পৃথিবীর আনাচে কানাচে ঘুরে বেড়ানোর স্বপ্নটা দেখছি সেই কবে থেকে............২০১৩ সালেই কোথায় কোথায় যাবো তার লিস্ট বানানো শুরু হয়েছিল| ইন্সপায়রেশন তো প্রতি-নিয়তই মেলে আমাদের তারেক অনু ভাই, ন্যাস, ড্রিউ বিনস্কি এর ট্রাভেলিং-এর নানান ব্লগ আর ভিডিও ব্লগ দেখে। স্বপ্ন দেখে বসে থাকার মানুষ আমি কখনোই ছিলাম না। আমার নীতি হলো স্বপ্ন দেখতে হবে তা সত্যি করার জন্য, শুধু কল্পনায়, বাকেট লিস্টে, ফেসবুকের এলবামে রাখার জন্য না। তো কিভাবে সত্যি করবো? ঘোরাঘুরির জন্য তো টাকা লাগবে, স্টাবলিশড হতে হবে। কামাই তাহলে টাকা, নেই তবে ডিগ্রি। তারপর দৌড়াতে দৌড়াতে কখন যে স্বপ্নবাদী থেকে বস্তুবাদী হয়ে গেছি নিজেও জানিনা। টাকার নেশার চেয়ে বড় কোন নেশা এই দুনিয়াতে নেই। ব্যাংক ব্যালেন্সটা আরেকটু বাড়ানোর জন্য দিন-রাত কাজ করছি। দুই হাতে টাকা কামাচ্ছি। এছাড়া আসে-পাশের মানুষদের উপর ও অনেক কিছু নির্ভর করে। আমার আসে পাশের সব মানুষদের মোটামুটি একই অবস্থা। রিয়াদ, রনি, আবির, অর্ণব, নাফিস, শিবলী, দ্যা আমেরিকান ড্রিম ফুলফিল করতে অন্ধের মতো কাজ করে যাচ্ছে সবাই। এতে অবশ্য ওদের দোষ দেয়ার কিছু নেই। সবসময় সব সাহস করে ওঠা যায়না। আমি নিজেই কি পেরেছি সব সময়? ২০১৪ সালে প্রিয় ভাই এবং বন্ধু ইমেল ভাই যখন পুরা ইউ.এস.এ তে রোড ট্রিপ দেয়, তখন ওনার অনেক অনুরোধ সত্ত্বেও, নিজের অনেক ইচ্ছা থাকার পরেও আমি জয়েন করতে পারিনি, যার দু:খ এখন পর্যন্ত আমার যায়নি। এছাড়া জীবনে প্রতিষ্ঠিত হওয়া, সময়, সুযোগ আর পয়সার অজুহাতে স্বপ্নগুলো কিছুতেই মাথা চারা দিয়ে উঠতে পারছিলো না।
একদিন ৭২ ঘন্টার ম্যারাথন কাজ করার সময় হটাৎ মনে হলো, আমি আসলে জীবনে কি করছি? এটা কি কোন জীবন? এই আমি কি আসলে আমি? যে স্বপ্ন গুলো থেকে সব কিছুর শুরু সেই স্বপ্ন গুলোকেই তো হজম করে বসে আছি। ৬ বছরের আমেরিকার জীবনে করলামটা কি? এভাবেই পার হয়ে যাবে জীবন? বুড়ো বয়সে গল্প করার কি কিছুই থাকবে না? নাহ এভাবে হয় না, এবার কিছু একটা করতেই হবে। সাথেই সাথেই কাজ ছাড়ার চিন্তা, কাজ ছাড়লে কি হবে, টাকা-পয়সা সব খরচ হয়ে যাবে, ব্যাক-আপ মানি কিছুই থাকবে না এইসব হাবিজাবি চিন্তা মাথায় ভিড় করা শুরু করলো। হিসাব করে দেখলাম কাজ ছাড়ার সাহস করতে না পারলে আসলে হবে না। মোটামুটি রাফ প্ল্যান করলাম সেপ্টেম্বর-এ বের হব। গরমটা বেশ অনেকই কমে আসবে সেই সময়। যেহেতু একটা একটা করে স্টেট দেখা অনেক সময়ের ব্যাপার আর খরচটাও হবে মাশাল্লাহ তাই একেবারেই লম্বা রোড ট্রিপে বের হব। ১ মাসের জন্য !!!!! এরপর শুরু হলো হাবিয়া দোজখ পার হবার কাজ- রোড ট্রিপের সঙ্গী-সাথী জোগাড় করার। হেন কোন পরিচিত মানুষ নাই যাকে বলি নাই এই প্ল্যানের কথা। রুমমেট থেকে শুরু করে স্কুলমেট পর্যন্ত। অনেক চেষ্টার পর সঙ্গী-সাথী জোগাড় হলো ০ জন এতো লম্বা এক্সট্রিম প্ল্যানে কেউ রাজি না। সবাই আরাম করে ঘুরতে চায়। ৩-৭ দিনের ট্যুর। অফিস অথবা ভার্সিটি বন্ধের সময়ে। আমি তখন হতাশার চরম পর্যায়ে। একা যাওয়াটা যেমন খরচের ব্যাপার তেমন বোরিং ও। তবে শেষ পর্যন্ত ডিসিশান নিলাম একাই যাবো। বেশ একটা এডভেঞ্চারের মতো হবে। মিনিমাম খরচের প্ল্যান। যতটা সম্ভব গাড়িতে থাকবো অথবা ছোট তাঁবুতে। প্ল্যানেট ফিটনেস জিমের ব্ল্যাক কার্ড করে নিলে ইউ.এস.এ তে ওদের সমস্ত ফ্যাসিলিটিতে গোসল করার সুবিধা নিতে পারব। আর যদি সমস্যা হয় তো হলো। ঘটুক নাহয় জীবনে ইনটু দ্যা ওয়াইল্ড এর মতো কিছু !!!!!
এরপর একটা আশ্চর্য আর মজার ঘটনা ঘটলো। একেবারেই অপ্রত্যাশিত। আমাদের মার্কো পোলো তারেক অণু ভাই আসবেন আমেরিকায় ট্যুরে। জানতে পারলাম তার ফেসবুক স্ট্যাটাসের মাধ্যমে। সাথে ওনার বড় ভাই তানভীর অপু। ঘোরার প্ল্যান পুরো ইউ.এস.এ তে। ওনাকে জানালাম আমার ট্রিপ প্ল্যান। দেখা গেলো মিলে গেছে অনেকটাই। ফেসবুকের মুঠো বার্তাতেই অনেকটা প্ল্যান ফাইনাল হলো। সাথে থাকবেন তানভীর অপু ভাই, রেজওয়ান আর কনক আদিত্য দা। কনক'দা যদিও পরে জয়েন করবেন আমাদের সাথে। ঘোরাঘুরিতে আমার তেমন অভিজ্ঞতা নেই। অণু ভাইয়ের থেকে শিখবো প্রচুর এই গোপন অভিসন্ধি মনে ওনাদের সাথে শুরু হলো এই দীর্ঘ ট্রিপ। যাবো যতটা সম্ভব ইউ.এস. স্টেটে। দেখা যাক কি হয়
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে মার্চ, ২০১৯ সকাল ১০:২৯