বখাটেদিগের সর্দার ফইটক্যার মাথায় একটা নতুন মতলবুদয় (মতলব+উদয়) হইল। বালিকা বিদ্যালয় সংলগ্ন যে ছোট্ট চায়ের দোকানটা রহিয়াছে, ঠিক হইল উহার সামনে অবস্থিত বেঞ্চিতে সকলে বসিয়া থাকিবে। উক্ত স্থানে বসিয়া বালিকাদিগকে উত্তক্ত করিলে, তাহাদের মনে কি পরিমান বিরক্তি ও অসুবিধা বোধ হইবে, তাহাই উপলব্ধি করিয়া বখাটেরা এ প্রস্তাবে সম্পূর্ণ অনুমোদন করিল।
আয়েস করিয়া যখন সকলেই যখন মনযোগের সহিত কার্যে প্রবৃত্ত হইবার উপক্রম করতেছে, হেন কালে দেখা গেল কালো পোশাক পরিহিত র্যাব সদস্যগণ তাহাদের গাড়ি হইতে নামিতেছে; বখাটেরা উহাদের এইরুপ আকস্মাত প্রত্যাবর্তনে যারপরনাই আতংকিত হইয়া পলায়নে উদ্যত হইল।
র্যাব সদস্যগণের বখাটেদিগের প্রতি কোন প্রকার মনযোগ ছিলনা, মহল্লাতে অন্য এক হেতুতে উহাদের আগমন হইয়াছিল। কিন্তু বখাটেদিগের প্রাণ হাতে লইয়া পলায়ন করিতে দেখিয়া উহারা কৌতুহল বসত বখাটেদের ধাওয়া করিল এবং হাতের নাগালে ফইটক্যার হাল ফ্যাসনের লম্বা চুল পাইয়া উহাই সজোরে চাপিয়া ধরিল। র্যাবগণের দলনেতা আসিয়া প্রচন্ড আস্ফালন করিয়া কহিল, “আমাদের দেখে পালাচ্ছিলি ক্যান? বল গলাছিলা খসরুর আস্তানা কই?”
প্রচন্ড আতংকে সন্ত্রস্ত ফইটক্যার কন্ঠ হইতে কোনরুপ আওয়াজ বাহির হইতেছিল না। গলাছিলা খসরুর সহিত যে তাহার কোনরুপ লেনদেন নাই, ইহা কিছুতেই কণ্ঠ হইতে নির্গত হইল না। হেনকালে হতভাগা চাওয়ালা কোথা হইতে উদয় হইয়া, ফইটক্যা এবং উহার দলবল কিরুপে বালিকাদিগকে প্রত্যহ উত্যক্ত করিয়া থাকে তাহা সবিস্তারে বর্ণনা করিতে লাগিল।
বখাটেদের কার্যকলাপের বর্ণনা শুনিয়া জনৈক র্যাব সদস্য ফইটক্যাকে ক্রসফায়ারে ফেলিবার জন্য অনুরোধ করিতেছিল কিন্তু দুপূরে ইলিশ মাছ দিয়া ভাত খাওয়ার কারণে র্যাব দলনেতার আজ অতিশয় আমোদের মাঝে রহিয়াছেন। এই কারণে ফইটক্যা প্রাণে বাঁচিল ঠিকই কিন্তু রাস্তার মাঝে তাহাকে পঞ্চাশবার কানে ধরিয়া উঠবস করিতে হইবে এমন শাস্তি নির্ধারণ করা হইল।
ফইটক্যা কানে ধরিয়া উঠবোস করিতেছে, আর মনে মনে ঈশ্বরকে ডাকিতেছে যেন এই মুহুর্তে বিদ্যালয় ছুটি না হয় তাহা হইলে বালিকাদিগের সামনে তাহার ইজ্জতের ফালুদা হইয়া যাইবে। কিন্তু ঈশ্বর ফইটক্যার দিক হইতে আজ মুখ ফিরাইয়া রাখিয়াছেন। মাত্র পঁচিশবার উঠবোস শেষ হইয়াছে , হেনকালে বালিকা বিদ্যালয়ে ছুটির ঘন্টা বাজিয়া উঠিল।
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে জানুয়ারি, ২০১০ সন্ধ্যা ৬:৪৭