(Short dress fashion and change in US mentality)
----- ড. রমিত আজাদ
১৯৮৯ সালের আগস্ট মাসের কোন এক দিনে উচ্চশিক্ষার উদ্দেশ্য পাড়ি জমিয়েছিলাম ইউরোপে। মহাশক্তিধর দেশের দৃষ্টিনন্দন মৃত্তিকা ও পট্টনের অত্যাধুনিকতায় প্রতি মুহূর্তেই ধাঁধিয়ে ধাঁধিয়ে উঠছিলো আমার এই প্রাচ্যদেশীয় রক্ষণশীল পশ্চাদপদ দুটি কনীনিকা। এত এত নান্দনিকতার মধ্যে যে কয়েকটি জিনিস দৃষ্টিকটু লাগছিলো তার মধ্যে দুটি হলো মেয়েদের স্বল্পবসন আর নারী-পুরুষের প্রকাশ্য আলিঙ্গন-চুম্বন দৃশ্য। প্রথম প্রথম এগুলো দেখে নিজের কাছেই নিজে লজ্জা পেয়ে যেতাম, তারপর একসময় চোখ সয়ে এলো। তবে মাঝে মাঝে কয়েকটা প্রশ্ন মনের কোনে উঁকি দিত, "পুরুষরা স্বাভাবিক পোষাকেই চলাফেরা করে, অথচ শুধু মেয়েরাই কেন এত সংক্ষিপ্ত অথবা আটসাঁট পোষাকে চলে?, "এরকম শর্ট ড্রেসের প্রচলন কি তাদের আবহমান কালের ঐতিহ্য, নাকি পরবর্তিতে তার প্রচলন হয়েছে? যদি পরবর্তিতে তা হয়ে থাকে, তবে তা কবে থেকে শুরু হলো? কেন শুরু হলো?"
তখন তো আর ইন্টারনেট-এর মত এত উপকারী বন্ধু ছিলোনা যে ক্লিক করলেই সব তথ্য পেয়ে যাবো। ভরসা ছিলো পত্র-পত্রিকা, সেখানে যা ছাপা হবে তাই জানতে পারবো, যা ছাপা হবেনা তা যদি জানতে চাই তাহলে হয় অপেক্ষা নয়তো গ্রন্থাগারে গিয়ে খাটাখাটুনি করা। তাই দ্রুত প্রশ্ন দুটির উত্তর পাইনি। তবে একটা বিষয় মনের আকাশে মাঝে মাঝে ঝিলিক দিতো। বিটিভির কল্যাণে মার্কিনী যে ফিল্মগুলো পর্দায় দেখতে পেতাম সেখানে তো নারীদের শর্ট ড্রেসে দেখিনাই, বরং খুব লম্বা ও ঢোলা ড্রেস এমনকি জামার হাতাও ছিলো ফুল স্লিভ। তার মানে এই সেদিনও সেখানকার নারীরা শালীন পোষাক পরিধান করতো। তাহলে পোষাক থেকে কাপড়ের পরিমান কমতে থাকে ধীরে ধীরে, সেই সাথে খুব সম্ভবত আরো অনেক কিছুই কমতে থাকে।
১৯৭০ সালে সংঘটিত রিচার্ড নিক্সনের 'ওয়াটারগেট কেলেংকারী' তো একসময় মানুষের মুখে মুখে ফিরতো। চাকুরীপ্রার্থীরা ইন্টারভিউতে প্রা্যশ্ঃই ঐ বিষয়ে প্রশ্নের মুখোমুখি হতেন। বেচারা নিক্সনের রাজনৈতিক ক্যারিয়ারটাই ধ্বসে গিয়েছিলো এক ধাক্কায়। তবে মার্কিনীরা এটা প্রমাণ করতে পেরেছিলো যে, নৈতিকতার প্রশ্নে তারা ছাড় দেয়না। একই কথা বলা যায় Gary Warren Hart-এর ক্ষেত্রে, আরেকটু হলেই ১৯৮৮ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রপতি হয়ে যাচ্ছিলেন তিনি। কিন্তু বেচারা! হঠাৎ মিডিয়ায় চলে এলো Donna Rice-এর সাথে উনার রোমান্টিক এ্যাফেয়ারের গোপন কাহিনী। ব্যাস সেখানেই সমাপ্তি রাষ্ট্রপতি হওয়ার বাসনা। মার্কিনীরা আরো একবার প্রমাণ করলো, নৈতিকতার প্রশ্নে তারা ছাড় দেয়না।
কিন্তু ১৮০ ডিগ্রী উল্টা ঘটনা দেখলাম যখন সুদর্শন রাষ্ট্রপতি বিল ক্লিনটন-এর বিরূদ্ধে এক্সট্রামেরিটাল এ্যাফেয়ার থাকার প্রমাণ পাওয়া সত্ত্বেও ইমপিচমেন্ট আনা সম্ভব হলোনা। স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন জাগলো, "মার্কিনীরা কি নৈতিকতার প্রশ্নে ছাড় দিতে শুরু করেছে?"
এই উন্নতি/অবনতি তাদের সমাজে ঘটলো কেন? এটা কি প্রাকৃতিক স্বাভাবিকতা? নাকি এক গভীর ষড়যন্ত্র?
আমার সৌভাগ্য, দর্শনের একজন খুব ভালো একজন অধ্যাপক পেয়েছিলাম বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে। মার্কিন সমাজের মানসিকতার পরিবর্তন, ক্লিনটন স্ক্যান্ডাল ও ইমপিচমেন্টের ব্যর্থতার উপর তিনি আমাদের কিছুটা আলো দিয়েছিলেন, তখন বিষয়টি সম্পর্কে আমার ধারনা অনেকটাই স্বচ্ছ হয়ে এসেছিলো।
পরবর্তি পর্বে এই বিষয়ে লিখবো।
(ডোনাল্ড ট্রাম্প-এর বিজয় আমি কামনা করিনি, তবে তার বিজয়ে মর্মাহত হলেও হতবাক হইনি)
নীচে টেনিস খেলো্যাড়দের সেকাল ও একালের দুটি ছবি দিলাম। ছবিদুটি সেকাল ও একালের কথা বলছে।
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই নভেম্বর, ২০১৬ রাত ৮:০৯