ধরা যাক এক ব্যক্তির নাম নন্দ ঘোষ, বিদেশ ফেরত প্রবাসী ।
যত দোষ ওনাকেই দেব, তাই এই নাম নিলাম।
তো নন্দ ঘোষ মহাশয় ঠিক করলেন তিনি কোনো উপদেশ মানবেন না।
মানে ওনার ২২ তারিখে না বেরোলেও চলত, কিন্তু উনি বেরোবেন।
উনি কিন্তু জানেন না যে ওনার শরীরে ভাইরাসটি আছে! তবে উনি আপাতভাবে সুস্থই আছেন।
তো উনি বেরোলেন। বেরিয়ে চায়ের দোকানে গেলেন। এক কাচের গ্লাসে চা খেলেন। দোকানের কর্মচারী ছেলেটা চায়ের এঁটো গ্লাসটা একটা প্লাস্টিকের গামলার জলে ডুবিয়ে, দুবার নেড়ে আবার রেখে দিল ট্রে তে।
অন্য কাস্টমার দের এঁটো গ্লাসও ওই গামলার জলে ডুবিয়ে তুলে রাখল।
অন্য পাঁচটা কাস্টমার নিজেরা বলাবলি করছিল যে এখনো তো সাতটা বাজে নি, চা খেয়েই ঘরে ঢুকে যাব। আজ আর বেরবো না।
নন্দ বাবু মনে মনে ভাবলেন একটু খবরের কাগজ পড়া যাক। তো খবরের কাগজ মেলে ধরে পড়ছেন, এমন সময় এলো হাঁচি। হ্যাঁচ্চোওও..।
দিলেন হেঁচে কাগজের ভাঁজে। ভালোই হল, কারোর গায়ে হাঁচেন নি ভাগ্যিস!
ও ঘোষ বাবু, একটু পেপারটা দেখি। এক ভদ্রলোক পেপারটা চেয়ে নিলেন নন্দ বাবুর থেকে। উনিও পেপার টা একটু দেখে নিয়েই ঘরে ঢুকে যাবেন।
কিন্তু নন্দবাবু যাবেন বাজারে।
তো বাজারে গেলেন। একটু আধটু কাশি হচ্ছে। মুখে রুমাল চাপা দিয়ে কাশলেন। বাজার করতে করতে ব্যাগটা বেশ ভারী হয়েছে। তো রুমাল দিয়ে ব্যাগের হাতলটা ধরছেন নন্দ বাবু। হাতে ভারটা কম লাগছে।
"ওহে ভাই, ব্যাগটা একটু তোমার কাছে রাখো তো। আমি একটু দাড়িটা কেটে নি সেলুন থেকে।"
সব্জী ওয়ালা নন্দ বাবুর হাত থেকে ব্যাগের হাতলটা ধরে দোকানের একপাশে রাখল।
পরক্ষণেই এক খরিদ্দার এক কিলো পটল চাইল। বেছে বেছে ভালো ভালো পটল তুলে দিল ওই খরিদ্দারকে।
এদিকে নন্দবাবু দাড়ি কেটে, বাজার ঘরে নাবিয়ে, বন্ধুর বাড়ি গেলেন তাস খেলতে। বাইরে রোদ বাড়ছে।
কী? কিছু বুঝলেন? কতজনকে ভাইরাসটা উপহার দিলেন নন্দবাবু? মাত্র কয়েক ঘন্টার মধ্যে একজন নন্দবাবু কতজনকে ইনফেকটেড করতে পারেন, সে ব্যাপারে আশা করি কিঞ্চিৎ ধারণা হল। একশো জনকে হলেও আশ্চর্য হব না। আর সারাদিন বাইরে ঘুরলে?
নিন, গল্প অনেক হল, এবার অঙ্কটা করা যাক।
নন্দবাবু ২২ তারিখ একা ইনফেক্টেড করলেন, ধরা যাক পাঁচজনকে।
হ্যাঁ, মাত্র পাঁচজনকে।
পরের দিন, ২৩ তারিখ, ওই পাঁচজন আবার সংক্রমণ উপহার দিল মাত্র পাঁচজনকে। তাহলে ২৩ তারিখের শেষে, শুধুমাত্র নন্দঘোষের দোষে মোট ইনফেকটেড মানুষের সংখ্যা দাঁড়াল কত?
1+5+(5×5)=31
২৪ তারিখ। না, আজ থেকে নন্দবাবু বাদ। উনি ওনার কাজ করে দিয়েছেন। এখন ওনার শরীরে ভাইরাসটির লক্ষ্মণ স্পষ্ট। উনি চেক আপে গেছেন। রোগ ধরা পড়বে। চিকিৎসা হবে। মোটকথা ধরে নিন উনি আর কাউকে ইনফেকটেড করছেন না।
কিন্তু, বাকি তিরিশ জন রইলেন। যারা আরো পাঁচ দিন পাঁচজন করে মানুষকে ইনফেক্টেড করবেন।
তাহলে আসুন, এক ঝলক দেখে নি।
২৪ তারিখ : 30×5=150
২৫ তারিখ : 150×5=750
২৬ তারিখ : 750×5= 3750
২৭ তারিখ : 3750×5=18750
২৮ তারিখ : 18750×5=93750
অর্থাৎ একসপ্তাহ পরে, শনিবার, শুধুমাত্র নন্দঘোষের দোষে আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়াবে প্রায় এক লক্ষ।
আর দু সপ্তাহ পরে??
আর যদি একশো টা নন্দ বাবু রাস্তায় বার হয়???
কিম্বা যদি এক হাজার নন্দবাবু????
কিম্বা, কিম্বা.....
আশাকরি অঙ্কটা বুঝেছেন। একে বলে Power of Compounding.
রসায়নে নিউক্লিয়ার রিয়াকশন এ একে Chain Reaction বলা হয়।
পরমাণু বোমার এত শক্তি এই চেন রিয়াকশন এর জন্যই।
এইভাবে বেড়ে চলা সংখ্যা বা মাত্রার বৃদ্ধিকে Exponential Progression বলে।
সেইজন্যই এই লকডাউনটা জরুরী!
ভাইরাস টা বারো ঘন্টা বাঁচে নাকি তিনদিন, সেটা বিষয় না।
এতদিন রাষ্ট্র ডেকেছে জনগনকে আসুন.......!
আজ রাষ্ট্রকে ডাকছি আসুন, আমরা সবাই মিলে চেইন টা ভেঙে দিই। দেশ বাঁচুক, আপনি বাঁচুন, আমরা বাঁচি।
রাজনীতি করার জন্য তো বাকী জীবন টা রইল!
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে মার্চ, ২০২০ সকাল ৮:৪৯