লম্বা একটা ঘুম দিয়ে ১০ টার দিকে বেরিয়ে পড়লাম সবাই। মেজাজ বেশ ফুরফুরে। খাচ্ছি-দাচ্ছি, ঘুরছি, আর যাযাবর জীবন কেমন হয়, যার টানে কিছু মানুষ হয় বিবাগী, তা বোঝার চেষ্টা করছি। অলিম্পিক ন্যাশনাল পার্কে প্রথমে যাবার প্ল্যান এখন। চমৎকার আবহাওয়া আর বাচ্চাদের স্কুল-কলেজ বন্ধ থাকায় সামারে বেশিরভাগ আমেরিকানরাই সপরিবারে ঘুরতে বের হয়। বাংলাদেশে বাচ্চাদের নিয়ে ঘুরে বেড়ানোর কালচারটা আগে না থাকলেও এখন অনেককেই দেখি যেতে, যা আসলেই অনেক ভাল। আমার পরিচিত এক আপু তো ভাইয়া আর ওনার পিচ্চি মেয়েটাকে নিয়ে সারা বাংলাদেশ ঘুরে বেড়াচ্ছেন। গুগল ম্যাপে দেখা গেল রাস্তায় ভালোই ট্রাফিক। পার্কে পার্কিং স্পট খুঁজতে খুঁজতে জান কাহিল। শেষ পর্যন্ত পাওয়াই গেল না। ওয়াশিংটন স্টেট খুব ভোগাচ্ছে দেখছি। পার্কিং এর অভাবে পার্কের ভিতরে আর হাঁটা হল না, বিখ্যাত ক্রিসেন্ট লেকের পাশে দিয়ে ড্রাইভ করেই খুশি থাকতে হল। পার্কেরই ওপর প্রান্তে "হল অফ মসেস"। আগে লিস্টে না থাকলেও গুগল রেটিং ৪.৯/৫ আর যাওয়ার পথেই হওয়ায় ওখানে থামার সিদ্ধান্ত হল। ছোট্ট একটা শহর ও আছে "ফোর্কস" নামের। হল অফ মসেস এ যেতে হলে এই শহরের ভিতর দিয়েই যেতে হয়। কাঠের ব্যবসা বাসিন্দাদের রুজি-রুটির প্রধান উৎস। যতটা সাধারণ ছোট শহর মনে হয় ততটা আসলে নয়। শহরের ওয়েলকাম সেন্টারে না ঢুকলে তা জানতেই পারতাম না। স্টেফানি মায়ার তার বিখ্যাত টোয়ালাইট উপন্যাস লিখেছিলেন এই শহরে, এই শহরের উপর ভিত্তি করে। বইতে বা মুভিতে শহরের যে রূপটা দেখা যায় তা ফোর্কস শহরের। সেপ্টেম্বরের ১৩ তারিখ এখানে বেলা'র জন্মদিন সেলিব্রেট করা হয়। সারা আমেরিকা থেকে ফ্যানরা আসে এখানে সেই উৎসবে যোগ দিতে। শহরে ঢোকার মুখে লেখা-
ENTERING
FORKS
POPULATION
3,175
VAMPIRES
8.5
মজার না? হল অফ মসেস এর ওয়েলকাম সেন্টারে ওয়াশিংটন স্টেটে যেই কয়েক ধরণের ভালুক দেখা যায় তার লাইফ লাইক ভার্সন রাখা। জ্যান্ত বলে ভুল হয় একদম কাছে থেকেও। এখন থেকে ম্যাপ নিয়ে ঢুকে পড়লাম ট্রেইলে। ঢোকার পর টোয়ালাইট মুভিতে দেখা বনের দৃশ্যের সাথে প্রচুর মিল খুঁজে পাওয়া গেল। তারচেয়েও বেশি মিল মনে হল হ্যারি পটার মুভির সাথে। বিশাল বিশাল সব গাছ মসে ঢেকে আছে পুরোটা। সে এক রূপকথার মতো জায়গা। এই অঞ্চলে প্রচুর বৃষ্টিপাত হয়, সেই সাথে আদ্রতাও বেশী তাই মসের সাম্রাজ্যর বেশ ভালোই বিস্তার ঘটেছে। চাইনিজদের যন্ত্রনায় এই সৌন্দর্য তন্ময় হয়ে উপভোগ করা গেল না বেশিক্ষন। এরা যেভাবে সব জায়গায় ফটোসেশন করে তাও অবশ্য একটা দেখার বিষয়। একটা গাছের ভাল কোন ছবি নেয়া গেল না দুই-একটা চাইনিজ তার পাশে/নিচে/উপরে নানান পোজ নিয়ে থাকায়। নিরিবিলি একটা ট্রেইল ধরে হাঁটলাম কিচ্ছুক্ষন। এরপর ভুড়িভোজনের পালা। হাঁটাহাঁটির ফলে খিদেটা বেশ চাগিয়ে উঠেছে।
অলিম্পিক ন্যাশনাল পার্কের বিশাল এলাকা জুড়ে সবুজে ঢাকা প্যাঁচানো রাস্তা কয়েক ঘন্টায় পেরিয়ে এসে যখন ইন্টারস্টেট হাইওয়েতে উঠলাম তখন প্রায় বিকেল। সময় কম কিন্তু পথ বাকি বলতে গেলে পুরোটাই। তাই অনিচ্ছা সত্ত্বেও বাদ দিতে হচ্ছে অনেক কিছুই। মাউন্ট রেইনারে যাওয়ার ইচ্ছে থাকলেও হিসাব কশে দেখলাম সময়ে কুলাবে না। তাই ওয়াশিংটন স্টেট ঘোরার এখানেই পরিসমাপ্তি।
*****অনেকেই ছবি দেখতে চেয়েছেন। সামুতে ছবি আপলোড দেয়া এক বিশাল ঝামেলা লাগে। আমার ফেসবুক প্রোফাইলে যেয়ে ছবিগুলো দেখতে পারেন (যদি ধৈর্য্যে কুলায়, হাজার দুয়েক ছবি আছে :p)। এলবাম পাবলিক করা।
https://www.facebook.com/rajon.al.masud/media_set?set=a.2057339444310714&type=3
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে মে, ২০১৯ দুপুর ১২:৪২