বর্তমানে আমেরিকায় স্টুডেন্ট ভিসা একটু সহজ করায় গত দেড়-দুই বছরে অনেক ছাত্রই উন্নত ভবিষ্যত গড়ার লক্ষে আমেরিকায় পাড়ি জমিয়েছে এবং এখনো আসছে............আমি এদের মধ্যেই একজন। কিন্তু প্রশ্ন হলো যেই স্বপ্ন নিয়ে আমরা এখানে সবাই এসেছিলাম তার কতটুকু পূরণ হয়েছে? কিভাবে আসা যায়, এপ্লাই এর নিয়মাবলী কি তা নিয়ে লেখার কোনো মানে হয় না। রাগিব ভাই এবং আরো অনেক ব্লগার এর মধ্যেই এই বিষয়ে অনেক পোস্ট দিয়েছেন। তবে তাদের সবার পোস্টেই ছিল মূলত গ্রাজুয়েট/পোস্টগ্রাজুয়েট প্রসেসিং পদ্ধতি এবং তার পরের নানান সম্ভবনার কথা, যা পড়ে আমি সহ অনেকেই অনেক উৎসাহিত হয়েছে। লেখাগুলোর জন্যে তাদের অনেক ধন্যবাদ। তারা যেটা লেখেননি তা হলো আন্ডার গ্রাড ছাত্রদের অবস্থা আর তারা কি ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হয় তা (অথবা লিখলেও আমি মিস করে গেছি)। এখানে আমার গত এক বছরের জীবন আর এই বিষয়টা নিয়েই আজ এই লেখা। বাসায় সব কিছু বলা যায় না নানান কথা চিন্তা করে তাই ভাবলাম ব্লগের সবার সাথেই শেয়ার করি।
প্রথমেই বলে নেই যারা স্কলারশিপ নিয়ে এসেছেন বা ফ্যামিলির টাকায় পড়াশুনা করছেন তাদের জন্য এই লেখা নয়। অবশ্য আন্ডারগ্র্যাডে ফুল স্কলারশিপ নিয়ে কেউ এসেছে এমন কারো সাথে আমার আজ পর্যন্ত পরিচয় হয়নি। আমার জানামতে আন্ডারগ্র্যাডে ফুল স্কলারশিপ ইন্টারন্যাশনাল স্টুডেন্টদের দেয় ও না। এই লেখাটি মূলত যারা এই ভেবে এসেছিলেন যে আমেরিকায় নিজের খরচে পড়বেন তাদের জন্য। নিজের সম্পর্কে বলে নেই। আমি রাজন। এটা ব্লগে আমার দ্বিতীয় লেখা এবং প্রথম কিছু লেখার জন্য লেখা বলা যায়। ১ বছর আগে আমেরিকায় আন্ডারগ্রাজুয়েট স্টুডেন্ট হিসেবে এসেছিলাম মন্টানা স্টেট ইউনিভার্সিটি'র প্রধান ক্যাম্পাস বোজম্যানে। আমার স্কলারশিপ ছিল ৮০০০ ডলার প্রতি বছর। আসার আগে আমি ভেবেছিলাম বাকি টিউশন ফিস (প্রায় ১২০০০ ডলার) আর থাকা-খাওয়ার খরচ কাজ করে সহজেই যোগাড় করতে পারব। বিধাতা সম্ভবত অলক্ষেই সেইদিন হেসেছিলেন। প্রথম সেমিস্টারের টিউশন আর হাতে বেশ কিছু টাকা নিয়ে আমার আসা। বোজম্যান অসম্ভব সুন্দর একটা জায়গা, চারিদিকে পাহাড় ঘেরা একটা উপত্যকার মাঝখানে এই শহরটি। এর মানুষ গুলোও চমৎকার আর বন্ধুত্বপূর্ণ। বেশির ভাগ লোক সাদা হলেও আমি রেসিজম কখনই ফিল করিনি। বাস না পাওয়ায় সেধে আমাকে লিফট দিয়েছে ডর্ম পর্যন্ত, এমন ঘটনাও ঘটেছে কয়েকবার। এখানে বাঙালি কম্যুনিটি খুব ছোট। আমি যখন যাই তখন দুইটা ফ্যামিলি সহ আট জন স্টুডেন্ট। দুইটা ফ্যামিলি ইউনিভার্সিটির দুই প্রফেসরের। এছাড়াও আরেকটা ফ্যামিলি রয়েছে- ওয়াইফ বাংলাদেশী, হাজব্যান্ড কলকাতার। কলকাতার কয়েকটা স্টুডেন্টও আছে। তবে কয়জন এই ব্যাপারে আমি নিশ্চিত না। এরমধ্যে এক প্রফেসর আহসান আন্কেল আর তার স্ত্রী রুমা আন্টি ছিলেন আমাদের সবার জান। অপরিচিত কয়েকটা ছেলে মেয়েকে তারা যে ভালবাসা দিয়ে আগলে রাখতেন তা লিখে বলা সম্ভব নয়। ওনাদের জন্যই অপরিচিত একটা দেশের অজানা পরিবেশ সহজ হয়ে গিয়েছিল অনেকটাই।
কাজের শুরু:
যাওয়ার পরে আমি বেশ একটা অস্বস্তির মধ্যেই পরেছিলাম। ৮ জন স্টুডেন্টদের মধ্যে চারজনই গ্রাজুয়েট লেভেলে রিসার্চ এসিস্টেন্ট হিসেবে ফ্রি তে পড়ছে আর বাকি আমার সাথের তিনজন ধনী পরিবারের। একমাত্র আমি ছিলাম মধ্যবিত্ত পরিবারের যে নিজের টাকায় পড়ার উচ্চাভিলাষ নিয়ে গিয়েছিলাম। ওদের একজনকে কোথায় কাজ পাওয়া যাবে জিগ্গেস করাতে তার পাল্টা প্রশ্ন ছিল "তুমি এখানে কি উদ্দেশ্য নিয়ে আসছ বলত"; কেমন যে লেগেছিল কথাটা শুনে তা আর কি বলব যাই হোক আমেরিকায় লিগালি স্টুডেন্টদের অফ ক্যাম্পাস কাজের অনুমতি নেই (এক বছর পর একটা পারমিশন নেয়া যায় অনেক কাঠ-খড় পুড়িয়ে, তাও ২০ ঘন্টাই), যদিও এটা আগেই জানতাম তারপরেও ভেবেছিলাম কিছু না কিছু যোগাড় করেই ফেলবো। অনেক খোঁজাখুজির পর যখন ব্যর্থ, তখন ভার্সিটির ডাইনিং-এ জব পেলাম (অন ক্যাম্পাস)। সপ্তাহে ১৮ ঘন্টা মাত্র, ৮.২৫ ডলার প্রতি ঘন্টা। শুরু করে দিলাম।
(চলবে)
অন্যান্য পর্ব:
আমেরিকায় এক বছর এবং মধ্যবিত্ত ছাত্রদের বাস্তবতা (পর্ব ২)
আমেরিকায় এক বছর এবং মধ্যবিত্ত ছাত্রদের বাস্তবতা (পর্ব ৩)
আমেরিকায় এক বছর এবং মধ্যবিত্ত ছাত্রদের বাস্তবতা (পর্ব ৪)
আমেরিকায় এক বছর এবং মধ্যবিত্ত ছাত্রদের বাস্তবতা (পর্ব ৫)
আমেরিকায় এক বছর এবং মধ্যবিত্ত ছাত্রদের বাস্তবতা (পর্ব ৬)
আমেরিকায় এক বছর এবং মধ্যবিত্ত ছাত্রদের বাস্তবতা (পর্ব ৭)
আমেরিকায় এক বছর এবং মধ্যবিত্ত ছাত্রদের বাস্তবতা (পর্ব ৮)
আমেরিকায় এক বছর এবং মধ্যবিত্ত ছাত্রদের বাস্তবতা (পর্ব ৯)
আমেরিকায় এক বছর এবং মধ্যবিত্ত ছাত্রদের বাস্তবতা (পর্ব ১০)
আমেরিকায় এক বছর এবং মধ্যবিত্ত ছাত্রদের বাস্তবতা (পর্ব ১১)
আমেরিকায় এক বছর এবং মধ্যবিত্ত ছাত্রদের বাস্তবতা (পর্ব ১২)
আমেরিকায় এক বছর এবং মধ্যবিত্ত ছাত্রদের বাস্তবতা (পর্ব ১৩)
আমেরিকায় এক বছর এবং মধ্যবিত্ত ছাত্রদের বাস্তবতা (পর্ব ১৪)
আমেরিকায় এক বছর এবং মধ্যবিত্ত ছাত্রদের বাস্তবতা (পর্ব ১৫)
আমেরিকায় এক বছর এবং মধ্যবিত্ত ছাত্রদের বাস্তবতা (পর্ব ১৬)
আমেরিকায় এক বছর এবং মধ্যবিত্ত ছাত্রদের বাস্তবতা (পর্ব ১৭)
আমেরিকায় এক বছর এবং মধ্যবিত্ত ছাত্রদের বাস্তবতা (পর্ব ১৮)
আমেরিকায় এক বছর এবং মধ্যবিত্ত ছাত্রদের বাস্তবতা (পর্ব ১৯)
আমেরিকায় এক বছর এবং মধ্যবিত্ত ছাত্রদের বাস্তবতা (পর্ব ২০)
আমেরিকায় এক বছর এবং মধ্যবিত্ত ছাত্রদের বাস্তবতা (পর্ব ২১)
আমেরিকায় এক বছর এবং মধ্যবিত্ত ছাত্রদের বাস্তবতা (পর্ব ২২)
আমেরিকায় এক বছর এবং মধ্যবিত্ত ছাত্রদের বাস্তবতা (পর্ব ২৩)
আমেরিকায় এক বছর এবং মধ্যবিত্ত ছাত্রদের বাস্তবতা (পর্ব ২৪)
আমেরিকায় এক বছর এবং মধ্যবিত্ত ছাত্রদের বাস্তবতা (পর্ব ২৫)
আমেরিকায় এক বছর এবং মধ্যবিত্ত ছাত্রদের বাস্তবতা (পর্ব ২৬)
আমেরিকায় এক বছর এবং মধ্যবিত্ত ছাত্রদের বাস্তবতা (পর্ব ২৭)
আমেরিকায় এক বছর এবং মধ্যবিত্ত ছাত্রদের বাস্তবতা (পর্ব ২৮)
আমেরিকায় এক বছর এবং মধ্যবিত্ত ছাত্রদের বাস্তবতা (পর্ব ২৯)
আমেরিকায় এক বছর এবং মধ্যবিত্ত ছাত্রদের বাস্তবতা (শেষ পর্ব)