somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

রাজিন রিভিউ: Haider

১৪ ই অক্টোবর, ২০১৪ সকাল ৮:২৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আবার শেক্সপিয়ার, আবার বিশাল ভারদওয়াজ। Maqbool এবং Omkara’র পর তৃতীয় কিস্তি হিসেবে শেক্সপিয়ারের বিখ্যাত ট্র্যাজেডি Hamlet এর অভিযোজন ‘Haider’। মানতেই হবে হতাশ করেনি। সপ্তদশ শতাব্দীর কাহিনী যে এভাবে ছকে ফেলা যাবে সেটাই চিন্তাই করা যায় না।

কাহিনী জানা যাক। ১৯৯৫ সালের কাশ্মীর। অথবা বলতে পারেন ১৯৭১ সালের ঢাকা শহর। সৈন্যবাহিনী নিজের দেশের লোকদের উপর যেরকম আচরণ করছে তা দেখে বলার উপায় নেই যে এটি একটি স্বাধীন দেশ। নাহ বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের মত ভয়ানক বলা হয়ত ঠিক হচ্ছেনা। তবে কিছু মিল পাওয়া যায়। কথা নেই কওয়া নেই হঠাৎ একজনকে ধরে নিয়ে গেল। মাসের পর মাস নিখোঁজ। নিজের দেশে হাঁটতে গেলে পরিচয়পত্র দেখিয়ে চলতে হয়। এইরকমই পরাধীন ১৯৯৫ সালের শ্রীনগর। কিছু মানুষ না চায় ভারত না চায় পাকিস্তান। তারা চায় শান্তি। এইরকমই এক চিকিৎসক ডাঃ হিলাল মীর ( Narendra Jha)। শপথ নিয়েছে মানুষের জীবন বাঁচাবে। তাই এক কাশ্মীরের স্বাধীনতাকামী এক বিপ্লবীকে চিকিৎসা দিতে নিজের বাসায় নিয়ে উপস্থিত। ভারতীয় সেনাবাহিনী সময়মত খবর পেয়ে যায়। বোমা মেরে উড়িয়ে দেয় ডাক্তারের বাসায়। ডাক্তারকে করে আটক। খবর পেয়ে ডাক্তারের ছেলে হায়দার ( Shahid Kapoor) পড়াশোনা বাদ দিয়ে চলে আসে কাশ্মীর। নিজের বাসার ভগ্নাবশেষ থেকে সে স্তম্ভিত। কোথায় তার বাবা? ২০ দিন ধরে নিঁখোজ। তার মা গাজালা ( Tabu) আশ্রয় নিয়েছে তার চাচা খুররম ( Kay Kay Menon) এর বাসায়। মায়ের সাথে দেখা করতে গিয়ে দেখা যায় যে তার মা বেশ মজাতেই আছে। তার চাচার সাথে সম্পর্কটি খুব একটা দেবর-ভাবী সুলভ না দেখিয়ে লায়লা-মজনু ধরনের দেখাচ্ছে। কেন জানি ক্রোধের সাথে একধরণের হিংসারও আগুন জ্বলে ওঠে হায়দারের মনে। ক্রোধ স্বাভাবিক, কিন্তু হিংসা কেন?

কোনভাবেই হায়দার তার বাবার হদিশ পায়না। হঠাৎ একদিন এক ভৌতিক ব্যক্তিত্য ‘রুহদার’ ( Irrfan Khan) জানায় তার বাবার বার্তা। সেই বার্তায় রয়েছে হায়দারের বাবার কথা এবং প্রতিশোধের আগুন। কিন্তু রুহদার এর কথা কী সত্য? কীভাবে জানতে পারবে হায়দার?

বিশাল ভারদওয়াজ নিঃসন্দেহে ভারতের অন্যতম সেরা পরিচালক। পুনরায় সেটি তিনি প্রমাণ করলেন। দৃশ্যগুলির ভাব গাম্ভীর্য থেকে শুরু করে অভিনেতাদের মধ্যে থেকে অভিনয় বের করে নিয়ে আশা সবকিছুতেই দুর্দান্ত। ‘সো যাও’ গানটির দৃশ্যায়ন দেখে পুরাই টাশকি খাইছি। এটা কী দেখলাম?

শাহীদ কাপুরের চরিত্রটি অত্যন্ত কঠিন ছিল। প্রথম দিকের অভিনয় অতটা না ভালো করলেও পরের দিকে পুরাই কোপায় ফেলসে। ‘বিসমিল’ গানটিতে নাচের সাথে অভিনয়ের এক অদ্ভুত সংমিশ্রণ আগে কখনোই দেখা যায়নি। অন্যান্য হিট নায়কদের কিছুটা তার কাছে শিক্ষা নেওয়া উচিত।

ভারতের সেরা নায়িকা বললে মাধুরী, শ্রীদেবী, রেখা এবং ঐশ্বরিয়ার কথা সবাই বলে। কেউ টাবুর কথা বলে না। হয়তো ভবিষ্যতে তার নাম সবাই ভুলেও যাবে। কিন্তু টাবুর মত দুর্দান্ত শক্তিশালী অভিনেত্রী আর একটাও ভারতে আছে কী না সেটা এক বিরাট প্রশ্ন। এই মুভিতেও ফাটাফাটি করেছে টাবু। Hamlet এর Gertrude এর অভিনয় টাবু ছাড়া কাউকে দিয়েই সম্ভব নয়।

কে কে মেনন, ললিত পারিমু, সুমিত কৌল, রজত ভগৎ এর অভিনয় মোটামুটি হয়েছে। চরম ভুয়া লেগেছে Shraddha Kapoor কে। যতগুলি দৃশ্যে ছিল সবগুলার বারোটা বাজাইসে। অসাধারন লেগেছে ইরফান খানকে। ইরফান খানের আগমনের সাথে সাথে যেন মুভিটি পুরোপুরি পাল্টে যায়। এছাড়া শেষের দিকে তিন গোরখোদককেও চরম লেগেছে।নরেন্দ্র ঝাঁকেও দারুন লেগেছে।

মুভির সংগীত এবং আবহ সংগীতে দারুন করেছে বিশাল ভারদওয়াজ। গুলজার লেখনিও আসলেই চরম। ‘আও না’, ‘বিসমিল’, ‘সো যাও’, ‘খুল কাভি’ গানগুলি বেশ ভালো। বাকিগুলি একটু স্লো কিন্তু ভালো। ‘গুলো মে রাং ভারে’ গানটি অবশ্য মেহেদী হাসানের বিখ্যাত গজল।

মুভির খারাপ দিকগুলি বলি। প্রথমত মুভিটি সবার জন্য নয়। হিন্দী মুভি দেখবো, নাচ-গান দেখবো, ধুম-ধাড়াক্কা দেখবো এই আশা নিয়ে গেলে হতাশ হবেন। দ্বিতীয়ত মুভিটি ভাষা একটু জটিল। মাঝে মাঝে হিন্দী, মাঝে মাঝে উর্দু, মাঝে মাঝে আবার কাশ্মীরি। বোঝা বেশ ঝামেলাজনক। মুভিটি প্রথমে কাশ্মীর সমস্যা নিয়ে শুরু করলেও পরবর্তীতে হ্যামলেট এর বদলা নিয়েই পরে থাকে। তখন মনে হয় মুভির প্রথমভাগটি অহেতুক সময় নষ্ট। হ্যামলেট-গেট্রুডের জটিল সম্পর্কের কিছুটা ইঙ্গিত শুধুমাত্র দুটি দৃশ্যতেই পাওয়া যায়, যার সাথে বাকি মুভির হায়দারের সাথে মিল থাকেনা। সর্বশেষ বলতে হবে কেন জানি হায়দার, কিংবা তার মায়ের জন্য খুব একটা মায়া জন্মায় না। চরিত্রগুলি কেন জানি বিকশিত হতে পারেনি।

হ্যামলেট সম্পর্কে আমার জ্ঞান অনেক কম। সেকারণে রিভিউটিতে ভুলের বস্তা থাকাটা অসম্ভব নয়। সেকারণে ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি। সবমিলিয়ে যারা একটু ভাব-গাম্ভীর্যপূর্ণ মুভি পছন্দ করেন তাদের ভালো লাগবে।

রেটিং – ৪/৫
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই অক্টোবর, ২০১৪ সকাল ৮:৩৯
১৪টি মন্তব্য ১১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বেফাঁস মন্তব্য করায় সমালোচনার মুখে সমন্বয়ক হাসিবুল ইসলাম !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৩ রা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১১:৩২



"মেট্রোরেলে আগুন না দিলে, পুলিশ না মারলে বিপ্লব সফল হতো না "- সাম্প্রতিক সময়ে ডিবিসি নিউজে দেয়া সাক্ষাৎকারে এমন মন্তব্য করে সমালোচনার শিকার বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের সমন্বয়ক হাসিবুল... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমিত্ব বিসর্জন

লিখেছেন আজব লিংকন, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১:৪৮



আমি- আমি- আমি
আমিত্ব বিসর্জন দিতে চাই।
আমি বলতে তুমি; তুমি বলতে আমি।
তবুও, "আমরা" অথবা "আমাদের"
সমঅধিকার- ভালোবাসার জন্ম দেয়।

"সারভাইভাল অব দ্য ফিটেস্ট"
যেখানে লাখ লাখ শুক্রাণুকে পরাজিত করে
আমরা জীবনের দৌড়ে জন্ম... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্বৈরাচারী আওয়ামীলীগ হঠাৎ মেহজাবীনের পিছে লাগছে কেন ?

লিখেছেন শিশির খান ১৪, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৭:৪১


স্বৈরচারী আওয়ামীলীগ এইবার অভিনেত্রী মেহজাবীনের পিছনে লাগছে। ৫ ই আগস্ট মেহজাবীন তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছিলেন ‘স্বাধীন’। সেই স্ট্যাটাসের স্ক্রিনশট যুক্ত করে অভিনেত্রীকে উদ্দেশ্য করে আওয়ামী লীগ তার অফিসিয়াল ফেইসবুকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিড়াল নিয়ে হাদিস কি বলে?

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:২৪



সব কিছু নিয়ে হাদিস আছে।
অবশ্যই হাদিস গুলো বানোয়াট। হ্যা বানোয়াট। এক মুখ থেকে আরেক মুখে কথা গেলেই কিছুটা বদলে যায়। নবীজি মৃত্যুর ২/৩ শ বছর পর হাদিস লিখা শুরু... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। বকেয়া না মেটালে ৭ নভেম্বরের পর বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না আদানি গোষ্ঠী

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:৪১





বকেয়া বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে কোটি কোটি টাকা। ৭ নভেম্বরের মধ্যে তা না মেটালে বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না গৌতম আদানির গোষ্ঠী। ‘দ্য টাইম্স অফ ইন্ডিয়া’-র একটি প্রতিবেদনে এমনটাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

×