আমি একজন কট্টর আওয়ামী সমর্থক...। সব সময় লীগের স্বপক্ষে যুক্তি দাড় করেছি ।। লীগের সমালোচনার বিপরীতে ...। আজকে মুসা বিন শমসের সম্পর্কে খোঁজা খুঁজি করতে গিয়ে পুরাই সাকা হয়ে গেলাম.........। এ বিষয়ে লীগের স্বপক্ষে যুক্তি দাড় করানোর মতো কোন ভাষা আমার নাই ।। বরং ক্ষিপ্ত হয়ে কিছুক্ষণ চুপ-চাপ বসে থেকে, কিছুটা দীর্ঘ একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে লিখতে বসলাম।।
কুখ্যাত রাজাকার মুসা বিন শমসের ওরফে নুলা মুসা ..ওয়া...র ক্রাইমস ফ্যাক্টস ফাইন্ডিং কমিটির তালিকায় ফরিদপুর জেলার প্রধান ১৩ জন রাজাকারের মধ্যে তার নাম আছে শুরুর দিকেই।এই লাহিড়ীপাড়া,ওয়ারলেস পাড়া,শোভারামপুর সহ বিভিন্ন এলাকার নির্যাতিত মানুষের মুখে মুখে আজও সেই নির্যাতনের গল্প আর মুসার বিভিষীকাময় সে গল্প রূপকথার গল্পকেও হার মানায় তার সেই সময়ের কর্মকান্ডে । ১৯৭১ সালের রাজাকার নুলা মুসা আর বর্তমানে অসীম বিত্ত আর বৈভবের মালিক ডক্টর প্রিন্স মুসা ।
ডক্টর এম এ হাসানের ১৯১ জন পাকিস্তানী যুদ্ধপরাধী বইটিতে সেসময় নুলা মুসার প্রত্যক্ষ মদদ সম্পর্কে জানা যায় ।মুসার প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় শহরের চন্দ্রকান্ত নাথ, গৌরগোপাল আংঙ্গিনার বিজয় মজুমদার, কবির আহমেদ চৌধুরী, শেখ মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ দুলাল, অপরেশ সাহা, ভোম্বল সাহা, বৈদ্যনাথ সাহাকে খুন করে এই পাকি হানাদার বাহিনী এই নুলা মুসার সহযোগিতায় ।
নিত্যানন্দ কবিরাজ, সুখেন্দু রায়,মুক্তিযোদ্ধা আজাদ সিদ্দীকি অহিভূষন পোদ্দার, ধীরেন সাহা, চন্দ্রকান্ত পোদ্দার সহ আরো অনেক নিরীহ মানুষের বাসায় আজকের ডক্টর প্রিন্স মুসা বিন শমশের আগুন ধরিয়ে দেয় ।মুসা বিন শমশের ১৯৭১ সালে পাকিস্তানী হানাদার আকরাম কোরায়াশী ও আরো সৈন্যকে নিয়ে ফরিদপুরের মহিম স্কুল সংলগ্ন ধর্মশালায় ঢুকে তার কেয়ারটেকার কেষ্টমন্ডলকে হত্যা করে, নিরীহ কেষ্টমন্ডলের চার কন্যা ননী,বেলী,সোহাগী ও লতাকে ধর্ষনের পর ধর্ষন করে রক্তাক্ত অবস্থায় পথে ফেলে যায় ।পরবর্তীতে ওই চার বোন আর তাঁদের মা মাখন বালার স্থান হয় ফরিদপুরের পতিতা পল্লীতে । আজ স্বাধীনতার এত বছর পরে বুড়ো বটগাছের মতন বেঁচে আছেন আমাদের ওইসব জননীরা নিভৃতে আর নিরবে । ৪০ বছরের অশ্রু গালে আর চোখে নিয়ে তারা বেঁচে থাকবেন নিঃশ্ব হয়ে । এই-নিয়তি ।
আর মুসা বর্তমান বাস করছেন গুলশানে অবস্থিত তার প্রাসাদোপম বাড়িতে।জানিনা টুঙ্গি পাড়া থেকে ফরিদপুর শহরের নগরকান্দা কতদূর । তবে বিভিন্ন মাধ্যমে শেখ সেলিমের জানার কথা এই নুলা মুসা রাজাকারের কথা। অথচ শেখ সেলিম তার বড় ছেলে শেখ ফজলে ফাহিমের বিয়ে যখন নুলা মুসার মেয়ে ন্যান্সির সাথে দেন তখন গণতন্ত্রের মানসকন্যা , বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা কোথায় ছিলেন?জানি না...। এই বিয়ে যে প্রেমের বিয়ে তাওতো নয় । সম্পূর্ন এরেঞ্জন্ড বিয়ে । তাহলে “প্রেমে পড়লে বাপের কি করবার আছে” এই যুক্তিও খাটে না । এই বিয়ের উকিল বাপ ছিলো আমাদের চির নবীন, ৮০ বছরের দাদাভাই লেফটেনেন্ট জেনারেল হুসেইন মোহাম্মদ এরশাদ ওরফে লুইচ্চা দাদাভাই। কি,চমকে গেলেন ?
যেই লোক ১৯৭১ সালে আমাদের বোন-মা কে ধর্ষন করে , উলংগ করে, আমাদের বাপ-চাচা-ভাইদের বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে মেরে ফেলেছে সে কি করে এই দেশে দিব্যি বেঁচে থাকে ? কি করে এত ধন-সম্পদ, ক্ষমতার অধিকারী হয়? এই লোকটিই ঠিক ৪০ বছর আগে মেয়েদের ধরে ধরে ধর্ষন করত আর পাকি হানাদারদের কাছে দিয়ে আসত । যেই লোকটি এত অপরাধ করেছে তার মেয়েরই সাথে আবার বিয়ে হচ্ছে তথাকথিত মুক্তিযুদ্ধের পতাকা বাহী শেখ সেলিমের ছেলের ।কি করে তা সম্ভব হয় ?অর্থ দিয়ে আওয়ামীলীগ কেনা যায়, বিএনপি কেনা যায়, লেবার পার্টি কেনা যায়,লিবারেল পার্টি কেনা যায়, ডেমোক্রেট কেনা যায় । আপনারা জানুন অর্থ থাকলেই কি করে রাজাকারের তালিকা থেকে শেখ সেলিমের বেয়াই হয়ে পার পাওয়া যায় ।
এই বাক-বাকুম করা সরকার কি নুলা মুসার একটা বাল ছেড়ার মত ক্ষমতা রাখে ? নাকি টাকার কাছে বিক্রি হয়ে গেছে সব মনুষ্যত্ব? কেউ কি আছে শুধু একটি বার রাস্তায় দাঁড়িয়ে চিৎকার করে বলবে , “নুলা মুসা খাঙ্কির পোলা ! ! শুয়োরের বাচ্চা , বাইর হ ঘর থেইকা !”
জানি পারবেন না ! আমার মতই আপনাদের মুখ ফসকে বের হয়ে যাবে, “বালের দুনিয়া” .!.
সূত্রঃ
১. দৈনিক জনকন্ঠে (তুই রাজাকার)
২. দৈনিক মানবজমিন, ২০ ডিসেম্বর ২০১০
৩. ১৯১ পাকিস্তানী যুদ্ধপরাধী(এম এ হাসান)
বিশেষ কৃতজ্ঞতায়ঃ নিঝুম মজুমদার এর "এপিটাফ" ব্লগ .!.