কাহিনী জানা যাক। ১৯৯৫ সালের কাশ্মীর। অথবা বলতে পারেন ১৯৭১ সালের ঢাকা শহর। সৈন্যবাহিনী নিজের দেশের লোকদের উপর যেরকম আচরণ করছে তা দেখে বলার উপায় নেই যে এটি একটি স্বাধীন দেশ। নাহ বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের মত ভয়ানক বলা হয়ত ঠিক হচ্ছেনা। তবে কিছু মিল পাওয়া যায়। কথা নেই কওয়া নেই হঠাৎ একজনকে ধরে নিয়ে গেল। মাসের পর মাস নিখোঁজ। নিজের দেশে হাঁটতে গেলে পরিচয়পত্র দেখিয়ে চলতে হয়। এইরকমই পরাধীন ১৯৯৫ সালের শ্রীনগর। কিছু মানুষ না চায় ভারত না চায় পাকিস্তান। তারা চায় শান্তি। এইরকমই এক চিকিৎসক ডাঃ হিলাল মীর ( Narendra Jha)। শপথ নিয়েছে মানুষের জীবন বাঁচাবে। তাই এক কাশ্মীরের স্বাধীনতাকামী এক বিপ্লবীকে চিকিৎসা দিতে নিজের বাসায় নিয়ে উপস্থিত। ভারতীয় সেনাবাহিনী সময়মত খবর পেয়ে যায়। বোমা মেরে উড়িয়ে দেয় ডাক্তারের বাসায়। ডাক্তারকে করে আটক। খবর পেয়ে ডাক্তারের ছেলে হায়দার ( Shahid Kapoor) পড়াশোনা বাদ দিয়ে চলে আসে কাশ্মীর। নিজের বাসার ভগ্নাবশেষ থেকে সে স্তম্ভিত। কোথায় তার বাবা? ২০ দিন ধরে নিঁখোজ। তার মা গাজালা ( Tabu) আশ্রয় নিয়েছে তার চাচা খুররম ( Kay Kay Menon) এর বাসায়। মায়ের সাথে দেখা করতে গিয়ে দেখা যায় যে তার মা বেশ মজাতেই আছে। তার চাচার সাথে সম্পর্কটি খুব একটা দেবর-ভাবী সুলভ না দেখিয়ে লায়লা-মজনু ধরনের দেখাচ্ছে। কেন জানি ক্রোধের সাথে একধরণের হিংসারও আগুন জ্বলে ওঠে হায়দারের মনে। ক্রোধ স্বাভাবিক, কিন্তু হিংসা কেন?
কোনভাবেই হায়দার তার বাবার হদিশ পায়না। হঠাৎ একদিন এক ভৌতিক ব্যক্তিত্য ‘রুহদার’ ( Irrfan Khan) জানায় তার বাবার বার্তা। সেই বার্তায় রয়েছে হায়দারের বাবার কথা এবং প্রতিশোধের আগুন। কিন্তু রুহদার এর কথা কী সত্য? কীভাবে জানতে পারবে হায়দার?
বিশাল ভারদওয়াজ নিঃসন্দেহে ভারতের অন্যতম সেরা পরিচালক। পুনরায় সেটি তিনি প্রমাণ করলেন। দৃশ্যগুলির ভাব গাম্ভীর্য থেকে শুরু করে অভিনেতাদের মধ্যে থেকে অভিনয় বের করে নিয়ে আশা সবকিছুতেই দুর্দান্ত। ‘সো যাও’ গানটির দৃশ্যায়ন দেখে পুরাই টাশকি খাইছি। এটা কী দেখলাম?
শাহীদ কাপুরের চরিত্রটি অত্যন্ত কঠিন ছিল। প্রথম দিকের অভিনয় অতটা না ভালো করলেও পরের দিকে পুরাই কোপায় ফেলসে। ‘বিসমিল’ গানটিতে নাচের সাথে অভিনয়ের এক অদ্ভুত সংমিশ্রণ আগে কখনোই দেখা যায়নি। অন্যান্য হিট নায়কদের কিছুটা তার কাছে শিক্ষা নেওয়া উচিত।
ভারতের সেরা নায়িকা বললে মাধুরী, শ্রীদেবী, রেখা এবং ঐশ্বরিয়ার কথা সবাই বলে। কেউ টাবুর কথা বলে না। হয়তো ভবিষ্যতে তার নাম সবাই ভুলেও যাবে। কিন্তু টাবুর মত দুর্দান্ত শক্তিশালী অভিনেত্রী আর একটাও ভারতে আছে কী না সেটা এক বিরাট প্রশ্ন। এই মুভিতেও ফাটাফাটি করেছে টাবু। Hamlet এর Gertrude এর অভিনয় টাবু ছাড়া কাউকে দিয়েই সম্ভব নয়।
কে কে মেনন, ললিত পারিমু, সুমিত কৌল, রজত ভগৎ এর অভিনয় মোটামুটি হয়েছে। চরম ভুয়া লেগেছে Shraddha Kapoor কে। যতগুলি দৃশ্যে ছিল সবগুলার বারোটা বাজাইসে। অসাধারন লেগেছে ইরফান খানকে। ইরফান খানের আগমনের সাথে সাথে যেন মুভিটি পুরোপুরি পাল্টে যায়। এছাড়া শেষের দিকে তিন গোরখোদককেও চরম লেগেছে।নরেন্দ্র ঝাঁকেও দারুন লেগেছে।
মুভির সংগীত এবং আবহ সংগীতে দারুন করেছে বিশাল ভারদওয়াজ। গুলজার লেখনিও আসলেই চরম। ‘আও না’, ‘বিসমিল’, ‘সো যাও’, ‘খুল কাভি’ গানগুলি বেশ ভালো। বাকিগুলি একটু স্লো কিন্তু ভালো। ‘গুলো মে রাং ভারে’ গানটি অবশ্য মেহেদী হাসানের বিখ্যাত গজল।
মুভির খারাপ দিকগুলি বলি। প্রথমত মুভিটি সবার জন্য নয়। হিন্দী মুভি দেখবো, নাচ-গান দেখবো, ধুম-ধাড়াক্কা দেখবো এই আশা নিয়ে গেলে হতাশ হবেন। দ্বিতীয়ত মুভিটি ভাষা একটু জটিল। মাঝে মাঝে হিন্দী, মাঝে মাঝে উর্দু, মাঝে মাঝে আবার কাশ্মীরি। বোঝা বেশ ঝামেলাজনক। মুভিটি প্রথমে কাশ্মীর সমস্যা নিয়ে শুরু করলেও পরবর্তীতে হ্যামলেট এর বদলা নিয়েই পরে থাকে। তখন মনে হয় মুভির প্রথমভাগটি অহেতুক সময় নষ্ট। হ্যামলেট-গেট্রুডের জটিল সম্পর্কের কিছুটা ইঙ্গিত শুধুমাত্র দুটি দৃশ্যতেই পাওয়া যায়, যার সাথে বাকি মুভির হায়দারের সাথে মিল থাকেনা। সর্বশেষ বলতে হবে কেন জানি হায়দার, কিংবা তার মায়ের জন্য খুব একটা মায়া জন্মায় না। চরিত্রগুলি কেন জানি বিকশিত হতে পারেনি।
হ্যামলেট সম্পর্কে আমার জ্ঞান অনেক কম। সেকারণে রিভিউটিতে ভুলের বস্তা থাকাটা অসম্ভব নয়। সেকারণে ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি। সবমিলিয়ে যারা একটু ভাব-গাম্ভীর্যপূর্ণ মুভি পছন্দ করেন তাদের ভালো লাগবে।
রেটিং – ৪/৫
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই অক্টোবর, ২০১৪ সকাল ৮:৩৯