পিলখানা হত্যাকান্ডের ব্যাপারে যে তিনটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে, তার মধ্যে সেনাবাহিনীর তদন্ত রিপোর্টের ওপর সবার আস্থা ছিল । কারণ সরকারের বাণিজ্যমন্ত্রী, স্থানীয় সরকার প্রতিমন্ত্রীসহ বিভিন্ন মন্ত্রীর উল্টাপাল্টা মন্তব্য মানুষকে আশাহত করেছে। বাণিজ্যমন্ত্রী বলেছিলেন, পিলখানা হত্যাকান্ডের সাথে জঙ্গীরা জড়িত। এলজিআরডি প্রতিমন্ত্রী বলেছিলেন, কোটি কোটি টাকা খরচ করা হয়েছে এ ঘটনার পেছনে। কিন্তু সেনাবাহিনী তদন্ত আদালতের প্রতিবেদনে বিদ্রোহের সঙ্গে জঙ্গি সংশ্লিষ্টতার কোনো প্রমাণ মেলেনি।
এ সম্পর্কে দৈনিক প্রথম আলোতে প্রকাশিত রিপোর্টের কিছু অংশ তুলে ধরছি। রিপোর্টে রাজনৈতিক নেতাদের ব্যাপারে বলা হয়, "বিডিআর সদস্যরা আইন ভঙ্গ করে দলীয় নেতাদের সঙ্গে দেখা করে সমর্থন আদায়ের চেষ্টা করেন। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে প্রশাসনকে সহায়তার কারণে অনেক বেসামরিক ও রাজনৈতিক নেতা সেনাবাহিনীর ওপর ক্ষুব্ধ ছিলেন। এসব ব্যক্তি বিডিআরের ঘটনাকে প্রতিশোধের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন বলে প্রতিবেদনে ধারণা করা হয়েছে। এতে বলা হয়, সুবেদার তোরাব আলী (আওয়ামী লীগ নেতা), তাঁর ছেলে লেদার লিটন ও জওয়ান কাঞ্চনের ছেলে জাকির জওয়ানদের সঙ্গে বৈঠক করে বিদ্রোহে ইন্ধন দিয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, তোরাব আলীর ফোন পরীক্ষা করে দেখা যায়, বিদ্রোহের সময় তিনি অনেকবার বিদেশে কথা বলেছেন। বিডিআরের অস্ত্র পাওয়ার জন্য লেদার লিটন বিদ্রোহে জড়িত হয়েছে বলে ধারণা করা হয়েছে। "
এতে স্পষ্টভাবে প্রতিয়মান হয় যে, আওয়ামী লীগ নেতারা বিডিআর বিদ্রোহের পরিকল্পনার ব্যাপারে আওয়ামী লীগ নেতারা জানতেন এবং আওয়ামী লীগ নেতা তোরাব আলী গংরা এ বিদ্রোহে ইন্ধন যুগিয়েছেন। এর আগে বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছিল যে, আওয়ামী লীগের ৬ নেতার সাথে বিদ্রোহীদের মোবাইলে অসংখ্যবার কথা হয়েছে।
প্রতিবেদনে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুন, প্রতিমন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবিরসহ অন্যদের ব্যাপারে বলা হয়েছে, সামরিক বিষয় সম্পর্কে ধারণা না থাকায় তাঁরা বিদ্রোহ দমনে সময়োপযোগী ও কার্যকর ব্যবস্থা নিতে পারেননি।
অথচ শেখ হাসিনা দাবি করেছিলেন, তাদের দুরদর্শীতার কারণেই ব্যাপক প্রাণহানি রোধ করা গেছে।
পিলখানা বিদ্রোহের সময় অর্ধশতাধিক সেনা কর্মকর্তাসহ ৭৭ ব্যক্তি নিহত হয়েছে। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময়ও এত সেনা কর্মকর্তা নিহত হয়নি। দেশের সেনাবাহিনীর প্রতি আওয়ামী লীগের বিদ্বেষের কারণেই যে এ মর্মান্তক ঘটনা ঘটেছে সেনাবাহিনীর তদন্ত রিপোর্টে তা স্পষ্ট হয়েছে।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে, দেশের দুটি বাহিনীকে ধ্বংস করা জন্য যাদের ইন্ধনে বিদ্রোহী বিডিআর জওয়ানরা এ হত্যাযজ্ঞ চালালো তাদের বিচার হবে কি ?
পিলখানা হত্যাকান্ড সম্পর্কে সেনাবাহিনীর তদন্ত রিপোর্ট প্রকাশ : বিভিন্ন মহলে প্রতিক্রিয়া