আমি গাড়ী চালাচ্ছি ২০০১ সাল থেকে, প্রায় ১৬ বছর ধরে। প্রতিদিন অনেক দূরত্ব হয়তো চালানো হয় না। কিন্তু এই ষোল বছরে কম করে হলেও ৭০ হাজার কিলোমিটার দূরত্ব গাড়ী চালিয়েছি।
আল্লাহের কাছে হাজার শুকড়িয়া, এই ষোল বছরে মেরেছি মাত্র একজন কে। মতলবের রাস্তায় চাঁদপুর যাবার সময় এক মোটাসোটা উনি হেলেদুলে রাস্তা পার হচ্ছিলো। আমি প্রায় ৭০ কিমি গতিতে যাচ্ছিলাম, তাই সামনে দেখে ব্রেক চেপেও তাকে বাঁচাতে পারি নাই। স্পট ডেথ হয়েছিলো। এটাও প্রায় ছয় বছর আগের ঘটনা। রাস্তা চিকন হওয়ায়, পিছনে গাড়ী থাকায়, ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও দাঁড়াতে পারিনাই! ফেরী ধরার তাড়া থাকায় গাড়ি চালিয়ে চলে গেলাম (নাকি পালিয়ে গেলাম)?? ভয় পাবেন না উনি ছিলেন, মোটাসোটা এক হাঁস।
এছাড়া আরেকবার গ্রামের বাড়ি থেকে ঢাকায় আসার সময় রাস্তায় এক ছোট ৬/৮ বছরের বাচ্চাকে ধাক্কা দিয়েছিলাম। বাচ্চার কোলে আরেক বাচ্চা ছিলো। গাড়ী আস্তে চালাচ্ছিলাম, বাচ্চাকে কোলে নিয়ে রাস্তার একপাশে দাঁড়িয়ে ছিলো বড় বাচ্চাটা। যেই গাড়ী কাছাকাছি গিয়েছে, সতর্ক করার জন্য হর্ন দেয়ার পর হঠাৎ দৌড়ে রাস্তা পার হতে গিয়ে গাড়ীর সাথে ধাক্কা লেগে রাস্তায় পরে গেলো। খুব ভয় পেয়েছিলাম, গাড়ী থামিয়ে নেমে ওদের নিয়ে পাশের বাজারে ডিসপেনসারিতে নিয়ে গিয়ে দেখালাম। ব্যথা পায় নি কিন্তু খুব ভয় পেয়েছে। মা খবর পেয়ে ছুটে এসে আগেই মারলো বড় বাচ্চাটাকে থাপ্পড়, কারন অনেকবার ছোটটাকে নিয়ে রাস্তায় আস্তে বাড়ন, তারপরেও কেন এলো?
এই যাত্রায়ও বড় কোন দূর্ঘটনার হাত থেকে বেঁচে গেলাম। এই দুইটা ঘটনা ছাড়া এত বছরে ছোট ছোট কিছু ঘটনা ঘটিয়েছি। যেমন সকালে অফিসে আসার সময় গার্মেন্টস বাহিনীর মাঝে পরে হর্ন দিতে বাধ্য হয়ে আস্তে আস্তে এগোচ্ছি, ধারাম করে সাইড ভিউ মিরর দিয়ে কাউকে ধাক্কা দিয়ে ফেলেছি! এধরনের ঘটনা বেশ কয়েকবার ঘটিয়েছি।
আমি সবসময় চেষ্টা করি হর্ন কম দিয়ে গাড়ী চালাতে। আর এত বছরে কয়বার হার্ড ব্রেক কশেছি? গুনে বলে দিতে পারবো। আমি সাবধানেই গাড়ি চালাই তারপরেও আমার গাড়িতে পিছন থেকে ধাক্কা দিয়ে টেক্সি ড্রাইভারে পা ধরা কিম্বা বাস আমার গাড়ীকে পাশ থেকে ধাক্কা দিয়ে, ড্রাইভারের হেল্পারকে মারা (কেন বলেনি বায়ে প্লাস্টিক আছে?)। এধরনের ছোট খাটো দূর্ঘটনা ঘটেই গেছে। রাস্তায় চলতে গেলে আমাদের দেশে এটা খুবই স্বাভাবিক ঘটনা। এত মানুষ আর গাড়ী চলে এই ছোট্ট পরিসরে, যে দূর্ঘটনা না ঘটাই অস্বাভাবিক!!!
কিছু বিষয়ে একটু নজর দিলে ভালো উপকার পেতে পারি...
১) ড্রাইভিং লাইসেন্স সঠিক ভাবে দিতে হবে। টাকার বিনিময়ে লাইসেন্স দেয়া বন্ধ করতেই হবে।
২) গাড়ীর ফিটনেস নিশ্চিত করতে হবে। গাড়ীর মালিকদের সচেতন এবং উৎসাহী করতে হবে।
৩)ড্রাইভারদের কর্ম আওয়ার কোন ভাবেই ১০ থেকে ১২ ঘন্টার বেশী হতে পারবে না। এ ব্যপারে মালিকদেরকেই সচেতন হতে হবে।
৪) রাস্তার শার্প বাক গুলোতে স্পীড ব্রেকার দিতে হবে। যদি সম্ভবহয় বাক গুলোকে যথাযথ সম্ভব সোজা করে দিতে হবে।
৫) হাইওয়ের পাশে কোন ভাবেই বাজার বসতে দেয়া যাবে না। বাজার সাইড রোড করে কমপক্ষে ১০০ মিটার দূরে নিয়ে যেতে হবে।
৬) গাড়ী সবচেয়ে বেশী এক্সিডেন্ট হয় ওভারটেকিং করার সময়। একই রুটের গাড়ী গুলোকে এক কোম্পানিভুক্ত করতে পারলে অযথা আগে যাওয়ার চেষ্টা কমে যেত।
৭) নির্দিষ্ট স্থান ছাড়া রাস্তা পার হওয়া যাবে না। এটা বন্ধ করতে আইন করে লাভ নেই। সচেতনতা বাড়াতে হবে। পাঠ্য বইয়ে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে প্রচার বাড়াতে হবে।
৮) একই রাস্তায় স্পোর্টস কার আর ঠেলাগাড়ি চলতে দেয়া যাবে না। স্লো ভেহিকাল হাইওয়েতে চলতে দেয়া যাবে না।
যা কিছু করা হোক না কেন! রাস্তায় চলতে গেলে দূর্ঘটনা হবেই। তাই এটা নিশ্চিত করতে হবে, প্রত্যেক গাড়ীর এবং যাত্রীদের যথাযথ ইন্সুরেন্স করা থাকতে হবে। এতে হয়তো দূর্ঘটনা থামানো যাবে না কিন্তু দূর্ঘটনা পরবর্তী অবস্থা সামাল দেয়ায় সাহায্য করবে।
রাস্তায় আমাদের চলতেই হবে। ছোট বড় ঘটনা-দূর্ঘটনা ঘটতেই থাকবে। আমরা চেষ্টা করবো সাবধানে সচেতন ভাবে রাস্তায় চলতে, আর অন্যকে সাবধানে চলতে উৎসাহিত করতে।
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ সকাল ১১:৩৪