বাংলাদেশে ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ মধ্যরাত থেকে শুরু করে নয় মাস ধরে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী এবং তাদের এদেশীয় দোসররা যে গণহত্যা চালিয়েছে, তা আজো আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পায়নি। আর এর কারণ বাংলাদেশের স্বাধীনতাবিরোধী গোষ্ঠীর সহাতায় আন্তর্জাতিক নেতিবাচক প্রচারণা। কিন্তু বাস্তবে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানিদের চালানো গণহত্যাই সবচেয়ে বড় গণহত্যা।
ঘাতক দালাল নির্মুল কমিটির নির্বাহী সভাপতি শাহরিয়ার কবিরের মতে, ‘এটা আমাদের জন্য দুর্ভাগ্য যে বাংলাদেশে নয় মাসে ৩০ লাখ বাঙালিকে হত্যা করা হয়েছে, অথচ তা গণহত্যা হিসেবে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পায়নি। এজন্য তিনি স্বাধীনতাবিরোধীদের নেতিবাক প্রচারণাকেই দায়ী করেন সবচেয়ে বেশি।’
আর এই প্রচাণার অংশ হিসেবে আল-জাজিরা টেলিভিশন তাদের এক প্রতিবেদনে বলেছে, ‘বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে মৃতের সংখ্যা কোনোভাবেই তিন লাখের বেশি নয়।’
পাকিস্তানের সাবেক রাষ্ট্রপতি জেনারেল পারভেজ মোশাররফ বাংলাদেশে এসে ১৯৭১-এ তাদের ‘বাড়াবাড়ি’র জন্যে দুঃখ প্রকাশ করেছিলেন ঠিকই কিন্তু গণহত্যার জন্যে ক্ষমা চাননি। আর পাকিস্তানের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিনা রব্বানী খাঁর বাংলাদেশে এসে ১৯৭১ সালের বিষয়ে বলেছিলেন অতীতের বিষয় ভুলে যেতে।
আন্তর্জাতিকভাবে ৫টি গণহত্যাকে স্বীকৃতি দেয়া হয়। এরমধ্যে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ ছয় বছরে কমপক্ষে পাঁচ কোটি মানুষ নিহত হন। ত্রয়োদশ শতকে মঙ্গোলদের যুদ্ধে নিহতের সংখ্যা ছিল প্রায় চার কোটি। প্রথম মহাযুদ্ধে নিহতের সংখ্যা ছিল প্রায় ৩০ লাখ। ভিয়েতনাম যুদ্ধে নিহতের সংখ্যা ৩৬ লাখ।
আর বাংলাদেশে ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধে মাত্র নয় মাসে নিহত হয়েছিল ৩০ লাখ বাঙালি। স্বাধীনতাবিরোধীরা তাদের অপপ্রচারের অংশ হিসেবে নিহতের সংখ্যাকে ভুল বলে প্রচারের চেষ্টা চালাচ্ছে দীর্ঘদিন ধরেই। তারা এখনো নানাভাবে সেই প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছে।
১৯৭১ সালের বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়নের সংবাদসংস্থা তাস বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলের কয়েকটি জেলায় তদন্ত করে মুক্তিযুদ্ধে নিহতের সংখ্যা ৩০ লাখ বলে রিপোর্ট দেয়। বিখ্যাত বৃটিশ সাংবাদিক সায়মন ড্রিং-এর মতে,২৫ মার্চ তিনি ঢাকায় অবস্থান করে যে গণহত্যার চিত্র দেখেছিলেন এবং পরবর্তী নয় মাস যদি সারা বাংলাদেশে তা একইভাবে অব্যাহত থাকে, তাহলে নিহতের সংখ্যা সন্দেহাতীতভাবে ৩০ লাখেরও অধিক হবে।
আর তারই সত্যতা পাওয়া যায় মুক্তিযুদ্ধের শুরুতেই নিউইয়র্ক টাইমস শিরোনামে ‘রক্তই যদি কোনো জাতির স্বাধীনতা অর্জনের মূল্য বলে বিবেচিত হয়, তবে বাংলাদেশ ইতিমধ্যেই অনেক বেশি মূল্য দিয়ে দিয়েছে।’
শাহরিয়ার কবির বলেন, ‘বিশ্বের আরো ১০০টির মতো দেশে এপর্যন্ত গণহত্যা হলেও তার স্বীকৃতি নেই। ৯০টি দেশে গণহত্যার বিচারই হয়নি। আমরা যদিও বিচারের কাজ নিজেরাই শুরু করেছি। আমরা তাই ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চকে আন্তর্জাতিক গণহত্যা দিবসের স্বীকৃতি দেয়ার জন্য ১০ বছর ধরে কাজ করছি প্রচারণা চালাচ্ছি। তবে জাতিসংঘের কাছে বিষয়টি সরকারকেই তুলে ধরতে হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘বাংলাদেশের গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির পাশাপাশি সবদেশের গণহত্যার স্বীকৃতি চাই আমরা।আর তা নাহলে গণহত্যা থামবে না। বিচার হবে না।’
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে মার্চ, ২০১৫ বিকাল ৪:৪৭