আজকে সকালে দেখলাম টিএসসি'র সড়ক দ্বীপে প্রোগ্রাম করছে আদিবাসী ফোরামের নেতৃবৃন্দ। এক নেতার নেতার সাথে আলাপের সুবাদে জানলাম(আগে থেকেই কিছু কিছু জানা ছিল) পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তি চুক্তির অনেকটাই তাদের কাছে আজ ধোঁয়াশায় পরিণত হচ্ছে। অন্তত যেই আওয়ামী লীগ সরকার এই চুক্তি করেছিল সেই সরকারই আশাব্যাঞ্জক কিছু করে দেখাতে পারছে না।
আদিবাসী অধ্যুষিত পাহাড়ী অঞ্চলে স্থায়ী শান্তি স্থাপনের উদ্দেশ্যে ১৯৯৬এ সে সময়ের লীগ সরকার পার্বত্য শান্তি চুক্তি স্বাক্ষর করেছিল। তারপর এতগুলো বছরের মধ্যে চুক্তি বাস্তবায়ন থাক দূরের কথা এই সময়ের মধ্যে পার্বত্য চট্টগ্রামের জনসংহতি সমিতির সভাপতি সন্তু লারমার সাথে এ নিয়ে কোন কথাই বলেনি সরকার। চুক্তি বাস্তবায়নের বিষয়ে সরকারের উদাসীনতায় পার্বত্য অঞ্চলের মানুষ খুবই হতাশ। আবার কয়েকদিন আগেই আমরা দেখলাম প্রধানমন্ত্রী অনুষ্ঠান করে চুক্তি বাস্তবায়নের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন যেই অনুষ্ঠানে চুক্তি স্বাক্ষরকারী আদিবাসী নেতারা কেউ উপস্থিত নেই! দুঃখের বিষয় এই সব নানা হাঙ্গামা হলেও এখনো পর্যন্ত চুক্তি বাস্তবায়নে সরকারের কথা আর কাজের মধ্যে কোন মিল পাওয়া যায়নি। বর্তমান সেই লীগ সরকারের গত সাড়ে তিন বছরেও ভূমি কমিশন আইনের সংশোধন হয়নি একটুও। এই আইন শান্তি চুক্তির সঙ্গে সাংঘর্ষিক জেনেও কোন পদক্ষেপ নেয়া হয়নি। পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদের সাথে কোন আলাপ-আলোচনা ছাড়া ২০০১ সালে আইনটি প্রণীত হয়েছিল।
স্বভাবতই শান্তি চুক্তি বাস্তবায়নে সরকারের উদাসীনতায় ক্ষুব্ধ হয়ে উঠছেন আদিবাসীরা। আদিবাসীদের মতে পার্বত্য চট্টগ্রামে বাঙালিরা অন্যায়ভাবে সেখানে বাস করছে আর তাই এই ভূমি বিরোধ চলছে। কমিশনের চেয়ারম্যান বিরোধ নিস্পত্তি না করে জরিপ কার্যক্রম চালাচ্ছেন। তিনি বাঙালিদের পাহাড়েই রাখতে চাচ্ছেন। ফলে প্রধানমন্ত্রী পাহাড়ীদের জমি পাহাড়ীদের হাতে ছেড়ে দেয়ার যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, বাস্তবে হচ্ছে তার বিপরীত। সরকার একদিকে পাহাড়ের ভূমিতে উদ্বাস্তুদের পুনর্বাসনের কাজ করছে, অন্যদিকে ভূমি কমিশন আইন বলছে- সেখানে কোন উদ্বাস্তু নেই।
বহুদিন ধরে আদিবাসী নেতা ও বিশেষজ্ঞরা ভূমি কমিশন আইনের ২৩টি সংশোধনীর পক্ষে। সরকার মাত্র ১৩টি মেনেছে গত জানুয়ারিতে যার কার্যক্রম ঠায় দাঁড়িয়ে আছে। পার্বত্য অঞ্চলের সমতলের আধিবাসীর জন্য আলাদা ভূমি কমিশন গঠনের দাবি উঠেছে। পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের নাম পরিবর্তন করে 'পার্বত্য চট্রগ্রাম ও আদিবাসী বিষয়ক মন্ত্রণালয়' করার দাবি জানিয়েছে আদিবাসী সংগঠনগুলো। এভাবে নাম পরিবর্তন করলে কেবল সমতলের আদিবাসীরা মন্ত্রণালয়ের অর্ন্তভূক্ত হবে।
পার্বত্য শান্তি চুক্তি বাস্তবায়নে সরকারের উপর আস্থা রাখতে পারছেন না আদিবাসী নেতা ও সংশ্লিষ্ট বিষয়ে বিশেষজ্ঞরা। প্রধানমন্ত্রী ও অন্যান্য মন্ত্রী বিভিন্ন অনুষ্ঠানে পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়নে ইতিবাচক বক্তব্য রাখলেও এর বাস্তবায়ন সে অনুযায়ী হচ্ছে না। সরকার ঐতিহাসিক এই চুক্তি বাস্তবায়নে পার্বত্য ভূমি বিরোধ নিস্পত্তি কমিশন পুনর্গঠনে উদ্যোগ নিলেও এর কার্যক্রম একেবারেই মন্থর গতিতে এগুচ্ছে।
এছাড়া ভূমি বিরোধ নিস্পত্তি কমিশনের প্রধান বিচারপতি খাদেমুল ইসলাম চৌধুরীর উপরেও আস্থা নেই আদিবাসীদের। কারণ তিনি পার্বত্য চুক্তি লঙ্ঘন করে ভূমি বিরোধ নিস্পত্তির আগেই সেখানে জরিপ চালাচ্ছেন বলে তাদের অভিযোগ। তিনি যেসব বাঙালি অন্যায়ভাবে পাহাড়ে বাস করছে তাদের সেখানে থাকার ব্যবস্থা করে দিচ্ছেন। এটা পরিষ্কার যে চুক্তি বাস্তবায়নে সরকার ইতিবাচক হলে ভূমি কমিশন আইনের সংস্কার হোতো যা সংসদ করত। এটি সংশোধন না হওয়ায় কমিশনের চেয়ারম্যান এককভাবে সব ক্ষমতা ভোগ করছে। কমিশনের পাঁচ সদস্যের তিনজন পাহাড়ী। কোন বিষয়ে পাঁচ সদস্য একমত হতে ব্যর্থ হলে সেখানে চেয়ারম্যানের মতামতই সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার পাবার কথা। সেই জন্য সমস্যা থেকেই যাচ্ছে।