ছোট বেলায় শুনেছি রাজাকার একটা গালি! খুব গর্হিত কাজ করলে এই নামে আখ্যায়িত করা হয়! গলাকাটা রাজাকার গালিটাও বলতে শুনেছি! একটু বড় হয়ে বুঝতে পেরেছি এই গালিটার কারণ এবং উপলক্ষ্য! আরও ব্যাপক পরিসরে জেনেছি রাজাকাররা শুধু গলাই কাটেনি তারা নারী ধর্ষণ করেছে, মালামাল লুট করেছে, বাড়ি দখল করেছে ইত্যাদি সহ দুর্ধর্ষ সব অপরাধ করেছে। রাজাকার গালিটা এখনো নানা অঞ্চলে মুখে মুখে ব্যবহৃত হয়!
সেই রাজাকারদের বিচার শুরু
হয়েছে অপরাধ সংঘটিত হওয়ার ৪১ বছর পরে! ৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের পরে বঙ্গবন্ধু দালাল আইন করে বিচার শুরু করার উদ্যোগ নিলেও আরেক মুক্তিযোদ্ধা অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করে দালাল আইন বাতিল করে বিচার বন্ধ করে দেয়! কেন তিনি সেই সময় রাজাকারদের বাঁচিয়ে ছিলেন তা চিন্তার বিষয়! দেশের মানুষের প্রাণের দাবিকে পায়ে ঠেলে সেই সামরিক শাসক জিয়া কোটি কোটি মানুষের সাথে বেঈমানি করেছিলেন! একজন মানুষকে খুন করা হলে তার পরিবার আত্মীয় স্বজন প্রতিবেশিসহ সকল মানুষ খুনির শাস্তি হলে একটু শান্তি পান! এছাড়া তো আর কিছু চাওয়ারও থাকে না! যে চলে গেছে বা না ফেরার দেশে পাঠানো হয়েছে তাকে তো আর ফিরিয়ে দিতে পারেনা দুনিয়ার কোন শাসক বা কোন শক্তি! শুধু তার হত্যাকারীর শাস্তি বিধান হলেই সেই এততুকু সান্ত্বনা নিয়ে বেঁচে থাকতে হয় বাকি মানুষগুলোর। জেনারেল জিয়া সেই বিচার থামিয়ে মানবতা বিরোধী দ্বিতীয় অপরাধ করেছিলেন। যদি জিয়ারও বিচার করা যেত!!!
আজকে সেই মানবতা বিরোধী অপরাধীদের বিচার বন্ধ করার সংকল্পে মেতে উঠেছে নানা মহল! বিচার ব্যাহত করতে নানা স্বার্থান্বেষী মহল বিভিন্ন প্রকারে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে দেশে বিদেশে! দেশের কিছু গোলাম আযম- নিজামি-কাদের মোল্লা- সাকা- কাম্রুজ্জামান বান্ধবরা দেশে তো বটেই বিদেশে গুজব ছড়াচ্ছে যে বাংলাদেশে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের নামে গলা কাটা হচ্ছে! কি আজব! যারা একসময় লাখ লাখ মানুষের গলা কেটে জবাই করে রাস্তার পাশে ভাগাড় বানিয়ে ফেলে রেখেছে তাদের বিচার করাকেই সেই মানুষই আবার গলা কাটা নামে অভিহিত করছে।
১৯ জুলাই মার্কিন কংগ্রেসে মানবাধিকার কমিশনে বিখ্যাত ব্রিটিশ আইনজীবী টবি ক্যাডম্যান বিবৃতি দিয়েছেন- বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন ঘটেছে। তিনি দৃঢ় ভাবে ট্রাইব্যুনালের কার্যক্রম যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন করা উচিত কিনা তা নির্ধারণের জন্য নিরপেক্ষ তদন্ত চালানোর জন্য যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি আহবান জানিয়েছেন! তিনি আরও বলেছেন যে অব্যাহতভাবে মানবাধিকার লঙ্ঘনকারী সরকারের প্রতি সমর্থন রাখা হবে কিনা তা নতুন করে দাতা দেশগুলোর খতিয়ে দেখা উচিত।
সৌদি আরবের সবচেয়ে বেশি পঠিত দৈনিক পত্রিকা সৌদি গেজেটে ডঃ আলী আল ঘামদি নামক ব্যক্তি উপ- সম্পাদকীয় লিখেছেন- তিনি শেখ হাসিনাকে অনুরোধ করেছেন যে বাংলাদেশে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বর্তমানে বিচাররত অভিযুক্ত অপরাধীদের অবিলম্বে মুক্তি দেয়া হোক! তিনি আত্মপক্ষ সমর্থনের জন্য ৫ টি যুক্তি দেখিয়েছেন!
ইত্যাকার নানা জায়গায় নানাভাবে অপপ্রচার চালানোর জন্য দেশে তো বটেই বাইরের দেশেও একটা জনমত তৈরি হয়েই চলছে! কিন্তু দুঃখের বিষয় সরকার আগ্রহ নিয়ে বিচার শুরু করেছে কিন্তু সেটার যথাযথ বিশদ তথ্য তুলে ধরছে না! বিচার ব্যবস্থাতেও রেখে দিয়েছে নানা ধরণের রশদের অভাব! তাদের বোঝা উচিত অনেক বড় ষড়যন্ত্র মোকাবেলায় তাদেরকেই মুখ্য ভূমিকা রাখতে হবে! তাদের অন্তত এটা মনে রাখা উচিত- চোর ধরতে হলে নিজেকেও দৌড়াতে হয়!!!