আমি অতি সাধারণ জীবনযাপন করি।
সাধারণ জীবন যাপন করার প্রধান ও প্রথম শর্ত হচ্ছে, বিলাসিতা না করা। মিতব্যয়ী একটা বড় গুন। খেয়াল রাখতে হবে কৃপনতা আর মিতব্যয়ী এক নয়। কৃপনতা অবশ্যই পরিহার করিতে হইবে। সৃষ্টির সেরা জীব কেন কৃপনতা করবে? একবার সকালে অফিসে গিয়ে দেখি, অফিস ঘর নোংরা। ঝাড়ু দেওয়া হয়নি। যে ঝাড়ু দিবে তার জ্বর হয়েছে। আমি নিজে অফিস রুম ঝাড়ু দিয়ে ফেললাম। অথচ আমি বড় অফিসার। অফিসে আমার ব্যাক্তিগত পিয়ন আছে। বেল বাজালে পিয়ন দৌড়ে আসে। একদম মাটির মানুষ আমি। আমার চলাফেরা সহজ সরল সুন্দর। কোনো বাড়াবাড়ি নেই আমার। অশালীন কোনো কিছুর মধ্যে আমি নাই। আমার জীবন সহজ সরল সুন্দর।
সেদিন অফিসের গাড়ি নষ্ট, তাই বাসে করে বাসায় ফিরতে হবে।
আমি চাইলে পাঠাও বা উবার ডেকে বাসায় ফিরতে পারি। নিদেনপক্ষে সিএনজি করে। কিন্তু আমি ফুটানী দেখালাম না। লোকাল বাসে ঝুলতে ঝুলতে বাসায় ফিরলাম। মাত্র ত্রিশ টাকা লাগলো। উবারে করে আসলে সাড়ে তিন শ' টাকা লাগতো। আমার এক বন্ধু সেদিন ফোন করে আমায় ডাকলো। গেলাম মহাখালীর জাকারিয়া বারে। মাত্র তিন ঘন্টায় আমার বন্ধু ৩৭ হাজার টাকা খরচ করে ফেলল। বিষয়টা আমার মোটেও ভালো লাগেনি। দরিদ্র দেশ আমাদের। কত লোক না খেয়ে থাকে, কত লোক রাস্তায় ঘুমায়।
মিতব্যয়ী মানুষকে আল্লাহ পাক লাইক করেন।
নবীজী পর্যন্ত বলেছেন, অপচয় করো না। আমি চাইলে দেশী মূরগী খেতে পারি। সেটা না করে আমি ফার্মের মুরগী খাই। আগারো, স্বপ্ন বা সুপার শপ থেকে আমি বাজার করি না। ওরা দাম অনেক বেশি রাখে। কাদা মাখিয়ে আমি বাজার থেকে বাজার করি। স্বপ্ন বা আগারো থেকে পাচ হাজার টাকার বাজার করলে, ওরা ৮ শ টাকা বেশি রাখে। শুধু শুধু আমি কেন ৮শ টাকা বেশি দিবো? আমি জানি ঢাকায় কোথায় কোন জিনিসটা সস্তা পাওয়া যায়। এবং কোন কোন দোকান গুলো ডাকাতি করে, এক কথায় মানুষের গলা কাটে। অসৎ মানুষ দিয়ে চারদিক ভরা। তাই আমি সাবধান থাকি।
নামী দামী মার্কেট থেকে জামা কাপড় কিনলে অনেক টাকা দাম রাখে।
দেশি পন্য আড়ং পর্যন্ত গলা কাটে। এজন্য আমি যখন কোম্পানি গুলো ডিসকাউন্ট দেয়, তখন কেনাকাটা করি। বিশেষ করে এপেক্স আর বাটা কোম্পানি। টাকা থাকলেই এলোমেলো খরচ করতে হবে, এটা কেমন কথা? এই যে দেশে কিছু দিন আগে বন্যা হলো। টিএসসিতে ছেলেমেয়েরা টাকা সংগ্রহ করলো। আমি নিজে গিয়ে ক্যাশ ৫০ হাজার টাকা দিয়ে আসলাম। এটা প্রয়োজন। এটা দায়িত্ব। প্রয়োজন এবং দায়িত্ব সবার আগে। দায়িত্ব নিতে পিছপা হওয়া যাবে না। খাটি পুরুষেরা দায়িত্ব নিতে ভয় পায় না।
সাধারণ ভাবে জীবন যাপন করাই সবচেয়ে ভালো।
সবচেয়ে সুন্দর। আমাদের নবীজি অতি সাধারণ ভাবে জীবনযাপন করেছেন। গৌতম বুদ্ধ, আইনস্টাইন, এরিস্টটল, মাদার তেরেসা, মেন্ডেলা, মহাত্মা গান্ধী, যীশু, রবীন্দ্রনাথসহ অসংখ্য জ্ঞানীগুণীরা বিলাসিতা পরিহার করে সাধারণ জীবন যাপন করেছেন। সাধারণ ভাবে জীবনযাপন করতে গিয়ে আবার আত্মাকে কষ্ট দেওয়া যাবে না। প্রচুর পড়তে হবে, প্রতিদিন বই পড়তে হবে। ভ্রমণ করতে হবে। দেশের সমস্যা ও সমাধান নিয়ে ভাবতে হবে। দরিদ্র ও অসহায় মানুষের পাশে দাড়াতে হবে। দরিদ্র পিতামাতার সন্তানকে স্কুলে ভরতি করিয়ে দিতে হবে। অসুস্থ ব্যাক্তির চিকিৎসা করাতে হবে।
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:২৮