আমি অনেকটা সমগ্র বাংলাদেশ ৫ টন টাইপের। আমার জন্ম চাঁদপুরে কিন্তু আমার দাদা বাড়ী শরীয়তপুর, আমি স্কুল-কলেজ পাশ করেছি কুমিল্লা থেকে আর ঘর সংসার চাকুরী ঢাকায়।
আমার জীবনের শ্রেষ্ঠ সময় হচ্ছে ৯০-৯৪ সাল। ঐ সময়টা আমরা কুমিল্লায় ছিলাম। আমরা ঠাকুর পাড়ার কাছেই ছিলাম। সিভিল সার্জন এর বাসভবনে আর আমাদের বাসার পাশেই ছিলো অভয় আশ্রম। আমার সবচেয়ে প্রিয় জায়গাই ছিলো, শীতল ভান্ডার, প্রতিদিন বিকেল বেলা সাইকেল চালিয়ে যেতাম গরম রসমালাই খাবো বলে। কখনো অস্বস্তিবোধ করিনিতো?
আমর জন্ম চাঁদপুরে মুন্সেফ কোয়ার্টারে এর পর মুখার্জি ঘাট, পালপাড়া আবার মুখার্জি ঘাটে থেকেছি। প্রায় সবখানেই আমাদের বাসার আশে পাশেই ছিলো হিন্দু বাড়ী। প্রতিদিনই মাগরিব এর আযান শুনতাম, আবার প্রায় কাছাকাছি সময় উলু ধ্বনি। কখনো বিরক্ত হইনি বা মনে হয়নি অন্য কিছু।
আব্বু ডাক্তার, আর তার রুগীদের মধ্যে অনেকেই ছিলেন হিন্দু। কখনোতো দেখিনি আব্বু রুগীদের, কে হিন্দু? আর কে মুসলমান চিন্তা করছেন চিকিৎসা করার সময়!
আমাদের গ্রামের এক মাত্র হিন্দু পরিবার শংকরদাদের পরিবার। বাড়ীতে গিয়েছি, আর তাদের ঘরে যাইনি!মিষ্টি খেতে এমন ইতিহাস নেই। আমার ছেলেদের নিয়ে বাজারে গেলেই ঘুরে ফিরে শংকরদাদের ঘরে গিয়ে গরম মিষ্টি খাইয়ে আনি এখন। একবারের জন্যেও তো মনে হয় না, শংকরদা হিন্দু? আর মিষ্টি দেবার সময় উনিও তো কখনো ভাবে না আমরা মুসলমান!
চাঁদপুর আর কুমিল্লায় আমার বন্ধুদের মাঝে কিরিটি, সুমন, ওবেদ, অলকরা ছিলো। কই কখনো ওদের বাসায় গিয়েতো নিজেকে ভিন্ন মনে হয় নি!! ওদেরকেও আমাদের চেয়ে ভিন্ন মনে হয় নি। আমাদের একটাই পরিচয় ছিলো আমরা বাংলাদেশী। আজ এত বছরপর হঠাৎ করে বাংলাদেশী থেকে শুধুই মুসলমান হয়ে গেলাম কিভাবে?
আমার বউ কলেজে পড়ায়, ওকেওতো দেখিনি ছাত্র- হিন্দু, মুসলমান নাকি বৌদ্ধ তা বিচার করে প্রিয় ছাত্রের খাতায় নাম লিখতে!!
আজ আমরা সবাই নিজেদের মাঝে এত বিভাজন করতে শিখলাম কিভাবে?
ট্যাংক আর ব্যাংক এর শহর কুমিল্লা, চাঁদপুর, শরীয়তপুর আজ আর আগের মতো নাই। ঠিক তেমনি আমরাও আর আগের মতো নাই!
ভয় হয় আমরা অন্তত কোনরকমে মিলে মিশে পার করছি আমাদের জীবন, আমাদের পরের প্রজন্ম কি পারবে? মিলে মিশে জীবন পার করতে ? মুসলমান বা হিন্দু না হয়ে, মানুষ হিসেবে বেচে থাকতে??
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই নভেম্বর, ২০১৬ দুপুর ২:৪৩