আমার নাম নাদের। নামটা রেখেছিলেন আমার বাবা।
এখন বাবা মা কেউ বেঁচে নেই। আমি আমার নামের শেষে 'আলী' যোগ করে দিয়েছি। নাদের আলী। সুনীলের একটা খুব জনপ্রিয় কবিতা আছে। সেই কবিতায় নাদের আলী নামে একজন লোক ছিলো। যাইহোক, এই দুনিয়াতে আমার কেউ নেই। তাই আমি যে মেসে থাকি তাদেরই আমি কাছের মানুষ বলে মনে করি। মেসের রতন দা বলেন- খুব গরম পড়েছে। আমি বলি- এসি ঘরে বসে থাকুন। এছাড়া আর কোনো উপায় নাই। যে গরম পড়ছে! চুপচাপ বসে থাকলেও গরমে সারা শরীর ঘামে ভিজে যায়। শুধু আপনি একা ঘামছেন না। সারা দেশের মানুষ ঘামছে। না ঘেমে উপায় আছে ৩৯ ডিগ্রী তাপমাত্রা। প্রতিদিন ৩/৪ হাজার মানুষ গরমে অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভরতি হচ্ছে। এই গরমে শিশু ও বয়স্কদের খুব বেশি কষ্ট হচ্ছে। আমি ছোটবেলায় দেখতাম ৩২/৩৩ ডিগ্রীর বেশি তাপমাত্রা হতো না। ভবিষ্যতে আরো বেশি গরম পড়বে। প্রস্তুতি নিয়ে রাখুন। এই দেশে সব কিছুতেই গজব অবস্থা। বাজারে গজব, ফুটপাতে গজব, রাস্তায় গজব, রাজনীতিতে গজব, গরমেও গজব অবস্থা।
যারা ধনী তাঁরা ঘামছে না।
তাদের ঘরে এসি, গাড়িতে এসি, অফিসে এসি। কারেন্ট চলে গেলেও সমস্যা নেই। তাদের জেনারেটর আছে, আইপিএস আছে। গরীবেরা মরেছে। ধনীরা বেশ আছে। এজন্য এই সমাজের মানুষ ধনী হওয়ার জন্য এত ব্যকুল। ধনী হওয়ার জন্য প্রয়োজনে মানুষ চুরী দূর্নীতি, ডাকাতি করতেও রাজী। শুনুন ভাইসাহেব, এই গরমের জন্য আমরাই দায়ী। বাংলাদেশে গাছ অনেক কম। বছরের পর বছর ধরে- সুন্দরবনে গাছ কেটে উজার কর ফেলছে দুষ্টলোকজন। কেউ গাছ লাগায় না। সবাই শুধু কাটে। কেটেই চলেছে। ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কথা ভেবে হলেও গাছ লাগান। শেখ হাসিনার উচিৎ চিৎকার করে তার নেতা কর্মীদের বলা- গাছ লাগাও। সারা বাংলাদেশ গাছ লাগিয়ে ভরিয়ে ফেলো। পুরো বাংলাদেশকে সবুজ দেখতে চাই। তখন নেতা কর্মীরা তাকে খুশি করার জন্য পাগলের মতো গাছ লাগাবে। কোস্তাকুস্তি শুরু করে দেবে কার আগে কে গাছ লাগাবে। কিন্তু শেখ হাসিনা চুপ।
রফিক ভাই, এই গরমে আমার অবস্থাটা একবার ভেবে দেখুন।
আমি থাকি কলতাবাজার এলাকায়। একটা মেসে। মেস তো না যেন দোযক। আমার খাটের পাশেই রান্নাঘর। দুটা চুলা সারাদিন জ্বলতেই থাকে। গরমে আমি সিদ্ধ হয়ে যাই। তাছাড়া আমার মেসের সদস্য গুলো হারামী। কেউ কারো চেয়ে কম না। যাইহোক, গরম সহ্য করতে না পেরে আমি মসজিদে চলে যাই। মসজিদে নামাজের সময় এসি ছাড়ে। বড় ভালো লাগে। আগে অবশ্য এক বন্ধুর অফিসে যেতাম। বন্ধুর অফিসে এসি আছে। এগারো তলায় অফিস। বন্ধু মানা করে দিলো তার অফিসে যেতে। বড় বড় শপিংমলে যেতে পারি। কিন্তু যাই না। তাঁরা আমাকে দেখেই বুঝে যায়, আমি কেনাকাটা করতে যাইনি। ঠান্ডা বাতাস খেতে এসেছি। তাঁরা আমার দিকে কেমন করে যেন তাকায়। আমার বড় ভয় লাগে। তাদের চাহনি আমাকে বলে দেয়, এখনই ভালোয় ভালোয় বের হয়ে যা, নইলে দাড়োয়ান ডেকে গলা ধাক্কা দিয়ে বের করে দিবো হারামজাদা। আমি জনম ভীতু মানুষ।
মাঝে মাঝে মনে হয়-
এই গরমেরও দরকার আছে। নইলে আম, জাম, কাঠাল, লিচু, তাল পাকবে কি করে? আমার প্রিয় আম হিমসাগর। লেংড়া, আম্রপলি, হাড়িভাঙ্গা ইত্যাদি আম গুলো হিমসাগরের কাছে কিচ্ছু না। তীব্র গরম সহ্য করার কারনেই তো আমরা এত সুন্দর সুন্দর ফল পাই। আল্লাহপাক খুব হিসাব করে দুনিয়া বানিয়েছেন। আবেগে বানান নাই। যাদের বেশী গরম লাগে, তাদের বলতে চাই- এতটুকু গরম যদি না সহ্য করতে পারেন, তাহলে জাহান্নামের আগুন কিভাবে সহ্য করবেন? জাহান্নামের আগুনের তাপমাত্রা হবে ১৬০ ডিগ্রী সেলসসিয়াস। অর্থ্যাত আপনি ত্রিশ সেকেন্ডে মারা যাবেন। এবং দুই মিনিটে আপনার সমস্ত শরীর গলে যাবে। আহারে কি কষ্ট না হবে। মহান দয়ালু প্রভু আমাদের এই কষ্টের শাস্তি দেবেন। কান্না পায়। জাহান্নামের শাস্তির তো শেষ নেই। চলতেই থাকবে অনন্ত কাল ধরে। মানুষ অবশ্য জাহান্নাম ভয় পায় না। সমানে অন্যায় ও অপরাধ করেই যাচ্ছে। অবশ্য যারা অন্যায় ও অপরাধ করছে, তাঁদের ধারনা, একটা মসজিদ নির্মাণ করে দিলেই বেহেশত ফাইনাল। তাছাড়া হজ্ব করার কারনে মাফ পাওয়ার সম্ভবনা আছে।
মঙ্গলবার কেএফসি'তে বিশেষ অফার দেয়।
এক হাজার টাকায় বিশ পিছ চিকেন। অবশ্য ওরা বিশ পিছ চিকেন দেয় না। আট পিছ চিকেন দেয়, বাকি গুলো মূরগীর উইংস। আমার খুব শখ একদিন আমার মেসের সদস্যদের কেএফসি'র চিকেন খাওয়াই। দীর্ঘদিন ধরেই ভাবাছিলাম তাদের একদিন চিকেন ফ্রাই খাওয়াবো। টাকা পয়সার টানাটানিতে হয়ে উঠছিলো না। অনেকদিনের মেস ভাড়া বাকি, তবু ওরা আমাকে মেস থেকে বের করে দেয়নি। এমনকি মিল বন্ধ করে দেয়নি। যথাসময়ে খাবার পাই। যদিও সেসব খাবার স্বাদহীন।
আজ পকেটে এক হাজার টাকা আছে। আমি কেএফসি'র লাইনে দাঁড়িয়ে আছি। আমার আগে কমপক্ষে ৫০ জন দাঁড়িয়ে আছেন। তারও এক হাজার টাকায় বিশ পিছ চিকেন নিতে এসেছে। কেএফসি'র লোক বলল, যারা লাইনে দাঁড়িয়ে আছেন, তাদের অনেক লম্বা সময় অপেক্ষা করতে হবে। কারন অলরেডি ৭২ টা অর্ডার আছে। এই অর্ডার শেষ হবে তারপর নতুন করে অর্ডার নেওয়া হবে। আমি কেএফসি থেকে বের হয়ে হাঁটা শুরু করলাম। এখন রাত সাড়ে নয়টা। চিকেন নিতে হলে আরো দুই ঘন্টা। অর্থ্যাত রাত সাড়ে এগারোটা বেজে যাবে। ততক্ষনে মেসের সবাই ঘুমিয়ে যাবে। ভাবালাম কাছের মানুষদের চিকেন ফ্রাই খাওয়াবো। হলো না। মাই ব্যাড লাক।