আমাদের দেশে যে পুরুষ একবার বিবাহ করিয়াছে বিবাহ সম্বন্ধে তাহার মনে আর কোন মোহ অবশিষ্ট থাকে না। বাঘের সামনে পড়িলে মানুষের যে দশা হয়, স্ত্রীর সম্বন্ধে তাহার ভাব সেইরুপ হইয়া উঠে। অবস্থা যেমনি ও বয়স যতই হউক স্ত্রীর সামনে নতজানু হইয়া থাকিতে তাহারা দ্বীধা করে না। বোধকরি এই কারণেই আমাদের মতো নবীন বেকারদিগের বিবাহের কথা শুনিলে গায়ে কম্প দিয়া জ্বর আসে। সত্য বলিতেছি, আমার মনে এমন বিশেষ উদ্বেগ জন্মে নাই। বরঞ্চ বিবাহের কথায় আমার মনে যেন দক্ষিনের হাওয়া বহিতে লাগিল। যে চাকুরি বিহীন বেকার তাহার পক্ষে এই ভাবটা দোষের। কিন্তু কি করিব, কবি বলিয়াছেন, “এখন যৌবন যার, যুদ্ধে যাবার সময় তার।”
কিন্তু এ কী করিতেছি? এ কি একটা গল্প যে উপন্যাস লিখিতে বসিলাম। এমন বেসুরে যে আমার লেখা শুরু হইবে এ আমি কি জানিতাম? মনে ছিল, কয় বৎসরের বেদনার যে মেঘ কালো হইয়া জমিয়া উঠিয়াছে, তাহাকে নাসিকা ঝাড়িবার মতো করিয়া ব্লগে ঝাড়িয়া ফেলিব। কিন্তু না পারিলাম বাংলায় শিশুপাঠ্য লিখিতে, কারণ তাহা লিখিলে উনি মুখে একখানা মুগ্ধবোধ বসাইয়া দিবেন; আর না পারিলাম কাব্য রচনা করিতে, কারণ তাহাকে দেখিলেই মনের সকল কাব্য মৃত পুষ্পসম ঝরিয়া যায়। সেই জন্যই দেখিতেছি, আমার ভিতরের সদা চঞ্চল বানরটি অট্যহাস্যে আপনাকে আপনি পরিহাস করিতেছে। না করিয়া করিবে কী। তাহার যে অশ্রু শুকাইয়া গিয়াছে।
যাহার সঙ্গে আমার বিবাহ হইয়াছে, তাহার সত্য নামটি দিব না, কারণ সে টের পাইলে আমার খবর হইয়া যাইবে। শোসনের গুতোয় তাহার নাম যে তাম্রপটে অক্ষয় হইয়া রহিয়াছে সেটা আমার ললাট। শত চেষ্টাতেও তাহা মুছিতে পারিব না।
আমার এ লেখা যেমনই হউক তাহার একটা নাম চাই। আচ্ছা তাহার নাম দিলাম হৈমন্তী। রবি'দার হৈমন্তী গল্পকে ফলো করিয়া নাম ধার্য করিলাম।
তৃতীয়বারের মতো বি.এ.-তে ফেল মারিয়া, পড়াশুনোয় ক্ষান্ত দিয়াছি, আমার বয়স তেত্রিশ (অবশ্য সার্টিফিকেটে পঁচিশ) এমন সময়ে আমার বিবাহ হইল। বেকার অবস্থায় বিবাহ, দলের মতে বা দল সংস্কারকের মতে উপযুক্ত কিনা তাহা লইয়া তাহারা হরতাল-কার্ফু ডাকুক, কিন্তু আমি বলিতেছি বেকার অবস্থায় বিবাহ মোটেও সুবিধার নহে।
বিবাহের অরুনোদয় হইল একখানি ফটোগ্রাফের আভাসে। লুকাইয়া রসময় গুপ্ত পড়িতেছিলাম। ঠাট্টার সম্পর্কের এক আত্মীয়া চটিখানি কাড়িয়া লইয়া, হৈমন্তীর ছবিখানি টেবিলে রাখিয়া কহিল, “এই বার সত্যিকারের পড়া পড়ো-- একেবারে ঘাড়মোড় ভাঙিয়া।”
হাল ফ্যাসন অনুযায়ী, সে খোপা বাঁধে নাই, গায়ে গহনাও ঝুলায় নাই কিন্তু ফটোশপের কারসাজিতে তাহার রুপ ফুটিয়াছে ভালই। দেখিয়া আসল চাহারা বুঝিতে পারি নাই।
পঞ্জীকার পাতা উল্টাইতে লাগিল। একসময় আসিয়া পড়িল সেই কুক্ষন। সেদিনের সানাইয়ের প্রত্যেকটি তান আমার মনে বেদনার সুর তুলিতেছে। সেদিনের পর হইতে জীবনের সকল সুখ দুরিভুত হইয়াছে। আহা! আমার সেই তেত্রিশ (সার্টিফিকেটে পঁচিশ) বছরের জীবন যদি অক্ষয় হইয়া থাকিত!!! সেদিনকার বিবাহের সেই হট্টোগোলের মাঝে তাহার হাতখানি যখন আমার হাতে পড়িল তখন আমার মনে হইল, 'পাইলাম, আমি ইহাকে পাইলাম।' হায়! তখন কি জানিতাম ইহাই আমাকে পাইয়াছে!!!
তাহার পরের কাহিনী আর লিখিতে পারিতেছি না। বেদনা বিধুর সে কাহিনী রবি'দাও লিখিতে পারিবে কি না সন্দেহ, আমিতো তাহার তুলনায় ছারপোকা।
ঐ যে, হৈমন্তী আমার সন্ধান করিতেছে। মনে হয় ঘর ঝাড়ু দিতে বলিবে। ঝাড়ু দিতে অপারগতা প্রকাশ করিলে আমার উপরেই ... । থাক, আর বলিয়া কাজ কী!
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে মে, ২০১১ বিকাল ৫:৩৭