আমি গিয়েছিলাম সাভার, নবীনগর অফিসের কাজে।
ফিরতে ফিরতে রাত হয়ে গেলো। রাত এখন সাড়ে বারোটা। গাড়ি চালাচ্ছেন আলামিন ভাই। আলামিন ভাই আমাদের কোম্পানির সবচেয়ে পুরোনো লোক। বিশস্ত। প্রচন্ড রকমের ধার্মিক মানুষ। নবীজির পথের পথিক। পাচ ওয়াক্ত নামাজ পড়েন। রাস্তায় জ্যামে পড়লেই হাতে তজবি তুলে নেন। অথবা আল্লাহর নিরাব্বই টা নাম জিকির করেন। আলামিন ভাইয়ের ধারণা আমি বিরাট জ্ঞানী মানুষ। আসলে আলামিন ভাই জানেন না, আমি গুগল করে উনার সব প্রশ্নের উত্তর দেই।
আলামিন ভাইয়ের প্রশ্ন গুলো সব ধর্ম নিয়ে। ছেলেমানুষী প্রশ্ন।
যেমন, আল্লাহর নাম গুলো কে রাখলো? আল্লাহর তো পিতা-মাতা নেই। হাশরের ময়দানে আমরা কি আল্লাহকে দেখতে পাবো? আল্লাহ তো নিরাকার। হাশরের ময়দানেই যদি আমাদের বিচার হয়, তাহলে কবরে মুনকার আর নকির সাহেব কেন প্রশ্ন করবেন? কেন কবরে আযাব ভোগ করতে হবে? কলিজার টুকরা, আমাদের প্রানপ্রিয় নবীজির কি কোনো অলৌকিক ক্ষমতা ছিলো? অবিশ্বাস্য হলেও সত্য আলামিনের প্রশ্নের উত্তর আমি এমনভাবে দেই, যেন আমি একজন পন্ডিত। সবজান্তা। আমি খুব বুদ্ধি করে আলামিন ভাইয়ের মাথায় কিছু প্রশ্ন ঢুকিয়ে দেই। সেই প্রশ্ন তার মধ্যে দ্বিধা তৈরি করে। আমি খুশি হই।
যেহেতু আলামিন ভাই ধার্মিক, সেহেতু তার প্রশ্নের উত্তর আমি অন্যরকম ভাবে দিতে চেস্টা করি।
যেন সে আমার কোনো কথায় আঘাত না পায়। আমি শুরু করি, একদম শুরু থেকে। দেখো আলামিন, ইসলাম ধর্মের নিয়ম হলো- কোনো প্রশ্ন করবে না। ধর্ম নিয়ে মনের মধ্যে কোনো সংশয় রাখবে না। শুধু বিনা দ্বিধায় বিশ্বাস করে যাবে। আল্লাহ পৃথিবী তৈরি করলেন। ব্যস এই টুকুই। আজকের এই আধুনিক পৃথিবী আল্লাহ তৈরি করে দেন নাই, আকাশ থেকে ফেরেশতা নেমে রাস্তাঘাট, বাড়িঘর, ব্রীজ, রেলস্টেশন, এয়ারপোর্ট ইত্যাদি কোনো কিছুই আল্লাহ করেন নাই। এগুলো মানুষ করেছে। মানুষ গুহা থেকে বের হয়ে এই বিশ্ব গড়েছে। সুন্দর সাজানো গোছানো পৃথিবী। অনেক সময় পার হয়ে গেছে। অনেক সভ্যতা ধ্বংস হয়ে গেছে। মানুষের অক্লান্ত পরিশ্রমের ফসল আজকের আধুনিক পৃথিবী। কোটি কোটি মানুষের শ্রম আল্লাহ একদিন তছনছ করে দেবেন। অর্থাৎ আল্লাহ পৃথিবী ধ্বংস করে দেবেন।
আলামিন বলল, স্যার গাবতলি এসে গেছি। চলুন একটু চা খেয়ে নিই।
চা খেতে গিয়ে বন্ধু শাহেদ জামালের সাথে দেখা। বহুদিন পর দেখা। আমাদের ক্যাম্পাসের সবচেয়ে মেধাবী ছাত্র। আমার বন্ধু শাহেদ জামাল। শাহেদের প্রেমিকা ছিলো নীলা। রাষ্ট্র বিজ্ঞানের ছাত্রী। নীলা সহজ সরল একটা মেয়ে। নীলার একটা বিড়াল ছিলো। নীলা ক্লাশ করতো বিড়ালটা ঘুরে বেড়াতো। যাইহোক, শাহেদকে গাড়িতে তুলে নিলাম। আজ আমরা কেউ বাসায় ফিরবো না। সারারাত এই শহরে ঘুরে বেড়াবো। আলামিন খুব খুশি। আলামিন বলল, স্যার মিরপুর দশ নম্বর যাই। সেখানে সারারাত জমজমাট অবস্থা। শুনেছি হাসের মাংস পাওয়া যায়। শাহেদ বলল, আমি হাস খাবো না। মূরগী খাবো। আমরা তিনজন মজা করে খেলাম। প্রচুর ভিড়। আলামিন কিছুটা বিরক্ত হয়ে বলল, ঢাকা শহরের মানুষ কি ঘরে খায় না? আমি বললাম, আলামিন আজ কি তাহাজ্জুদ পড়বে?
রাত দেড়টা। আমাদের গাড়ি থামলো, একটা গলির ভিতরে।
একটা সাইনবোর্ড। সেখানে লেখা গোল্ডেন ড্রাগন। আমরা তিনজন গোল্ডেন ড্রাগনে প্রবেশ করিলাম। কম খাবো, কম খাবো করে আমরা তিনজনে দুই বোতল ভোদকা শেষ করে ফেললাম। শাহেদ বলল, হুজুর আপনি এই রমজান মাসে মদ্যপান করলেন! আলামিন বলল, সুরা পান করেছি। মির্জা গালিব মদ্যপান করেছেন। মাওলানা রুমি তো মসজিদের বারান্দায় বসে মদ্যপান করেছেন। আমি বললাম, এখন তর্ক করার সময় নয়। চলো আমরা বাইরে যাই। শাহেদ বলল, হজুর কি এখন গাড়ি চালাতে পারবেন? আলামিন ভাই বললেন, আমি পুরানা পাপী। ধর্মের লেবাজ দেখে আমায় সাধু ভাববেন না। আলামিন ভাইয়ের কথা শুনে আমরা তিনজন হেসে ফেললাম।
রাত তিনটায় বিজয় স্মরনি চেক পোস্টে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী আমাদের গাড়ি থামালো।
আমাদের রাস্তায় দাড় করিয়ে আমাদের জামা জুতো সব তালাশ করলো। সেনাবাহিনী কি খুজছে আমরা জানি না। আমাদের গাড়িতে চিরুনি অভিযান চললো। সেনাবাহিনী কিছুই পেলো না। কিছু না পেয়ে সেনাবাহিনী যেন তেলেবেগুনে জ্বলে উঠলো। আলামিন ভাইয়ের অবস্থা খারাপ। সে ঠিক মতো সোজা হয়ে দাড়াতে পারছে না। সেনাবাহিনীর একজন বলল, আপনি হুজুর মানুষ হয়ে মদ খেলেন? আলামিন ভাই দুলতে দুলতে বললেন, মদ্যপান করলেই আমি আল্লাহর প্রেমে মত্ত হতে পারি। সেনাবাহিনীর এক অফিসার বললেন, এদের সাথে এত কথা কিসের? এদের কাফরুল থানায় হস্তান্তর করো। শাহেদ বলল, স্যার বিজয় স্মরনি কি কাফরুল থানার আন্ডারে? না শেরে বাংলা থানা? সেনাবাহিনী অফিসার কঠিন চোখে শাহেদ জামালের দিকে তাকালো। শাহেদ হাই তুলল।
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে মার্চ, ২০২৫ রাত ৮:৫০