সিলেট জেলার সীমান্তবর্তী পানি-পাথরের নতুন ভ্রমণ গন্তব্য বিছনাকান্দি। আকাশছোঁয়া পাহাড়ের কোলে এ জায়গায় আাছে প্রকৃতির অপরূপ রূপের বিছানা পাতা। পাশেই বয়ে চলা স্বচ্ছ শীতলপানির পাহাড়ি নদী পিয়াইন। ছোট বড় পাথরের মাঝে পিয়াইন নদীর মায়াবী স্রোত।
বর্তমানে সিলেটের সব থেকে বেশি জনপ্রিয় এই জায়গায় বেড়াতে যাওয়া সময় এখনই। সিলেট শহর থেকে বিছানাকান্দির দূরত্ব প্রায় ৬০ কিলোমিটার।
সিলেট জেলার সীমান্তবর্তী উপজেলার গোয়াইনঘাটের রস্তুমপুর ইউনিয়নে বিছানাকান্দি। এর পরেই ভারতের মেঘালয় রাজ্য। বর্ষা মৌসুমে পাহাড়গুলো একটু বেশিই সবুজ, পাহাড়ের গায়ে ঝরণাগুলোও প্রাণবন্ত। তবে এসব ঝরণার কাছে গিয়ে পানি ছোঁয়ার কোনও সুযোগ নেই। শুধুই দুই চোখ ভরে উপভোগ করা। কারণ সবগুলোই ভারতে।
সিলেট শহর থেকে হাদারপাড় হয়ে গেলে পিয়াইনের সৌন্দর্য উপভোগ করতে করতে যাওয়া যাবে। আর যাওয়ার পথে ঢুঁ মারতে পারেন মালনিছড়া চা-বাগান।
এ সময়ে বিছনাকান্দিতে প্রকৃতি যেন তার সৌন্দর্যের সবটুকুই ঢেলে দিয়েছেন নিরলসভাবে। চারিদিকে শুধুই সবুজ আর সবুজ। উপরে নীল আকাশে সাদা মেঘের ভেলা। বিছনাকান্দির বিছানায় পৌঁছুতে পৌঁছুতেই আনন্দে আত্মহারা হয়ে যাবেন ভ্রমণপ্রেমী যে কোন মানুষ।
কীভাবে যাবেন
বিছনাকান্দি যেতে প্রথমে যেতে হবে বিভাগীয় শহর সিলেটে। সড়ক, রেল ও আকাশ পথে ঢাকা থেকে সরাসরি সিলেট যেতে পারেন।
চট্টগ্রাম থেকেও সিলেটে যাওয়া যায়।
ঢাকার ফকিরাপুল, সায়দাবাদ ও মহাখালী বাস স্টেশন থেকে সিলেটের বাসগুলো ছাড়ে। এ পথে গ্রীন লাইন পরিবহন, সৌদিয়া এস আলম পরিবহন, শ্যামলি পরিবহন ও এনা পরিবহনের এসি বাস চলাচল করে। ভাড়া ৮শ’ থেকে ১১শ’ টাকা।
এছাড়া শ্যামলী পরিবহন, হানিফ এন্টারপ্রাইজ, ইউনিক সার্ভিস, এনা পরিবহনের নন এসি বাস সিলেটে যায়। ভাড়া ৪শ’ থেকে সাড়ে ৪শ’ টাকা। এনা পরিবহনের বাসগুলো মহাখালী থেকে ছেড়ে টঙ্গী ঘোড়াশাল হয়ে সিলেট যায়।
ঢাকার কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন থেকে মঙ্গলবার ছাড়া সপ্তাহের প্রতিদিন সকাল ৬টা ৪০ মিনিটে ছেড়ে যায় আন্তনগর ট্রেন পারাবত এক্সপ্রেস। সপ্তাহের প্রতিদিন দুপুর ২টায় ছাড়ে জয়ন্তিকা এক্সপ্রেস এবং বুধবার ছাড়া সপ্তাহের প্রতিদিন রাত ৯টা ৫০ মিনিটে ছাড়ে উপবন এক্সপ্রেস। শুক্রবার ছাড়া প্রতিদিন বিকাল ৪টায় ছাড়ে কালনী এক্সপ্রেস। ভাড়া দেড়শ থেকে ১ হাজার ১৮ টাকা। এছাড়া চট্টগ্রাম থেকে সোমবার ছাড়া প্রতিদিন সকাল ৮টা ১৫ মিনিটে যায় পাহাড়িকা এক্সপ্রেস এবং শনিবার ছাড়া প্রতিদিন রাত ৯টা ৪৫ মিনিটে উদয়ন এক্সপ্রেস। ভাড়া ১৪৫ ১ হাজার ১শ’ ৯১ টাকা।
ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে ইউনাইটেড এয়ার, রিজেন্ট এয়ার, নভো এয়ার এবং ইউএস বাংলা এয়ারের বিমান প্রতিদিন উড়াল দেয় সিলেটের ওসমানী বিমানবন্দরের উদ্দেশ্যে।
বিভিন্ন পথে যাওয়া যায় বিছনাকান্দি। তবে হাদারপাড় থেকে সবচেয়ে সহজ ও ভালো যাতায়াত ব্যবস্থা রয়েছে।
সিলেট শহরের আম্বরখানা থেকে সিএনজি চালিত অটোরিকশায় প্রথমে যেতে হবে হাদারপাড়। জনপ্রতি লোকাল ভাড়া ৭০ থেকে ৮০ টাকা। রিজার্ভ নিলে ভাড়া পড়বে ৪শ’ থেকে ৫শ’ টাকা। সেখান থেকে ইঞ্জিন নৌকায় যেতে হবে বিছনাকান্দি।
কয়েকজন মিলে রিজার্ভ নেওয়াই ভালো। সারাদিনের জন্য ভালো মানের একটি ইঞ্জিন নৌকার ভাড়া পড়বে ১২শ’ থেকে ২ হাজার টাকা। তবে দলে লোক কম হলে লোকাল ইঞ্জিন নৌকাও পাওয়া যাবে।
এছাড়া বিছনাকান্দি যাওয়ার অন্য পথটি হল সিলেট শহর থেকে বাস কিংবা যে কোন বাহনে চড়ে আগে যেতে হবে জাফলংয়ের পথে সারিঘাট। সেখান থেকে অটোরিকশায় গোয়াইনঘাট হয়ে বিছানাকান্দি।
কোথায় থাকবেন
ব্যস্ত মানুষেরা ঢাকা থেকে রাতের বাসে যাত্রা করে সারাদিন ঘুরে আবার পরের রাতে ফিরতে পারেন।
তবে এই জায়গায় সময় নিয়ে বেড়াতে ভালো লাগবে। সারাদিন বেড়ানো শেষে রাতে এসে থাকতে হবে সিলেটে।
সিলেট শহরে থাকার জন্য বেশ কিছু ভালো মানের হোটেল আছে। শহরের নাইওরপুল এলাকায় হোটেল ফরচুন গার্ডেন ০৮২১-৭১৫৫৯০। জেল সড়কে হোটেল ডালাস ০৮২১-৭২০৯৪৫। ভিআইপি সড়কে হোটেল হিলটাউন ০৮২১-৭১৮২৬৩। লিঙ্ক রোডে হোটেল গার্ডেন ইন ০৮২১-৮১৪৫০৭। আম্বরখানায় হোটেল পলাশ ০৮২১-৭১৮৩০৯। দরগা এলাকায় হোটেল দরগাগেইট ০৮২১-৭১৭০৬৬। হোটেল উর্মি ০৮২১-৭১৪৫৬৩। জিন্দাবাজারে হোটেল মুন লাইট ০৮২১-৭১৪৮৫০। তালতলায় গুলশান সেন্টার ০৮২১-৭১০০১৮, ইত্যাদি। এসব হোটেলে ৫শ’ থেকে ৪ হাজার টাকায় রাত যাপনের ব্যবস্থা আছে।
সাবধানতা
বর্ষায় পাহাড়ি ঢল থাকে বলে পিয়াইন নদীতে এ সময়ে স্রোত খুব বেশি। তাই বিছনাকান্দি যাওয়ার পথে ছোট নৌকা পরিহার করা উচিত। ইঞ্জিন নৌকা নিয়ে বেড়াতে চেষ্টা করুন। এছাড়া এখানকার নৌকাগুলোতে লাইফ জ্যাকেট থাকে না। যারা সাঁতার জানেন না, সঙ্গে অবশ্যই লাইফ জ্যাকেট নিবেন।
এছাড়া বিছনাকান্দি জায়গাটি আসলে নো ম্যানস ল্যান্ড ঘেঁষা। সীমান্তে চলাচলের সময় সাবধানতা অবলম্বন করুন। সীমান্ত যাতে অতিক্রম না করেন সেদিকে খেয়াল রাখুন।
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে অক্টোবর, ২০১৫ সকাল ৯:২৮