগে অনেক স্পষ্ট কথা বেশ সহজে বলে ফেলা যায়। অর্থাত্, তিনি তার মনের কথাকে সহজ ভাষায় প্রকাশ করতে পছন্দ করেন। তবে অনেক সময় দেখা যায়, এই ব্লগিং কিছু ক্ষেত্রে পেশা বা কাজের ব্যাঘাত ঘটায়। কিন্তু তার বেলায় হয়েছে ঠিক উল্টোটা। ব্লগ লিখে বরঞ্চ পেশায় সুবিধা পেয়েছেন তিনি। মাঝে মাঝে তার বস বিভিন্ন কর্মসূচি নিয়ে ব্লগ লিখতে বলেছেন। ব্যাপারটি সত্যিই অনূপ্রেরণামূলক।
ব্লগারদের মধ্যে দেখা যায় একদল আরেক দলকে হেয় প্রতিপন্ন করার চেষ্টা করে, এটার যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘এটা খুবই স্বাভাবিক একটা প্রতিচ্ছবি। ব্লগে বিভিন্ন মত-পথের মানুষ থাকে, তাদের নানাবিধ উদ্দেশ্য থাকে এবং তা নিয়ে ঝগড়া বিবাদ হয়। তবে এর মধ্যে একটা ভিন্নতা আছে। ব্লগের ব্যবহারিক সীমাবদ্ধতার জন্য এর বিকাশে এসব দ্বন্দ্ব থেকে নানারকম নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থারও উদ্ভব হয়েছে। যা ভবিষ্যতে একটা পূর্ণাঙ্গ সাইবার ল তৈরিতে সহায়তা করবে।’ এরপর শৈশব-কৈশোর, পড়াশোনা ও পরিবারের কথা বলতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘ছোটবেলায় স্বপ্ন ছিল দৌড়বিদ হবো। স্কুল পর্যায় পর্যন্ত চ্যাম্পিয়ন ছিলাম। এরপরে উপরের ক্লাসে মনে হলো সাহিত্যিক হবো, পড়াশোনা ইংরেজি সাহিত্যে। আর এখন স্বপ্ন দেখি বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনি লেখার। আমার বাবা-মা জীবিত আছেন। এক বোন ও ভাই আছে আমার ছোট। বিবাহিত। এক কন্যার জনক। আমার স্ত্রী আইরিন আখতার, ব্লগের উপরে বিরক্ত হয়ে শেষমেশ এখন ব্লগিং শুরু করেছেন।’ মানুষ মাত্রই স্বপ্ন দেখে, তেমনি তারও স্বপ্ন রয়েছে। তিনি স্বপ্ন দেখেন বিশ্বের ৩০ কোটি বাঙালিকে টার্গেট করে লোকাল এরিয়া ওয়েবের একটা জাংশন তৈরি করার, যা ভবিষ্যতের শক্তিশালী অর্থনৈতিক বলয় তৈরি করবে।
কৌশিক আহমেদ
ডাক নাম : কৌশিক
জন্ম তারিখ ও স্থান :২১ অক্টোবর ১৯৭৪, পটুয়াখালী
বাবার নাম :মোশাররফ করিম
মায়ের নাম :মমতাজ বেগম
প্রথম স্কুল :পাথরঘাটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়
প্রিয় মানুষ :বাবা-মা
প্রিয় উক্তি :রক্ত কখনো লাল হয় না, এর রঙের নাম অর্থ।
প্রিয় পোশাক :জিন্স, টিশার্ট
অবসর কাটে যেভাবে :মেয়ের সাথে ডরিমন দেখে হিন্দি শেখা, সামনে যেহেতু বাচ্চারা বাংলার বদলে হিন্দিতেই কথা বলবে এই কার্টুনটির বদৌলতে, সেজন্য আগে ভাগে শিখে রাখা।
সাফল্যের সংজ্ঞা :যে সময়ে একজন মানুষ একটি পর্যায়ে উপনীত হয়ে মনে করেন তার আর কিছুই করার নেই।
০০০০০০০০০
৫। ইব্রাহিম খলিল (সবাক)
ছোটবেলা থেকে দিনলিপি সংরক্ষণ করতেন। অনলাইন কনসেপ্টের সাথে যেদিন পরিচয় ঘটে, এরপর থেকেই ব্লগ লেখার তাগিদ অনুভব করেন। সময়টা ছিল ২০০৩-২০০৪-এর দিকে। যদিও এর অনেক পরে এসে ২০০৮-এর এপ্রিলে বাংলা ব্লগিং শুরু করেন। কথা বলছিলাম বাংলাদেশের এক তরুণ ব্লগার ইব্রাহিম খলিলকে নিয়ে। সবার কাছে পরিচিত সবাক নামেই।
শৈশব-কৈশোর কেটেছে গ্রামে। আট-দশটা গ্রাম্য পরিবারের মতোই ধর্মপ্রাণ এবং রক্ষণশীল পরিবারে বড় হয়েছেন। ছোটবেলা থেকে গ্রাম, গ্রামের পরিবেশ, পরিবারের সংস্কৃতি তার বিপক্ষে ছিল। এসব কারণে সার্বিক বিরক্তি থেকে বাড়ি পালানোর ঘটনা ঘটেছে বেশ কয়েকবার। গ্রামের স্কুলে প্রাথমিক এবং মাধ্যমিক শিক্ষা সমাপ্ত করেন। জেলা শহরে নোয়াখালী বিশ্ববিদ্যালয় কলেজে দ্বাদশ শ্রেণী পর্যন্ত পড়েছেন। সেখানেই বিদায় জানান একাডেমিক পড়াশোনাকে। এরপর প্রযুক্তির প্রতি আকৃষ্ট হয়ে মগ্ন হন প্রযুক্তি শিক্ষায়। পরবর্তীতে টাইপিংয়ের চাকরি থেকে শুরু করে কম্পিউটার প্রশিক্ষকের চাকরিও করেন। বর্তমানে একটি স্বনামধন্য প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানে ক্রিয়েটিভ ডিজাইন, নলেজ অ্যান্ড রিসার্চ বিভাগের প্রধান হিসেবে কর্মরত আছেন। বর্তমানে এক সন্তান এবং স্ত্রীকে নিয়ে ঢাকায় বসবাস করছেন।
সবাক তার নিজস্ব ব্লগসাইট ‘সবাক ডট ওয়ার্ডপ্রেস ডট কমে’-এ অনিয়মিত লেখালেখি করেন। কিন্তু নিয়মিতভাবে সামহোয়্যারইন ব্লগে লিখছেন। এ ছাড়া মুক্তমনা ব্লগ, নাগরিক ব্লগ, বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ব্লগে লেখালেখি করেন। তবে প্রায় প্রত্যেকটি ব্লগসাইটই নিয়মিত ভ্রমণ করা হয় তার। সবাক সাধারণত মধ্যরাতের দিকে ব্লগ লিখতে পছন্দ করেন। প্রবন্ধ, গল্প, কবিতা, পোস্টারের মাধ্যমে সমসাময়িক বিষয়ের সাথে অতীত এবং ভবিষ্যতকে সম্পৃক্ত করে ব্লগিং করেন। এ ক্ষেত্রে স্যাটায়ার রচনাই বেশি হয়। লেখার পাশাপাশি নিজের বানানো ভিডিও শেয়ার করে থাকেন। আসলে তিনি সুনির্দিষ্ট বিষয়ে আটকে না থেকে বৈচিত্র্যপূর্ণ ব্লগ লিখতে এবং পড়তে বেশি আগ্রহী। সবাকের সে অর্থে কোনো প্রিয় ব্লগার নেই। তবে প্রচুর ব্লগার নিয়মিত ভালো লিখে থাকেন। তিনি তাদের ব্লগ নিয়মিত পড়েন। ব্লগ লেখাটা কি কাজে লাগে নাকি নিছক সময় কাটানো? এমন প্রশ্নের উত্তরে সবাক বলেন, ‘ব্লগ লেখা হচ্ছে আমার ক্যারিয়ারের সবচেয়ে বড় কাঁচামাল। আমি যত লিখি, ততই ভাবনার জায়গা প্রশস্ত হয়। নতুন নতুন চিন্তায় যুক্ত হই। আমার মতে ব্লগ মুক্তচিন্তার স্থান নয় ঠিক, চিন্তাভাবনা প্রকাশের জন্য অপেক্ষাকৃত মুক্ত মাধ্যম বলতে পারেন। মাধ্যমটা এখনো পুরোপুরি মুক্ত নয়। ব্লগে প্রকাশের জন্য কোনো চিন্তা করার সময় শাসকগোষ্ঠীসহ বিভিন্ন গোষ্ঠীর জিঘাংসার শিকার হওয়ার ভয় কাজ করে। ব্লগ অবশ্যই সচেতনতা তৈরি করে। বিশেষত অনুসন্ধিত্সু শ্রেণীর মাঝে এটি কাজ করে থাকে। এমনিতে সব শ্রেণীর কাছেই এর ক্ষমতা পৌঁছে। হয়তো কারো বেলায় একটু ধীরে কাজ করে। যেমন প্রতিক্রিয়াশীলদের বেলায়’।
সবাক সাধারণত প্রবন্ধ, গল্প, কবিতা, পোস্টারের মাধ্যমে সমসাময়িক বিষয়ের সাথে অতীত এবং ভবিষ্যতকে সম্পৃক্ত করে ব্লগিং করেন। সুনির্দিষ্ট বিষয়ে আটকে না থেকে বৈচিত্র্যপূর্ণ ব্লগ লিখতে এবং পড়তেই তিনি বেশি আগ্রহী। প্রগতিতে বাধা সৃষ্টি করে, এমন কিছু ভাঙতে তাড়না অনুভব করেন। তাই চলমান বিষয়ের সাথে সম্পৃক্ত করে ওইসব পুরোনো জঞ্জালে আঘাত করার জন্য লিখেন। ব্লগ লেখা কি আপনার পেশা বা কাজের কোনো ব্যাঘাত ঘটায়? এমন প্রশ্নের উত্তরে সবাক বলেন, ‘না, বরং আমার পেশা এবং কাজের উন্নতিতে সবচেয়ে বেশি সাহায্য করে থাকে। বলা চলে, আমার ক্যাপাসিটি বিল্ডিংয়ে প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ অবদান ব্লগের। বিশেষত মানুষের ভাবনার বিষয়বস্তু, এর গভীরতা, বিচিত্রতা পর্যবেক্ষণ করে অনেক উপাদান সংগ্রহ করা যায়। যা আমার পেশা বা কাজে বাড়তি কিছু জোগান দেয়।’ সবাক একজন সফল ব্লগার হলেও দীর্ঘদিন ধরে ভাবছেন সিনেমা নিয়ে। ইচ্ছে আছে আর্ট ফিল্ম নিয়ে কাজ করার। পাশাপাশি রাষ্ট্রের বিভিন্ন ইস্যুতে নাগরিক প্রতিক্রিয়া নিয়ে অনলাইন মাধ্যমে সমৃদ্ধ কিছু কাজ করার স্বপ্ন দেখে যান এই স্বপ্নবিলাসী ব্লগার।
ইব্রাহিম খলিল
ডাকনাম :সবাক
জন্মতারিখ :৩০ জুলাই ১৯৮৫
বাবার নাম :আবু তৈয়ব
মায়ের নাম :মনোয়ারা বেগম
প্রথম স্কুল :বানদত্ত উচ্চ বিদ্যালয়
প্রিয় মানুষ :সে অর্থে কেউ নেই।
প্রিয় পোশাক :ফুল হাতা শার্ট, প্যান্ট
অবসর কাটে যেভাবে :খুব একটা অবসর পাই না। যতটুকু পাই, পরিবারকে সময় দিই।
সাফল্যের সংজ্ঞা :সুতীব্র ইচ্ছাশক্তি এবং সুষম পরিশ্রমের ফলাফল।
০০০০০০০০০০০০০
*সংগৃহীত
৩৪টি মন্তব্য ২৭টি উত্তর
আলোচিত ব্লগ
কমলার জয়ের ক্ষীণ ১টা আলোক রেখা দেখা যাচ্ছে।
এই সপ্তাহের শুরুর দিকের জরীপে ৭টি স্যুইংষ্টেইটের ৫টাই ট্রাম্পের দিকে চলে গেছে; এখনো ট্রাম্পের দিকেই আছে; হিসেব মতো ট্রাম্প জয়ী হওয়ার কথা ছিলো। আজকে একটু পরিবর্তণ দেখা... ...বাকিটুকু পড়ুন
বিড়াল নিয়ে হাদিস কি বলে?
সব কিছু নিয়ে হাদিস আছে।
অবশ্যই হাদিস গুলো বানোয়াট। হ্যা বানোয়াট। এক মুখ থেকে আরেক মুখে কথা গেলেই কিছুটা বদলে যায়। নবীজি মৃত্যুর ২/৩ শ বছর পর হাদিস লিখা শুরু... ...বাকিটুকু পড়ুন
শাহ সাহেবের ডায়রি ।। বকেয়া না মেটালে ৭ নভেম্বরের পর বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না আদানি গোষ্ঠী
বকেয়া বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে কোটি কোটি টাকা। ৭ নভেম্বরের মধ্যে তা না মেটালে বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না গৌতম আদানির গোষ্ঠী। ‘দ্য টাইম্স অফ ইন্ডিয়া’-র একটি প্রতিবেদনে এমনটাই... ...বাকিটুকু পড়ুন
শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভারত থেকে শেখ হাসিনার প্রথম বিবৃতি, যা বললেন
জেলহত্যা দিবস উপলক্ষে বিবৃতি দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শনিবার (২ নভেম্বর) বিকালে দলটির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এটি পোস্ট করা হয়। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার... ...বাকিটুকু পড়ুন
=বেলা যে যায় চলে=
রেকর্ডহীন জীবন, হতে পারলো না ক্যাসেট বক্স
কত গান কত গল্প অবহেলায় গেলো ক্ষয়ে,
বন্ধ করলেই চোখ, দেখতে পাই কত সহস্র সুখ নক্ষত্র
কত মোহ নিহারীকা ঘুরে বেড়ায় চোখের পাতায়।
সব কী... ...বাকিটুকু পড়ুন