পোকাটেল্লো থেকে বিদায় নেবার আগে সকাল বেলা রিমি আপু নিয়ে গেলেন আইডাহো স্টেট ইউনিভার্সিটির ক্যাম্পাস ঘুরাতে। নিরিবিলি ছিমছাম ক্যাম্পাস। উইকেন্ড বলেই হয়তো স্টুডেন্টদের আনাগোনা কম। অবাক করা ব্যাপার হলো আইডাহো স্টেট ইউনিভার্সিটির মাস্কট বা প্রতীক হল বাঘ। যেন তেন বাঘ নয়, রয়েল বেঙ্গল টাইগার। ১৯২১ সালে ইউনিভার্সিটির প্রথম ফিজিক্যাল এডুকেশন এন্ড এথলেটিক্স এর প্রধান রালফ এইচ হাটচিনসন বেঙ্গল টাইগারকে মাস্কট হিসাবে নির্বাচিত করেন। ওর নাম "বেনি দ্যা বেঙ্গল"। এখানের এথলেট এবং স্টুডেন্টরা বেঙ্গলস নামেই পরিচিত। বেনির গলা জড়িয়ে, পিঠে উঠে নানা রকম আদর আল্লাদ করে রওয়ানা দিলাম আবার মন্টানার উদ্দেশে।
এমনিতেই মন্টানা বিশাল বড়, প্রায় বাংলাদেশের তিন গুন তার উপর গ্লেসিয়ার ন্যাশনাল পার্ক মন্টানার শেষ প্রান্তে অবস্থিত। এর পরেই কানাডার সাস্কেচওয়ান, আলবার্টা আর ব্রিটিশ কলম্বিয়া প্রভিন্সের সীমান্ত সমান্তরালে। এই পার্কের অল্প কিছু অংশ কানাডাতেও পড়েছে। কানাডার অংশের নাম ওয়াটারটন লেকস ন্যাশনাল পার্ক। সারাদিন ড্রাইভ করে যখন পার্কের আগের শেষ বড় শহর কনরাডে পৌঁছালাম তখন রাত প্রায় ৯টা ছুঁই ছুঁই। এখান থেকেও পার্ক প্রায় ঘন্টা দুই ড্রাইভিং। তবে এরপরে বেশিরভাগ এলাকাই ইন্ডিয়ান টেরিটরি আর ছোট শহর হওয়ায় এখানেই থাকার সিদ্ধান্ত হল। ক্লান্তিতে অবসন্ন শরীর বেশিক্ষন সার্ভিস দিতে পারল না। মাল-পত্র টেনে নিয়ে রুমে রেখে বিছানায় পিঠ লাগাতেই তলিয়ে গেলাম অতল ঘুমের রাজ্যে। সকালে উঠে তড়িঘড়ি করে নাস্তা সেরেই যাত্রা শুরু। যতটা সময় ওখানে কাটানো যায় ততই ভালো। পার্কে ঢোকার ঠিক আগে কিওয়া নামের ছোট্ট একটা শহরে থামা হল লাঞ্চ কেনা আর গাড়িতে তেল নেয়ার জন্য। ব্ল্যাকফিট ইন্ডিয়ান রিজার্ভেশন খুব কাছাকাছি হওয়ায় শহরটার বেশিরভাগ মানুষই দেখলাম ন্যাটিভ আমেরিকান। ইন্টেরেস্টিং একটা কফি শপ দেখা গেল যা ওরা বানিয়েছে ন্যাটিভ আমেরিকানদের তাঁবুর আদলে। পাশেই একটা কাউবয় এন্টিক স্টোর। এক কার ফুল এন্ট্রি মানে গাড়ির সবার প্রবেশমূল্য মাত্র ৫ ডলার। বিদেশী বলেই কিনা কে জানে দোকানি দাম চাইলো বেশ বেশি। খুব বেশি পুরানো আর আকর্ষণীয় তেমন কিছু না থাকায় কিছুই কেনা হল না।
পার্কে ঢোকার পথে রাস্তার কাজ চলায় বেশ দেরি হল পথে। ১৫৮৩ বর্গ মাইল জায়গা নিয়ে ছড়িয়ে থাকা গ্লেসিয়ার ন্যাশনাল পার্ক বিখ্যাত এর নয়নাভিরাম লেকগুলোর জন্য। গ্লেসিয়ার বা হিমবাহ গলে তার পানি জমে এই লেকগুলোর সৃষ্টি। ১৯ শতকের মাঝামাঝি সময়েও ১৫০ টা গ্লেসিয়ার ছিল। ২০১০ এ যা কমতে কমতে ২৫ এ এসে ঠেকেছে। আমাদের পৃথিবী যে ক্রমশ উষ্ণ হচ্ছে এর চেয়ে বড় প্রমান আর কি হতে পারে? গ্রিজলি ভালুক, মুজ নামক বড় হরিণ আর মাউন্টেইন গোটের আস্তানা এই বিশাল বন। প্রথমেই চলে গেলাম সেইন্ট মেরী লেকে। শান্ত টলটলে নীল পানি। এতই সুন্দর যে চোখ ফেরানো যায়না। দূরে পাহাড়ের মাথায় শুভ্র তুষার। অপার্থিব সৌন্দর্য। পানির মাঝে পাথর আর গাছের ছোট্ট একটা দ্বীপ, প্রায় বিন্দুর মত। বিখ্যাত এই দ্বীপের নাম "ওয়াইল্ড গুজ আইল্যান্ড"। প্রাচীন লোকগাঁথা থেকে এসেছে এই নাম। অনেক কাল আগে এই লেকের দুই পারে থাকতো দুই ন্যাটিভ আমেরিকান ট্রাইব। তাদের মধ্যে যুদ্ধ-বিগ্রহ না থাকলেও সম্পর্ক তেমন ভালো ছিল না। দুই পক্ষই একে অন্যকে এড়িয়ে চলত। একদিন এক গোত্রের এক তরুণ যোদ্ধা ওপর গোত্রের এক অপরূপা তরুণীকে দেখে সাঁতরে লেকের মাঝে এই দ্বীপে যেতে। সুন্দরের পূজারী আমাদের পুরুষদের সুযোগ্য সেই পূর্বসূরি অনিবার্যভাবেই সেই তরুণীর পিছু নিয়ে দ্বীপে যায়। সেখানে তাদের মধ্যে কথা হয় অনেক। এক বিকেলের সেই আলাপে প্রেম আসে চুপিসারে। দুই গোত্রের কেউই এই প্রেম মেনে নিতে পারেনি। গোত্রপতিরা সিদ্ধান্ত নেয় এদের উচিত শিক্ষা দিয়ে দৃষ্টান্ত স্থাপনের। কিন্তু মিয়া বিবি রাজি, তো ক্যায়া কারেগা কাজী? দুইজনেই একে অন্যের সাথে থাকার জন্য ভোররাতে পালিয়ে এই দ্বীপে চলে আসে। তাদের ইচ্ছে ছিল দূরে কোথাও যেয়ে ঘর বাঁধার। কিন্তু বিধি বাম। এখানেও হাজির বাংলা সিনেমার অত্যাচারী ভিলেন রাজীবের পূর্বসূরিরা। তারা সকালে দুইজনকে খুঁজে না পেয়ে যোদ্ধা বাহিনী পাঠায় পিছু পিছু প্রেমের ভুতকে পরপারে পাঠানোর জন্য। কিন্তু উপরেও একজন আছেন। সেই পরমাত্মার দয়া হয় এই তরুণ-তরুণীর প্রতি। তিনি ওদের হাঁসে রূপান্তরিত করে দেন। যখন অন্য যোদ্ধারা দ্বীপে পৌঁছায় তারা তাদের সামনে উড়ে চলে যায় ভালোবাসার ঘর বাঁধতে। সেই থেকে ছোট্ট দ্বীপের এই নাম।
হাইকিং করার প্রচুর রুট আছে এখানে। হাইকিং করতে না চাইলে অলস লোকজন গাড়িতে করেও পুরো পার্ক ঘুরে দেখতে পারে। লেক আর পাহাড়ের মাঝে আঁকা-বাঁকা রাস্তা। রাস্তার মাঝে মাঝেই নেমে এসেছে হিমবাহের জলধারা। এক জলধারার নিচে গাড়ি দাঁড় করিয়ে রেজওয়ান বোতলে পানি ভোরে এনে সবাইকে খাওয়ালো। প্রাণ জুড়িয়ে যায় সেই পানি খেলে। যাওয়ার পথে হটাৎ রাস্তায় ব্যাপক ভিড়। সব গাড়ি থেমে আছে। বিরক্ত হয়ে গাড়ির জানালা নামাতেই দেখা গেল এক গ্রিজলি ছানা আয়েশ করে গাছের গুঁড়িতে পিঠ চুলকাচ্ছে। বেয়াড়া, বেয়াদব, অসভ্য মানুষজনের কৌতূহলে বিরক্ত হয়ে সে হারিয়ে গেল গাছের আড়ালে একটু পরেই আর আমাদের গাড়ির চাকাও চললো। লোগান পয়েন্টে আছে কন্টিনেন্টাল প্লেট, অর্থাৎ দুই মহাদেশ মহাসাগরের টেকটোনিক প্লেটের মিলনস্থল (উত্তর আমেরিকা ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় প্লেট)। এখানেই প্রথম দেখলাম মাউন্টেইন গোট। হাজারো ট্যুরিস্টের মাঝে নির্বিকার ভাবে ঘাস চিবুচ্ছে। তার সামনে চাইনিজ লোকজন সেলফি নিতে ব্যস্ত।
এখান থেকে দ্রুত গাড়ি চালিয়ে চলে গেলাম লেক ম্যাকডোনাল্ডে। এই লেক ক্রাউন অফ দ্য কন্টিনেন্ট নামে বিখ্যাত। ছবি বলে ভ্রম হয়। প্রচুর লোক জন আছে আশেপাশে। কেউ অলস সময় কাটাচ্ছে, কেউবা কায়াকিং করছে। এতো লোকের ভিড়-বাট্টা ভালো লাগলো না। সূর্যাস্তে তাকে আবার দেখবো বলে সামনে আগালাম। আমাদের গন্তব্য এখন বহুদূরের দুই লেক বোম্যান আর কিন্টলা। লেক ম্যাকডোনাল্ডের ক্যাম্প সাইট পার হওয়ার সময় অপু ভাই চিৎকার করে উঠলেন, ভালুক ভালুক! সাথে সাথে গাড়ি থামিয়ে ভালো করে তাকাতেই দেখি সেখানে অনেক তাঁবু ফেলা, প্রচুর মানুষ, ভালুক আসবে কোথা থেকে? এক গাছের নিচে বিশাল এক বাদামি কুকুর পিঠ দেখাচ্ছে। কুকুরকে ভালুক ভাবায় যখন অপু ভাইয়ের দৃষ্টির চৌদ্দ গুস্টি উদ্ধার করছি, তখন কুকুর ব্যাটা মুখ ব্যাদান করে এদিকে চাইলো, কিসের কুকুর, আসলেই ভালুক !!!!! আরেকটি বাচ্চা গ্রিজলি ভালুক। একদিনে দিনে দুই বার ভালুক দর্শন। ওরে কে কোথায় আছিস, গ্রিজলিদের একটু জন্ম নিয়ন্ত্রণ শিখা কেউ !!!!! তার ওপর বাচ্চা জন্ম দিয়ে এখানে ওখানে ছেড়ে দেয়া? বলি ভালুক বলে কি তোদের চাইল্ড কেয়ার শিখতে নেই? খাঁটি মধুর বিনিময়ে দু-একটা ভালুক ন্যানি রাখলেও তো প্যারিস ব্যাটারা। সবই কি শিখিয়ে দিতে হবে নাকি? মরণ !!!!! চাইল্ড প্রটেকটিভ সার্ভিসে খবর দিয়ে ব্যাটার ভালুকগিরি ছুটিয়ে দেব কিনা ভাবতে ভাবতেই টিকেট ছাড়া ফ্রিতে ভালুক দেখার বাগড়া দিলো বেরসিক পার্ক রেঞ্জার। বাচ্চা ভালুকের আশেপাশেই মা ভালুক থাকবে, তাই পত্রপাঠ গাড়িতে উঠিয়ে বিদায় করে দিলেন। মা ভালুককে আর চাইল্ড কেয়ার শিখানো হলোনা।
দুইবার ভালুক দেখায় বেশ কিছু সময় নষ্ট হল। এখন আর দুই হ্রদ দেখার পর্যাপ্ত সময় নেই। সিদ্ধান্ত হল প্রথমে যাব দূরের কানাডার সীমান্তে অবস্থিত কীন্টলা লেকে। হাতে সময় থাকলে যাওয়ার পথে লেক বোম্যানে ঢুঁ মারব। কীন্টলা যাওয়ার পথে পড়লো পোলব্রিজ ট্রেডিং স্টেশন। আমেরিকান টেরিটোরিতে এটাই শেষ ট্রেডিং পোস্ট। তাজা হাকলবেরি কিনলাম এখান থেকে। এখন থেকে কীন্টলা পর্যন্ত যাওয়ার রাস্তা অতি দুর্গম। ২০ মাইল যেতে ১ ঘন্টা লাগবে। আল্লাহর নামে রওয়ানা দিলাম।
গাড়ি চলছে ঘন্টায় ৮-১০ মাইল গতিতে। মাঝে মাঝে ৫ এও নেমে আসছে গতি। ২০ মাইল পথ পার হতে মনে হচ্ছে অনাদিকাল পেরিয়ে যাবে। ভয়াবহ পাথুরে রাস্তা। চোখা পাথরে টায়ার ফেঁসে গেলে আর দেখতে হবে না, সাহায্য আসতেই দিন পার হয়ে যাবে। তারচেয়েও ভয়াবহ ব্যাপার হল ভালুক। পার্কের এতো ভিতরে প্রচুর ভালুকের আনাগোনা। রাত্রে বেলা বাগে পেলে যে তারা মজা দেখাবে তা বলাই বাহুল্য। দুই-এক জন যাদেরই এই ভয়ংকর রাস্তায় যেতে দেখলাম সবারই জীপ ধরণের উঁচু গাড়ি। আরামেই টেনে চলে যাচ্ছে তারা। যেই রোড ধরে যাচ্ছি এটা আসলে প্রাচীন ইন্ডিয়ান ট্রেইল। পরবর্তীতে যা শুধু মাত্র চওড়া করা হয়েছে। প্রাচীন দুর্গম ট্রেইল, পাশে বিস্তীর্ণ জঙ্গল আর সাথে ভালুকের ভয়, উত্তেজনার কোন কমতি ছিল না এই রাস্তায়। মোটামুটি আড়াই ঘন্টা পরে কীন্টলা লেকের দেখা মিলল, রেজওয়ানের দক্ষ ড্রাইভিংয়ে কোন সমস্যা ছাড়াই| আমার ধারণা এর মতো দুর্গম স্থানে হ্রদ আমেরিকায় সম্ভবত আর নেই। এটা আমেরিকার মাটিতে সবচেয়ে পশ্চিমের হ্রদ ও বটে। বেশি বড় না লেকটা। কিন্তু অদ্ভুত স্থির স্বচ্ছ পানি। তাতে আশেপাশের আকাশ, গাছের নিখুঁত প্রতিচ্ছবি। তাকিয়ে নিজের চেহারা দেখা যায় এর পানিতে। লেকে ডুব দেয়ার ইচ্ছা থাকলেও গোড়ালী পর্যন্ত নেমেই জমে গেলাম। অসম্ভব ঠান্ডা পানি। ৫ সেকেন্ডের উপর পা ভিজিয়ে রাখা গেল না। বরফ গলা পানি, আগেই বোঝা উচিত ছিল। লেকের পাশেই ক্যাম্পিং সাইট। এবং এতোদূরের জায়গাতেও কোন ক্যাম্পিং সাইট খালি নেই। মনের কষ্টে এক বেঞ্চের উপর বসে লাঞ্চ সেরে নিলাম। আশে পাশে দেখতে দেখতেই ঘন্টা খানেক পার হয়ে হয়ে গেল। এখন রওয়ানা না দিলে অন্ধকারে এই এবড়ো থেবড়ো রাস্তা পার হওয়া মুশকিল হয়ে যাবে। এছাড়া লেক বোম্যান দেখতে না পারলেও লেক ম্যাকডোনাল্ডে সূর্যাস্ত দেখাও মিস হবে। তাই পাততাড়ি গুটিয়ে আবার আগের রাস্তায়। সেই একই শ্লথ গতিতে চলে যখন লেক ম্যাকডোনাল্ডে পৌঁছালাম তখন সূর্য হেলে পড়েছে। শুধু সেলফি তোলা ট্যুরিস্টরা কেউ নেই। যারা বসে আছে তারা মনে প্রাণে প্রকৃতি প্রেমী। পাহাড়ের ওপাশে সূর্য ডুবে যাচ্ছে। সূর্যের আলোর শেষ ছটা পাহাড়ের চূড়ায় পরে মনে হচ্ছে পাহাড়গুলো আসলে সোনার তৈরি। পাহাড়ের চূড়া থেকে আলো টিকরে পড়ছে লেকের পানিতে। পানিতে রূপকথার এক রং ফুটে উঠছে তাতে। এখানে এমনিতেই প্রচুর রঙিন নুড়ি পাথর। গোধূলির আলোয় তারা তাদের সব রূপ মেলে ধরলো। ওই সৌন্দর্যের বর্ণনা দেয়া আমার পক্ষে সম্ভব না তাই চেষ্টাও করব না। গ্লেসিয়ার ন্যাশনাল পার্কের চোখ জুড়ানো প্রাকৃতিক পরিবেশের মধ্যে এই লেকগুলো দেখলে মনে হয়না বাস্তব পৃথিবীর কোন স্থানে আছি। ছোটবেলায় দেখা শিল্পীর পটে আঁকা ছবি আর ওয়ালপেপার গুলো এখানে চোখের সামনে দাঁড়িয়ে আছে। পার্থক্য শুধু একটাই, আরো হাজারগুন বেশি সুন্দর। এই রূপ শুধু সৃষ্টিকর্তার উপহার দেয়া চোখ আর হৃদয় দিয়েই উপভোগ করা সম্ভব। কোন লেখা কিংবা ক্যামেরা এই রূপকে ধরতে পারেনা।
শেষ আলোটুকুও হারিয়ে যাবার পরে গাড়ির দিকে এগুলাম। ছেড়ে যেতে ইচ্ছে করছিলো না মোটেও। বার বার ফিরে আসবো এই প্রবোধ মনকে দিয়ে রওয়ানা দিলাম কনরাডের দিকে।
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই মার্চ, ২০১৯ বিকাল ৪:৪৬